হুগলির খানাকুল থানাকে ভেঙে দুটি করার দাবিতে সরব হলেন এলাকার বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের দাবি, আয়তন ও লোকসংখ্যা অনুযায়ী অবিলম্বে খানাকুল থানাকে ভেঙে দুটি থানা করা হোক। নদীবাহিত এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জনসংযোগ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে খানাকুল-২ ব্লকের অধিকাংশ গ্রামের মানুষের সঙ্গে পুলিশের সংযোগ নেই বললেই চলে। নদী-দ্বীপগুলিতে বসবাসকারী মানুষ আছেন অসংখ্য। সেই সঙ্গে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারাও পুলিশের নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বাড়ছে। দীর্ঘদিনের দাবি, শীঘ্রই খানাকুল থানা ভেঙে দুটি করা হোক। দক্ষিণ খানাকুলের মানুষ একাধিকবার লিখিত ভাবে প্রশাসন, স্থানীয় বিধায়কের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এ বিষয়ে। মানুষের অভিযোগ, রাজ্যে থানা ভেঙে অনেক নতুন থানা গড়ে উঠেছে। এমনকী নতুন ভাবেই বেশ কিছু থানা হয়েছে। তা হলে কেন খানাকুলের মতো বন্যাকবলিত ও নদীবাহিত অঞ্চলে মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে নতুন থানা গড়ে উঠবে না? এ প্রশ্নই এখন খানাকুলের মানুষের মুখে মুখে। প্রসঙ্গত, খানাকুল-১ এবং খানাকুল-২ ব্লক দুটিতে মাত্র একটি থানা। দুটি ব্লকের ৫২টি গ্রামের জনসংখ্যা ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৬৮ (২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী)।
বর্তমানে খানাকুল থানা শহরের মূলকেন্দ্রে। অথচ রূপনারায়ণ, মুণ্ডেশ্বরী, কানামুন্ডেশ্বরী এবং ছোট খাটো নদীর দু’পারে অসংখ্য গ্রাম আছে। এমন কিছু গ্রাম আছে, যেখানে চুরি-ডাকাতি, সংঘর্ষ, খুন-রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ সরাসরি সেই গ্রামে পৌঁছতে পারে না। নদীর এক পাড়ে জিপ রেখে নৌকায় পার হয়ে পুলিশকে পৌঁছতে হয় ঘটনাস্থলে। দেখা গিয়েছে, বহু ঘটনা ঘটেছে অথচ পুলিশ সময়ে পৌঁছতে পারেনি। বড় ধরনের ঘটনা ঘটলেও, পুলিশকে অসহায়ভাবে ফিরে আসতে হয়েছে। নতুবা জনরোষের শিকার হয়েছে পুলিশ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, চুরি-ডাকাতি হলে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ আসার আগেই দুষ্কৃতীরা কাজ হাসিল করে চলে যায়। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা, কিংবা নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশের দরকার হলে সহজে তাদের দেখা মেলে না। এলাকায় যে ভাবে দিন দিন অশান্তি বাড়ছে, তাতে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অবিলম্বে নতুন থানা গড়ে তোলা হোক। আর সেই থানা গড়ে তোলা হোক নদীর অন্য পাড় নতিবপুর গ্রামে। তা হলে অনেকটা নিরাপত্তা পাবেন মানুষ।
হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুর সীমান্ত এলাকায় থানা জরুরি। শিক্ষক মানস সামন্ত, সরকারি অফিসার মনোজ মুখোপাধ্যায়, ডা. সুব্রত ঘোষদের মতে সীমান্তবর্তী এলাকায় এবং নদীবাহিত অঞ্চলে নতুন থানা আবশ্যক। আর তা না হলে, অপরাধমূলক কাজ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে দুষ্কৃতীরা সহজে গা ঢাকা দেওয়ার সুযোগ পাবে। খানাকুল থানার পুলিশ থাকবে অসহায়। কিছু করার থাকবে না। উল্লেখ্য, খানাকুল-২ ব্লকের নতিবপুর, বলপাই, চিংড়া, হরিশচক, সাবলসিংহপুর, চাঁদকুণ্ড, কামদেবচক, কাকনান, নন্দনপুর, বাড়নন্দনপুর, পানশিউলি, ভাটোরা, গণেশপুর, বনহিজলি, বালিগড়ি, ঘোড়াদহ ইত্যাদি গ্রামগুলিকে নিয়ে আলাদা থানা গড়ার দাবি উঠেছে। এজন্য লিখিত ভাবে আবেদনও জমা পড়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে ‘মা মাটি মানুষের’ সরকার আসার পর নতুন নতুন জেলা হয়েছে। থানা ভেঙে থানা হয়েছে, সেই ভাবে নদীবাহিত এলাকায় মানুষের নিরপত্তার কথা ভেবে যেন আলাদা থানা গঠন করা হয়।
মুণ্ডেশ্বরী নদীর ওপারে নতিবপুর, বলপাই, চিংড়া গ্রামগুলি খানাকুল থানার পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। একই ভাবে ঘোড়াদহ, সাবলসিংহপুর, ভাটোরা, পানশিউলির মতো গ্রামগুলি অন্য জেলা সীমানায় অবস্থিত। এখানকার মানুষের নিরাপত্তার কথা অবিলম্বে ভাবা দরকার সরকারের। অবেদনপত্রে আরও বলা হয়েছে, খানাকুল থানাকে ভেঙে দুটি করা হোক, যাতে মানুষ উপকৃত হয়। খানাকুলের ইতিহাস গবেষক দেবাশিস শেঠ জানান, দক্ষিণ খানাকুলের গ্রামগুলির নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত। পুলিশ সর্বদা নজর রাখে যাতে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা না হয়। লোকসংখ্যা বেড়েছে। এটা ঠিক। একটা থানার পক্ষে ৫২টি গ্রামকে পুরোপুরি ভাবে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। যাতে খানাকুল থানাকে ভেঙে দুটি করা হোক।