ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় দানা-র তাণ্ডবে হুগলির জনজীবন বিপর্যস্ত। চরম ক্ষতি ফসলের। ভয়াবহ বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই চাষিদের ঘাড়ে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। দানা উপকূলে আছড়ে পড়ার পরই ঝড় ও বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজ্য সরকার এর মোকাবেলা করতে রাস্তায় নেমেছে। আরামবাগের ছ’টি ব্লকই জলমগ্ন। কোথাও ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়েছে, কোথাও আবার রাস্তার উপর অজস্র গাছ ভেঙে পড়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উদ্ধারের কাজ চলছে। এখানে বন্যার ক্ষত এখনও শুকিয়ে যায়নি। এর উপর অসময়ে ঘূর্ণিঝড় অসংখ্য মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, জেলার আরামবাগ মহকুমা ছাড়াও অন্যান্য তিনটি মহকুমা চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর ও চন্দননগর মহকুমাতেও জনজীবন বিপন্ন এবং ফসলের ক্ষেত জলের তলায়। সবজি জলে ডুবেছে। চাষিদের মাথায় হাত। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ আরামবাগের ছ’টি ব্লক। আরামবাগ, খানাকুল, পুরশুড়ায় ও গোলাপের নিচু এলাকাগুলো বন্যার জল এখনও নামেনি। তার উপর ভয়াবহ বৃষ্টিতে ক্ষেতের ফসল জলের তলায়। এর উপর গতকাল ডিভিসি ৪২ হাজার কিউসেক জল ছাড়ায় এখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার নেবে। শঙ্কায় এখানকার মানুষ।
এদিকে জেলা জুড়ে উদ্ধার কাজে নেমেছে প্রশাসন । অসংখ্য মানুষকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। খাবার, পানীয় জল ও ত্রিপলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আউশ ধান কাটা শুরু করেছিল চাষিরা। সেই সমস্ত ধান জলের তলায়। এছাড়া আমন ধান প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় পড়ে গেছে। এগুলি সমস্ত নষ্ট হবে বলে চাষিরা আশংকা করছেন। চাষিরা জানান, অকাল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ সবজি। মুলো, পালং, নটে শাক থেকে শুরু করে ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, পটলের মতো সবজি বৃষ্টির জল সহ্য করতে না পারায় গাছের পাতায় পচন ধরেছে। নষ্ট হচ্ছে বিঘের পর বিঘে সবজি। এক- দু’মাস পরেই যে সবজি বাজারে আসার কথা, কিংবা এখনই নতুন যে সবজি বাজারে আসছে — সেগুলো সবই টাটকা সবজি। এবার সবজি নষ্ট হবে । চাষিরা পড়েছেন সঙ্কটে। গৃহস্থের রান্না ঘরে সবজির আকাল দেখা দিতে পারে। যেটুকু মিলবে, তা স্বাভাবিক দামের চেয়ে অনেক বেশি দাম হবে তা মনে করছেন চাষিরা।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে জল দাঁড়িয়েছে। অসময়ের বৃষ্টি খেতের সবজি যেমন নষ্ট করেছে, সেইসঙ্গে অর্থকরী প্রধান ফসল আমন ধানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর উপর পিছিয়ে যাবে আলু চাষ। কৃষি দফতরের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অসময়ের বৃষ্টির ফলে কপির পাতা, ফুল, পালং, নটে শাকে ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। পাতায় কালো কালো ছিট দাগ দেখা যাবে। তা ছাড়া ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, পটল সব গাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়েছে। নষ্ট হতে পারে সেই গাছ। নিচু এলাকায় সমস্ত সবজির ক্ষতির অশঙ্কা থেকেই যায়। বৃষ্টি কাটলেই ধসা রোগের প্রতিরোধে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। কৃষি বিশেষজ্ঞ গোপাল চন্দ্র সেতুয়া বলেন, প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত। একটু সচেতন হতে হবে চাষিদের। নিচু সবজি জমি থেকে জল নিকাশির দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে গোড়ায় পচন দেখা দেবে। শাক, ফুলকপির মতো সবজিতে মেঘ কাটলেই প্রতিষেধক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তা হলে অনেকটা রেহাই মিলবে। নতুন করে জমি তৈরির দ্রুত ব্যবস্থা করে পুনরায় সবজি চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া জেলাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। ওই জেলাগুলিতে প্রচুর সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে শহর ও শহরতলিতে সবজির জোগানও আগামী বেশ কিছুদিন কমতে পারে। বাজারে এ সবজির পরিমাণ কম থাকলেই দামও বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। এমনিতেই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে কাঁচা আনাজ ঢ্যাঁড়শ, পটল, ঝিঙে, করলা। যেভাবে সবজি নষ্ট হয়েছে, এরপর বাজারে প্রতিটি সবজির দাম বাড়ার আশঙ্ক থেকেই যাচ্ছে। তারক চক্রবর্তী, অমিত রায়’দের মতো মধ্যবিত্ত বাঙালির সাফ জবাব, বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়চ্ছে।এবার বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়েছে দামও বাড়বে।
আরামবাগ মহকুমা কৃষি আধিকারিক বলেন, অসময়ে বেশি বৃষ্টি ফসলের ক্ষতি করে। এবারে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে আমন ধান ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। তবে বাজারে – দাম বৃদ্ধির কোনও আশঙ্কা নেই। যে হারে এখন সবজি উৎপাদন হচ্ছে, তাতে দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়।