শনিবার | ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:০৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘প্রাতঃভ্রমণ’

শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় / ১২৭ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পটাং করে সদর দরজা খুলে ফেলল সনৎ। আর সঙ্গে সঙ্গে শীতের ভোরের ঝকঝকে রোদ্দুর ঝপাং করে ঘরে ঢুকে একেবারে মশারির ভেতর গিয়ে পড়ল।

সঙ্গে সঙ্গে মশারি থেকে কালিপদ চেঁচিয়ে উঠল। করিস কি সন্তু? দোর বন্ধ কর।

কেন? বেশ তো সুন্দর রোদ। চলুন— হেঁটে আসি।

না না। পাগল নাকি। দোর বন্ধ কর। অপারেশনের পর আমার চোখ তো আর এত আলো নিতে পারে না। ছানি কাটানোর পর—

কী বলছেন কালুদা। কবে অপারেশন হয়ে গেছে আপনার। উঠুন। ঘুরে আসি চলুন এই চমৎকার রোদে—

চা খাবি নে?

চা তো আজকাল লিকার খাই। ও পথে খেয়ে নেব।

চিনি দুধ তো তোর বন্ধ। এই বয়সে ব্লাড সুগার বাধালি কোত্থেকে।

বয়স তো ষাট হয় হয়। এখন না হলে কবে ব্লাড সুগার হবে কালুদা। উঠুন এবারে। বেশ ভোর হয়ে গেছে। কথার ঝোঁকেই সনৎ বলে বসল, আপনার তো কালুদা এখন আশির কাছাকাছি। বিছানা থেকে নেমে কালিপদ বলল, কে জানে কত! বাজার-টাজার করাবি না?

কাল সন্ধেয় তো এলাম। দেখি কাজের লোকটা কি বলে। পারি যদি ফেরার পথে বাজার করে ফিরব। সনৎ সরকার গরম মোজার ওপর কেডস্ গলালো পায়ে। মাথায় মাঙ্কি। বুকে ভেস্ট। গলায় মাফলার। ট্রাউজারের নীচে ড্রয়ার। হাতে গ্লাভস্। বাইরে চকচকে রোদে ছুরির ফলা বাগানো বাতাস। রেডি হয়ে সে বলল, কত বয়স হল তা জানেন না? বাঃ!

কালিপদ ওরফে কালুদা তখন ফতুয়ার ওপর ভারী ওভারকোট চাপাতে চাপাতে বলল, এইটুকু জানি— চুয়ান্ন-পঞ্চান্ন বছর আগে তোকে কাঁধে নিয়ে মেলায় গেছি। তরমুজ কিনবি বলে বায়না ধরেছিলি। তখন এক পয়সার একটা তরমুজ। তুই আমার কাঁধে। ল্যাংটা। গায়ে বোধহয় তোর একটা নিমা ছিল।

তখন আপনার বয়স কত?

তা তো মনে নেই সন্তু।

কলেজে পড়েন?

কলেজে তো পড়ি নি। ম্যাট্রিক পাশ দিই সি আর দাস চলে যাওয়ার পর। সেই সময় কি তার দু-এক বছর বাদে— মনে পড়ে না। সব ঘোলা দেখি পেছনে। চা খাবি নে?

বেরিয়ে তো পড়ি চলেন। তারপর দেখা যাবে।

চাবি দিবি নে?

কোনো দরকার নেই। এ আমাদের চেনা-জানা লোকের বেড়াতে আসার বাড়ি। কাজের লোকরাই সব নজর রাখে। চলুন বেরিয়ে পড়ি।

বাজারের থলেটা নে সন্তু। ভুলে যাচ্ছিলি—

বেরিয়েই হাইওয়ে। সেখান থেকে শিশির শুষে নিচ্ছিল রোদে। রাস্তার ওপারেই বিরাট কম্পাউন্ডের ভেতর একতলা একটা বাংলো। গেটে লেখা ‘দি নেস্ট!’

কালিপদ তাকিয়ে দেখল— এখানে সব বাড়িই চার-পাঁচ বিঘে নিয়ে। ফলের গাছ। পর পর সব কম্পাউন্ড। এ তো বড় বেয়াড়া শীত—

দেওঘরে এসেছেন। শীত লাগবে না?

তুই তো অনেকবার এসেছিস।

পাঁচবার।

শেষ কবে?

এই তো বছর চারেক আগে। গৌরী বেঁচে থাকতে শেষবার আসি। চা খাবেন তো? সেদিক দিয়েই গেল না কালুদা। বলল, গৌরী এসেছিল?

না এসে করবে কি! ছেলেরা বিয়ে হয়ে যে যার চাকরির জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। আমার তো মেয়ে নেই। দুজনে সেবারে চিত্রকূট পাহাড়ে উঠেছিলাম। চলুন দারোয়ার দিকে যাই। নদীটায় অবিশ্যি এসময় জল থাকেই না একরকম।

তবু নদী তো। চল—

দারোয়া ছোট নদী। অনেক নীচে জল। বুকের বাকিটা কুয়াশায় ভরতি। তীরেই ফাঁকা মাঠের ভেতর একটা ইদারা। তার মাথার ওপর ডাল-পালা ছড়িয়ে এক মহুয়া গাছ। দিগন্তে তাকালে সুদূর এক পাহাড়ের আভাস।

আরেকটু এগোলেই রোহিণী—

রোহিণী? বেশ নাম তো।

ওই নামে একটা হাট বসে কালুদা। ও নামে একটা স্টেশনও আছে। ছোট রেলগাড়ি দাঁড়ায়। যাবেন।?

খুব দূর? অতটা হাঁটতে পারব না। চোখেও তো কম দেখি সন্তু—

বিয়ে করলেন না। সংসার করলেন না। চোখ খারাপ করলেন শেষে—

তুই বুঝবি না। বয়স হলে চোখ খারাপ হয়।

আমারও তো বয়স কম হল না। চোখে তো সব দেখতে পাই।

চুপ কর। আমার মতো সারাজীবন যোগদা আয়ুর্বেদ ঔষধালয়ের ভি পি-র বাক্সে ঠিকানা লিখিস নি— জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে রুদ্রজটা, পিপল, ক্ষেপাপড়া, বাঁধুলি, পাথরকুচি, দধিপুষ্পর ছাল, ফুল পাতা, শেকড়-বাকড় জোগাড় করতে হয় নি তোকে। করেছিস মোটা মাইনের আরামের চাকরি। আমাদের মতো?

কিন্তু হল তো আপনারই সব। ব্যাঙ্ক ভরতি টাকা। কলকাতার গায়ে বাড়ি।

থাম তো সন্তু। পি এফ, গ্র্যাচুইটির ষাট হাজার টাকা তো মোটে। আর বাড়ি তো কালোনিতে। দরমার বেড়া— মাথায় টালি।

উলটোডাঙার গায়ে একেবারে। কাঠা-ই এখন দেড়লাখ কালুদা!

তা তুই এসে বাড়ি কর না। আড়াই কাঠা জায়গায় ভালো বাড়ি হয়। আমি কলোনি কমিটিকে বলে তোর নামে গিফট করে দিচ্ছি। করবি?

দারোয়ার বুকে কুয়াশায় তাকিয়ে সনৎ বলল, আমি এই বয়সে আর বাড়ি করে কি করব? গৌরীর ইচ্ছে ছিল— একখানা বাড়ি হয়। থাকলে ছেলেরাই করে ফেলত। আমার টাকায় হাত পড়ত না। কিন্তু এখন আর বাড়ির মানেই হয় না কালুদা—

সনৎ কালিপদর মামাতো ভাই। কালিপদ সনতের পিসতুতো ভাই। বাড়ির কথার শেষে কালিপদ বলল, তা তো বটেই। কার জন্যে আর বাড়ি করবি। ছেলেরা— নাতিরা ভবিষ্যতে কে কোথায় থাকে তার ঠিক কি!

এবার বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ। দারোয়ার গা ধরে কালিপদ আর সনৎ হাঁটছে। হাড় বেঁধানো শীত। হাঁ করলে নিশ্বাস ধোয়া হয়ে যাচ্ছে। এবার ওরা দেখতে পেল— ইদারার মাথার ওপর মহুয়া গাছটার ডালপালায় রোদ পড়ে নীচের মাটিতে আলো ছায়ার জাফরি। আর তার ভেতর একটা টাঙা দাঁড় করানো। ঘোড়াটা কিছু ছেড়ে বাঁধা। সে খুব মন দিয়ে একটা কাঠের বাক্স থেকে মহুয়া ফল খাচ্ছে। গমের বিচুলি মাখানো। রোহিণী যাবার লাল রাস্তাটার ঠিক গায়ে।

বিশ-বাইশ বছরের তফাৎ দুভাই সে দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। পৃথিবী এখন মহুয়া তলায় নানা রঙে রঙিন। কালচে সবুজ মহুয়া পাতা। শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের ওপর হলুদ রঙের কাঠের বাক্সে নীল নীল মহুয়া ফল। তাতে গম-খড়ের ফিকে শাদা বিচুলির কুচো। ঘোড়াটার নামিয়ে আনা নাক-মুখ কালচে। গলাটা মাথাটা দিব্যি লালচে। লেজটা কালো। টাঙাটা বেগুনি রঙে রাঙানো। আর সবার ওপর ভোরবেলাকার রোদ পড়ে সারাটা তল্লাট শাদায় কালোয় জাফরি।

দুজনই একই সঙ্গে বলে উঠল, ভারি সুন্দর তো!

কালিপদ বলল, জোড়া কথায় চোর আসে। এখানে ভোরবেলা কে কি চুরি করবে কালুদা?

টাঙাওয়ালা নেই। ঘোড়াটাও তো চুরি যেতে পারে।

চোরের আর কাজ নেই— বলে সনৎ সরকার ফস করে বলে উঠল, এর নাম আনন্দ। চোখ ভরে যায় সুখে— দেখুন—

সুখ নয় রে সন্তু। জল। আমার চোখে জল এসে গেছে। কতকাল এমন দেখি না।

ওরা দুভাই পা টিপে টিপে গিয়ে ইঁদারার বাধানো চওড়া মতো গোল ঘরের ওপর বসল। ঘোড়াটার সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সারাদিনে বোধহয় অনেক পথ ভাঙতে হয়। খুব তাড়াতাড়ি তাই রসদ ভরে নিচ্ছে পেটে। পেটটা বেশ মোটাই। দিশি ভ্যাবলা জাতের ঘোড়া হবে। যত ইচ্ছে সওয়ারি চাপাও। যত ইচ্ছে মাল।

পরম তৃপ্তিতে মহুয়া ফলগুলো সাবাড় করে ঘোড়াটা এবার ভারী মুণ্ডু সমেত চোখ তুলে দুভাইকে একবার দেখল। তারপর কাঠের বাক্সটার পাশেই ঘাসে মুখ নামাল।

গৌরীকে নিয়ে এখানে এসেছিস?

এখানে ঠিক আসা হয় নি। তবে রোহিণীর দিকে গেছি। আসলে কী জানেন কালুদা— আনন্দের কোনো বিনাশ নেই— আত্মাও অবিনাশী।

তার মানে বলতে চাস তোর বউ ওপর থেকে সব দেখছে!

ঠিক তা নয়—বলেই সনৎ সরকার ‘খল্বিদং’ বলে শুরু করে বিড়বিড় করে কী একটা শ্লোক বলে গেল।

অন্তত তাই মনে হল কালিপদর। মুখে বলল, কোথায় পেলি এসব?

কেন কালুদা? উপনিষদেই তো—

আনন্দর জন্য আনন্দ। তার জন্যে আবার শ্লোক লাগে সন্তু? তুই দেখালি বটে!

আপনি একেবারে হাটুরে লোক হয়ে গেছেন কালুদা। সেই শ্লোকের জন্যে আবার উপনিষদ! বাঃ! ভালো জিনিশ— দামি জিনিশ দেখতে গাইড লাগে না? আগেকার মুনি-ঋষিরা যা অনুভব করেছেন— যা বুঝেছেন— তাই দেখেশুনে তাঁরা যা সব বলে গেছেন— নিজের নিজের অনুভব থেকে আচমকা যা বলে উঠেছেন— তাই-ই উপনিষদ কালুদা।

কালিপদ দেখল, তার দামড়া মামাতো ভাইটির কচকচিতে এমন সুন্দর ভোরবেলাটিই মাটি হয়ে যাওয়ার জোগাড়। দারোয়ার গা দিয়ে নানান উদ্ভিদ। একটা ফুলকে তার বাঁধুলি ফুলই মনে হল। বাতাসে কটু মিঠে সুবাস। কাছেই কোথাও দধিপুষ্প থেকে থাকবে। মুখে বলল, আচার খেয়ে ভালো লাগলে আচমকা আমরা শব্দ করে উঠি। সেটারও তাহলে আনন্দের অনুভব থেকে জন্ম।

তা কেন কালুদা?

নয় কেন সন্তু? আচার খেয়ে টাকরায় শব্দ করলে তা শ্লোক হয়ে ওঠে না বলে? আনন্দ কখনো শ্লোকে বাঁধা যায়? আমায় বিশ্বাস করতে হবে তোর কথা?

সনৎ সরকার আর কথা বাড়াল না। উপনিষদের অথেন্টিসিটিতে যা বিশ্বাস নেই—

কালিপদ বলল, এরকম ভালো লেগেছিল একবার— উনিশ ছাপ্পান্ন সনের সতেরোই সেপ্টেম্বর— বেলা আড়াইটেয়— সন তারিখ ভুলি নি। কারণ— ঔষধালয় থেকে সেবারই প্রথম গাছ-গাছড়া তুলতে যাই জঙ্গলে। রাঁচির মোরাদাবাদি হিলস থেকে মাইল তিনেকের ভেতর সে জঙ্গল। চেহারা দেখেই বোঝা যায়— সে জঙ্গল প্রাগৈতিহাসিক। মানুষের পা পড়ে নি বিশ হাজার বছরে। আমি সেখানে একটা অর্জুন গাছের গা থেকে ছাল খোলাচ্ছি লোকজন জোগাড় করে। ভাদ্রমাসের লম্বা বেলা ঘুঘু ডাকছিল। অর্জুনের গা থেকে হার্টের অসুখের ওষুধ বানানোর ছাল খোলাচ্ছি। হঠাৎ দেখি— একটা বুনো বাঁদর আমায় দেখে অবিকল নকল করছে। লোকজন ধমকাচ্ছে আমারই কায়দায়। তা সে খেলা দেখছে— দূরে দাঁড়িয়ে গোটা বারো বাঁদর। কী হাসিই হেসেছিলাম সেদিন। নিজের ক্যারিকেচার দেখে। এমন নির্মল আনন্দ কোনোদিন পাই নি। আর পেলাম আজ— এত বছর পরে— মহুয়াতলার ঘোড়াটাকে দেখে।

এবার রোদ ঝকমক করে চারিদিকে উঠে পড়েছে। দিগন্তে পাহাড়ের জলছবি রোহিণীর আকাশে এখন অনেক স্পষ্ট। দুই ভাইয়ের জুতোর ডগায় ভিজে ঘাসের ডগা। কালিপদ বলল, ওপার থেকে এপারে এসে চল্লিশে যখন জীবনের প্রথম চাকরি নিলাম— তখনো জানি না কী করতে হবে আমার। যোগদা আয়ুর্বেদে জয়েন করতেই আমায় প্রথম পাঠিয়ে দেওয়া হল— কালেকশনে। কালেকশন বলে কালেকশন। বনবাদাড় ছুঁড়ে গাছের ছাল, ফুল, পাতা, ফল জোগাড়ে নেমে পড়লাম। হাঁটবি সত্ত হাঁটবি। সারাজীবন হাঁটবি। দেখবি— শরীরের ভেতর ঘেমে যাওয়া দশায় একটা আনন্দ হয়।

সেসব কথাই তো ঋষিরা বলে গেছেন কালুদা। মহাকাশ, নক্ষত্র, নদী, ঝড়বৃষ্টি, আগুন— কত কি বিষয়ে কথা। আমরা জীবাত্মা। একদিন সবাই পরমাত্মায় বিলীন হব।

এমন ভোরবেলায় জীবাত্মা আমদানি করছিস কেন সন্তু। দিব্যি রোদ উঠেছে। ফিরে গিয়ে রাস্তার গায়ের দোকানে চা খেয়ে দুভাই বাজারে ঢুকে জুতিয়ে বাঁধাকপি, নতুন আলু কিনব— তা না- রাখুন আপনার গা জোয়ারি কথা। জীবাত্মা পরমাত্মায় পরোয়া নেই আপনার— কোথায় বাঁদুরে ক্যারিকেচার দেখেছেন কোন সালে— সেটাই বড় হয়ে গেল কালুদা? ব্রহ্ম কি? জানেন? ব্ৰহ্ম? ওভারকোটের বোতামটা গলার কাছের ঘেরে ভরে দিয়ে কালিপদ শীত আটকালো। তারপর বলল, জানি।

তাহলে বলুন।

এখুনি বলতে হবে?

জানলে বলতে আপত্তি কোথায়!

ব্রহ্ম হল গিয়ে আমার বড়মামা— তোর বাবা। চুরাশি বছর বয়স অবদি শুকনো লঙ্কা দিয়ে রাঁধা মাংসে গরম ভাত মেখে পেট ভরে খেয়ে গেছেন। আর শুনবি? তোদের মতো আটটা অপগণ্ড ছেলেকে খাইয়ে-দাইয়ে পড়িয়ে-শুনিয়ে দিব্যি জীবনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন। আর— আর কখনো ভগবান, জীবাত্মা এইসব নিয়ে মাথা ঘামান নি— ঘামানোর সময়ও পান নি তোদের মতো— সন্তু ওরফে সনৎ সরকার বুঝল, এ লোককে ব্রহ্ম বোঝানো কঠিন। মুখে বলল, নাঃ! আপনার এখনো সময় হয় নি। সময় হলে আপসে ব্রহ্ম বুঝতেন কালুদা।

আর কবে সময় হবে সন্তু। আশির ধারাধারি— এখনো যদি ব্রহ্ম না বুঝি তো কবে বুঝব? যেদিন বুঝবেন সেদিন তাতে লীন হবেন। সেই আনন্দ স্বরূপে।

থাম থাম। এদিকে যে দেখছি— বাঁধুলি, দধিপুষ্প, ব্রাহ্মীর জঙ্গল হয়ে আছে সন্তু। কালিপদর কথায় সনৎ আনাড়ি চোখে চারদিক চোখ বুলিয়ে নিল। অনেক রকম গাছ-গাছড়া নদীর গা ধরে। তাতে হরেক ফুল। কোনো গাছ বেশ বড়। কোনোটা বা ছাগলে মুড়িয়ে দেবার হাইট। দেখতে পেলি না? ওই দ্যাখ ব্রাহ্মী। তোরই পায়ের কাছে—

সন্তু নিচু হয়ে দেখল। সবই তো একরকম দেখছি কালুদা।

তা তো দেখবিই। তোর তো চোখ তৈরি হয় নি ওদের জন্যে। আরে! এদিকে যে রুদ্রজটাও আছে। চললেন কোথায় কালুদা?

আয় না— নদী পেরিয়ে ওপারটায় যাই।

যাবেন না। শাপখোপ থাকতে পারে।

এই শীতে তারা বেরোয় না। এটাও জানিস না সন্তু। আয়— এই তো পেরিয়ে এলাম। সন্তু দেখল, সরু জলের রেখাটা টপকে কালুদা ওপারে। পাথরে পাথরে পা দিয়ে দিয়ে। তার মাথার ওপর নদীর গা জুড়ে নানান রকমের বুনো গাছগাছালির মাথা নুয়ে পড়ছে বাতাসে। অগত্যা— তো এখানকার জঙ্গলেও দেখছি— লোকজনের আনাগোনা নেই সন্তু।

কি করে বুঝলেন?

বাঃ! রাস্তার সামনের দিকটায় অবস্থাপন্ন বাঙালিদের এককালে বেড়াতে আসার সব পোড়ো বাড়ি। তারই পেছনটাই তো এই জঙ্গল। এখানেও কেউ আসে না। দ্যাখ দ্যাখ— সারা জঙ্গলটা রোদে ঝকঝক করে হাসছে। গাছের গা থেকে ফাটা-চটা বাকল এখন রোদে পুড়ে খসে পড়বে। তারপর আবার নতুন ছালে গাছ-গাছালি নিজেদের গা ঢেকে ফেলবে। মানুষের মতো স্বভাব। আসলে সন্তু বনজঙ্গলই মানুষের আয়না। বুঝলি কিছু? আমি এখানে এরকম জায়গায় পড়লে নিজেকেই দেখতে পাই।

কালমেঘ, ঘেঁটু, ব্রাহ্মীর জঙ্গলে সনৎ সরকারের হাঁটু অবদি ঢাকা পড়েছে। একজায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে সে বলল, খামোখা কেন এদিকটা এসে ঠাণ্ডা লাগাচ্ছেন কালুদা? গাছপালা সব এখনো শিশিরে চান করে আছে। বরং চলেন— ফিরি ওপারে। তারপর বড় রাস্তায় উঠে রোহিণী যাওয়া যেতে পারে—

সন্তু তার কালুদাকে ফেরাতে পারল না। মেইন লাইনের পাশাপাশি বৈদ্যনাথধামের সরু সিঙ্গিল লাইন চলে গেছে। দূরে জশিডি থেকে ছুটে আসা টাঙা খাড়াই ভেঙে ওপরে উঠছে। লোকালয়ের বাইরে কালো ওভারকোট গায়ে লম্বা মতো কালুদাকে এই জংলা নির্জন পিছন দিকটায় একেবারে অদ্ভুত দেখাচ্ছে। এ জায়গায় মানুষ আসে না বড়। যা আসে— তা বুনো খটাস কিংবা পাহাড় ডিঙিয়ে বেরিয়ে পড়া কোনো গুলবাঘ।

কালুদা যেন কালো রঙের বিরাট বনবিড়াল হয়ে গাছপালা, ফুলফল, লতাপাতার ভেতর একাই লাফাচ্ছে। বুঝিবা শাদা লেজ উড়িয়ে— কেননা এই মুহূর্তে তার ধুতির কাছা খোলোখোলো দশায় হিমেল বাতাসে দুলছে।

আশির ধারাধারি এই মানুষটির কাঁধে ল্যাংটো হয়ে বসে আমি মেলা দেখতে গেছি। এক পয়সায় একটা বড়–কালো, গোল তরমুজ কিনে ফিরেছি। আমার মায়ের চেয়ে কালুদা বছর ছয় সাতের ছোট। বড়মামা মানে আমার বাবা বলতে কালুদা অজ্ঞান। জীবনের গোড়ার দিকটায় জমিজমা নাড়াচাড়া করে খেয়েছেন। কোনো চাকরি-বাকরির ধার ধারেন নি। শেষ দিকটায় এপারে এসে যোগদা আয়ুর্বেদ ঔষধালয়ের ভি পি ক্লার্ক কাম কালেকশন অফিসার। ভি পি কার্ডে গুচ্ছের ঠিকানা লেখা আর বনবাদাড় ভেঙে অর্জুন ছাল, ব্রাহ্মী শাক ঘন্টাকর্ণ আর বাধুলি ফুল তোলা। বিয়ে থা করা হয় নি। রিটায়ারের টাকা পয়সা ব্যাঙ্কে মজুদ। শহরের শেষে একসময়কার বিনি পয়সার কলোনির তিনকাঠা জায়গা এখন কালুদার কপালে— এই শেষ বয়সে তিন লাখ টাকা হয়ে নাচছে। কেননা— শহর কলকাতা এখন কলোনিটাকে গিলে আরো অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

ও কালুদা? লাফাচ্ছেন কেন? শেষে পা ভেঙে পড়ে থাকবেন। আমি আপনাকে তুলতে পারব না। লাফাতে লাফাতেই কালিপদ বলল, এ যে আয়ুর্বেদ মিউজিয়াম সন্তু। দেখবি আয়। রুদ্রজটা, কালমেঘ, পিপুল, ক্ষেপাপড়া— এমনকি দধিপুষ্প— সব পাবি এখানে। দেখে যা একবারটি— নদীর খাড়াই ভেঙে অনেক কষ্টে ওপারে উঠে বেশ রাগে রাগেই সনৎ সরকার বলল, কোথায় আপনার দইফুল? যত বাজে জিনিশে আপনার—

কথা শেষ করতে পারল না সনৎ। তার মাঝখানেই কালিপদ বলল, গাধা কি গাছে ফলে! দই ফুল কোথায় পাবি!! দুধিপুষ্প। আয়ুর্বেদের নাম। যাকে তোরা বলিস চিচিঙ্গে। তাই। এই দ্যাখ— ভালো করে তাকিয়ে অবাক হল সনৎ সরকার! সত্যিই তো। মাচার অভাবে অবহেলায় বেড়ে ওঠা একটা চিচিঙ্গে লতা ফুল ফলসমেত বুনো গাছপালার ডালপালাকেই মাচা করে বেয়ে বেয়ে অনেকটা জুড়ে ছড়িয়ে আছে! রীতিমতো মোটাসোটা লতায় লম্বা লম্বা চিচিঙ্গে ফলে আছে। কোনোটা বাদুড়ে খাওয়া। কোনোটা পাথরে আটকে গিয়ে বেঁকে ফলেছে। এখানে সেখানে ঢেউ তোলা পাতার ফাঁকে থোকা থোকা শাদা ফুল। তার মানে এখন ফলবতী। লম্বা চিচিঙ্গেগুলো যেন বেশি বেশি পুরুষ্ট। তাদের গায়ের সবুজ আর শাদা ডোরা দাগ ধরে কোথাও বা চিচিঙ্গেটা পেকে ফেটে পড়েছে। নীচেই ফাটা ফল থেকে পড়া ঢেউ ঢেউ বিচির স্তূপ। মেটে রঙের। চ্যাপ্টা আর ঢেউ খেলানো।

তবে কটা নিয়ে যাই চলুন। ভালো তরকারি হবে কালুদা।

উহু। এ যেন বন্য চিচিঙ্গা সন্তু। ত্রিদোষ বিকার দূর করে। আয়ুর্বেদে ওষুধ হবার পর। এমনি তো কোনো কোনো বুনো ফল খাবার উপায় নেই। ভগবানের অপার লীলা শোন। সব ফলেরই বুনো ভ্যারাইটি পাবি বনজঙ্গলে। সেগুলোর সংস্কার হয় যুগ যুগ ধরে।

কে সংস্কার করবে?

বলি ওই তো মজা সন্তু। ভগবান পাখি রেখেছেন কি করতে? বাদুড় পোষেন কি করতে! ওরা বুনো ফলটা খেয়ে বিচি ছড়ায় লোকালয়ে। সেই থেকে রেণু পরাগ সব হাওয়া বাতাসে ছড়ায় আপনা-আপনি। সেখানকার নতুন ফল আবার ভগবানের পাখি, বাদুড়, শেয়াল খেয়ে লোকালয়ের আরো গভীরে গিয়ে সে ফলের বিচি বা বীজ ছড়িয়ে দিয়ে আসে। সেখানে নতুন ফলের আগাম ফুল বাতাসের সঙ্গে রেণু পরাগ বিলিয়ে দেয়। তারা সব অন্য পরাগ রেণুর সঙ্গে মিলে মিশে ফলটা নির্দোষ করে তোলে। বুঝেছি।

বুঝেছিস তো। এই করে করে ভগবানের একই ফল রেণু বদলাতে বদলাতে নতুন সংস্কৃত ফল হয়ে মানুষের বাগানে— গেরস্থর বাগানে দেখা দেয়। তখন তার আর দোষ থাকে না আর। দোষ থাকলে?

দুষী ফল খেলে মানুষ তো পাগল হয়ে যাবে। বুনো আম, বুনো ঢেঁড়স যদি আমরা খেতাম তো নানান বিকার দেখা দিত আমাদের। সেইজন্যেই তো ভগবান—

থামেন। এর ভেতর আবার ভগবানকে ডাকছেন কেন?

বাঃ সন্তু! ফুল আর ফলের এতবড় একটা লীলায় ভগবান থাকবেন না তো কে থাকবে! ওই দ্যাখেন। কুয়াশা কাটিয়ে এবার সূর্যটা পুরোপুরি উঠছে।

ছানি কাটাবার পর আমি আর সিধে সূর্যে তাকাতে পারি নে সন্তু। চোখ করকর করে। জ্বলে যাচ্ছে মনে হয়—

বড় রাস্তায় লরির সারি। যাবে পাটনা। এদিকে জংলা ঢিবির ভেতর এ-পাথর থেকে সে-পাথরে লাফাচ্ছে কাক। টং টং। এর মাঝখানে সনৎ সরকার দুহাত জোড় করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল—

পুষন্নেকর্ষে যম সূর্য প্রাজাপত্য ব্যূহ রশ্মীন্।

ও কি? ও কি হল সন্তু?— বলে নিজের মনেই কালিপদ নিশ্চিন্ত হল–বউ মরে গিয়ে সন্তুটার মাথার ঠিক নেই।

কি আবার হবে? ঈশোপনিষৎ থেকে বলছি— হে একাকী বিচরণকারী সূর্য আপনি তেজ সংবরণ করুন।

তোর মুখের কথায় সূর্য নরম হবে?

আমি নয়— ঋষিরা বলছেন— শুনুন না কালুদা। শ্লোকের বাকিটা মনে পড়ছে না। মানে হল গিয়ে অনেকটা এরকম— সূর্য তুমি নরম হও— তাহলে তোমার কৃপায় তোমার সুশোভন রূপ আমি দেখতে পাব।

আবদার!— বলে হাতের চেটোয় ছানি কাটানো চোখ আড়াল করে সন্তুর কালুদা সূর্যটা ঠিক কোথায় তা দেখার চেষ্টা করল। তারপর বলল, চোখে গগলস্ থাকলে তবু কিছুটা দেখা যায়। নইলে তো শাদা একখানা থালা। বর্ডার মুছে গেছে— বউমা চলে গিয়ে তক তোর মাথাটাও গেছে সন্তু! ঈশোপনিষৎ-ও মানবেন না। তো আপনাকে বোঝাব কি কালুদা। পড়ে আছেন বুনো চিচিঙ্গে নিয়ে ফেলনা ভাবিস নে এই বন্য চিচিঙ্গেকে। কাছেই বৈদ্যনাথধাম— তাই বোধহয় এখানে দধিপুষ্পের আবির্ভাব। সবই ভগবানের ম্যাজিক সন্তু। নয় তো— নয় তো কি?

তেমন কিছু নয়। আয়ুর্বেদ ঔষধালয়ের যোগদা কবিরাজের নোটবই আমার মুখস্থ রাখতে হত। কেননা, সারাবছর আমিই তো লতাপাতা, শেকড়বাকড় কিনতাম। তা সেই নোটবইয়ে পড়েছি— যাহা দধিপুষ্প— তাহাই চিচিঙ্গে— আবার তাহাই দক্ষিণের লিঙ্গ পটোলম্। ছোটবেলায় ভাদ্রমাসে মদন ত্রয়োদশীর ব্রত করতে দেখেছি বড়দিকে। বকুল ফুলের সঙ্গে দধিপুষ্পের নৈবেদ্য চড়ানো হত। বড়দির গলায় থাকত বকুলমালা।

আসলে সন্তু এই বন্য চিচিঙ্গে ত্রিদোষ বিকার দূর করে। ক্ষুধা বর্ধক। স্বপ্ন থেকে মুক্তি দেয়। স্মৃতি বর্ধক।

আপনি স্বপ্ন দেখেন ভীষণ। দুপুরে ঘুমোলেও স্বপ্ন আসে ঘুমের ভেতর। কখনো মাকে দেখতে পাই।

কি দেখেন ?

একটা স্বপ্ন অনেকবার দেখেছি। স্বপ্নে মাকে বড় সুন্দর দেখায়। আমি খেজুর গাছে উঠে পাকা খেজুর পেড়ে ফেলছি। আর মা নীচে সেই খেজুর কুড়োচ্ছে। মায়ের আঁচল ভরতি পাকা খেজুর। কিছুটা থেমে কালিপদ বলল, দুপুরের ঘুমের ভেতর কোনো কোনোদিন ভগবানকেও দেখি। মাথায় মুকুট— ফরশা— ঠিক কেমন দেখতে বলুন তো।

এই অনেকটা ক্যালেন্ডারের ভগবানের মতো। শ্রীকৃষ্ণ দেখলে হাতে বাঁশি থাকবেই। আবার কোনো কোনোদিন দুধেল গাই সঙ্গে নিয়েও আসে। তখন ওঁর হাতে আর বাঁশি থাকে না সন্তু। ভগবানের নিজের গায়ের রং আর গাইয়ের গায়ের রং এরকম— মেটে মেটে— মিশে একাকার হয়ে ভগবানের শরীরের বর্ডার মুছে যায়— থাকে না।

তাই বলুন! অনেকটা সূর্যের মতো। আপনিই না একটু আগে বললেন— চোখে গগলস্ না থাকলে খালি চোখে সূর্য একখানা শাদা থালা। বর্ডার মুছে গেছে—

হু। বলেছি তো। কি হল তাতে?—

আমিও তো বর্ডার মুছে যাওয়া সেই সূর্যের কথাই বলছিলাম। পুষন্নেকর্ষে যম সূর্য প্রাজাপত্য ব্যূহ… তারপর যেন কি? মনে পড়ছে না কালুদা— এইমাত্র বললাম—

তারপর তোর মুণ্ডু। ঈশোপনিষৎ! আজই আমাকে কলকাতা ফেরার দুপুরের টিকিট কেটে দে।

আহা! চটে যাচ্ছেন কেন কালুদা—

চটবে না। শ্লোক আউড়ে ভগবানকে ধরবি ভেবেছিস। বলতে বলতে সন্তুর কালুদা দারোয়া নদীর খাড়াই পাড় ধরে এক স্লিপ খেয়ে নীচে পড়ল। তারপর ক্ষীণজলধারাটা এক লাফে টপকে ওপারে ওঠার জন্য খাড়াই ভাঙতে লাগল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন