ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিকে পদ্ম একাদশী বা পরিবর্তিনী একাদশী বলা হয়। হিন্দুদের মধ্যে একাদশীর অনেক ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে। এই দিনটিকে সবচেয়ে শুভ দিনগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এটি ভগবান বিষ্ণুকে উত্সর্গ করা হয়
এই তিথিতে দেবী তাঁর ভক্তদের অন্তরে লক্ষ্মী দেবী অর্থাৎ পদ্মরূপে বিরাজমান থেকে ষড়ৈশ্বর্য (অর্থাৎ ঐশ্বর্য, বীর্য, যশঃ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য-এই ছয়টি গুণ) দান করেন বলেই এটি শ্রীশ্রী পদ্মা একাদশী নামে খ্যাত।কথিত আছে, দেবতারা তাদের রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য এই দিনে মা মহালক্ষ্মীর পূজা করেছিলেন।
এটিই একমাত্র একাদশী, যা গণেশ চতুর্থী উৎসবের সময় পড়ে, তাই এই একাদশীর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই একাদশীতে উপবাস করলে একই সঙ্গে ভগবান বিষ্ণু ও গণেশের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
ধর্মীয় বিশ্বাস আছে যে,আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষে চার মাসের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যোগ নিদ্রায় চলে যান। ভাদ্র মাসের এই দিনে ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণু শয়নে তাঁর পাশ পরিবর্তন করেন। তাই এই একাদশীকে পরিবর্তনশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে পরিবর্তিনী একাদশীর দিন উপবাস করলে উপাসকরা মোক্ষ লাভ করেন।
পুরাণমতে বিষ্ণুগত প্রাণ প্রহ্লাদের পৌত্র, বিরোচনের পুত্র, বাণ’এর পিতা এবং দৈত্যদের রাজদের রাজা ছিলেন বলি তার অত্যাচারের ফলে স্বর্গচ্যুত হলেন দেবতারা, তারা আশ্রয় নিলেন নারায়ণের কাছে। নারায়ণ ভগবত ভক্তদের রক্ষা করতে বামনরূপ ধারণ করলেন।
এরপর বলি কে শায়েস্তা করতে দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে বিষ্ণু এক জব্বর ফন্দি আঁটেন। বিষ্ণু বামন পন্ডিতের বেশে বলির কাছে গিয়ে ত্রিপাদ জমির ভিক্ষা করেন। অতিদর্পে বলি বামনকে ত্রিপাদ জমির দান দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন।বামন তখন বিষ্ণুর দৈত্যাকার ত্রিবিক্রম রূপে রূপান্তরিত হন, তিনি তাঁর একটি পা রাখলেন স্বর্গে, অন্য একটি পা রাখলেন পৃথিবীর উপর। মহাবলী বুঝতে পেরেছিলেন যে বামন বিষ্ণু ছাড়া আর কেউ নয়। তাই তৃতীয় পা রাখার জন্য নিজের মাথা নিবেদন করলেন। বলি তার দর্প ত্যাগ করে বিষ্ণুর আনুগত্য স্বীকার করলেন, ভগবান বিষ্ণুর তাকে পাতাললোকে প্রেরণ করলেন।
ভগবান তাঁকে আশীর্বাদ করলেন চিরঞ্জীবী হবার এবং বালিপ্রতিপদ অর্থাৎ ‘দীপান্বিতা অমাবস্যা’র ঠিক আগের রাত্রিতে বা ওনাম (যা বেশিরভাগ ধর্মের লোকেরাই পালন করে ফসল কাটার উৎসব হিসাবে) পাতালের সকল ভূত, প্রেত, অপদেবতার সাথে পৃথিবীতে এসে পুজো নিতে পারবেন।
একইসঙ্গে শ্রীবিষ্ণু বলিকে জানালেন পদ্মা একাদশী ব্রত পালন করতে। বলিরাজ পাতালবাসী হয়েও পালন করলেন এই ব্রত। সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে দিব্যিদেহ প্রাপ্ত হলেন তিনি।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার পার্ষদ ও পাণ্ডবদের বলেছেন এই ব্রত বিধিবৎ একাগ্রচিত্তে পালন করলেন মানুষের অশেষ কল্যাণ তো হবেই, তারা অন্তিমে সানন্দে দেবলোকে গমন করতে পারবেন। এই একাদশীতে ভগবানের বামন অবতারেরও পূজা করা হয়।
পদ্মা একাদশী বামন একাদশী, জলঝুলনি একাদশী, দোল গয়রাস এবং জয়ন্তী একাদশী নামেও পরিচিত। এই দিনে উপবাস ও উপাসনা করলে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
জলঝুলনি একাদশী : বিশ্বাস করা হয়, মাতা যশোদা এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বস্ত্র ধুয়েছিলেন। তাই এই একাদশীকে ‘জলঝুলনি একাদশী’ও বলা হয়। এই একাদশী ব্রত পালনের দিন ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণকে ফুল, ধূপ, ধান ইত্যাদি দিয়ে পূজা করে। এই উপবাসের প্রথম তিথিতে সাতটি মাটির ঘট স্থাপন করা হয়। এই সাতটি ঘট সাত ধরনের শস্যে ভরা। সাতটি খাদ্যশস্য হল — গম, উড়দ, মুগ, ছোলা, যব, চাল এবং মুসুর। একাদশীর আগের দিন, অর্থাৎ দশমী তিথিতে এই শস্যের কোনোটিই খাওয়া হয় না।
তারপর ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি কলসের উপর স্থাপন করা হয়। এই উপবাস পালনের পর রাতে বিষ্ণুপাঠের জাগরণ করা হয়। এই উপবাস দশমী তিথি থেকে শুরু হয় এবং দ্বাদশীতে (একাদশীর পরের দিন) শেষ হয়। তাই এই ব্রতের সময়কাল অন্যদের তুলনায় বেশি। একাদশীর দিন সারাদিন উপবাস করার পর দ্বাদশীর দিন সকালে ব্রাহ্মণকে দান করা হয় এক কলস খাদ্যশস্য। কথিত আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যমুনা নদীতে গোপীদের পাল তুলে নিয়ে যান। যাত্রার ভাড়া হিসাবে, শ্রী কৃষ্ণ গোপীদের কাছে দই চেয়েছিলেন। এই দিনে তাই দই দান করার রীতি প্রচলিত আছে।
ভক্তরা হরিকৃষ্ণ মহারাজের একটি ছোট মূর্তি একটি নৌকায় রাখেন, থাল নিবেদন করেন, পাঁচটি আরতি করেন এবং তারপর একটি নদী, পুকুর বা ছোট জলাশয়ে মূর্তিটি ভাসিয়ে দেয়।
দোল গ্যারাস : জলঝুলনি একাদশীকে রাজস্থানে দোল গয়ারস একাদশীও বলা হয়। এই দিনে এখানে ভগবান গণপতির পূজা করা হয় এবং গণেশের সঙ্গে তার মায়েরও অর্থাৎ দেবী গৌরীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়। এই সময় মন্দিরের দেব-দেবীকে নদী বা পুকুরের কাছে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়। সন্ধ্যায় এসব প্রতিমা ফিরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। যেখানে ভক্তরা ভজন ও ঢোল ইত্যাদির মাধ্যমে ভক্তি ও আনন্দের মেজাজে ভজন, ভক্তিমূলক গান, কীর্তন পরিবেশন করে।
পরিবর্তিনী একাদশী : ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি শুরু হবে ১৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, রাত সাড়ে ১০টা থেকে, ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি শেষ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর, শনিবার, রাত ০৮ টা ৪১ মিনিটে। উদয় তিথি অনুসারে, পরিবর্তিনী একাদশী শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪।একাদশীর দিন শ্রী হরি বিষ্ণুর পুজোর সময় হবে সকাল ০৭ টা ৩৮ মিনিট থেকে সকাল ৯ টা ১১ মিনিট পর্যন্ত। এর পর শুরু হবে রাহুকাল।
পরিবর্তিনী একাদশীর উপবাসের পদ্ধতি : পরিবর্তিনী একাদশীর দিন ব্রহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠুন, নিত্য কাজ করে স্নান করুন। এরপর ব্রত রাখার অঙ্গীকার করুন। স্নানের পর পরিষ্কার হলুদ কাপড় পরিধান করুন। পূজা গৃহের পূর্ব বা উত্তর দিকে হলুদ কাপড় বিছিয়ে ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর মূর্তি স্থাপন করুন, সঙ্গে ভগবান শ্রী গণেশের মূর্তিও স্থাপন করুন। প্রথমে ভগবান শ্রী গণেশের পূজা করুন।ভগবান বিষ্ণুকে ফুল, মালা, চন্দনের তিলক, তুলসী পাতা অর্পণ করুন এবং ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান। ভগবানকে আরতি করুন
ভগবান বিষ্ণুকে পঞ্চামৃত, তুলসী পাতা, ফল এবং মাখন ক্ষীর (বা অন্য কোনও বাড়িতে তৈরি মিষ্টি) নিবেদন করুন এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে পঞ্চামৃত দিন।এই দিনে ভাত খাওয়া যায় না। এই উপবাসে বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ করুন। ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমঃ মন্ত্র জপতে থাকুন। সারাদিন বিষ্ণু মহামন্ত্রও জপ করতে পারেন।
দ্বাদশী তিথিতে, দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং ফলমূল বা ভাত এবং নোনতা খাবার দিয়ে একাদশীর উপবাস ভঙ্গ করুন। এই উপবাস পালন করলে সুখ, সৌভাগ্য ও যশ বৃদ্ধি পায়।
ব্রত কথা পদ্ম একাদশীর উপাখ্যান সহ আরও ধার্মিক গতিবিধির ইতিবৃত্ত বিবরণ
আপনার জ্ঞান গরিমার উদাহরণ।যারা ব্রত উপবাসের মাধ্যমে শুভক্ষণের কামনা
করেন তারা ছাড়াও ধর্ম কর্মের মানুষদের কাছে এই প্রতিবেদন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ
দিশা নির্দেশ।ভালো থাকুন ভালোরাখুন।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে শ্রদ্ধেয় 🌹
ব্রত কথা পদ্ম একাদশীর উপাখ্যান সহ আরও ধার্মিক গতিবিধির ইতিবৃত্ত বিবরণ
আপনার জ্ঞান গরিমার উদাহরণ।যারা ব্রত উপবাসের মাধ্যমে শুভক্ষণের কামনা
করেন তারা ছাড়াও ধর্ম কর্মের মানুষদের কাছে এই প্রতিবেদন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ
দিশা নির্দেশ।ভালো থাকুন ভালোরাখুন।