বুধবার | ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:০১
Logo
এই মুহূর্তে ::
সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী দুই দশক : শৈলেন মান্না ভরা বর্ষায় জলপ্রপাতের মুখোমুখি… : বিদিশি বসু দামোদর মাউজো-এর অনুবাদ গল্প ‘হরতাল’ বঙ্গে কুবেরের পূজা : অসিত দাস বাংলা সাহিত্যের দেবতারদের দেখা মেলে ওই ঘরেই : অশোক মজুমদার মালবাণকে ছুঁয়ে রূপোলী সমুদ্রসৈকতে : নন্দিনী অধিকরী মার্ক্সবাদ, মনোবিশ্লেষণ এবং বাস্তবতা : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক সাহিত্যের প্রাণপ্রবাহে নদী : মিল্টন বিশ্বাস এবার দুর্গা পুজোকেও ছাপিয়ে গেল রানাবাঁধের লক্ষ্মীপুজো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় দেড় হাজার বছর প্রাচীন ঘোষগ্রামের লক্ষীকথা : রিঙ্কি সমন্ত হুতোমের সময় কলকাতার দুর্গোৎসব : অসিত দাস নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘বৈতালিক’ কোজাগরীর প্রার্থনা, বাঙালির লক্ষ্মীলাভ হোক : সন্দীপন বিশ্বাস তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ ভাবাদিঘিতে ফের জোর করে বন্ধ করা হলো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর — অনেক বিদ্যাসাগর মাঝে তিনি একক : প্রলয় চক্রবর্তী আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্কের শেকড় অনুবাদ ফাতিন ইশরাক নিয়ম নীতি আচারে লক্ষ্মী পূজার তোড়জোড় : রিঙ্কি সামন্ত আমার প্রথম বই — ঘুণপোকা : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘কে জাগ রে’ জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন একটি বিপ্রলম্ভের কবিতা : প্রসেনজিৎ দাস আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী রেখা দাঁ ও বিজ্ঞান আন্দোলন : দীপাঞ্জন দে বাংলা উপন্যাসে নিম্নবর্গ : মিল্টন বিশ্বাস বদলে যাওয়ার অসুখ : বিষ্ণু সরকার বিবেকের মুখ : পার্থ রায় কল্লোলের কাল : তপন মল্লিক চৌধুরী দশমীর বিকেল, জলঙ্গী নদীতীরে মেলবন্ধনের আনন্দমুখর ছবি : অমৃতাভ দে
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কোজাগরীর প্রার্থনা, বাঙালির লক্ষ্মীলাভ হোক : সন্দীপন বিশ্বাস

সন্দীপন বিশ্বাস / ৫৭ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪

আমাদের সাধারণ মধ্যবিত্তদের লড়াই সঙ্কুল জীবনে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ সেভাবে মেলে না। তবুও আমরা প্রতিদিনের খুদকুঁড়োর মধ্যে বেঁচে থাকার আনন্দটুকু অনুভব করি। মনে হয়, এটাই যেন মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ, নাহলে হয়তো এটুকুও পেতাম না। এভাবেই অদৃষ্টবাদের সঙ্গে সখ্য করে বেঁচে থাকি আমরা, মানে সমাজের অন্তত নব্বই শতাংশ মানুষ। ছন্নছাড়া, হা-হতোস্মি জীবনের মধ্যেও লক্ষ্মীছেলের মতো স্থায়ী সুখ অনুভব করতে শিখে গিয়েছি। আমরা কালী, শীতলা, শনিদেবের সঙ্গে মা লক্ষ্মীরও আরাধনা করি। প্রার্থনা করি ধনসম্পদের। সেই তাগিদেই আজ ঘরে ঘরে কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা হবে। আমরা প্রার্থনা করব, ‘মাগো, ধন দাও, সম্পদ দাও! আমাদের লক্ষ্মীলাভ হোক।’ কিন্তু ঘরে ধন-সম্পদ আগমের জন্য যে উদ্যমটুকু দরকার, তার ধারকাছ দিয়েও আমরা ঘেঁষতে রাজি নই।

অথচ সেই প্রাচীন কাল থেকেই আমরা লক্ষ্মীলাভের জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে পরিশ্রম করে চলেছি। কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের উদ্যমহীনতা ও দূরদৃষ্টির অভাবের কারণে লক্ষ্মী চঞ্চলা হয়েছেন। আমাদের বাংলার অতুল সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। প্রাচীন কালে যে ব্রাহ্মণ্য ধর্মশাস্ত্র দেখি, সেখানে মূলত তিনটি বৃত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, কৃষি, পশুপালন এবং বাণিজ্য। সেইসঙ্গে বাঙালি কারিগরি শিল্পেও নিজের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছিল। বিভিন্ন প্রাচীন প্রমাণ থেকে কিংবা ইবন বতুতা সহ বেশ কয়েকজনের লেখা থেকে জানা যায় বাঙালির বাণিজ্য উদ্যমের কথা। আমাদের এই বাংলা থেকে বহু খাদ্যশস্য, মশলা, আখ, গুড়, পান, সুপুরি, চিনি, লবণ,এলাচ, লবঙ্গ, মসলিন বিদেশে রপ্তানি করা হতো। এছাড়া, তেজপাতা, সুগন্ধী তেল যেত মিশরের বিখ্যাত বন্দর আলেকজান্দ্রিয়ায়। বাঙালির কৃষিদক্ষতা, কারিগরি দক্ষতা, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা, হস্তশিল্প সংক্রান্ত দক্ষতা ছিল অপরিসীম। কারুশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, অলঙ্কার শিল্প কাংসশিল্পে বাঙালির দক্ষতা ছিল সন্দেহাতীত। এছাড়া বয়নশিল্পে বাঙালির খ্যাতি ছড়িয়েছিল সারা বিশ্বে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বাংলার এন্ডি, মুগা এবং কার্পাসজাত বস্ত্রের সুখ্যাতি করা হয়েছে। মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে আমরা চাঁদ সদাগর ও ধনপতি সদাগরের বাণিজ্য যাত্রার কথা পাই।

বাঙালির শিল্প ও বাণিজ্যের অবনতি ঘটতে থাকে মুঘল আমল থেকে। পরবর্তীকালে ইংরেজ আমলে সেই পতন ত্বরান্বিত হয়। বাংলার বাণিজ্যের মূল শক্তি ছিল গঙ্গা এবং সরস্বতী। সরস্বতী নদী যতদিন বহমান ছিল, ততদিনই সপ্তগ্রামের বন্দরে এসে দাঁড়াত অসংখ্য পণ্যবাহী জাহাজ। পাঠানরা বেশ কয়েকবার সপ্তগ্রাম লুট করেছিল। ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মুঘলরা হুগলি দখল করার পর থেকেই সপ্তগ্রামের ধ্বংস শুরু হয়। পরবর্তীকালে দেখা যায় বাঙালি লক্ষ্মীর সাধনা ছেড়ে জমিদারি পত্তনের দিকে ঝুঁকল। পরিশ্রম কম, অথচ আয়েস বেশি। তাই অর্থবান বাঙালি বাণিজ্যপ্রীতি হারিয়ে জমিদারির পায়রা ওড়ানো, বুলবুলির লড়াই আর বাঈনাচের মধ্যে জীবনের সারবত্তা খুঁজে পেল। আর মধ্যবিত্ত বাঙালি মাথা কুটতে লাগল একটা চাকরির জন্য। ফলে স্বদেশি শিল্পের ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটতে লাগল।

তা সত্ত্বেও পরবর্তীকালে আমরা পেয়েছি বহু বাঙালি উদ্যোগপতি। এঁদের মধ্যে আবার অনেকেই জমিদার শ্রেণির। লটারিতে টিকিট কিনে জয়ী হয়েছিলেন গোকুলচাঁদ মিত্র। তাঁর ছিল লবণের ব্যবসা। পাশাপাশি তিনি সাহেবদের পোষা ঘোড়ার জন্য খাদ্য সরবরাহ করতেন। লবণ ব্যবসায় পয়সা কামিয়েছিলেন দয়ারাম বসুও। তিনি ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবণের পাবলিক সেলের চিফ এজেন্ট।

জাহাজ ব্যবসা করে ঘরে লক্ষ্মীকে বেঁধে রেখেছিলেন রামদুলাল সরকার। দত্তবাড়ির পাঁচ টাকার বেতনের কর্মচারী নিজের বুদ্ধিমত্তায় কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন। তাঁর দুই পুত্র ছাতুবাবু ও লাটুবাবু। রামদুলালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছিলেন নিমতলার গঙ্গাধর মিত্র। তাঁর পাঁচ ছেলের মধ্যে একজন হলেন প্যারীচাঁদ মিত্র। ডিরোজিওর ছাত্র প্যারীচাঁদ সেকালের এক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। নিজের ব্যবসা ছাড়াও তিনি ইংরেজদের কয়েকটি কোম্পানি যেমন গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল, বেঙ্গল টি কোম্পানি, হাওড়া ডকিং কোম্পানি লিমিটেডের ডিরেক্টর হয়েছিলেন।

ইংরেজ ব্যবসায়ী জোব চার্নককে কলকাতায় আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন সপ্তগ্রামের রাজারাম মল্লিক। তিনিও ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী। তাঁর প্রপৌত্র নিমাইচরণ মল্লিক বা নিমু মল্লিকও ছিলেন বড় ব্যবসায়ী। মহীশূর যুদ্ধের সময় ইংরেজরা তাঁর কাছ থেকে আটচল্লিশ লক্ষ টাকা ধার করেছিল। শর্ত ছিল ষাট টাকায় সুদ দিতে হবে চল্লিশ টাকা। নিমু মল্লিকের প্রপৌত্র ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ মল্লিক বা ডি এন মল্লিক। চায়ের ব্যবসা করে তিনি বিশাল সম্পত্তি বানিয়েছিলেন। বাঙালিদের মধ্যে তিনিই প্রথম রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা শুরু করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদু দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন ব্যবসায় অত্যন্ত বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তাঁকে বলা হয় আধুনিক কর্পোরেট মনস্ক মানুষ। আফিম, রেশম, কয়লা, লবণ চিনি থেকে জাহাজের ব্যবসা সবেতেই তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন। ব্যাঙ্কের ব্যবসাও তিনি শুরু করেন। কার অ্যান্ড টেগোর কোম্পানিতেও তাঁর শেয়ার ছিল। তিনিই প্রথম মনে করেছিলেন বাঙালির বাণিজ্যের উন্নতির জন্য দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি দরকার।

সেই সময়ের এক ব্যবসায়ী প্রীতিরাম মাড় বর্তমান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাঁশ ঝাড় কিনে সেই বাঁশ বেচে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেন। তিনি কাস্টমস হাউসে চাকরি করতেন এবং পাশাপাশি চালের ব্যবসাও করতেন। পরে তাঁরা দাস পদবি গ্রহণ করেন। প্রীতিরামের পুত্রবধূই হলেন রানি রাসমণি।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বাঙালিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য ব্যবসার কথা বলেছিলেন। তিনি জানতেন, বাণিজ্যই আমাদের সমৃদ্ধির দরজা খুলে দিতে পারে। বাঙালিকে আবার হীনমন্যতা দূর করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে বাণিজ্যের পথে যেতেই হবে। তিনি শুধু উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। নিজেও একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন। বেঙ্গল কেমিক্যাল তৈরি করে হয়েছিলেন সফল উদ্যোগপতি। মাত্র ৭০০ টাকার পুঁজি নিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আজও সেই ব্যবসা এগিয়ে চলেছে।

১৮২০ সালের মধ্যে বড়বাজার হয়ে উঠল ভারতের বৃহত্তম পাইকারি ব্যবসার কেন্দ্র। এখান থেকে সারা দেশে মাল পাঠানো হতো। সে সময় দেখা যাচ্ছে, এখানে ৫৯ জন বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা করছেন। তাঁদের মধ্যে ২৩ জনই ছিলেন বাঙালি। মূলত ১৮৭৬ সালের পর থেকে সারা ভারতের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ব্যবসার ঘাঁটি একে একে দখল করতে লাগলেন। তৎকালীন বোম্বাই, উত্তরপ্রদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে লাগলেন। এরপর এলেন গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ থেকেও বহু ব্যবসায়ী। তারপর এল যোধপুর এবং মারওয়াড় থেকে। বড়বাজারের দখলদারি হারাতে থাকে বাঙালি।

১৮৩১ সালে কলকাতার ব্যবসার জগতে একটা বড় ধাক্কা নেমে আসে। একসময় নীল চাষের দৌলতে সাহেবরা এই শহরে বড়বাজারের আশপাশে অনেকগুলি এজেন্সি হাউস গড়ে তুলেছিল। তারা নীল ব্যবসায় প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু মন্দার কারণে নীলের দাম কমে গেল। বহু কোম্পানি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে বন্ধ করে দিল। এই সব এজেন্সির সঙ্গে ব্যবসা করতেন যেসব বাঙালি, তাঁরাও বিপাকে পড়ে গেলেন। একটা হিসাবে দেখা যাচ্ছে আনন্দমোহন পাল ও সুবলচন্দ্র পালের ক্ষতি হয়েছিল দেড় লক্ষ টাকা, রাধামোহন পাল ও কৃষ্ণমোহন পালের ক্ষতি হয়েছিল এক লক্ষ টাকা, গঙ্গাগোবিন্দ শীল ও হরগোবিন্দ শীলের ক্ষতি হয়েছিল আড়াই লক্ষ টাকা, বিশ্বম্ভর পাইন ও চন্দ্রকুমার পাইনের ক্ষতি হয়েছিল ষাট হাজার টাকা, রামনারায়ণ দে ও মাধবচন্দ্র দে’র ক্ষতি হয়েছিল আড়াই লক্ষ টাকা, মথুরামোহন সেনের ১৩ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছিল এবং সুবলচন্দ্র নন্দীর ক্ষতি হয়েছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। এই ক্ষতি বাঙালির ব্যবসা মানসিকতার ওপর চরম আঘাত হানল। অনিশ্চিত বাজার নিয়ে সংশয় দেখা দিল। তখন ইংরেজদের বহু ব্যবসা কলকাতার মারোয়াড়িরা কিনে নিতে থাকেন। বহু বাঙালি ব্যবসায়ীও আর ভরসা না করে ব্যবসা বিক্রি করে দেন। সেগুলিই কিনে নিতে থাকেন কলকাতার অবাঙালি ব্যবসায়ীরা। এভাবেই বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মীর তত্ত্বকে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল বাঙালি। ব্যবসার অনিশ্চিত জীবন ছেড়ে বাঙালি ঢুকে পড়তে চাইল চাকরির নিশ্চিত খোপে। ক্রমে ক্রমে সরে গেল সে লক্ষ্মীর সাধনা থেকে।

অথচ বাঙালি খুব ভক্তিভরে ঘরে ঘরে লক্ষ্মীর পুজো করে। কোজাগরী পূর্ণিমায় নিজের সামর্থ্যটুকু উজাড় করে মা লক্ষ্মীর পুজো করে। আলপনায় সাজায় তার ঘর, উঠোন, আঙিনা। লক্ষ্মীর পা আঁকে, ধানের ছড়া আঁকে, পদ্ম আঁকে, মাছ আঁকে। এই আলপনার মধ্য দিয়ে যেন বিমূর্ত ওঠে বাঙালির প্রার্থনা, এসো মা লক্ষ্মী, বোসো ঘরে, আমার এই ঘরে থেকো আলো করে কিংবা সেই শাশ্বত আর্তি প্রকাশ পায়, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। আজ কোজাগরীর জ্যোৎস্নাপ্লাবিত রাতে বাঙালি তার লক্ষ্মী আরাধনার মধ্য দিয়ে এই সামান্য আর্তিটুকই মায়ের কাছে প্রকাশ করবে। ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে / সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোস্তুতে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন