কল্লোল যুগের বিশিষ্ট কবি হেমচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবর্ষ বিশেষভাবে পালিত হলো তাঁরই শহর কৃষ্ণনগরে। ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (মঙ্গলবার) সকালে নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরে ‘কবি হেমচন্দ্র বাগচী স্মৃতি রক্ষা সমিতি’-র পক্ষ থেকে এই বিশেষ আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিবছরই হেমচন্দ্রের জন্মদিনটি ‘কবি হেমচন্দ্র বাগচী স্মৃতি রক্ষা সমিতি’-র সদস্যরা বিশেষভাবে পালন করে থাকেন। আর কবির প্রয়াণ দিবস ৪ এপ্রিলেও হেমচন্দ্রের অনুরাগীরা মিলিত হয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। হেমচন্দ্রের ১২০তম জন্মবর্ষকে কেন্দ্র করে এদিনের শ্রদ্ধা-স্মরণ অনুষ্ঠান বিশেষ হয়ে রইলো ‘হেমচন্দ্র বাগচী ১২০’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে। ‘কবি হেমচন্দ্র বাগচী স্মৃতি রক্ষা সমিতি’-র পক্ষ থেকে এই পুস্তিকাটি প্রকাশ করা হয়। শহরের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সম্পদনারায়ণ ধর ঘূর্ণি পুতুলপট্টি মোড়ে স্থাপিত হেমচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তির সম্মুখে পুস্তিকাটির আবরণ উন্মোচন করেন। সেখানে উপস্থিত সকল ব্যক্তিবর্গের হাতে এদিন পুস্তিকাটি তুলে দেওয়া হয়।
হেমচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবর্ষের অনুষ্ঠানে ‘কবি হেমচন্দ্র বাগচী স্মৃতি রক্ষা সমিতি’-র সদস্যবৃন্দ, কবির পরিবার, অনুরাগীগণ যেমন উপস্থিত ছিলেন, তেমনি কয়েকজন বিশিষ্টজন এদিনের শ্রদ্ধা-স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। হেমচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্য অর্পণ করেন নদিয়া জেলার ভূতপূর্ব তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অলোক সান্যাল। এদিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাঁচরাপাড়াস্থিত ঈশ্বর গুপ্ত পরিষদের সম্পাদক রণজয় মালাকার। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন লেখক সম্পদনারায়ণ ধর, সতীনাথ ভট্টাচার্য, ‘কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধু’-র সম্পাদক তরুণকুমার সাহা, কবিপৌত্র অনুপম বাগচী, ‘শস্য’ পত্রিকার সম্পাদক অপূর্ব দাশ, সমাজকর্মী খগেন্দ্রকুমার দত্ত, কবি কল্যাণ বিশ্বাস, গুরুপ্রসাদ সরকার, মলয় বিশ্বাস প্রমুখরা। উপস্থিত সকল ব্যক্তিবর্গ এদিন হেমচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। ‘কবি হেমচন্দ্র বাগচী স্মৃতি রক্ষা সমিতি’-র সম্পাদক দীপাঞ্জন দে শ্রদ্ধা-স্মরণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
কবি হেমচন্দ্র বাগচী কল্লোল যুগের একজন বিশিষ্ট কবি হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান সময়ে কীভাবে যেন বিস্মৃত! তাঁর জীবন সম্পর্কে, তাঁর সাহিত্য নিয়ে, সম্পাদিত পত্রিকা ‘বৈশ্বানর’ নিয়ে যতটা চর্চা হওয়ার প্রয়োজন ছিল, ততটা বোধ হয় এখনো পর্যন্ত হয়নি। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর কবি হেমচন্দ্র বাগচী জন্মেছিলেন নদিয়া জেলার কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত গোকুলনগর গ্রামে (এই গ্রামের ডাকনাম বেগে)। শৈশবেই পরিবারের সঙ্গে জেলা সদর কৃষ্ণনগরে তাঁর আগমন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। শৈশবকালেই হেমচন্দ্রের লেখা ‘তৃষিত’ কবিতাটি স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশ পেয়েছিল (ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালে, ১৯১৪ খ্রি.)। কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণি এলাকায় হেমচন্দ্রদের পৈত্রিক বাড়ি এখনো রয়েছে। গোকুলনগর গ্রামেও তাঁর পরিবারের একটি অংশ বসবাস করে। কল্লোল যুগের এই বিস্মৃত কবিকে স্মরণ করে কৃষ্ণনগরে কয়েকজন কবি অনুরাগী একত্রিত হয়ে ২০২১ সালে ‘কবি হেমচন্দ্র বাগচী স্মৃতি রক্ষা সমিতি’ স্থাপন করেছেন। তাদের উদ্যোগেই ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (মঙ্গলবার) ঘূর্ণি পুতুলপট্টি মোড়ে কবির ১২০তম জন্মবর্ষ বিশেষভাবে পালিত হলো। বিশিষ্টজনেদের উপস্থিতিতে এদিন ‘হেমচন্দ্র বাগচী ১২০’ শীর্ষক পুস্তিকাটি প্রকাশ পায়। এই পুস্তিকায় হেমচন্দ্রের সমগ্র জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি হেমচন্দ্রের আলোকচিত্র এবং সম্পূর্ণ জীবনপঞ্জি মুদ্রিত হয়েছে।