শুক্রবার | ২৫শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৫৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী দুই দশক : শৈলেন মান্না ভরা বর্ষায় জলপ্রপাতের মুখোমুখি… : বিদিশি বসু দামোদর মাউজো-এর অনুবাদ গল্প ‘হরতাল’ বঙ্গে কুবেরের পূজা : অসিত দাস বাংলা সাহিত্যের দেবতারদের দেখা মেলে ওই ঘরেই : অশোক মজুমদার মালবাণকে ছুঁয়ে রূপোলী সমুদ্রসৈকতে : নন্দিনী অধিকরী মার্ক্সবাদ, মনোবিশ্লেষণ এবং বাস্তবতা : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক সাহিত্যের প্রাণপ্রবাহে নদী : মিল্টন বিশ্বাস এবার দুর্গা পুজোকেও ছাপিয়ে গেল রানাবাঁধের লক্ষ্মীপুজো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় দেড় হাজার বছর প্রাচীন ঘোষগ্রামের লক্ষীকথা : রিঙ্কি সমন্ত হুতোমের সময় কলকাতার দুর্গোৎসব : অসিত দাস নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘বৈতালিক’ কোজাগরীর প্রার্থনা, বাঙালির লক্ষ্মীলাভ হোক : সন্দীপন বিশ্বাস তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ ভাবাদিঘিতে ফের জোর করে বন্ধ করা হলো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর — অনেক বিদ্যাসাগর মাঝে তিনি একক : প্রলয় চক্রবর্তী আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্কের শেকড় অনুবাদ ফাতিন ইশরাক নিয়ম নীতি আচারে লক্ষ্মী পূজার তোড়জোড় : রিঙ্কি সামন্ত আমার প্রথম বই — ঘুণপোকা : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘কে জাগ রে’ জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন একটি বিপ্রলম্ভের কবিতা : প্রসেনজিৎ দাস আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী রেখা দাঁ ও বিজ্ঞান আন্দোলন : দীপাঞ্জন দে
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব

বিজয়া দেব / ২৮ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪

জগদীশ গুপ্তের “নন্দ ও কৃষ্ণা” উপন্যাসটির আলোচনা প্রসঙ্গে শরৎচন্দ্র ও জগদীশ সৃষ্ট নারী চরিত্র সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনায় যদি যাই মনে হবে রাজলক্ষ্মী, অভয়া, সাবিত্রী প্রভৃতি চরিত্রে চিরাচরিত সতীত্ব সম্পর্কে ধারণাকে শরৎচন্দ্র মহিমান্বিত করতে প্রয়াসী ছিলেন, নারীসমাজের প্রতি সামাজিক অন্যায়কে তিনি পাঠকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন আবার কোথায় যেন সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে আপোষও করেছেন। পাশাপাশি জগদীশ গুপ্তের নারীচরিত্রকে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবেই আমরা পাই। তাদের ওপর কোনও আরোপিত মহিমা নেই। বরং মনে হয় এদের কথাবার্তা মানুষের মনের অবচেতন স্তরকে আলোকিত করতে বদ্ধপরিকর।

“নন্দ ও কৃষ্ণা” উপন্যাস পাঠে সচেতন অনুধাবন হয় যে, জগদীশ গুপ্ত ফ্রয়েডীয় মনোবিকলন তত্ত্বে প্রণোদিত ছিলেন। নন্দ নামে যুবকটি মণীন্দ্রবাবুর বাড়িতে ছেলে পড়ানোর কাজে বহাল হয় এবং আশ্রয় পায়। মণীন্দ্রবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণার প্রায় অনাবৃত দেহকে হঠাৎ দেখে ফেলে নন্দর মানসিক প্রতিক্রিয়া যেভাবে ঝড়ের মতো উথালপাথাল দিক পরিবর্তন করতে থাকে তারই স্বচ্ছন্দ বিন্যাস এই উপন্যাসটি। কৃষ্ণাকে নিয়ে এক অভাবনীয় স্বপ্ন দেখার পর সেই স্বপ্ন নন্দের ওপর শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করতে থাকে।

সেই স্বপ্ন ব্যাপারে লেখকের ব্যাখ্যা — “স্বপ্ন ব্যাপারটাই অলীক অর্থাৎ অমূলক, লোকে সাধারণত তাই বলে কিন্তু যার মূলের সন্ধান আপাতত প্রথম দৃষ্টিতেই পাওয়া গেল না, তাহাকেই অমূলক বলা বোধহয় সমীচীন নয়। মানুষের বিস্মৃত অন্বেষণ, যাচ্ঞা, যত্ন, অপূর্ণ ইচ্ছা, মুহূর্তের কি যুগব্যাপী গোপন আকাঙ্খা, শোনা গল্প, দেখা ঘটনা, অর্থশূন্য কল্পনা ইত্যাদি জোড়াতাড়া দিয়া জগাখিচুড়ি স্বপ্ন নাকি লোকে দেখে, ভালো দেখে, মন্দ দেখে, একটানা দেখে, ভাঙা দেখে, কোনোটার মানে হয়, কোনোটার তা হয় না, কিন্তু মূলে থাকে দ্রষ্টার চেতন কি সুপ্ত মনের কর্ম আর ক্রিয়া।”

শেষ পর্যন্ত জানা যায়, কৃষ্ণা মণীন্দ্রবাবুর বিবাহিত স্ত্রী নয়, রক্ষিতা। বিবাহিত নন্দ ভাবত, স্ত্রী মমতার মৃদু এবং কোমল ভালবাসাই তার জীবনের সবদিক পরিপূর্ণ করে রেখেছে। এই ভালবাসার বোধ যে কত ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর কৃষ্ণার দৈহিক রূপ তাকেই সপ্রমাণ করে। রূপের মোহ এবং আবার কৃষ্ণাকে সেই রূপে দেখার আকাঙ্খা নন্দর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে বিস্রস্ত করে দেয়।

অপরদিকে কৃষ্ণা, নন্দের খাবার সময় উপস্থিত হয়ে নন্দকে হুকুম দেয়, “আমার হুকুম, পালাবেন না, আমাকে যেমন দেখেছেন তেমনি দেখা আমার ভালো লাগে, আপনাকে আরো — আপনি নির্বোধ, তাই দিশে পান না।

কৃষ্ণা আগাগোড়া স্বৈরিণী, আরোপিত সতীত্ববোধে কোথাও দ্বিধাগ্রস্ত নয়, কৃষ্ণার মা ছিল মণীন্দ্রের খুড়োর রক্ষিতা, তার মধ্যে ফুটে উঠেছে জননীত্ব, স্বৈরিণী হলেও জননীর স্বাভাবিক বৃত্তিতে সে উজ্জ্বল। নারী তার নারীত্বের মধ্যেই স্বচ্ছন্দ বিচরণ করেছে “নন্দ ও কৃষ্ণা” উপন্যাসে। নন্দর স্ত্রী মমতা তার সংলাপের মধ্যেই ভারি কৌতুকাবহ ও ইঙ্গিতময়। কৃষ্ণাকে স্বপ্নে দেখার পর নন্দর মানসিক গতিপ্রকৃতি তীব্রগতিতে কৃষ্ণার রূপ দেখার জন্যে আকুল হয়ে যখন আবার মণীন্দ্রবাবুর বাড়িতে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন ঠোঁটের কোণে তার ফুটে উঠেছে মৃদু মৃদু হাসি। মমতার তা নজর এড়িয়ে যায় না। জিজ্ঞেস করে – হাসছ যে অমন করে?

— কেমন করে?

— বদমতলবী লোকে মতলব ঠিক করে ফেলার পর ঐ রকম দুষ্ট ফুর্তির হাসি হাসে।

তারপর, ও বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে নন্দ যখন স্ত্রীকে বোঝায়, অন্য লোককে ছেলে পড়াতে মণীন্দ্রবাবু বহাল করে নিয়েছে কারণ মণীন্দ্রবাবু চেয়েছিলেন, নন্দ স্ত্রীকে বোঝায় — ” আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীর কথা নিয়ে উল্লাস করার সুবিধে ভেবে হয়তো কিম্বা —

বাধা দিয়ে মমতা নির্লিপ্ত সহজ গলায় বলে ওঠে — ‘তার স্ত্রীকে নিয়ে তুমি উল্লাস করতে যাও নি তো? ‘

এই গল্পটিতে দেখা যাচ্ছে, প্রেমের চিরাচরিত মূল্যবোধ ধ্বসে পড়েছে তাসের ঘরের মতো। যৌনতার তীব্রতা যেমন পুরুষের মধ্যে সহজাত, তেমনই সহজাত নারীর মধ্যেও। তবু সামাজিক চোখরাঙানির কাছে কিছুটা আপোষ তো করতেই হয়েছে লেখককে, কৃষ্ণাকে দেখাতে হয়েছে মণীন্দ্রবাবুর “রক্ষিতা” হিসেবে। স্ত্রী হিসেবে নয়।

সামাজিক মানুষের অভ্যন্তরের দুর্বলচিত্ততা, রূপতৃষ্ণা ও কামনার প্রাবল্যকে প্রেমের শক্তি দিয়ে ঢাকবার অযথা প্রয়াস না থাকা নন্দর ভীরু মন ভাবে –

“ভদ্র বলিয়াই সে ভীরু এবং ভদ্র আর ভীরু বলিয়া যে বস্তু সে ত্যাগ করিয়া আসিয়াছে তাহার তুলনা নাই, তার তুল্য বন্ধন, অত্যাজ্য সম্পদ সংসারে নাই।”

স্ত্রী মমতার ভালবাসার পুনর্বিচার করে সে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে —

“মমতা একটু ম্লান এই হিসাবে যে সে কখনো হৃদয় উন্মুখ করিয়া দিয়া কলকণ্ঠে আহবান করে নাই, স্বামীর প্রতি তার যা অবিস্মরণীয় কর্তব্য তাহাই সে মনপ্রাণ নিবিষ্ট করিয়া নিষ্ঠার সহিত কায়মনোবাক্যে দিবারাত্রি পালন করিতেছে, সে অধর্মাচরণ করে নাই, কিন্তু আকাঙ্ক্ষার উদ্দাম বেগ আর প্রাপ্তির পরমোল্লাস সে সৃষ্টি করে নাই…..”

মনুষ্যোচিত স্বাভাবিক চাহিদাকে ঢেকে তাকে সুন্দর এবং মহান দেখাবার প্রয়াসের পিছনে উদ্দেশ্যমূলকতা কাজ করে তাতে সন্দেহ নেই, সেই উদ্দেশ্য হলো বৃহত্তর সমাজকল্যাণবোধ, রবীন্দ্রোত্তর সাহিত্যধারায় সেই উদ্দেশ্যমূলকতাকে ভেঙে চুরমার করার সচেতন প্রয়াস শুরু হয়, যার অন্যতম রূপকার জগদীশ গুপ্ত।

পল্লীজীবনচিত্র ভিত্তিক উপন্যাস “রোমন্থন ” সম্পর্কে লেখক বলছেন – “ইহাতে প্লট নাই-আমার বক্তব্য ব্যক্ত করিয়াছি মাত্র, গল্প তৈরি করা আমার উদ্দেশ্য নয়। ঘটনাগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন, কিন্তু একস্থানে যাইয়া জল প্রসব করিতেছে… উপন্যাস বা গল্পের সংজ্ঞার অধীনে আনিয়া ইহাদের বিচার না করিয়া প্রবন্ধ হিসাবেই যদি কেহ ইহার বিচার করে, তবে আমি বিস্মিত হইব না।”

“রোমন্থন” উপন্যাসই। অবশ্যই প্রবন্ধ নয়। আগাগোড়া নিরবচ্ছিন্ন প্লট নেই সত্যিই, তবে আধুনিক সংজ্ঞার নিরিখে এইটি উপন্যাস। পল্লী, নগর, অরণ্য, নদী, সমুদ্র, পাহাড় এবং মানুষের চেতন, অচেতন, অর্ধচেতন এবং অবচেতন মনের মিথষ্ক্রিয়া খন্ড বিখন্ড অবস্থায় থেকেও গল্প উপন্যাসের বিষয় হয়ে উঠতে পারে, আধুনিকতা পরবর্তী গল্প উপন্যাস বিশ্লেষণের ধারা তাকে সপ্রমাণিত করেছে।

“রোমন্থন” উপন্যাসে দেখতে পাই, পল্লী অঞ্চলের প্রতিটি চরিত্রই একেকটি স্বতন্ত্র সত্তা এবং এই স্বতন্ত্র সত্তাগুলি কিন্তু কেন্দ্র বিমুখ নয়, কেন্দ্রের প্রভাব তাদের ওপর রয়েছে।

কলকাতাবাসী তিনভাই পল্লী অঞ্চলের বসতবাড়িতে বাস করতে এসেছিল। ইংল্যান্ডপ্রবাসী জ্যেঠামশাই-এর “পল্লীগ্রামে যাও” আদেশে শিক্ষিত তিন শহুরে ভাইএর পল্লীগ্রামে এসে পল্লীজীবন সম্পর্কে তিনধরণের ধারণা হলো — বড়ভাইয়ের কাছে বাংলার পল্লী ছিল বিশেষ একটি অত্যাশ্চর্য ছাঁচ, বাস্তবে পল্লীর স্বরূপ দেখে মনে হলো পূর্বের ভাবমূর্তির বিকৃতি। মেজভাই এর মনে হলো পল্লীগ্রাম আত্মকেন্দ্রিক, কুঁড়ে এবং ঝিমুনির দোষে মাদকতাহীন, ছোটভাইয়ের মনে হলো ‘গোধূলি’ শব্দটি উদিত হলো বৃক্ষবীথিকার দু-ধারে অন্ধকার এবং মাঝখানে “বিহসিত আলোর চঞ্চল ধারা” দেখে। এই প্রথম তার উপলব্ধি হলো তার নিজস্ব মনটি কবির।

পল্লীগ্রামের বিভিন্ন চরিত্র ধীরে ধীরে তাদের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়ে আসতে লাগলো, অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে এরা যা ঝগড়া বাধায় তা মারাত্মক, তিন ভাইয়ের মনে হলো এরা ভয়ানক নীচ, স্বার্থপর, আত্মকলহে পরস্পর এমনভাবে লিপ্ত যে এরাই পল্লীর আবহাওয়াকে দূষিত করছে এবং আলোকিত পৃথিবীর অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে। বড়ভাই মিষ্টি কথায় এমনভাবে এদের ঝগড়াঝাটি সমাধান করতে প্রয়াসী হন যে যার পেছনে থাকে শুধু আইনি কূটকচাল, সমাধান নয়। পল্লীগ্রামের আকর্ষণীয় চরিত্র কালোশশী, যেন শহুরে বাবুদের চরিত্র উদঘাটিত করার জন্যেই ইচ্ছাকৃতভাবেই গ্রামের লোকদের নিয়ে আসে। আবার ধমক দিয়ে সঙ্গের লোকদের বলে — “তখনই বলেছিলাম, বাবুদের তোরা বিরক্ত করিসনে, ওদের কাছে নিয়ে আয় আইনের তর্ক, ব্যাখ্যা করে জলের মতো বুঝিয়ে দেবেন….” ইত্যাদি।

খবরের কাগজ এখানে এসে পৌঁছয় না, তিনভাই এর ভয় হয় আরও কিছুদিন থাকলে তারা সভ্যজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সবশেষে গ্রামের এক মহিলা বিচারপ্রার্থী হয়ে আসে। সে অবলীলায় তার মেয়ে ও জামাতার সম্পর্কে গর্হিত কথা সব বলতে থাকে। তারপর অভয় নামে এক আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ একটি লোক চড় মেরে তার রোগা অসুস্থ মেয়েটাকে খুন করে ফেলে এবং শেষ পর্যায়ে জানা যায় কালোশশী নামে লোকটা চোর।

তিনভাই ভাবে, প্রকৃতি যেখানে অফুরন্ত অবাধ হয়ে আছে, সেখানে গ্রামের লোকগুলো এত নীচ হয় কি করে! “শ্রুতি উৎপীড়ক” প্রতিটি গন্ডগোলই যে মূলত শিক্ষা ও অর্থের অভাব তা তারা তলিয়ে দেখে না, দেখতে সক্ষম হয় না। বড় ভাইয়ের মনে হয়, শহরে ফিরে যাওয়াই উচিত। গ্রামের মানুষ তাদের এরপর অপছন্দ করবে, কেননা তারা না পারছে এদের সঙ্গে মিশতে, না পারছে বুঝতে অর্থাৎ বড়ভাই উপলব্ধি করে গ্রাম ও শহরের মধ্যেকার ব্যাপক দূরত্ব।

জগদীশ গুপ্ত পল্লীগ্রাম বলতে দারিদ্র নিষ্পেষিত পল্লীজীবন তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি নিয়ে এসেছেন শহুরে মানুষদের আত্মসর্বস্বতা, উপলব্ধির অবক্ষয়, ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে এড়িয়ে যাবার স্বভাব। শহর ও গ্রামের মধ্যে নিদারুণ বিচ্ছিন্নতাই গল্পটির কেন্দ্রবিন্দু। (ক্রমশ)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন