শনিবার জুনিয়র চিকিৎসকদের ইমেল বার্তায় সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যা ৬টায় কালীঘাটের বাড়িতে ১৫ জন জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠকে আহ্বান করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মধ্যে একটা অংশের দাবি ছিল লাইভ স্ট্রিমিং এর মধ্যে দিয়ে বৈঠক করতে হবে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী কড়জোড়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন লাইভ স্ট্রিমিং এর পরিবর্তে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখা হবে। সেক্ষেত্রেও আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ গররাজি। এরপর মুখ্যমন্ত্রী কড়জোড়ে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতি আবেদন করেন তোমরা যদি মিটিং করতে না চাও তাহলে অন্তত এককাপ চা খেয়ে যাও। কিন্ত এদিন দেখা গেল জুনিয়র চিকিৎসকরা তাদের দাবিতে অনড়। মুখ্যমন্ত্রীর বারংবার অনুরোধর পরও তাঁরা কেউ আলোচনা অংশ নেওয়া অথবা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের এক কাপ চা এর অনুরোধ কেও প্রাধান্য দিলেন না। অন্যদিকে শনিবার সকালে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের মঞ্চে গিয়ে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে।এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন “আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নই, আমি দিদি হিসেবে আপনাদের কাছে এসেছি”।
প্রসঙ্গত, আরজি কর কান্ডের জেরে আন্দোলন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। গত দুই দিন ধরে প্রবল দুর্যোগের মধ্যেও রাস্তা ছাড়েননি আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। এরই মাঝে খবরে প্রকাশ, কয়েকজন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক কাজে ফেরার বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত। ঠিক সেই সময় শনিবার হঠাৎ করে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের মঞ্চে হাজির হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন আমি আপনাদের বড়দিদি হিসেবে এখানে এসেছি।এদিন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন “আপনারা আমার উপর ভরসা রাখুন, আপনারা কাজে যোগদান করুন। আমি বলতে পারি, আপনাদের প্রতি আমি কোনও অবিচার করব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে যেটা বলতে এসেছি, কাল সারারাত ঝড়-জল হয়েছে। আপনারা যখন কষ্ট পেয়েছেন, আমিও সারারাত ঘুমাতে পারিনি। আমারও কষ্ট হয়েছে। এই ঝড় জলের মধ্যে আপনারা যেভাবে বসে আছেন, আমার মানসিকভাবে কষ্ট হচ্ছে। আমিও কিন্তু রাতের পর রাত ঘুমাইনি। কারণ আপনারা যখন রাস্তায় থাকেন, আপনাদের জন্য আমায়ও কিন্তু পাহাড়াদার হিসেবে জেগে থাকতে হয়।’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের প্রতিশ্রতি দিচ্ছি, আমি আপনাদের দাবিগুলো কথা বলে সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখব। আমি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলব। আমি একা সরকার চালাই না। আমার সঙ্গে একজন চিফ সেক্রেটারি, হোম সেক্রেটারি, ডিজি পুলিশ সবাই আছেন। যদি কেউ দোষী হয়, সে নিশ্চয়ই শাস্তি হবে।’ জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এদিন মমতা বলেন, ‘আপনারা আমাদের ঘরেরই ভাই-বোন। আপনারা দয়া করে কাজে যোগদান করুন। আমি বলতে পারি, আপনাদের প্রতি আমি কোনও অবিচার করব না।’
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ভাই-বোন। আপনাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। আমরা কোনও অ্যাকশন নেব না। কোনও ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই তিলোত্তমার বিচার হোক। আমি সিবিআইকে অনুরোধ করব যত তাড়াতাড়ি বিচার হোক। তিন মাসের মধ্যে তারা যেন ফাঁসির অর্ডার দেয়। আর আপনাদের বলব, আমায় একটু সময় দিন। আমি বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করব। যদি আপনাদের আস্থা-ভরসা আমার উপরে থাকে, তাহলে একটু সময় দিন। আমি কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’
সুপ্রিম কোর্টের মামলা প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। ১৭ তারিখ মামলার ডেট আছে। আমরা চাই না, আপনাদের কোনও ক্ষতি হোক। আপনাদের দিদি হিসেবে আপনাদের কাছে অনুরোধ করতে এসেছি। আমি মুখ্যমন্ত্রী নই। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বলতে আসিনি। আমি আপনাদের দিদি হিসেবে বলতে এসেছি। হ্যাঁ, আমি চিফ মিনিস্টার আছি। আমি একটা দল করি। আমি আপনাদের আন্দোলনের সমব্যথী এবং সমসাথী।’সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় তিনি যখন ২৬ দিন অনশন করেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে কেউ আসেননি। কিন্তু তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে তিনি এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘আপনাদের কাছে আসা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। এটা নিজেকে বড় করা। আপনারা বসুন। এটা আমার লাস্ট চেষ্টা। আপনাদের জন্য করে গেলাম।
মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে সাংবাদিকদের জানানো হয় যে তাঁরা আলোচনায় বসতে রাজি আছেন।তাদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন। রাজ্যের অভিবাবিকা মুখ্যমন্ত্রী তাদের আন্দোলন মঞ্চে এসেছেন, তারা মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী যখনই ডাকবেন, তারা মুখ্যমন্ত্রীর সাথে তাদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। অত:পর এদিন রাত্রে শেষ অবধি কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা গেলেও বৈঠকে রাজি হলেন না আন্দোলনকারীরা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী কড়জোড়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বৈঠক করার আবেদন করলেও আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা লাইভ স্ট্রিমিং এর মধ্যে দিয়ে বৈঠক করার দাবিতে অনড় থাকেন। পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী কড়জোড়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদলকে অন্তত এককাপ চা খাওয়ার আহ্বান জানালেও তা তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বারবার অনুরোধ এ, অনর না থেকে, আলোচনায় অংশগ্রহণ করলে ভালোই হতো বলে আমি মনে করি।