বুধবার | ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:০৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাত্যায়নী ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৩০০ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪

শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালের লীলাকে বলা হয় বৃন্দাবন লীলা। ভাগবতে এই লীলা কথা অপরূপভাবে বর্ণিত আছে। নন্দরাজের দুই পুত্র — কৃষ্ণ ও বলরাম। যশোদার নয়নের মনি শ্যামসুন্দর গোপপল্লিতে বড় হয়ে উঠছে। নন্দরাজের গৃহে তিনি গোপ বালকরূপে যখন মাঠে ধেনু চরাতে যেতেন, মা যশোদার বড় ভয় হতো। তখন তিনি অন্যান্য গোপ বালকদের মিনতি করে বলতেন, ‘গোপাল বড়ই দুষ্টু ও চঞ্চল। গোচারণ ভূমি বনের ধারে, কোন অবস্থাতেই তোমরা যেন গোপালকে ছেড়ে কোথাও যেও না।’

গোপালকে কাছে টেনে মা যশোদা আদর করে বলতেন, ‘বাবা গোপাল, গোচারণে গিয়ে একতিলের জন্য গোপ বালকদের সঙ্গ ত্যাগ করো না।’ গোপাল মায়ের কথা শুনে মিটিমিটি হাসতো।

যশোদার উদ্বেগের কারণে, গোপ বালকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে দাদা বলরামের কাঁধে মাথা রেখে অদ্ভুত ভঙ্গিতে আদুরে গোপাল গোচারণ ভূমির দিকে চলতেন। পথে গোপ রমণী ও গোপগন তার এই অপূর্ব রূপ-লীলা দেখে আনন্দে তার বন্দনা করতেন।

গো দোহনের সময় চঞ্চল গোবৎসকে যে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় সেই রজ্জু বা দড়িকে বলা হয় ‘নির্যোগ’। আবার চঞ্চল গাভীকে দোহনের সময় যে রজ্জু দিয়ে বাঁধা হয় তাকে বলা হয় ‘পাশ’। ভগবতে বলা হয়েছে ছোট কৃষ্ণ গো দহনকালে যে ‘নির্যোগ’ ও পাশ ব্যবহার করতেন সেই ‘নির্যোগ’ আর পাশের রঙ ছিল হলুদ। সেই হলুদ বর্ণের ‘নির্যোগ’ ও পাশের প্রান্তে গ্রথিত থাকতো মুক্তারঝাড়। কৃষ্ণ বনচারণে যাওয়ার সময় তাঁর মাথার ‘নির্যোগটি উষ্ণিশের মতো করে বাঁধতেন আর কাঁধের উপর ফেলা থাকতো পাশটি। এই ‘নির্যোগ ও পাশের জন্য তার আকৃতি আরও মনোহর হয়ে উঠতো। তার সঙ্গে ছিল মুরলীধ্বনি। যে মুরুলীধ্বনি শুনে সকল গোপ রমনীরা মোহবিষ্ট হয়ে যেতেন।

গোপীরা বলতেন, ‘যার স্কন্ধে ও মস্তকে সর্বদা বন্ধনের জন্য পাশ ও ‘নির্যোগ’ শোভা পায়, সে আমাদের মনকে পাশ ও ‘নির্যোগ’ দিয়ে বেঁধে রেখেছে। সে বাঁধনকে অতিক্রম করে যাওয়ার সাধ্যি আমাদের নেই।’

ধীরে ধীরে সাত বছরের গোপাল একাদশ বছরের বালকে পরিণত হলো। গোপ রমণীরা সেই একাদশ বর্ষীয় ‘কানহা’র জন্য হয়ে উঠলো ব্যাকুল।

অনেক কুমারী গোপীদের সাথে ব্রজবাসিনি কৃষ্ণপ্রেমিকা শ্রীরাধিকা, চন্দ্রাবলী, ললিতা, বিশাখা এই বিবাহিত গোপীদের নাম পদ্মপুরাণে উল্লেখ আছে। হরিবংশে এঁদের কেই গোপকন্যা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। ভাগবতে বলা হয়েছে, এই কুমারীগণও কৃষ্ণ বিরহে প্রেমে ব্যাকুল। সকলেরই মনের আশা কখন কৃষ্ণের দেখা পাবে, স্বামী রূপে তাকে লাভ করবে।

যখন তাঁরা বিবাহযোগ্য, তখন কৃষ্ণ নিতান্তই বালক। তাহলে কি তাঁদের কৃষ্ণের সঙ্গে কখনও মিলন হবে না!! যার বিরহে এক তিলও জীবনযাপন করা অসম্ভব, অথচ তাকে স্বামী রূপে লাভ করা কখনোই সম্ভব হবে না– এ যেন সহ্যের অতীত। তাই গোপ কন্যারা কাঁদেন,গোপনে বসে একে অপরের কাছে মনের দুঃখের কথা বলেন।

একদিন বৃন্দাবনের অধীশ্বরী বৃন্দা গোপ কন্যাদের মলিন মুখ দেখে দুঃখ পেলেন। তিনি গোপকন্যাদের কাছে গিয়ে বললেন, ‘দেখো আমি বন থেকে তোমাদের অবস্থা, নিরন্তর পর্যবেক্ষণ করি। আজ তাই দয়াপরবশ হয়ে তোমাদের কাছে উপস্থিত হলাম। গোপকন্যাগণ, আমার কাছে কিছু সিদ্ধবিদ্যা আছে। এই সিদ্ধবিদ্যার সাহায্যে আমি পরম করুণাময়ী যোগমায়া মন্ত্র সাধন করেছি। আমি তোমাদের সেই মন্ত্র দেব। এর জন্য তোমাদের বেশি কষ্ট করতে হবে না। মাত্র এক মাসে তোমাদের কার্য সিদ্ধ হবে। এই বলে তপস্বিনী বৃন্দা গোপকন্যাদের কানে মন্ত্র প্রদান করে অন্তর্হিত হলেন। কুমারী গোপকন্যাগণ তখন পরম নিষ্ঠা করে সেই মন্ত্র জপ করতে লাগলেন এবং দীর্ঘ এক মাস ধরে বৃন্দার আদেশে অনুসারে কাত্যায়নী ব্রত পালন করলেন।

গোপীদের প্রার্থনা মন্ত্রটি হলো —

ওঁ কাত্যায়নী মহামায়ে মহাযোগিন্যধীশ্বরী।

নন্দগোপসূতং দেবী পতিং মে কুরুতে নমঃ।।

অনুবাদ — হে কাত্যায়নী, মহামায়া, মহাযোগীগণের অধীশ্বরী, আমরা বিশুদ্ধচিত্তে আপনার শ্ৰীচরণে প্রার্থনা করি। নন্দগোপসূত (শ্ৰীকৃষ্ণ)- কে যেন স্বামীরূপে লাভ করতে পারি, এই বর প্রদান করুন।

কার্তিক পূর্ণিমা থেকে অগ্রহায়ণ পূর্ণিমা পর্যন্ত তারা দেবী কাত্যায়নীর পুজো অর্চনা করলেন। এইভাবে গোপকন্যাগন কৃষ্ণকে স্বামীরূপে লাভ করার জন্য তপস্যা করেছিলেন।

বৃন্দাবন একটি মহাপীঠ। সেখানে মা দুর্গা বিরাজিতা ক্যাতায়নীরূপে। তিনি নবদুর্গা নামে পরিচিত দুর্গার নয়টি বিশিষ্ট রূপের মধ্যে ষষ্ঠ রূপ। জগৎজননী মা দুর্গা দেবী ক্যাতায়নীরূপে ভক্তদের কৃষ্ণ ভক্তি প্রদান করেন।

শ্রীকৃষ্ণকে প্রাণবল্লভ রূপে পাবার জন্য বৃন্দাবনের গোপীরা কার্ত্তিক মাস ব্যাপী আদ্যাশক্তি মা কাত্যায়নির পূজা করেছিলেন।

ভাগবত পুরাণের দশম স্কন্দের দ্বাবিংশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, হেমন্তের সূচনায় অর্থাৎ কার্তিক মাস জুড়ে ব্রজের ‘অবিবাহিতা গোপীগণ কাত্যায়নী ব্রত করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্বামী হিসেবে পেয়েছিলেন। এই একমাস তারা কেবলমাত্র মশলাবিহীন খিচুড়ি খেতেন এবং সকাল বেলা যমুনায় স্নান করে যমুনাতীরে মাটির কাত্যায়নী মূর্তি গড়ে চন্দন, দীপ, ফল, পান, নবপত্র, মালা ও ধূপ দিয়ে দেবীর পূজা করতেন। মনোমতো স্বামী প্রার্থনায় এক মাস ব্যাপী উপবাস করে কাত্যায়নী ব্রত পালন করা হয়। এই একমাস তাকে চন্দন, ধূপ, দীপ ইত্যাদি দিয়ে পূজা করা হয়।

এভাবে মাসব্যাপী দেবীর আরাধনার ফলে মা ক্যাতায়নী তুষ্ট হয়ে গোপীদের বর প্রদান করেন এবং বলেন — আগামী পূর্ণিমায় তোমাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হবে। সেই পূর্ণিমাই বিখ্যাত রাসপূর্ণিমা নামে পরিচিত।

গোপীদের আত্মসমর্পণ হল সমস্ত ধর্মের পরিপূর্ণতা। গোপীরা সকলেই সরল আত্মা ছিল, এবং কৃষ্ণ যা কিছু বলতেন, তারা সত্য বলে মনে করতেন। তাঁরা তাঁদের পূজ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করার জন্য অবিলম্বে তাঁর আদেশ মেনে চলতেন। এইভাবে তারা হয়ে ওঠে কৃষ্ণের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমিক, এবং তাঁর সবচেয়ে বাধ্য সেবক। গোপীদের কৃষ্ণভাবনার সাথে কোন কিছুরই তুলনা হয় না।

যারা এক মাস ব্যাপী এই ব্রত করতে পারবেন না, তাদের জন্য শ্রী কাত্যায়নী পূজার সময়সূচি ২০২৪ দেওয়া হলো।

৭ই নভেম্বর (২১শে কার্তিক) ও বৃহস্পতিবার মহাষষ্ঠী। ৮ই নভেম্বর (২২শে কার্তিক) শুক্রবার মহাসপ্তমী। ৯ই নভেম্বর (২৩শে কার্তিক) শনিবার মহাঅষ্টমী। ১০ই নভেম্বর (২৪শে কার্তিক) রবিবার মহানবমী।

নবদ্বীপর রাসযাত্রায় কাত্যায়নী মাতার পুজো হয়। এখানকার এই পুজো অনেকদিনের পুরোনো। প্রতিবছর রাসে আড়ম্বরপূর্ণভাবে এই পুজো হয়ে থাকে।

বিবাহযোগ্য মেয়েরা দ্রুত বাগদানের জন্য মা কাত্যায়নীর আশীর্বাদ পেতে এই ব্রত পালন করবেন। মা কাত্যায়নীর উপাসনা প্রেমের পথে বাধাগুলি দূর করে এবং ভক্তদের একটি ফলপ্রসূ ও সুখী বিবাহের আশীর্বাদ দেয়।

সম্পূর্ণ ভক্তি সহকারে কাত্যায়নী মন্ত্র জপ করলে কুন্ডলীতে মাঙ্গলিক দোষের প্রভাব নষ্ট হয় এবং বিবাহের শুভ সুযোগ আসবে।

মাতা কাত্যায়নী নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক এবং নারী শক্তির প্রতীক। প্রেমের দিক থেকে তাকে পূজা করা খুব উপকারী। বিশ্বাস করা হয়,সদ্য বিবাহিত জীবনে সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে, কাত্যায়নী মন্ত্র জপ করলে মন শান্ত হয় তারা একে অপরের সম্পর্কে আরও ভাল বোঝাপড়া তৈরি করতে পারে।।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন