শনিবার | ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৫৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
সৌরভ হোসেন-এর ছোটগল্প ‘সালাম’ বঙ্গের শক্তি-পূজা : সুখেন্দু হীরা পুজোর পরিবর্তন, পরিবর্তনের পুজো : সন্দীপন বিশ্বাস পিতৃপক্ষের মধ্যে পালিত একাদশী — ইন্দিরা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত অরণ্যের অন্তরালে তাম্বদি সূরলা : নন্দিনী অধিকারী ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ হীরালাল সেন : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্যাসাগরের অন্তরালে ঈশ্বরচন্দ্র, পূর্ব পুরুষের ভিটে আজও অবহেলিত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব সুধীর চক্রবর্তী স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার : দীপাঞ্জন দে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে দুর্গা রূপে আরাধনা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালির নিজস্ব দুর্গা : শৌনক দত্ত সে নারী বিচিত্র বেশে মৃদু হেসে খুলিয়াছে দ্বার : দিলীপ মজুমদার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘প্রাতঃভ্রমণ’ বন্যায় পুনর্জীবন বেহুলার : রিঙ্কি সামন্ত গরানহাটা কি ছিল ভেড়ার হাট : অসিত দাস ডিভিসি-র ছাড়া জলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ নাজেহাল, দায় কার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সুধীর চক্রবর্তী মুক্তধারা ভাষণমালা : দীপাঞ্জন দে বোর্হেসের গোলকধাঁধা : অশ্রুকুমার সিকদার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের দুর্গোৎসব : রিঙ্কি সামন্ত মর্ত্যে দুর্গাপূজার সেকাল ও একাল : অসিত দাস বই-বাই : নবনীতা দেব সেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘প্রবাসী’ ম্যান মেড নয় ডিভিসি-র পরিকল্পনা আর রূপায়নে গলদ : তপন মল্লিক চৌধুরী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে রাখাইনে সেইফ জোন তৈরি করা আবশ্যক : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ফলের নামটি পাকা কলা : রিঙ্কি সামন্ত বই-বাই : নবনীতা দেব সেন হেমচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবর্ষ : দীপাঞ্জন দে নিম্ন চাপের অতিবৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত আরামবাগ : দেবাশিস শেঠ আরামবাগে ভয়াবহ বন্যা, দুর্যোগের পদধ্বনি, ক্ষোভ জনমানসে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষেও আওয়াজ তুলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ কৌশিকী অমাবস্যার-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সমর সেন-এর কবিতা — মধ্যবিত্তের স্বপ্নমনস্তত্ত্ব : আনন্দগোপাল হালদার

আনন্দগোপাল হালদার / ২৬৮ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ১৭ জুন, ২০২৪

প্রতিটি কবি-মানুষই আপন-আপন মনোজগতে নিজস্ব চিন্তাধারার একটা জগৎ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। পরিচিত পৃথিবীর নিয়ম কানুনের চলমান বাস্তবতায় তিনি যখন আস্থা হারিয়ে ফেলেন তখন একটা বিকল্প বাস্তবতার সন্ধানী হন। মনে-মনে স্বপ্নের বীজ বপন করেন এবং সেই স্বপ্ন-সফলতার সন্ধানে রচনা করেন চিরচেনা চিন্তাধারার থেকে ভিন্নভাষ্য। আবার কোনও-কোনও কবি বাস্তব-পৃথিবীতে আস্থা রেখে সেখানেই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন এবং সেই পৃথিবীরই রূপমুগ্ধ হয়ে তারই স্তুতি রচনায় মুখর থাকেন। দ্বিজেন্দ্রলাল, বিহারীলাল, রবীন্দ্রনাথের মতো কবিদের ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ ‘বঙ্গসুন্দরী’র রূপ দেখে ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’ বলা স্বাভাবিক, কিন্তু জীবনানন্দ যখন জানাচ্ছেন ‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন’ বা সঞ্জয় ভট্টাচার্য ‘আমাদের পঙ্গু আত্মা পায় নিত্য মৃত্যুর পরশ’ অথবা কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় যখন লিখছেন ‘কামনা-পিচ্ছিল দিন, বিবস্ত্র প্রহর,/শান্ত চোখ নীল বন্যা, ধূসর শহর’ — তখন তিরিশের দশকের মানচিত্রে কবিদের ব্যক্তিগত জীবনের নিভৃত মন্থন থেকে বোঝা যায় এই দ্বিতীয় পর্বে অর্থাৎ তিরিশ দশকের শেষের দিকে ‘দুঃস্থের দেশে নিঃসম্বল বেকার’ হয়েই জন্মেছিলেন কবি সমর সেন। যেখানে বণিক সভ্যতার নিরালম্ব ভাঙনের কালে কবি দেখেছিলেন সাম্যের স্বপ্ন, মৈত্রীর স্বপ্ন, স্বাধীনতার স্বপ্ন, দিন বদলের স্বপ্ন। ক্রম অবক্ষয়িত পৃথিবীর রূপ দেখতে-দেখতে কবি বুঝে গিয়েছিলেন ‘বনেদী বুদ্ধিতে এত দিনে এসেছে সম্পূর্ণ নৈরাজ্য’। তাই মানবাত্মার যন্ত্রণাকাতর দিনলিপি তিনি নির্মোহ এবং নির্মম চোখে দেখেছেন এবং তৎসহ দেখেছেন চলমান জীবনের স্বপ্ন এবং স্বপ্নবিফলতার বেদনাজনিত আত্মযন্ত্রণা। চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যবর্তী বিস্তর বিপ্রতীপতায় তথা প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির স্বপ্ন এবং স্বপ্নভঙ্গের দোলাচলতায় কবি তাই স্বভাবধর্মজাত প্রতিক্রিয়ায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। সেই মনভাঙা আত্মক্ষরণ যত বৃদ্ধি পেয়েছে, ততই সমর সেনের সারা কাব্যবলয় জুড়ে তিনটি সত্তা স্পষ্ট বিচরণ করতে শুরু করেছে; এই তিনটি সত্তা হল যথাক্রমে:

প্রথম সত্তা— ভ্রাম্যমাণ বেকার

দ্বিতীয় সত্তা— অনুগত কেরানী

তৃতীয় সত্তা— মধ্যবিত্ত গৃহস্থ

জীবনের চলমান পারম্পর্যে এক-এক করে এই তিনটি সত্তাই বিষণ্ণ এক নাবিকের আত্মদীর্ণ কান্না শুনছে। বিধ্বস্ত কবি ‘ঝড়’ কবিতায় তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় লিখছেন : —

‘ধুলোভরা নির্জন পথে মোটরের কর্কশ শব্দে একটি হরিণের ঊর্ধ্বশ্বাস, ধাবমান বেগ,

আর সেই ক্ষিপ্রগতি চঞ্চল রেখায়

উর্বশীর দীর্ঘশ্বাস,’

(ঝড়/কয়েকটি কবিতা)

এই কাব্যপ্রসঙ্গের ধারাবাহিকতা থেকেই সমর সেনের কবিতায় দেখা যাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ এক বেকার প্রেমিক কলেজ ছুটি হলে বাড়ি ফেরার কথা ভাবছে না, বরং কোনও বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা বা কোনও হস্টেলে গিয়ে মানুষ দেখতে চাইছে, জীবন দেখতে চাইছে। সে বুঝে গেছে এই সময় সারা বিশ্বই একটা ঔপনিবেশ-আক্রান্ত অনিশ্চিত জীবনযাপনের কালখণ্ডে পরিণত হয়ে গেছে; প্রেম, শিল্প, স্বপ্নআশ্রিত সুস্থ স্বাভাবিক অস্তিত্ব স্থাপনের নিশ্চিত ঠিকানা আজ আর কোথাও নেই। শৈশবের বৃষ্টিভেজা নির্মল আনন্দ আজ জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী কালে সবুজ বাংলা ক্রমশ করুণ হয়ে উঠেছে, কেননা মোটরের কর্কশ শব্দ তার সর্বাঙ্গে দূষিত কলঙ্করেখা এঁকে দিয়েছে; এইরকম বিপন্ন পরিবেশে হরিণ অর্থাৎ সুন্দরের স্থান কিছুতেই হতে পারে না। অনাবিল প্রকৃতির সৌন্দর্যময়তা এই ‘ইস্পাতের কঠিন পথে’ চলতে পারে না, ধাবমান বেগে সে দিগ্বিদিকে উন্মাদের মতো ছুটছে। আর তাই চির প্রত্যাশিত উর্বশী যেন দীর্ঘশ্বাসে-দীর্ঘশ্বাসে করুণ প্রহর গুনছে। মৃত্যুমুখী তার হাহাকারের শব্দ। সাঁওতাল পরগনার সহজ স্বাভাবিক ছন্দময় নিরীহ জীবনও আজ বিপর্যস্ত। কবি এখানে দাঁড়িয়ে তবুও হারানো জীবনের ঘ্রাণ বা আস্বাদ গ্রহণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় সেখানেও তিনি শুনতে পান ‘কোন সুদূর দিগন্তের কান্না’।

‘আকাশে ধোঁয়ার ক্লেশ, চারিদিকে ধোঁয়ার গন্ধ,

আর হাওয়ায় অসংখ্য ধুলোর কণা

জীবন্ত বীজাণুর মতো।’

(ঝড়/কয়েকটি কবিতা)

আমরা জানি ঝড় সাধারণত ধ্বংসের প্রতীক; কিন্তু এই ধ্বংসের পরেই আবার নতুন যুগের ভোর দেখবার জন্য কবি স্বপ্ন দেখেন সেই বিশাল ঝড়ের যা মূলত গভীর অন্ধকারের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও কবি এই ঔপনিবেশিক চক্রব্যূহ তাকে দিয়েই ভেঙে তছনছ করতে চাইছেন এবং ক্রমাগত শীতল শান্তির স্বপ্ন দেখছেন। একটা প্রহসন সর্বস্ব চারদেয়ালের গণ্ডিতে আবদ্ধ না-থেকে তাঁর সৃষ্ট এই ভ্রাম্যমাণ যুবক-কবি বাস, ট্রাম, চায়ের দোকান, রকে-আড্ডায় জীবন নামক ঔপনিবেশিক চক্র দেখছে। সব জায়গায় ভ্রাম্যমাণ এই সত্তা জীবনের জ্বলন্ত দৃশ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবতায় ধারণ করে মুখ্যত এক বেকার প্রেমিকের চলন্ত দৃষ্টি দিয়ে জীবনের রক্ত ক্লেদ অস্থিমজ্জা ঘেঁটে জীবন দেখছে, মানুষ দেখছে, বাজার দেখছে। দেখতে-দেখতে বহু বিচিত্র ঘ্রাণ, স্বাদ, গন্ধ নিতে-নিতে জীবনকে ঘনিষ্ঠ তন্ময়তায় প্রত্যক্ষ করছে এবং প্রত্যাশাও প্রাপ্তির নিরুপায় উল্টোরথে স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে হস্টেল তারপর খিদিরপুর ডকে রাত্রে জাহাজের শব্দ শুনে অভিশপ্ত নাগরিকতার বিষণ্ণ আত্মদংশনে পীড়িত হয়েছে। বিষণ্ণ এই প্রেমিক বা আত্মকেন্দ্র দংশিত এই প্রেমিক মনে-মনে চারিদিকের ভৌগোলিক অধঃপতনের মাঝে বিষণ্ণ নাবিকের গান তবুও শুনতে পেয়েছে।

এভাবেই তাঁর কবিতায় সমকালীন সময়ের নষ্টভ্রষ্ট অপচয়ের ইতিহাস তীক্ষ্ণ শ্লেষধর্মী ব্যঙ্গবাণে বিদ্ধ হয়েছে। মধ্যবিত্ত জীবনের ঘেরাটোপে আবদ্ধ বেকার প্রেমিক ঔপনিবেশিক অধঃপতনের নাগরদোলায় লাঞ্ছিত হয়ে ক্রমাগত ছটফট করছে পরিত্রাণের জন্য কিন্তু পরিত্রাণ কোথায়? বেকার প্রেমিকের সত্তা গ্রহণকারী কবি চারপাশে শুধু দেখতে পেয়েছেন বিবেক ও মূল্যবোধের ক্রমাবনতি। সেখানে ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদ সত্য, বিবেকী জীবনদর্শন এতটুকু সত্য নয়; এ প্রসঙ্গে অনিবার্য হয়ে ওঠে ‘হসন্তিকা’ কবিতাটি : —

‘অনেকের সান্ধ ভ্রমণ সাঙ্গ হল,

বেচারী দিন বিফলে গেল।

চারিধারে বিকার মূর্তিমান চলে,

ট্রামে চড়ে, আসে,

কখনো সন্ধ্যার ছায়ায় প্রগলভ্ হাসে,

কখনো বা ভিখারীর বেশ,

অসহায় চোখের জল ঝরে।

মোড়ে মোড়ে ইয়ারের ভিড় ঠেলে

কেউবা অতি সন্তর্পণে ঘরে ফেরে,

প্রেম ও পলিটিক্সের বিচিত্র গতি

হহৃদয় বিষাদে ভরা।’

(হসন্তিকা/নানাকথা)

কবির এই কাব্যতাড়িত ভাষ্যে তাঁর আপন অন্তর্গত বিবেকী জগৎকে যেন স্পর্শ করা যায়। মধ্যবিত্ত জীবনের পাঁকে আবদ্ধ কবি নিজগৃহে পরবাসী হয়ে পড়েছেন। ভ্রাম্যমাণ এই বেকার শুধু ঘুরছে নিষ্ফল জীবনচক্রের প্রাত্যহিক গোলকধাঁধায়; কলুর বলদের মতো জীবনের ঘানিগাছ টানতে-টানতে সে যেন একটি আস্ত দিন, সকাল থেকে সন্ধ্যা শেষ করছে এবং তারপর শূন্যহাতে ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরছে। কিন্তু বাড়ি? সেও তো এক অনিশ্চিত প্রহসনের প্রহেলিকা; যেখানে ফিরলেও কোনো নিজস্ব আশ্রয়বৃক্ষের স্থায়ী শিকড় এবং মাটিও পাওয়া যাবে না; তবুও ফিরতে হয়; ফেরাটা আর কিছুই নয়, গতানুগতিক বা বৈচিত্র্যহীন আত্ম পরিহাসেরই ক্লান্ত উদাহরণ; এভাবেই নিত্যদিন চলছে নিজের মনে নিজের নির্মম প্রতারণা; সমর সেনের কবিতায় ছবিটা তাই স্পষ্ট ও অভ্রান্ত— ট্রামে বাসে, পায়ে হেঁটে ফ্যালফেলে নিরর্থক হাসি হেসে আরও বেকারের ভিড় ঠেলে প্রেম ও রাজনীতির বিচিত্র দলাদলির নানা রূপ সমন্বিত গতিপথে বিষাদ ভারাতুর হৃদয় নিয়ে একজন সময়দগ্ধ মানুষ বাড়ি ফিরছে, যে-বাড়ি ফেরা সব অর্থেই হাস্যকর, জীবনের বোঝা টেনে চলবারই সুগভীর ইঙ্গিত; প্রসঙ্গক্রমে বলা দরকার যে, ‘নানাকথা’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘হসন্তিকা’ কবিতাটি রচিত হয় ফেব্রুয়ারি, ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে। আর ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে নিষিদ্ধ হওয়া কমিউনিস্ট পার্টি পুনরায় স্বীকৃত হয় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে। অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টির নিষিদ্ধ থাকাকালীন অবস্থায় কবিতাটি রচিত হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে লাল ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে নৈরাজ্য আর একনায়কতন্ত্রের করাল গ্রাসে আমাদের দেশ নিজস্ব স্বধর্ম হারাতে হারাতে অন্ধগলিতে ঢুকে পড়েছে। এ সময় মানুষ কার আশ্রয়ে যাবে? ঈশ্বর তো বণিকের গৃহে বন্দী। তাই ঈশ্বর সম্পর্কে মৌনব্রত গ্রহণে সক্ষম হয়েছেন কবি। যুদ্ধ-সমকালীন পৃথিবীর ভয়াবহ তমসাচ্ছন্নতায় উদ্বিগ্ন হয়ে এই বেকার প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে দেখেছে দীর্ঘ এক দমবন্ধ করা অভিশপ্ত গুমোট রাত্রি চারিদিকে ঘনিয়ে আসছে। সে রাত্রির গায়ে লেগে আছে বারুদের গন্ধ। আর তারই বিষাক্ত আক্রমণে রাত্রির বুকে খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে যাবতীয় স্থান-কাল-স্বপ্নসম্ভাবনা। ট্রামে, বাসে, মানুষের ভিড়ে দু’হাতে জঞ্জাল সাফ করতে করতে বেকার প্রেমিক ক্রমশ নিজেও নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। আর তাই নিরুপায় আত্মসমর্পণের অসহায় মুহূর্তে সে শুধু কিছুটা উষ্মা আর কিছুটা প্রার্থনার সুরে বলেছে:

‘এ কঠিন কঙ্কাল দেহে একবার প্রাণ দাও,

হে কাল, হে মহাকাল!’

(হসন্তিকা/সমর সেনের কবিতা)

প্রার্থনারত বেকার প্রেমিক স্পষ্টতই স্বীকার করে নিচ্ছে যে সে রক্তমাংস স্পন্দনহীন এক কঙ্কালে পরিণত হয়ে গেছে; কে তার এই অবস্থা করেছে? নগরসভ্যতা। নগরসভ্যতার পশ্চাতে কে আছে? বণিকসভ্যতা। আর বণিক সভ্যতার পশ্চাতে কে আছে? অবশ্যই ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদ। ফলত বেকার প্রেমিক একই সঙ্গে অনিশ্চিত এবং আতঙ্কিত। বুঝতে পারছে—

এই পারিপার্শ্বিক সমাজবাস্তবতার বদল দরকার। আর তাই বহুদিন বেকার থেকেও সে নতুন করে আবার সবুজের স্বপ্ন বপন করছে, সবুজের গান গাইছে। ধূসর মাঠের মধ্যে উদ্দাম চঞ্চল নদীর কল্পনা করছে। কিন্তু এই স্বপ্ন এই কল্পনা সফল হবে কবে? এই তীক্ষ্ণ ও তির্যক প্রশ্ন নিয়েই এভাবেই দিন যায় নিষ্ফল নীরবতায়, রাত যায় দুঃস্বপ্নে। দিনের পর দিন চাকরির প্রার্থনা করতে-করতে কিংবা দরজায়-দরজায় প্রবেশাধিকার বন্ধের নিষ্ঠুর নোটিশবোর্ড দেখতে-দেখতে বেকার প্রেমিক সেই একইভাবে ভবঘুরে এবং বেকারই থেকে যায়। এ প্রসঙ্গে স্মরণ জাগে বুদ্ধদেব বসুকে; তিনিও অজস্র ব্যর্থ দিনের সমবায়ে যুবাযন্ত্রণার ছবি এঁকেছেন তাঁর পঙক্তিতে-পঙক্তিতে; লিখেছেন : —

‘মনে মনে— শুধু মনে মনে—

অফুরন্ত অবাধ ভ্রমণ

এই বাস্-এ একজন কলেজের দিকে যায় রোজ

মোটা,

কুৎসিত সন্দেহ নেই,

তবু অন্তত হতাম যদি কেরানি কি ইস্কুল মাস্টার।’

(চলচিত্র/বুদ্ধদেব বসু)

শুধু বুদ্ধদেবই নয়, সমসাময়িক অমিয় চক্রবর্তী তাঁর ‘মেঘদূত’ এবং বিষ্ণু দে তাঁর ‘বেকার বিহঙ্গ’ কবিতায় একই অবস্থান থেকে কেরানি-জীবনের ঊর্ধ্বশ্বাস সুবিধাবাদী ইঁদুরদৌড় স্পষ্ট করেছিলেন। তবে সে-ক্ষেত্রে সমর সেনের মতো এমন তীক্ষ্ণ বক্রতা ও শ্লেষাত্মক মনোবীজের দিকে তাঁরা অগ্রসর হননি। মনে রাখতে হবে— সমর সেনের এই বক্র জীবনাভিমুখ ও ব্যঙ্গার্থক বাচনিকতার পেছনে সর্বদাই সক্রিয় ছিল— অস্তিত্বের নিগূঢ় শ্রেণিচেতনা; এই শ্রেণিচেতনা থেকেই এসেছে শ্রেণিযন্ত্রণা; স্পষ্ট করে বলা যায় সমর সেনের শ্রেণিযন্ত্রণা সর্বদাই বহমান ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবনে যাপনে; অশ্রুকুমার সিকদার লিখেছেন:

“রাজনৈতিক মতামত কবিতার বিষয় হতে পারে কিছু কিছু সময়ে, সেখানে বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শে কবির গভীর প্রত্যয় গোষ্ঠীর গণ্ডি কাটিয়ে সার্বভৌমত্ব পায় এবং অবিশ্বাসীর মনেও অন্তত কবিতা পড়ার সময় অস্থায়ী আস্থা জাগায়। কিন্তু সমর সেনের মধ্যে সেই প্রত্যয়ের নিষ্ঠা ছিল বলে মনে হয় না।”

(আধুনিক কবিতার দিগ্বলয়, প্রবন্ধ-সমর সেনের কবিতার ইমেজ, অশ্রুকুমার সিকদার)

কবি নিজেও তাই ‘গৃহস্থবিলাপ’ কবিতায় লিখেছেন ‘ঘুণধরা আমাদের হাড়, / শ্রেণীত্যাগে তবু কিছু / আশা আছে বাঁচবার’। সর্বময় টানাপোড়েনে সে বিধ্বস্ত। বিশ্বাসের ভিত্তিভূমিতে ধরেছে চিড়। কিন্তু শরীরে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঢুকে পড়া যৌন শিহরণকে তো কিছুতেই অস্বীকার করা যাচ্ছে না। দিনের শুরুতেই তাই কলতলায় স্নান করতে আসা ক্লান্ত গণিকাদের মুখর কোলাহল এবং পথচলতি ভ্রাম্যমাণ যুবকের গোপন আত্মরতি দেখতে- দেখতে ভেতরে-ভেতরে ক্রমাগত শুরু হয়ে যায় যৌনতৃষ্ণা নিবারণের নিষ্ফল প্রচেষ্টা। এই নিষ্ফলতার আক্রমণে সে কী করবে? মনে-মনে যদিও সে প্রেমের পথের পথিক। কিন্তু তার তো দিনগুজরানের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য সেই অর্থে নেই। সে তো এক বেকার প্রেমিক মাত্র। ফলত উর্বশীর স্বপ্ন যতই দেখুক না কেন, ওই রূপোপজীবনীর সঙ্গ ছাড়া সান্নিধ্য ছাড়া সারাজীবন তার ভাগ্যে কিছুই আর জুটবে না। উর্বশী চিরকালই থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে; অনেকটা মরীচিকাময়। ফলত এই বেকার যুবা একটা অতৃপ্তির হাহাকারে সবসময়ই মুহ্যমান। তাই একটা সময় মধ্যবিত্ত স্বভাবদোষে সে বলতে প্রায় বাধ্য হয়:

‘হে প্রেমের দেবতা, ঘুম যে আসে না, সিগারেট টানি,’

(একটি বেকার প্রেমিক/কয়েকটি কবিতা)

জীবনানন্দের নায়কও বলেছিল ‘ঘুম আর আসে নাকো/বসন্তের রাতে।’ (ক্যাম্পে/ধূসর পাণ্ডুলিপি)। সেও ভালোবাসার মানুষের প্রণয়াকাঙ্ক্ষী ছিল, কিন্তু মনের খোরাক মেটানোর উপযুক্ত প্রেম সেও কি পেয়েছিল? তাকেও তাই বলতে হয়েছিল : —

‘আমার হৃদয়— এক পুরুষ হরিণ—

পৃথিবীর সব হিংসা ভুলে গিয়ে

চিতার চোখের ভয়— চমকের কথা সব পিছে ফেলে রেখে

তোমাকে কি চায় নাই ধরা দিতে?’

(ক্যাম্পে/ধূসর পাণ্ডুলিপি)

কিন্তু ধরা দিতে চাইলেই কি আর প্রেম তাকে ধরা দেবে? ভালোবাসা যতই পিঁড়ি পেতে রাখুক উঠোনের কোণে, গভীর গভীরতর রাত গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে এলেও সে পিঁড়িতে কেউই এসে বসে না; তাই তো তাকে ‘ফিরিঙ্গি মেয়ের উদ্ধত নরম বুক’ গোপনে দেখে অথবা মাঝে-মাঝে যৌনপল্লীতে গিয়ে নকল প্রেমে শরীর ডোবাতে হয়; সেই কারণেই দীপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন:

“সে বুঝতে পারছে তার জন্য কোথাও কোনো প্রেমের দেবতা নেই, যার হাত ধরে সে অতিক্রম করে যেতে পারবে এই নিষ্ঠুর ‘বণিক সভ্যতার শূন্য মরুভূমি।’ এই দিন যাপনের প্রাণধারণের গ্লানি নিয়ে সে বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে মানসিক আর শারীরিক সমস্ত অপচয় নিয়ে নিদ্রাহীন চোখে। এই অনিদ্রা তো তার উত্তরাধিকার-যা সে পেয়েছে তিনের দশকের সর্বগ্রাসী যুগপর্বের কাছ থেকে। কোলকাতা শহরের রাস্তায় কিংবা চোরাবাজারের গলিতে গলিতে তার এই যে প্রায় উদ্দেশ্যহীন পথচলা-এর মধ্য দিয়েই সেদিনের এক যুবকের স্বপ্নভঙ্গের রূঢ় বাস্তবটি তুলে ধরলেন সমর সেন।”

(রবীন্দ্রোত্তর আলোকবৃত্তের তেরোজন কবি, প্রবন্ধ সমর সেন: যুগ-যন্ত্রণা কাতর এক নাগরিক কথামালা, দীপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়)

এভাবেই আরও এক নিরাশাকরোজ্জ্বল স্বপ্নভঙ্গের ছবি ধরা পড়ে তাঁর ‘মেঘদূত’ কবিতায়। বহু বছর আগেই কালিদাস তাঁর মেঘদূত কাব্যে বিরহী যক্ষের মর্মবাণী প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে নির্বাসিত যক্ষের অচরিতার্থ বিরহবেদন ধরা পড়েছিল। পরবর্তীতে অমিয় চক্রবর্তী ‘খসড়া’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘মেঘদূত’ কবিতায় দেখিয়েছেন বর্তমানের যক্ষরা আজ সবাই দশটা-পাঁচটার অনুগত ছাপোষা কেরানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এরা কোনোরকমে দিন কাটাতে পারলেই বেঁচে যায়। এদের জীবনে সুখ শান্তি আমোদ আহ্লাদ খুবই গতানুগতিক ও বৈচিত্র্যহীন। কেরানি-জীবনের অনিচ্ছুক ভার বইতে-বইতে  ক্রমশ এদের মেরুদণ্ড হারিয়ে নুইয়ে পড়েছে। অমিয় চক্রবর্তী তা দেখে লিখলেন:

‘হাওড়ার পুলে

লক্ষ লক্ষ’

হে যক্ষ,

মনোরথে নয়, বাস্-এ, মোটরে ইত্যাদি

অনাদি

তোমাদেরই বহি এই ধারা।

এ-জীবন আজো মিনহারা।

দেদো অদ্ভুৎ

চলে মর্তে দুই মেঘদূত’

(মেঘদূত/খসড়া)

আর সমর সেনও তাঁর রচিত মেঘদূতকে নামিয়ে আনলেন ‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের সমকালীন বাস্তবতায়। এখানে কবি তাঁর স্বঅর্জিত ক্রিস্টাল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তিনি যেন এ যুগের নায়কদের দেখেছেন। আধুনিক এইসব যক্ষ প্রবল যৌনতৃষ্ণায় আচ্ছন্ন, দেহ ছাড়া আর কিছুই তাদের কাঙ্ক্ষিত নয়; ইন্দ্রিয়জৈব কামনার পেছনে ছুটন্ত এইসব যক্ষদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই, নির্মল মনোবাসনা নেই—

আছে শুধু শরীরসর্বস্ব এক উদ্ভ্রান্তি। সমর সেন জানেন— তিনও এঁদেরই মতো; কারণ আজকের আধুনিক মানুষের মনে প্রেমবোধও যৌনলালসার চোরাগলিতে আটকে পড়েছে। সেখানে মুক্ত প্রেমের হাওয়া না-থাকায় নির্মল বিরহের আমন্ত্রণও আর আসে না। বিরহী যক্ষ যেমন মেঘকে দূত করে পাঠিয়েছিল তার প্রণয়িনীর কাছে, সে-কল্পনা বা সৌন্দর্যবোধও এ যুগের নায়কদের নেই। কবি দেখালেন এই বিষণ্ণ ধূসর শহরে ‘আকাশে অন্ধকার ঝুলছে শুয়রের চামড়ার মতো’ (মৃত্যু), সেখানে এই চর্মাবরণ ভেদ করে স্বচ্ছ স্বপ্ন দেখা বা সৌন্দর্যবোধের কল্পনা করা একপ্রকার দুঃসাধ্য। বন্ধ্যা ভূমি আর নিষ্ঠুর দিগন্তের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষের স্বপ্নসফলতার উজ্জীবন তাই অধরাই থেকে যায়। প্রজ্ঞাদীপিত অথচ মার্কসিস্ট কবির চিন্তনবিশ্বে তাই খুব চমৎকারভাবেই ধরা পড়েছে যুগজীবনের অচরিতার্থ হতাশার ছবি। তাই এ যুগের ‘পিরীতি’ বালির বাঁধ ছাড়া কী-ই-বা আর হবে? এ এমন এক সময় যখন মানুষ পায় ‘বৃষ্টির আগে ঝড়, বৃষ্টির পরে বন্যা’ (মেঘদূত)। এই বৈপরীত্যই আধুনিক মানুষের এবং আধুনিক জীবনের একমাত্রিক নিয়তি। সমর সেন তাঁর কবিতা নিয়ে বারবার এই রহস্যময় নিয়তির পাপ ও পঙ্কের সঙ্গে কাব্যিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। এ কথা মনে রেখে বিশিষ্ট কবি ও সমালোচক জহর সেনমজুমদার লিখেছেন:

“উচ্ছৃঙ্খল জলরাশির তাণ্ডবে এই দেশে ঘরবাড়ি চূর্ণ হয়, বোবা পশুপাখিরা ভেসে যায়, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের আর্তনাদে ভরে যায় আকাশ বাতাস। জলে ডোবা মানুষ কোথায় যাবে? গার্হস্থ্য আশ্রমের খুঁটি আর মানুষের মেরুদণ্ড ভাঙার শব্দ তখন তো একসঙ্গে শোনা যায়। ঝড়ে উড়ে যায় চালা আর বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যায় আমাদের আশা, স্বপ্ন, আনন্দ, সফলতা। এরই মধ্যে দাঁড়িয়ে, বীভৎস বাস্তবতার গান গাইতে থাকে স্বেচ্ছাসেবকের দল। মেঘের পেছন থেকে দুর্ভিক্ষের ছদ্মবেশী আগ্রাসী থাবা একটু একটু করে স্পষ্ট হতে থাকে। এই রকম ভয়ঙ্কর মুহূর্তে স্বামী-স্ত্রী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার দুর্নিবার মিলনচিন্তা নিরর্থক বিলাসমাত্র।”

(কবিতার দ্বীপ কবিতার দীপ্তি, প্রবন্ধ, সমর সেন পাহাড়ি উপত্যকার রুক্ষ বসন্ত)

এই পরিবেশ সত্যিসত্যিই কিন্তু ‘ভালোবাসা আর ভালোবাসার সন্তান’ জন্ম দেওয়ার পক্ষে উপযুক্ত নয়। তাই কবি উত্তর-প্রজন্মের চিন্তায় ভাবিত হয়েছেন। যে সমাজ পরিবেশ আজও নিরাশ্রয়তার কালখণ্ডে আটকে আছে, সে পরিস্থিতিতে যক্ষপ্রেমিক ও যক্ষ প্রেমিকার প্রেমও যেমন পূর্ণতা পায় না, তেমনই জন্মপ্রাপ্ত নতুন শিশুও ভূমিষ্ঠ হলে সেও ঝড় ও বন্যার করাল গ্রাসের বাইরে কিছুতেই যেতে পারে না। সমর সেন প্রেম ও জীবনের এই দুর্ভাগ্যকেই কবিতায় তুলে এনেছেন।

সমর সেন এক অর্থে ভ্রাম্যমাণ কবি। তবে যে-অর্থে অমিয় চক্রবর্তী ভ্রাম্যমাণ, সেই অর্থে নয়; সমর সেন নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবনের গোলকধাঁধার মধ্যে ভ্রাম্যমাণ, গলিঘুঁজির অন্দরমহলে ভ্রাম্যমাণ; কবি হিসেবে তাঁর প্রধান কাজ— দেখা; দেখা অর্থাৎ তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ। এই সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ মানসিকতাই মুখ্যত তাঁকে ভ্রাম্যমাণ করছে। এই ভ্রাম্যমাণ বলয় দিয়েই সমর সেনের কবিতার মূল বলয় তৈরি হল এবং সেই ভ্রাম্যমাণ বেকারসত্তা ক্রমে ক্রমে অনুগত কেরানিসত্তায় পরিণত হল। পুঁজিবাদের পিঞ্জরে আটকে থেকে প্রথম সত্তায় সে ব্যর্থ হয়ে কলেরা, কলের বাঁশি, গণোরিয়া আর নকল বসন্তে নিমজ্জিত হয়েছে। নির্জীব নিষ্ক্রিয় অথর্ব জীবনে স্ত্রৈণ হয়ে পঁয়ত্রিশ বছরেই বৃদ্ধ কেরানীর পোষমানা জীবনকে গ্রহণ করেছে। এই ঘৃণ্য মধ্যবিত্ত জীবনপটকেই সমর সেন বিষোদগারে আক্রমণ করেছেন। আমরা দেখি প্রথম সত্তার আত্মদংশন বা আত্মযন্ত্রণা দ্বিতীয় সত্তায় এসে ক্রমশ আত্মপ্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে। ফলত কেরানি-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর রাগ ঘৃণা ও বিদ্বেষ কবিতার পঙক্তিতে-পঙক্তিতে তীব্রভাবে ফেটে পড়েছে। তাই তো ‘চার অধ্যায়’ কবিতায় তিনি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সহ লিখেছেন:

 

‘কিন্তু সাইকেলে— ফেরা কেরানীর ক্লান্তিতে

দিনের পর দিন

ঘড়ির কাঁটায় মন্থর মুহূর্তগুলি মরে;

ডাস্টবিনের সামনে

মরা কুকুরের মুখের যন্ত্রণায়

সময় এখানে কাটে:

এখানে কি কোনোদিন বসন্ত নামবে

সবুজ উদ্দাম বসন্ত।

আর কোনোদিন কি মুছে যাবে

স্যাকারিনের মতো মিষ্টি একটি মেয়ের প্রেম।’

(চার অধ্যায়/সমর সেনের কবিতা)

নিজের হাঁটুর কাছে মাথা নুইয়ে দেওয়া ক্লান্ত কেরানি যেসব সন্তানের জন্ম দেয়, তারাও দিনের পর দিন পড়ে আছে ডাস্টবিন-সদৃশ পৃথিবীতে। কেরানির রক্তস্রোতে সবুজ উদ্দাম বসন্ত চিরকাল অধরাই থেকে যায়। বসন্ত মানেই তো উদ্দীপক যৌবনের শিহরিত জয়গান। কেরানিগিরি করতে করতে সেই যৌবন অকালেই গতপত্র হয়ে গেছে; সমর সেন তাই স্বীকারোক্তি দেন:

‘বয়স মাত্র পঁয়ত্রিশ,

তবু নিজেকে কতদিনের জীর্ণ বৃদ্ধ লাগে,’

(রোমন্থন/সমর সেনের কবিতা)

যখন সে যুবক ছিল, তখন অলিতে-গলিতে ভ্রাম্যমাণ সে জীবনের উদ্দেশ্যকে খুঁজেছে, প্রেম ও বসন্ত খুঁজেছে। কিন্তু এখন সে কেরানীর গিঁটে আটকে পড়ে দশটা-পাঁচটার ব্যস্ততায় যৌবনের চঞ্চলতা বা উদ্দামতা শরীর ও মন থেকে সম্পূর্ণই হারিয়ে ফেলেছে। অশান্ত বিষণ্ণতার সুদীর্ঘ অন্ধকারে আলকাতরার মতো রাত্রিতে সে লেপ্টে গিয়ে জীবনের নিরুদ্দেশ অন্ধকারেই মনুষ্যজীবন সহ ডুবে গিয়েছে। সুতরাং স্যাকারিনের মতো নকল মিষ্টি অর্থাৎ নকল প্রেম ছাড়া এই জীবনে সে আর কী পাবে?

‘নাগরিক’ কবিতাতেও এই ভাবনারই অনুরণনজাত প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায় : —

‘চারদিকে অন্ধকার— রাত্রের ঝাপসা গন্ধ,

কিছুক্ষণ পরে হাওয়ার জোয়ার আসবে

দূর সমুদ্রের কোন্ দ্বীপ থেকে—

সেখানে নীল জল, ফেনায় ধূসর-সবুজ জল, সেখানে সমস্ত দিন সবুজ সমুদ্রের পরে

লাল সূর্যাস্ত,

আর বলিষ্ঠ মানুষ, স্পন্দমান স্বপ্ন—’

(নাগরিক/কয়েকটি কবিতা)

এভাবেই ধূসর পৃথিবীর বুকে আলকাতরার মতো ভয়াবহ রাত্রি নেমে এল— যেখানে সমস্ত দিন রোলারের শব্দ, পাথর আর পিচ পিষে ফেলা রোলারের দানবীয় নির্মমতা থেকে কবি চোখ ফিরিয়ে কৃষ্ণচূড়ার লাল স্বপ্ন মনে-মনে লালন করেছেন; কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণের পথ কই? এই পথ হাঁটার পক্ষে অনুপযুক্ত, যেখানে চারিদিকে এবড়ো খেবড়ো ইট-কাঠে পথ বন্ধুর, সেখানে শহর ক্রমেই তার নিজস্ব রূপ হারিয়ে ফেলেছে; তার বুকে পড়েছে শুষ্ক রিক্ত পাথরের আস্তরণ। যেমন করে ক্লান্ত শ্বেতাঙ্গিনী শীর্ণ হাতে ঠোঁটে রং আর পাউডারে নাগর আকৃষ্ট করে, এই শহরও যেন সেইভাবেই মেকীভেকে নাগর ডাকতে-ডাকতে পাল্লা দিচ্ছে বেশ্যার সঙ্গে। এই ইট-কাঠ পাথরের প্রতিকূলতা ভেদ করে কবি মাঝে-মাঝে সবুজ গাছের নরম অপরূপ আহ্বান যেন শুনতে পাচ্ছেন। যন্ত্রসভ্যতায় মানুষও আজ যন্ত্রে পরিণত হয়ে গেছে, নতুন সূর্যেরও যেন মৃত্যু ঘটে গেছে। কলেরা কলের বাঁশি বন্যা। দুর্ভিক্ষকে অতিক্রম করে অমৃতের পুত্র আবার ফিরে আসুক তার কাঙ্ক্ষিত পথে— কবিতার ছত্রে-ছত্রে সমর সেন মূলত সারাজীবন এই প্রার্থনাই করে গেছেন।

এইভাবেই কবি মধ্যবিত্ত জীবনের জোয়ার-ভাটায় নেমে দেখেছেন এতদিন বন্ধ ঘরে থাকতে-থাকতে তার জীবনের গতি স্তব্ধ হয়ে গেছে; কূপমণ্ডুক হয়ে সে বৃহৎ জীবনের স্বপ্নও আর দেখতে পাচ্ছে না। দেখতে পাচ্ছে না নক্ষত্রভরা সম্পূর্ণ আকাশের প্রসারিত সীমা। বৈশাখী মেঘও তার কাছে খণ্ডাংশ হয়ে ধরা দেয় কারণ, তার দৃষ্টিপথ তো কুয়োর চক্রব্যূহে আবদ্ধ। যে-রাখাল অর্থাৎ ভ্রাম্যমাণ বেকার যুবক সে আজ ‘কলের সারথি’; স্বভাবতই তার জীবন থেকে বন্ধুবান্ধব, ফুটবল মাঠ, ক্রীড়া, কৌতুক, চঞ্চলতা ক্রমশ সবই অপসৃত হয়ে গেছে। এইভাবে জীবন নামক একটা প্রহসন-ফাঁসে আটকে সে একদিন নিজের নাড়িতেই স্পষ্ট শুনতে পায়— ‘জরার গান’ পচনের গান, ধ্বংসের গান, অধঃপতনের গান। এই নাগরিক ব্যাধিগ্রস্ত শরীর-মন নিয়ে সে আপন নিঃশ্বাসের হাওয়ায় প্রতিদিন শোনে ‘দুঃসহ জ্বালা’-র অগ্ন্যুৎপাতের শব্দ। হেমন্তের বাতাস তার কাছে আজ আর নবযৌবনের বার্তাবহ নয়, বরং ‘প্রবীণ বিষণ্ণতায় অথর্ব।’ এইভাবে জীবনের জয়যাত্রার সব দরজা একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ভিটেমাটি জীবন এসে দাঁড়িয়েছে চোরাবালির ওপর; ভরাডুবি ছাড়া আর বিকল্প কী আছে? খাদের দিকে ঝুঁকেই সমর সেন তাই লেখেন:

‘হেমন্তের প্রবীণ বিষণ্ণতা

দিনান্তের মাঠে; জনহীন গ্রামে

ভিটেতে ঘুঘু ডাকে;

চাষীরা পায়ে হেঁটে গেছে দূর দেশান্তরে

প্রাণের সন্ধানে নগরের প্রেতলোকে।’

(জোয়ার ভাটা/সমর সেনের কবিতা)

লক্ষণীয় বিষয়, সমর সেন শুধু নগর-জীবনের অভিশপ্ত স্বরূপ প্রত্যক্ষ করেছেন— এমনটা কিন্তু নয়; বরং কখনো-কখনো বিধ্বস্ত ও বিকলাঙ্গ শহর থেকে মুখ ফিরিয়ে গ্রামীণ বিপর্যয়টাকে অনুধাবন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। এইজন্যই তাঁর কবিতায় দেখা যাচ্ছে গ্রামীণ চাষীরা বহু-বহু দূর দূরান্তর গ্রাম থেকে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখতে শহরে এসেছে এবং সেখানে ‘নগরের প্রেতলোক’ দেখে তাদেরও কিন্তু দ্রুত স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু তখন আর ফেরার পথ নেই। তাই তারাও আর গ্রামে ফিরতে পারেনি। ন্যাড়া বটের অভিশাপ নিয়ে শুষ্ক জীর্ণ দেহে তারাও একটা সময় বণিক সভ্যতার শূন্য মরুভূমিতে আছড়ে পড়েছে। তাই শিকড়ে আর মাটির ঘ্রাণ নেই; চোখে কালো শিরার অসুখে সে আজ অন্ধ। আত্মসমর্পণ ও আত্মআনুগত্যের এরকম সময়ে কেউই কিন্তু কেরানীসর্বস্ব জীবন থেকে বৃহৎ জীবনের কথা ভাবতে পারছে না; অন্ধকূপে ইঁদুরের মতো; ক্রমাগত ঢুকে পড়ছে ‘পলায়নজীবিকা’ নিয়ে, পৃষ্ঠদেশে অসংখ্য চাবুক-প্রহারের চিহ্ন এঁকে। সেখানে জীবন:

—নিষ্ক্রিয়তার

—নিস্তেজতার

—প্রাণহীনতার

—কৃত্রিমতার

—অনুর্বরতার পঙ্কে নিমজ্জিত।

সমর সেন তাই আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় একটি চূড়ান্ত সত্যের সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন— জন্ম দেওয়ার বিপ্লব ছাড়া কোথাও কোনো বিপ্লব নেই। শুধু জৈব-বিপ্লবে বংশবিস্তার এবং আরও-আরও বেকার কেরানির জন্ম দিতে-দিতে কেটে যায় মধ্যবিত্তের গতানুগতিক জীবনধারা। পৃথিবীর বীজক্ষেতে জন্ম দেবে বলেই যেন এরা দল বেঁধে এসেছে। তাই তো ‘ঘরে বাইরে’ কবিতায় এই অবিবেচক লালসাকাতর গাধার পিঠে চাবুক মেরেছেন কবি। আর তৎসহ তীক্ষ্ণ শ্লেষে বলেছেন : —

‘তোমার ক্লান্ত উরুতে একদিন এসেছিল কামনার বিশাল ইশারা!

ট্যাঁকেতে টাকা নেই,

রঙিন গণিকার দিন হলো শেষ,

আজ জীবনের কুঁজ দেখি তোমার গর্ভে,’

(ঘরে বাইরে/গ্রহণ ও অন্যান্য কবিতা)

এই কবিতায় কবি মধ্যবিত্ত গৃহস্থ জীবনের চুলচেরা রতিরঙ্গের ছবি দেখালেন। সবকিছু

নষ্টদের অধিকারে যাওয়া পৃথিবীর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন ব্যতিরেকে আপন ভোগলালসা তৃপ্তির খেলায় এই মানুষ যেন নেমে পড়েছে। ‘কাঁচা ডিম খেয়ে’— ‘প্রতিদিন দুপুরে ঘুম’ আর মৈথুন-সর্বস্ব জীবন-পঙ্কিলতায় আচ্ছন্ন কবিও এই চৈতন্যহীন ঘুমন্ত মধ্যবিত্ত বিবেকে ঘা দিতে সরাসরি যেন মধ্যবিত্ত শ্রেণিস্বরূপের সঙ্গে তীব্র যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। পৃথিবীর এমন বীভৎস পরিস্থিতি দেখেও সে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন, ভুলে যাচ্ছে ‘বন্যার মতো পুত্র কন্যা’ জন্ম দেওয়া আসলে কী ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। পকেটে টাকা থাকলে সে রঙিন গণিকার কাছে যায় আর না-থাকলে অভ্যন্তরস্থ জৈবিক তাড়নায় সতী সাবিত্রী স্ত্রীর গর্ভে গুছিয়ে রাখে ‘জীবনের কুঁজ’। এরই ফলে চলমান মানব জীবনের কার্যকরী চৈতন্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সমাজ-জীবনে, ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে জীবনের গতি; এই কবিতায় প্রথম পর্বের কর্কশ কাকের মুখে ধ্বংসের গান ভুলে গিয়ে কবি শেষ অংশে এসে তবুও আশাবাদের সুর ধরেছেন। বলেছেন:

‘তবু জানি, কালের গলিত গর্ভ থেকে বিপ্লবের ধাত্রী

যুগে যুগে নতুন জন্ম আনে,

তবু জানি,

জটিল অন্ধকার একদিন জীর্ণ হবে চূর্ণ হবে ভস্ম হবে

আকাশগঙ্গা আবার পৃথিবীতে নামবে’

(ঘরে বাইরে/গ্রহণ ও অন্যান্য কবিতা)

‘ক্রান্তি’ কবিতাতেও কবি এইভাবেই উজ্জীবিত আশাবাদের স্বপ্নলালন করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষ হয়ে গেছে; ছিন্নভিন্ন সময় পরিবেশে কবি শহুরে অসুস্থ চোখ নিয়ে বহুদিন বাদে গ্রামে ফিরলেন। দেখলেন— ‘গ্রামে গ্রামে বিপর্যয়’ আর:

‘ঘূর্ণিঝড়ে, বন্যায় বিস্ফোরকে জয়বাদ্য বাজে। তোমার দুর্দান্ত আমলে

নরহন্তা বিদেশীরাজ, রক্তজোঁক স্বদেশী বণিক, সর্পিল পঞ্চমবাহিনী’

(ক্রান্তি/সমর সেনের কবিতা)

এই গ্রাম দেখে, এই জীবন দেখে, এই ভয়াবহ বিপর্যয় দেখে কবির হৃদয়ও ব্যথাতুর বা মেঘাতুর হয়ে ওঠে। তিনিও ক্রমশ আত্মগ্লানিতে যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। চারিদিকের উদ্‌ভ্রান্ত সব মানুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে তিনিও দেখতে পান—

বর্বর ঝঞ্ঝাবাহিনী, রাস্তার রক্তের দাগ; সব সত্য; তবুও শেষ সত্য নয় হয়তো, এই ভাবনা থেকেই তিনি তাঁর কবিতায় পুনরায় চিরন্তন আশাবাদের সুর জাগিয়ে তোলেন। লেখেন:

‘তবুও আলোর চুম্বকস্তম্ভ এদিকে ওদিকে বাড়ে, ভুলে, ভ্রান্তিতে, উৎকণ্ঠায় নতুন জীবনের ছাপ আমাদের চেতনায় পড়ে।’

(ক্রান্তি/সমর সেনের কবিতা)

জীবনের পথে এভাবেই বিচরণ করতে-করতে বিষণ্ণ এই নাবিক জাহাজের ঘোর শুনতে মধ্যবিত্তর জীবনে শুয়োরের জীবচক্র থেকে বা কেরানীর জীবনচক্র থেকে বা নাগরিক বিভ্রম থেকে চলমান জীবন-স্রোতে ফিরতে চাইছে এবং এই বিষণ্ণ নাবিকই একসময় স্বপ্নময় নাবিকে রূপান্তরিত হচ্ছে। সমর সেনের কবিতার কেন্দ্রীয় থিম মূলত এরকমই। চলন এবং গমনের মধ্য দিয়ে এভাবেই স্বপ্নময় নাবিককে আহ্বান করতে করতে সমর সেন নিজের ভেতর-সত্তার ব্যর্থতাকে অতিক্রম করেছেন!

তথ্যসূত্র :

১. আধুনিক কবিতার দিগ্বলয় : অশ্রুকুমার সিকদার, অরুণা প্রকাশনী, তৃতীয় সংস্করণ, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৩৯২, কলকাতা ৭০০ ০০৬।

২. কবিতার দ্বীপ কবিতার দীপ্তি : জহর সেনমজুমদার, সাহিত্যসঙ্গী, ৬ ডি রমানাথ মজুমদার স্ট্রিট (দ্বিতল) কলকাতা ৭০০ ০০৯।

দ্বিতীয় প্রকাশ ১লা বৈশাখ, ১৪১৭/১৫ এপ্রিল ২০১০।

৩. কয়েকটি কবিতা: সমর সেন, সম্পাদনা—সব্যসাচী দেব, অনুষ্টুপ, ২ই নীবন কুণ্ডু লেন, কলকাতা-৭০০ ০০৯।

তৃতীয় অনুষ্টুপ সংস্করণ, আগস্ট ২০১২/ভাদ্র ১৪১৯।

৪. নানা কথা: সমর সেন, সম্পাদনা— সব্যসাচী দেব, অনুষ্টুপ, ২ই নবীন কুণ্ডু লেন, কলকাতা ৭০০ ০০৯। তৃতীয় অনুষ্টুপ সংস্করণ, আগস্ট ২০১২/ভাদ্র ১৪১৯।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন