শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:২২
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার

আনন্দগোপাল হালদার / ১৫৩ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

আমাদের ছোটোবেলা মানেই একটা অদৃশ্য বন্ধনের প্রতিচ্ছবি। আমরা হিন্দু-মুসলমান বলে আলাদা ছিলাম না কোনোদিন— ছিলাম শুধু একান্নবর্তী গ্রামজীবনের সন্তান। ইসকুলের বেঞ্চ ভাগাভাগি করে বসেছি, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটেছি মাঠের রাস্তায়, বনবাদাড়ে আলেঝালে। একে অন্যের বাড়িতে খেয়েছি মা-ঠাকুমার হাতের রান্না। এইভাবে মিশে থাকা জীবনের মধ্যে কোথাও কোনো দ্বিধা ছিল না, বিভাজন ছিল না, ছিল শুধু হৃদয়ের টান।

ভোরবেলা যখন গ্রামের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসত, তখন আমাদের ঘুম ভাঙত। সেই সময় মা উঠেই ধান ভিজিয়ে রাখা হাঁড়ি থেকে জল ঝরিয়ে, উনুনে বড়ো বড়ো হাঁড়ি চাপাতেন সেদ্ধ চালের জন্য। কুয়াশার মধ্যে সেই মাটির চুলার ধোঁয়া আর আজানের সুর মিলে এক অদ্ভুত আবেশ তৈরি করত— যেন ভোরবেলার প্রকৃতিও আমাদের শিখিয়ে দিত, সহাবস্থানের এক চিরন্তন পাঠ। ভোরবেলার ধোঁয়া আর আজানের মতো একত্রে মিশে থাকা এক আশ্চর্য মানবিক রসায়ন।

একটা সকাল হতো— যার ভিত্তি ছিল সহাবস্থান, মিলন, একসঙ্গে বেঁচে থাকার আনন্দ। আমরা তখন ছুটতে ছুটতে গিয়ে পৌঁছাতাম পদ্মার পাড়ে, ওপারে বাংলাদেশ। রাজশাহী থেকে একই গন্ধময় হাওয়া এসে পৌঁছাত আমাদের ফুসফুসে, আলাদা কিছু অনুভূত হয়নি কখনও।

আজান, গজল, শ্যামাসঙ্গীত, কৃষ্ণনাম, আউল-বাউল-ভাটিয়ালি, জারি-সারি-মুর্শিদী-ফকিরি— সবই আমাদের জীবনে একসঙ্গে গাঁথা ছিল। কখনও বুঝিনি যে হিন্দু বা মুসলমান হওয়া আলাদা কিছু, বরং বুঝেছি আমরা সকলে মিলে একটা বড়ো পরিবার, একটা বড়ো গ্রাম, একটা অভিন্ন শৈশব। সেই স্মৃতিগুলো আজও আমাদের বুকের ভেতর গেঁথে আছে, যেন আজান আর ভোরের ধোঁয়ার মতোই মিশে গেছে আমাদের আত্মায় আমাদের রক্তে— যা কোনোভাবেই আলাদা করা যায় না।

আমাদের ছোটোবেলাটা যেন একটা দীর্ঘ পবিত্র ঈশান কোণ, যেখানে ধর্ম ছিল না কোনো বিভেদরেখা, ছিল না পৃথক পরিচয়ের উচ্চারণ—ছিল কেবল মানুষ আর মানুষে মিলেমিশে থাকা। আমরা কেউই একে অপরকে ‘হিন্দু’ বা ‘মুসলমান’ বলে চিনিনি, আমাদের মধ্যে কপালে  তিলক বা মাথায় টুপি— এসব কখনও আলাদা করে দেখা হয়নি যদিও সে-সময় এসবের ব্যবহার সামান্য কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বরং সেই জন্মগ্রামটার মাটি, গাছপালা, পুকুর, হাট-বাজার, উৎসব আর কান্না-হাসির মধ্যে আমরা একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি— একটি অভিন্ন অস্তিত্বে।

ভোরবেলায় যখন চারদিকটা কুয়াশায় ঢাকা থাকত, পাখিরা ডানা ঝাপটিয়ে উঠত আকাশে, তখন মসজিদ থেকে ভেসে আসত মোলায়েম এক আজানের ধ্বনি। ঘুমচোখে আমরা পাশ ফিরে শুতাম, কিন্তু সেই সুর গায়ের ভেতর দিয়ে ঢুকে মনের মধ্যে এমনভাবে গেঁথে যেত যে দিনের শুরুটাই যেন এক ধ্যানের মতো হয়ে উঠত। ওই মুহূর্তে মনের মধ্যে কোনো ধর্মবোধ কাজ করত না— শুধু মনে হতো, কোনো প্রাচীন সুর আমাদের ডেকে নিচ্ছে ঘরের বাইরে, আলোর দিকে।

উৎসবের দিনগুলোতে জামাকাপড় চাইলেই পেতাম এমন পরিবার নয় আমাদের, যখন পয়সা থাকত তখন কিনতাম, না-থাকলে যা ছিল তাই নিয়েই চলে যেত, তবু আনন্দ ছিল, আফসোস ছিল না।

ইসকুলেও আমরা একই বেঞ্চে বসতাম। একে অপরের বাড়ি গিয়ে খেতাম, পড়তাম, ঝগড়া করতাম, আবার কাঁদতামও। আমাদের শৈশবের গল্পে ধর্ম কোনো চরিত্র ছিল না— ছিল শুধুই মানুষ। দুপুরবেলায় পুকুরের জলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুব পেড়েছি, খেলেছি, আমবাগানে রাত দিন একসঙ্গে শুয়ে থেকেছি— সবকিছুতেই একটা মায়াময় বন্ধন ছিল।

মানুষের অসুস্থতার সময় রক্তের প্রয়োজন হয়েছে, আর গ্রামজীবন একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে— রক্ত দিয়ে, হৃদয় দিয়ে। কেউ কারও ধর্ম, জাত বা গোত্র-পরিচয় জানতে চায়নি। প্রয়োজন ছিল শুধু একটিই— মানুষের জীবন রক্ষা। এই মানবিক বন্ধনই আমাদের শেষ পরিচয়, শেষ আশ্রয়।

আজ এত বছর পর শহরে, ইট-কাঠের ভিড়ে দাঁড়িয়ে সেই শৈশব হাতড়ে ফিরলেই মনে হয়, আমরা যেন এক অলিখিত ধর্মগ্রন্থে জন্মেছিলাম— যার মূলমন্ত্র ছিল সহাবস্থান আর সহানুভূতির।

আমাদের শৈশবে কোনো প্রচারপত্র ছিল না, ছিল না কোনো আদর্শের নাম-লেখা— তবু তা নিজের ভেতরেই ছিল এক শ্রেষ্ঠ আদর্শের জন্মস্থান। আজ যখন সমাজে ধর্মের নামে বিভাজনের কথা শুনি, তখন এই স্মৃতিগুলোই আশ্রয় হয়ে ওঠে— প্রমাণ দেয়, একসঙ্গে বড়ো হয়ে ওঠা কেমন একটা চিরন্তন সম্ভাবনার নাম।

আমরা গরিব কৃষক পরিবারের সন্তান, ‘চাষা’র জন্মের ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেছি। আমাদের দিন শুরু হতো মাটির ভেজা গন্ধে, কোমরে গামছা পেঁচিয়ে খেতের আল পেরোনো দিয়ে। আমাদের কাছে সবচেয়ে জরুরি ছিল মাটির সঙ্গে সম্পর্ক, ঠিকঠাক সময়ে বৃষ্টি নামা, ফসল বাঁচানো। মা-ঠাকুমার হাতে রাঁধা পরিমাণমতো ভাত আলুভাজা আর ডাঁটার চচ্চড়ি। কখনও জমিতে হওয়া সরষের ঘানি ভাঙিয়ে আনা তেল-নুন-লঙ্কায় মাখা পান্তা ভাত। ধর্ম নিয়ে মাথাব্যথা করার অবকাশ ছিল না আমাদের— পেট ভরানো, পোষ্যের খাবার জোগানো, মাঠের আল বাঁধা, ঘাস নিড়ানো এসব নিয়েই দিন চলে যেত, ‘ধর্ম ধর্ম’ করব কখন! মা সব জানে, মনে করিয়ে দেয়, মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগেও আমি ধানের জমিতে জলের জন্য মেশিন চালিয়ে গেছি।

আমাদের বাবা-মায়েরা সংসারের বোঝা বইতেন, আমরা সঙ্গ দিতাম মাত্র। কিন্তু সেই বোঝার ভারে কেউ ধর্মের দেয়াল তুলে দেননি। চাষের  সময় কখনও পাড়ার মুসলমান পরিবারের মানুষের সঙ্গে বাবা খেত ভাগ করে নিতেন। ধর্ম ছিল না কোনো ব্যবধান, ছিল কেবল পরস্পরের প্রতি নির্ভরতা।

এইখানেই আমাদের শিকড়-সংলগ্নতা, এই আমাদের জন্মজড়ুল মাঠির ঠিকানা। এইখানেই আমরা মানুষ হতে শিখেছি— যেখানে মানুষ ছিল প্রধান, আর ধর্ম ছিল পারিপার্শ্বিক। ঠিক এই কারণেই আজও যখন কোনো বিভাজনের কথা শুনি, তখন বুকের গভীর থেকে উঠে আসে সেই ছেলেবেলার একান্ত সহজ অথচ গভীর

অনুভব— আমরা একসঙ্গে বড়ো হয়েছি, বিভেদের বেড়া আমাদের ছিল না, আজও নেই।

যারা ভেদরেখা লালন করেন মনে মনে,

একরকম নিঃশব্দ প্রতিবাদ তাদের সংকীর্ণ মানসিক সীমাচিহ্নের বিরুদ্ধে, আর একসঙ্গে বড়ো হয়ে ওঠার সৌন্দর্যের পক্ষে। আমাদের শরীর বড়ো হয়ে উঠেছে, আমাদের মধ্যে কোনো দেয়াল ছিল না, আর এখনও সে-দেয়াল গড়ার উপকরণ দেখি না। আপনারা থাকুন আপনাদের মানসিক সামর্থ্য নিয়ে। আমরা আজও লীন হয়ে মিশে আছি গ্রামের শরীর জুড়েই।

আমরা তখন ছোটো ছিলাম, গায়ে ইসকুলের পোশাক, পিঠে ভারী ব্যাগ— ব্যাগের ভেতর বস্তা, সেই বস্তা পেতেই বসে ইসকুলে ক্লাস হতো। কিন্তু মনটা হালকা, ফুরফুরে। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছাতাম ইসকুলে। কেউ কেউ টিফিনে নিয়ে আসত মায়ের বানানো রুটি, দু’মুখে গাডার পেঁচানো— রুটির গায়ে লেগে থাকা ছাইয়ের গন্ধে যেন শোনা যেত মাটির ঘরের গল্প। রুটির সঙ্গে থাকত কাঁচা লঙ্কা, পেঁয়াজবাটা, এক চিমটে নুন আর এক ফোঁটা সরষের তেল— ছোট্ট একটা রান্নাঘরের স্নেহময় ভালোবাসা।

কেউ কেউ শুধু শুকনো রুটিই আনত, সে-ও যেন কম ছিল না। আমরা বুঝতাম না খাদ্যের পরিমাণ, অল্প খেয়েই আমরা সুখী ছিলাম। খোঁজ করতাম স্বাদের ভেতরের গল্প।

ইস্কুলের পথে একটা রেশন দোকান পড়ত—

একধরনের আপনতায় ক্ষুদ্র হাতে সেখানকার চিনি আমরা চোখে চোখে তুলে নিতাম, খুব যত্নে— একমুঠো, দু’মুঠো নয়, কারণ আমাদের পকেট ছিল ছোটো, সাধ্যও। সেই চিনি লুকিয়ে রাখতাম জামার বুকপকেটে, যেন একটুকরো গুপ্তধন।

টিফিনের সময় সেই জামা খুলে দিতাম। কেউ রুটি বের করত, কেউ সেই চিনির ঝরা। তারপর সেই চিনি ছড়িয়ে দেওয়া হতো রুটির গায়ে, পরম যত্নে। ছিঁড়ে ছিঁড়ে ভাগ করে খাওয়া হতো—কোনো হিংসার চোখরাঙানি ছিল না, প্রতিযোগিতা ছিল না, ছিল শুধু একসঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার এক অনাবিল আনন্দ।

তখন আমরা বুঝতাম না জীবন কী, কিন্তু জানতাম কেমন করে না-থাকা জিনিসও ভাগ করে নেওয়া যায়। আমাদের বন্ধুত্ব, আমাদের টিফিন, আমাদের রুটির উপর ছড়ানো চিনি—সবকিছুই এক অভাবী সুখের নামান্তর। যেখানে রুটির সঙ্গে ছিল মায়েদের স্নেহ, চিনির সঙ্গে ছিল বন্ধুর আস্থা, আর প্রতিটি কামড়ে ছিল নির্ভেজাল জীবনের স্বাদ।

আজ এতদিন পরেও সেই গাডার জড়ানো রুটির গন্ধ, সেই চিনির মিষ্টতা, আর সেই ছেঁড়া রুটির ভাগ করে খাওয়ার মুহূর্তগুলোই যেন থেকে যায় জীবনের স্মৃতির ভাণ্ডারে।

পোয়াতি বিলের ধার ঘেঁষে ছড়িয়ে থাকা সবুজ মাঠে আজও বাতাসে মিশে থাকে কচি ধানের গন্ধ— যেন কৃষকের ছোটো ছোটো নিষ্পাপ সন্তান। এক নিঃশব্দ সৌরভ, যা আমাদের শৈশবকে জড়িয়ে রেখেছে গভীর মমতায়।

কেউ খালি পায়ে ছুটছে, কেউ গোরুর দড়ি ধরে হাঁটছে, কেউবা গুটিগুটি পায়ে মাটির পুতুলে সাজিয়ে তুলছে এক অনাড়ম্বর পৃথিবী। এই নির্মল জীবনের সান্নিধ্যেই গড়ে উঠেছে আমাদের শৈশবের পাঠশালা, আমাদের মনন। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে আমরা শিখেছি পরিশ্রম, সহমর্মিতা আর আত্মিক সৌন্দর্যের পাঠ। এই মাটিতেই, এমন সহজ জীবনের মধ্যেই, ছড়িয়ে গিয়েছেন চৈতন্যদেব তাঁর সমন্বয়ের বাণী— যেখানে প্রেম, ভক্তি আর মানবিকতা এক হয়ে উঠেছে ভূমিরই মতো উদার আর আলিঙ্গনক্ষম।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার”

  1. Nandini Adhikari says:

    ভারি সুন্দর লেখা

Leave a Reply to Nandini Adhikari Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন