সোমবার | ২৮শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৫৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী দুই দশক : শৈলেন মান্না ভরা বর্ষায় জলপ্রপাতের মুখোমুখি… : বিদিশি বসু দামোদর মাউজো-এর অনুবাদ গল্প ‘হরতাল’ বঙ্গে কুবেরের পূজা : অসিত দাস বাংলা সাহিত্যের দেবতারদের দেখা মেলে ওই ঘরেই : অশোক মজুমদার মালবাণকে ছুঁয়ে রূপোলী সমুদ্রসৈকতে : নন্দিনী অধিকরী মার্ক্সবাদ, মনোবিশ্লেষণ এবং বাস্তবতা : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক সাহিত্যের প্রাণপ্রবাহে নদী : মিল্টন বিশ্বাস এবার দুর্গা পুজোকেও ছাপিয়ে গেল রানাবাঁধের লক্ষ্মীপুজো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় দেড় হাজার বছর প্রাচীন ঘোষগ্রামের লক্ষীকথা : রিঙ্কি সমন্ত হুতোমের সময় কলকাতার দুর্গোৎসব : অসিত দাস নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘বৈতালিক’ কোজাগরীর প্রার্থনা, বাঙালির লক্ষ্মীলাভ হোক : সন্দীপন বিশ্বাস তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ ভাবাদিঘিতে ফের জোর করে বন্ধ করা হলো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর — অনেক বিদ্যাসাগর মাঝে তিনি একক : প্রলয় চক্রবর্তী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস

অসিত দাস / ৪২ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪

বৈদিক দেবতা অগ্নির বাহন হল মেষ বা ভেড়া। অনেক পশুপাখির মধ্যে ভেড়াকে বেছে নিয়ে নিজের বাহন করার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য কী ছিল, তা সহজেই অনুমেয়। নেকড়েদের হাত থেকে নিরীহ ভেড়ার পালকে রক্ষা করার জন্যই যেন স্বয়ং অগ্নিদেব উদ্যোগী হয়েছিলেন।

এখনও দুর্গাপূজায় হোম করার জন্যে ভেড়ার লোমের আসন ব্যবহার করা হয়। ফলে এই লোমের আসন তৈরি করা কারিগরদের কিছু অর্থ রোজগার হয় এই সময়।

মহাভারতের অনুশাসন পর্বে পিতৃপুরুষকে দেয় হবি নিয়ে ভীষ্ম বলেছেন, নিরামিষ হবি পিতৃপুরুষকে একমাস তুষ্ট করে, মৎস্য হবি দু’মাস তুষ্ট করে, ভেড়ার মাংস তিনমাস তুষ্ট করে।

মহাভারতে ভেড়ার মাংসের স্বাদও উল্লেখ করা হয়েছে। তা হল, মধুর ও লবণাক্ত।

ভেড়ার বেশ ধরে কেউ কাউকে হরণ করেছিলেন কিনা তা অবশ্য জানি না। তবে রামায়ণে সোনার হরিণের ছদ্মবেশে রাবণের সীতাহরণের কথা সকলেই জানে।

দোলের আগের দিন চাঁচর বা হোলিকাদহন অনুষ্ঠানে একটি খড়ের তৈরি ঘরে আস্ত ভেড়াকে রেখে আগুন ধরানো হত। এখন অবশ্য ভেড়ার বদলে ভেড়ার কুশপুত্তলি রাখা হয়। এর পশ্চাতে আসল পৌরাণিক কাহিনী মেঢ়কাসুর বধ।

ভেড়া থাবা গেড়েছে বাংলা প্রবাদেও। এক এক করে বলা যাক —

ভেড়া করে রাখা/ ভেড়াকান্ত

ভেড়া অতি নিরীহ প্রাণী; তাকে যে দিকে চালাও সে সেইদিকে চলে; এই লক্ষণায়- বশীভূত করে রাখা; একান্ত বশংবদ।
ভেড়া দিয়ে যব মাড়া সক্ষমলোকের কাজ অক্ষমলোক দিয়ে করানো; সমতুল্য — ‘ছাগল দিয়ে চাষ করা’; ‘ছাগল দিয়ে হাল টানা’।
ভেড়ার গোয়ালে আগুন লাগা গোয়ালে আগুন লাগলে ভেড়ার দল বিন্দুমাত্র পালাবার চেষ্টা করে না, কেবল চিৎকার করতে থাকে, লক্ষণায় — বিপদে প্রতিকারের চেষ্টা না করে কেবল কোলাহল করা।
ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল মুর্খের দলে অল্পজ্ঞানীরা গুরুত্ব পায়; যেখানে বিজ্ঞ লোক নেই সেখানে অল্পজ্ঞানীরা মাতাব্বরি করার সুযোগ পায়; সমতুল্য — ‘উলুবনে খটাশ বাঘ’; ‘বাঁশবনে শিয়াল রাজা’; ‘বৃক্ষহীনদেশে এড়েণ্ডাও বৃক্ষ’।
ভেড়ার পাল অন্ধভাবে অনুসরণকারী গোষ্ঠী; ব্যক্তিত্বহীন একদল লোক; যাদের স্বাতন্ত্র্যবোধ নেই, যাদের একজন যেদিকে যায় না বুঝে সবাই সেদিকে যায়।
ভেড়ার বেশে নেকড়ে বাঘ প্রচ্ছন্ন শয়তান; ছদ্মবেশী শত্রু;

ভেড়ার সংস্কৃত নাম গড্ডর। তা থেকেই এসেছে গড্ডরিকাপ্রবাহ বা গড্ডলিকাপ্রবাহ। গড্ডর শব্দটি বাংলায় হয়েছে গড়ের, গাড়র, গাড়ল।

কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘একটি মোটরকার গাড়লের মত গেল কেশে।’

কলকাতায় আছে গড়ের মাঠ, মানে ভেড়াচরার মাঠ। গড়ের ঘাট আছে হুগলির খানাকুলে।

১৭২৪ সালে কলকাতার বড়োবাজারে গড়ে উঠলো আর্মেনিয়ান হোলি ন্যাজারেথ চার্চ। আর্মেনিয়ানরা ২৫ ডিসেম্বরের বদলে ৬ জানুয়ারি পালন করে বড়দিন। বড়দিনের স্পেশাল খানা হত ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি পিলাফ। তার মানে খাদ্য হিসেবে ভেড়ার জনপ্রিয়তা সেই ষোল-সতেরো শতক থেকেই মুঘল ও আর্মেনিয়ানদের মধ্যে ছিল।

ব্রিটিশ আমলে ১৭৮০ সালে মিসেস এলিজা ফে নাম্নী এক অভিজাত কলকাতাবাসী রমণী ইংরেজদের খাদ্যাভ্যাসে ভেড়ার পিঠের সামনের দিকের মাংসের কদরের কথা জানিয়েছেন বিলেতে থাকা তাঁর বন্ধুকে লেখা পত্রে। ছোট ও বড়ো ভেড়ার দামও সে যুগে কত ছিল, তাও তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। মিসেস ফে-র চিঠিগুলি সংকলিত করে আস্ত একটি বইও লেখা হয়েছে ইংরেজিতে।

ভেড়া বঙ্গসাহিত্যেও স্থান পেয়েছে। রবীন্দ্র সাহিত্যে বারবার এসেছে ভেড়ার কথা।

এক গাঁয়ে কবিতাটি উল্লেখ্য —

“আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি

সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ।

তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি

তাহার গানে আমার নাচে বুক।

 

তাহার দুটি পালন-করা ভেড়া

চরে বেড়ায় মোদের বটমূলে,

যদি ভাঙে আমার খেতের বেড়া,

কোলের ’পরে নিই তাহারে তুলে।

 

আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,

আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,

আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে,

আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।

 

দুইটি পাড়ায় বড়োই কাছাকাছি,

মাঝে শুধু একটি মাঠের ফাঁক।

তাদের বনের অনেক মধুমাছি

মোদের বনে বাঁধে মধুর চাক।

তাদের ঘাটে পূজার জবামালা

ভেসে আসে মোদের বাঁধাঘাটে,

তাদের পাড়ার কুসুমফুলের ডালা

বেচতে আসে মোদের পাড়ার হাটে

 

আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,

আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,

আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,

আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।

 

আমাদের এই গ্রামের গলি ’পরে

আমের বোলে ভরে আমের বন।

তাদের খেতে যখন তিসি ধরে,

মোদের খেতে তখন ফোটে শণ।

তাদের ছাদে যখন ওঠে তারা

আমার ছাদে দখিন হাওয়া ছোটে।

তাদের বনে ঝরে শ্রাবণধারা

আমার বনে কদম ফুটে ওঠে।

 

আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,

আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,

আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,

আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।”

 

‘স্ত্রীর পত্র’ ছোটগল্পেও এসেছে ভেড়ার কথা।

“আমি বললুম, “না বিন্দি, তোর যেমন দশাই হোক্-না কেন, আমি তোকে শেষ পর্যন্ত ত্যাগ করব না।”

তিন দিন গেল। তোমাদের তালুকের প্রজা খাবার জন্যে তোমাকে যে ভেড়া দিয়েছিল, তাকে তোমার জঠরাগ্নি থেকে বাঁচিয়ে আমি আমাদের একতলায় কয়লা-রাখবার ঘরের এক পাশে বাস করতে দিয়েছিলুম। সকালে উঠেই আমি নিজে তাকে দানা খাইয়ে আসতুম; তোমার চাকরদের প্রতি দুই-একদিন নির্ভর করে দেখেছি, তাকে খাওয়ানোর চেয়ে তাকে খাওয়ার প্রতিই তাদের বেশি ঝোঁক।

সেদিন সকালে সেই ঘরে ঢুকে দেখি, বিন্দু এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছে। আমাকে দেখেই আমার পা জড়িয়ে ধরে লুটিয়ে পড়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।”

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর অবশ্য ভেড়া শব্দটি বিশেষ লেখেননি। ভেড়াকে তিনি লিখেছেন,‘গাড়র’। বোঝাই যাচ্ছে, গাড়র থেকেই এসেছে গাড়ল। জীবনানন্দীয় ‘গাড়ল’।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন