১৯২৮ সালের ১৫ জুন সুলেখার জন্ম। চট্টগ্রামে মাসির বাড়িতে কেটেছিল তাঁর শৈশব। সাত বছর বয়সে লেখাপড়া শুরু করলেও ১৯৪২ সালে চট্টগ্রামে বোমা বিস্ফোরণের পর নিজ গ্রামে ফিরে আসেন এবং ১৯৪৪-এ প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আই এ পাস করে কোলকাতায় গিয়ে ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট-এ ভর্তি হন বিএ পড়ার জন্য। ১৯৪৮ সালে সুলেখা তাঁর পছন্দের এক রাজনৈতিক সহকর্মীকে বিয়ে করেন।
বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে গ্রেফতার বরণের কারণে যথাসময়ে বিএ পরীক্ষা দিতে পারেন নি। জেল থেকে পরীক্ষা দিয়ে তিনি পরে বিএ পাস করেন। ১৯৫৭ সালে তাঁর শরীরে লিউকেমিয়া ধরা পরলে চিকিৎসার জন্য মস্কো পর্যন্তও গিয়েছিলেন। ফিরে আসেন হতাশ হয়ে। এবং তারপর থেকে সুলেখার নিয়ত প্রচেষ্টা সাহিত্যের ভেতরে নিজের মন্থিত যন্ত্রণার লিপি দিয়ে তিনি একটি অবলম্বন পাওয়া। ১৯৬২ সালের ৪ ডিসেম্বর সুলেখা সান্যাল মারা যান।
উপন্যাসের মত ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও সুলেখা সান্যাল সমান মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন। ১৩৬৩ বঙ্গাব্দে তাঁর একমাত্র ছোটগল্প সংকলন ‘সিঁদুরে মেঘ’ প্রকাশিত হয়। এ সংকলনটিতে অন্তর্ভুক্ত গল্পগুলোর মধ্যে শিরোনামের গল্পটি ছাড়াও রয়েছে ‘জীবনায়ন’, ‘জন্মাষ্টমী’, ‘ফল্লু’, ‘গাজন সন্ন্যাসী’, ‘ছোটমাসি’, ‘খেলনা’। এগুলো ব্যতিরেকেও তাঁর আরও তেইশটি গল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৪০৭ বঙ্গাব্দে তাঁর কনিষ্ঠা ভগিনী সুজাতা সান্যাল (চট্টোপাধ্যায়) সুলেখা রচিত ১৮টি গল্পের একটি সংকলন ‘সুলেখা সান্যালের গল্পসংগ্রহ’ নামে প্রকাশ করেন।
‘নবাঙ্কুর’ সুলেখা সান্যালের ছাব্বিশ বছর বয়সের ফসল। পরবর্তীকালে উপন্যাসটির দু’টি সংস্করণও বাজারে এসেছিল এবং সুলেখা সান্যালের ব্যক্তিগত ও সাহিত্যিক দুর্ভাগ্যের মতই বাংলা উপন্যাসের পাঠকের দুর্ভাগ্য এই যে উপন্যাসটির উল্লেখ এতদসংক্রান্ত কোন আলোচনা-ইতিহাস গ্রন্থে স্থান পায় নি।
‘নবাঙ্কুর’ একজন নারীর হয়ে ওঠার কথা। একজন কেন্দ্রীয় চরিত্রের হয়ে ওঠার যে কাহিনী ইংরেজি সাহিত্যে The Way of All Flesh (Samuel Butler : ১৯০২), Sons and Lovers (D.H. Lawrence : 1913) A Portrait of the Artist as a Young Man (James Joyce : 1916) প্রভৃতি কালজয়ী উপন্যাসে ধৃত যা ‘Bildungsroman’ বলে প্রচলিত; যে ধারা বাংলাভাষায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৯৪-১৯৫০) ‘পথের পাঁচালী’ (১৯২৯) এবং ‘অপরাজিত’ (১৯৩১) ছাড়া একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হুমায়ুন আজাদের (১৯৪৮-২০০৪) ‘সব কিছু ভেঙে পড়ে’ (১৯৯৫) এবং উপযুক্ত সবকটি উপন্যাসই যা একজন পুরুষের হয়ে ওঠা। সে সবেরই বিপরীত নবাঙ্কুর একজন নারীর হয়ে ওঠা- যে ধারার সাম্প্রতিক সংযোজন তসলিমা নাসরিনের (জন্ম ১৯৬২) ‘আমার মেয়েবেলা’ (১৯৯৯)।
মাত্র দুটি উপন্যাস লিখেছিলেন অকাল প্রয়াত এই লেখিকা। অথচ দুটিতেই তাঁর দার্ঢ্য সুস্পষ্ট। ব্যক্তিজীবনের উপাদানকে উপন্যাসের প্লট করতে সংকোচ করেন নি তিনি। রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণেই সুলেখা সান্যালের কথাসাহিত্য গভীর জীবনবোধের শিল্পিত পরিচায়ক হতে পেরেছে। পূর্বসূরি বা সমসাময়িক অধিকাংশ মহিলা কথাকারের মত তাঁর রচনা ঘরকন্নার বিবরণে পরিণত হয়নি।
এবার আসছি সুলেখা সান্যালের ছোটগল্প প্রসঙ্গে। একমাত্র সংকলন ‘সিঁদুরে মেঘ’-এ অন্তর্ভুক্ত গল্পগুলো ছাড়াও তার যে সব গল্পের সন্ধান পাওয়া যায় সেগুলো হলো: ‘অন্তরায়’, ‘কীট’, ‘সংঘাত’, ‘বিবর্তন’, ‘ছেলেটা’, ‘একটি মামুলি গল্প’, ‘উলুখড়’, ‘কিশোরী’, ‘পরস্পর’, ‘খোলাচিঠি’, ‘শকথেরাপী’।
এছাড়া পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে থাকা তাঁর অন্যান্য গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘পঙ্কতিলক’, ‘মামণি’, ‘পাষন্ড’, ‘প্রতীক’, ‘যে গল্পের শেষ নেই’, ‘শেষ সন্ধ্যা’, ‘ঘেন্না’, ‘লজ্জাহর’, ‘ফাটল’, ‘রূপ’, ‘ভাঙাঘরের কাব্য’ ইত্যাদি।
১৯৬৪ সালে তাঁর ‘সিঁদুরে মেঘ’ গল্পটির চলচ্চিত্রায়ণ হয়। তাঁর গল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য বাস্তব ঘনিষ্ঠতা। প্রতিটি গল্পেই জীবনের সন্বিষ্ট চিত্রকে সুলেখা ভাষা দিতে চেয়েছেন। চল্লিশ-পঞ্চাশের যে ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সময় তা সুলেখার গল্পাবলিতে মূর্ত। সুজাতা সান্যালের ভাবনা —
সুলেখা সান্যালের ছোটগল্পগুলিকে আমরা তিনটি পর্বে ভাগ করতে পারি। প্রথম পর্ব ‘সিঁদুরে মেঘ’ এবং অন্যান্য গল্প- যেগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে দাঙ্গা, দেশভাগ ও যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত সৃষ্টি।
দ্বিতীয় পর্বে আমরা রাখতে পারি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একান্ত যন্ত্রণাদগ্ধ কাহিনির প্রতিচ্ছবির গল্পগুলি। তৃতীয় পর্বে একেবারেই নৈর্ব্যক্তিক বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্র, যা লেখিকার বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা প্রকাশ করে।
তাঁর অনেক গল্পের মূল প্রতিপাদ্য দেশবিভাগ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ধর্মভিত্তিতে যে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশের জন্ম হয়েছিল তার ফলশ্রুতিতে কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তান থেকে এমন লাখ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী চলে যান ভারতে। রাজনীতির কারণে হঠাৎ করে এমন নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষ বারবারই কঠিন বাস্তবতায় সুলেখার গল্পে উপস্থিত। নিজের ব্যক্তি জীবনে আরও বহু জনের মত সুলেখা সান্যাল নিজেও যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা তাঁর এক বিরাট সংখ্যক গল্পের প্রধান উপজীব্য।
‘ফল্গু’, ‘জন্মাষ্টমী’, ‘গাজন-সন্ন্যাসী’ গল্পগুলো দেশবিভাগ নিয়ে রচিত সুলেখার প্রধান রচনা। ‘অন্তরায়’ ও ‘বিবর্তন’ যার বিষয়বস্তুও একই নির্মম দেশবিভাগ ও উদ্বাস্তু জীবন। মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা বাঙালির জীবনে এ ঘটনার অভিঘাত ছিল সুদূরপ্রসারী।
‘ফল্গু’তে তাই দেখা যায় মহেশ্বরীকে যে কিনা অবিনাশের পিসিমা। কোলকাতা থেকে বেড়াতে আসা অবিনাশের স্ত্রী বরুণা যখন মহেশ্বরীর কাছে কোলকাতা চলে যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলে তখন তার এক কথা ‘ন’ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এ পাড়া থেকে ও পাড়ায় গিয়েছিলাম — আর চৌদ্দ বছরে মেয়ে কোলে বিধবা হয়ে ফিরে এসেছিলাম এ বাড়িতে — এই আমার জীবনের জায়গা বদল। কোথায় যাব! এখানকার মাটি আঁকড়ে থাকবো শেষ দিন পর্যন্ত।’ অসহায় বৃদ্ধার মর্মবিদায়ক ও গভীর অভিপ্রায় ‘ফল্গু’কে সজীবতা দিয়েছে। অথচ এ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে হিন্দু-মুসলমান নৈকট্যের ব্যাপারটিও লেখিকার দৃষ্টি এড়ায় নি। মতি যে মুসলমান তাই ও চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশযোগ্য নয়। সে-মতিকে অনেকটা কাছাকাছি নিয়ে আসে বরুণা। বরুণা সকল জাতের মানুষ নিয়ে পিকনিক করে, গল্প করে, একসাথে খায়। বরুণার সকল কর্মকাণ্ড বুড়ির কাছে উপস্থিত ‘জাত বিচার না — হিন্দু মুসলমান না, দেশ ভাগাভাগি না’ এই গভীর সত্য নিয়ে।
‘জন্মাষ্টমী’ এবং ‘গাজন-সন্ন্যাসী’র পশুপতি তো তেভাগার বিক্ষত সৈনিক। ফরিদপুরের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত এ গল্পের পশুপতি যখন জেলে যায় তখন তার বাবা কাশীনাথই পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে হয়েছিল দেশান্তরি। দেশছাড়া ঘরছাড়া এ মানুষগুলো সম্পর্কে কাশীনাথের বিবরণ ‘সাতজন মরিছে আমাশায়। জমি যেতি দেশে গরমেন্ট যে, সে তো জমি না পাথর। জল নাই এ দেশে, ফসল তুমি ফলাবা কেমন করে। একখান করে মাটির খুপরি, তারে দুই ভাগ করে দু’টো পরিবার থাকতি হবি।’ এই যে নির্মমতা তাতেই এক সময় এসে হাজির হয় পশুপতি। সে আবার মানুষ খ্যাপাবে এমন আশঙ্কা তার স্ত্রী মানদা প্রকাশ করলে পশুপতির ক্ষুব্ধ ও মর্মন্তুদ উত্তর ‘আদালত আমাগারে ছাড়েৎ দেছে কোন প্রমাণ না পায়ে, নিজের দ্যাশের থে শত্রুতা করে বার করে দেশে। তুইও কি তাড়ায়ে দিতি চাস আমারে’!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিধ্বস্ত কোলকাতার চিত্রও প্রাণস্পর্শীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে সুলেখা সান্যালের কয়েকটি গল্পে। ‘সিঁদুরে মেঘ’ এ বিষয়ে রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রধান গল্পগুলোর অন্যতম। অনন্ত এবং মালতীর দাম্পত্য জীবনকে নিয়ে গড়া এ গল্পে সে সময় কালের সর্বস্বশূন্য কোলকাতাবাসীর চিত্রই ফুটে উঠেছে। অনন্ত বা মালতী কেউই একটি সুখী দাম্পত্যে পৌঁছতে পারে না তাদের অ-প্রকাশিত অতীতের জন্য — যদিও তারা জানে না তাদের পরস্পরের এ অতীত। দুঃসময়ের কালে মালতীকেও যে এক সাহেবের অফিসে চাকরি নিতে হয়েছিল তা নিয়ে মালতীর অনুশোচনার শেষ নেই। পেটের দাবির কাছে নিরুপায় মালতীকে সে সময় আরও অনেক মধ্যবিত্ত মেয়ের মতই ত্যাগ করতে হয়েছে সকল সম্ভ্রম, অন্যদিকে অনন্তও তো বোঝে নি নিজের স্ত্রীকেই তুলে দিতে হবে সাহেবদের হাতে যার পরিণতিতেই স্ত্রী ললিতা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। ওরা দুজনেই তো এমন সময়ের সন্তান যখন হাসপাতাল উঠে গিয়ে মিলিটারি ব্যারাক হয়েছে আর সৈন্যদের সাথে ঘুরে বেড়ানো মেয়েরা ছেঁড়া জুতোর মত পরিত্যক্ত। আর তাই তো শেষে স্বামীর ভাবনা ‘আমরা দুজনেই ঘরপোড়া গোরু, তাই তো সিঁদুরে মেঘ দেখে মুখ শুকোয়’।
দুঃসহ অর্থনীতির এই সামাজিক প্রেক্ষাপটে সুলেখার অন্যান্য গল্পগুলো হলো: ‘জীবনায়ন’, ‘খেলনা’, ‘বিবর্তন’ প্রভৃতি। মধ্যবিত্তের সামাজিক অবস্থার এ করুণ চিত্র সুলেখা সান্যালের এক জীবন্ত সৃষ্টি। সে এক এমন সময় যখন সীমা-আনন্দ তাদের সম্ভাব্য সন্তানের আগমনের সংবাদে কি খেয়ে বাঁচবে এই চিন্তাতে এম আর পর্যন্ত ভেবে ফেলে (জীবনায়ন), অথবা সামান্য অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য নেই বলে নমিতা আর প্রবীর পরস্পরকে ভালবাসার পরও দাম্পত্যে পৌঁছাতে পারল না (খেলনা), অথবা অভয় তার অসুস্থ স্ত্রী কনিকার জন্য আলো-বাতাস ভরা একটা বাসা ভাড়া নেয় যার ভাড়া তার নিজ আয়ের সমান এবং সেখানে খাওয়ার জন্য আর কোন টাকা উদ্বৃত্ত নেই (বিবর্তন)।
সুলেখা সান্যালে গল্প নিয়ে বর্তমান আলোচনাটি শেষ করতে চাই তাঁর ‘উলুখড়’ দিয়ে। ১৯৬৭ তে পত্রিকায় প্রকাশিত এ গল্পটি এ পর্যন্ত তাঁর সকল গল্পের মধ্যে দীর্ঘতম সাধারণ বইয়ের পৃষ্ঠায় সাঁইত্রিশ পৃষ্ঠা। কথক ব্রজেন এ গল্পের প্রধান চরিত্র না হলেও তারও রয়েছে এক বিশেষ গুরুত্ব। প্রধান যারা চরিত্র তারা হলো দেবাশিস আর অনুপমা। শশাঙ্কর স্ত্রী অনুপমা আর দেবাশিস কলেজ পড়াকালে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হলো। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো দেবাশিস বিলেত থেকে ফিরতেই অনুপমার সাথে তার বিয়ে হবে। আর সেই আশ্বাসমতই শশাঙ্কের সংসার ছেড়ে স্বপ্নের জগতে পা ফেললো অনুপমা। তার এই কাজের জন্য তার পরিবার তাকে করলো ত্যাগ। অনুপমা হয়ে পড়লো একাকী, নিঃসঙ্গ। চাকরিও গেল তার। হতাশ ক্লান্ত অনুপমা আক্রান্ত হলো জটিল রোগে। কিন্তু প্রত্যাশা পুরণ ঘটে নি। কেননা দেবাশিষ তো ইতোমধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অন্য এক মেম মেয়েকে নিয়ে। রোগশোকের চূড়ান্ত পর্যায়ে অনুপমা অন্ধ হয়ে যায় পুরোপুরি। কিন্তু তার মৃত্যুর পূর্বে দেবাশিস আসার ব্যাপারে তার প্রত্যাশার মিথ্যাপূরণ ব্রজেন ঘটিয়েছেন। বিদেশ ফেরত একজনকে দেবাশিষ হিসাবে উপস্থাপন করেছিল অনুপমার সামনে। ‘উলুখড়’ মানুষের মিথ্যে ও সত্যি ভালবাসার গল্প। সুলেখা সান্যালের ব্যক্তিগত জীবনে স্পর্শও ‘উলুখড়’ গল্পে দুর্লক্ষ্য নয়।
সবশেষে সুলেখা সান্যালের শেষ জীবন নিয়ে তাঁর অনুজা সুজাতা সান্যালের (চট্টোপাধ্যায়) বক্তব্য উদ্ধার করছি। তিনি লিখেছেন —
১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি যেন জীবনকে ছেনে ছেনে নতুন নতুন মূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। জীবনের কাছ থেকে পাওয়া তিক্ততা বিশ্বাসহীনতা, নিঃসঙ্গতা তাঁকে ঠেলে দিয়েছে অদ্ভুত এক নৈর্ব্যক্তিক শূন্যতাবোধের মধ্যে। এই সময় আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনাগুলি পাই। নারী জীবনে ব্যর্থতা, সবকিছু পাবার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও না পাবার যন্ত্রণা, অবসিত যৌবনের হতাশা, রোগের দুঃসহ ক্লেশ — সবকিছু রেখে গেছেন তাঁর এই সময়ের লেখার মধ্যে।
গভীর পাঠে স্পষ্ট হয় নারী কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুলেখা বেছে নিয়েছিলেন একটি ভিন্ন জগৎ। সমসাময়িক পুরুষ কথাকারদের তুলনাতেও তাঁর কলম অগ্রণী ছিল এমনটি বললে ভুল বলা হয় না।