রবিবার | ১লা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:০১
Logo
এই মুহূর্তে ::
কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস

অসিত দাস / ১৯১ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর লিখে গেছেন —

‘শাঁখা, শাড়ি, সিন্দুর,

চন্দন, পান, গুয়া

নাহি দেখি,

আয়তি কেবল আচাভুয়া৷’

সিঁদুরের সঙ্গে আয়তি বা এয়োতি তথা এয়োস্ত্রী রমণীর আবহমান কালের সম্পর্ক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও লিখেছেন,

“আমার লতার একটি মুকুল

 ভুলিয়া তুলিয়া রেখো- তোমার

 অলকবন্ধনে।

আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে

 একটি বিন্দু এঁকো- তোমার

 ললাটচন্দনে।”

হিন্দুশাস্ত্রমতে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে উল্লিখিত আছে শাঁখা-সিঁদুরের কথা। তুলসী দেবী এবং শঙ্খাসুরের সেই কাহিনী অনেকেরই জানা। সিন্ধুসভ্যতাতেও শাঁখা সিঁদুরের ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়। তবে লিঙ্গ নির্বিশেষেই সেখানে সিঁদুরের টিপ পরার প্রচলন ছিল। কিন্তু ইতিহাসের নানান তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাবে, এই রীতির প্রচলন হয়েছে আরো অনেক পূর্বে। এই রীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লিঙ্গ বৈষম্য এবং বর্বরতাও।

একটা সময়, অন্যান্য পণ্যের মতই নারীদেরও পুরুষের সম্পত্তি হিসাবেই চিহ্নিত করত সমাজ। আর অধিকারের চিহ্ন হিসাবে কপালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষত তৈরি করা হত। হাতে দেওয়া হত লোহার বেড়ি। কোমরে শিকল। যা ছিল নিজের অধিকারের সূচক। ‘নারী-লুঠ’-এর এই চিহ্নগুলিই পরবর্তীকালে সভ্যতা এগনোর সঙ্গে নাকি বদলে যায় শাঁখা-সিঁদুরে। ‘লোহা’ থেকেই আসে ‘নোয়া’ কথাটি। আবার লোহার বেড়-এর আরেক অর্থ আয়স্ত। সেখান থেকেই বিবর্তনজাত শব্দ ‘এয়োস্ত্রী’। অস্যার্থ বিবাহিত মহিলা।

কেউ কেউ বলেন, আদিমকালে কন্যাহরণের সময় যে যুদ্ধ হত, সেই যুদ্ধে জয়লাভকারী যুবক নিজের আঙুল কেটে রক্ত বের করে পরিয়ে দিত কন্যার সিঁথিতে। মূলত কন্যাটির ওপর নিজের অধিকার স্থাপনের জন্যেই এই রীতি। পরবর্তীকালে সেই রক্তফোঁটাই বদলে যায় সিঁদুরে। ইতিহাস ঘাঁটলে উঠে আসে এরকম আরও তথ্য।

মঙ্গলচিহ্ন বা পবিত্রতা কিংবা আয়ুবর্ধক হিসাবে এই রীতি তৈরি হলেও এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অধিকারবোধ এবং বীরত্বের ছদ্মপ্রতীক। সিঁদুর-শাঁখা সেই অধিকারবোধেরই সূচক। সে কারণেই হয়তো নারীদের জন্য এমন রীতির প্রচলন থাকলেও পুরুষদের জন্য তা নেই। পুরুষতন্ত্রেরই অবদান এই সিঁদুরপ্রথা।

একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে যখন গোটা দেশ নারী অধিকারের জন্য সরব হচ্ছে, সরকারের কথায় বার বার উঠে আসছে ‘মহিলাদের ক্ষমতায়ন’-এর কথা, তখন এই সিঁদুর রোমান্টিক সিরিয়াল ও সিনেমা ও যাত্রাপালার নামেও থাবা গেড়েছে। ‘সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হোক’, ‘সিঁদুর দিও না মুছে’ ইত্যাকার সিনেমাসিরিয়াল দুই বঙ্গেই ভূরি ভূরি তৈরি হচ্ছে।

এই সিন্দুর নিয়ে বাংলা প্রবাদ লালে লাল। অবশ্য মেটে সিঁদুরও ব্যবহার করেন মহিলারা, বিশেষত বিহার ও উত্তর প্রদেশের মহিলারা। এখন দেখা যাক কী কী প্রবাদ আছে সিন্দুর তথা সিঁদুর নিয়ে। তাহলে সিঁদুরের সামাজিক প্রেক্ষাপটটা বোঝা যাবে। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে যে ডরায়, তা সকলেরই জানা।

১.  আমানি খেয়ে দাঁত ভেঙেছে, সিঁদুর পরবি কিসে!

(দাঁতের সঙ্গে সিঁদুরের সম্পর্ক বোধগম্য নয় অবশ্য)

২. উটকপালী সিঁদুর চায়, খড়মঠেঙী ভাতার খায়!

৩.  খটমটিয়ে হাঁটে নারী, কটমটিয়ে চায়,

মাসেক খানের ভিতর তার সিঁথির সিঁদুর যায়।

৪. তেল দাও সিঁদুর দাও, ভবী ভোলবার নয়।

৫. ধান নেই চাল নেই, গোলাভরা ইঁদুর।

ভাতার নেই পুত নেই, কপালভরা সিঁদুর।।

৬. পাকা মাথায় সিঁদুর পরা।

৭. সধবা কপালে সিঁদুর পরে, বিধবার কপাল চড়চড় করে।

৮. সকলেই সিঁদুর পরে, কপালগুণে ঝলক মারে।

৯. কাকের মুখে সিঁদুরে আম।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, সিঁদুর নিয়ে সধবা ও বিধবাদের মধ্যে যেন একটা ‘লাগিয়ে দেওয়ার’ মানসিকতা কাজ করেছে প্রবচনকারদের মধ্যে। সিঁদুর যেন নারীর অঙ্গের শোভা না হয়ে পুরুষতন্ত্রের হাতের অস্ত্র হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।

দুর্গাপূজায় সিঁদুর খেলার চল বঙ্গে আগে ছিল না। যদিও দেবীবরণের অনুষ্ঠান বরাবরই ছিল। ইদানীং দুর্গাপূজার ভাসানের সময় সুবেশা নারীদের সিঁদুরখেলার প্রচলনের পিছনেও মনে হয় পুরুষশাসিত বিপণনজগতের কারসাজি আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস”

  1. অমৃতা আ says:

    আলোচনা টি ভালো লাগল।

  2. Asit Kumar Das says:

    অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন