শনিবার | ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:০৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
সৌরভ হোসেন-এর ছোটগল্প ‘সালাম’ বঙ্গের শক্তি-পূজা : সুখেন্দু হীরা পুজোর পরিবর্তন, পরিবর্তনের পুজো : সন্দীপন বিশ্বাস পিতৃপক্ষের মধ্যে পালিত একাদশী — ইন্দিরা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত অরণ্যের অন্তরালে তাম্বদি সূরলা : নন্দিনী অধিকারী ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ হীরালাল সেন : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্যাসাগরের অন্তরালে ঈশ্বরচন্দ্র, পূর্ব পুরুষের ভিটে আজও অবহেলিত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব সুধীর চক্রবর্তী স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার : দীপাঞ্জন দে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে দুর্গা রূপে আরাধনা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালির নিজস্ব দুর্গা : শৌনক দত্ত সে নারী বিচিত্র বেশে মৃদু হেসে খুলিয়াছে দ্বার : দিলীপ মজুমদার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘প্রাতঃভ্রমণ’ বন্যায় পুনর্জীবন বেহুলার : রিঙ্কি সামন্ত গরানহাটা কি ছিল ভেড়ার হাট : অসিত দাস ডিভিসি-র ছাড়া জলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ নাজেহাল, দায় কার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সুধীর চক্রবর্তী মুক্তধারা ভাষণমালা : দীপাঞ্জন দে বোর্হেসের গোলকধাঁধা : অশ্রুকুমার সিকদার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের দুর্গোৎসব : রিঙ্কি সামন্ত মর্ত্যে দুর্গাপূজার সেকাল ও একাল : অসিত দাস বই-বাই : নবনীতা দেব সেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘প্রবাসী’ ম্যান মেড নয় ডিভিসি-র পরিকল্পনা আর রূপায়নে গলদ : তপন মল্লিক চৌধুরী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে রাখাইনে সেইফ জোন তৈরি করা আবশ্যক : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ফলের নামটি পাকা কলা : রিঙ্কি সামন্ত বই-বাই : নবনীতা দেব সেন হেমচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবর্ষ : দীপাঞ্জন দে নিম্ন চাপের অতিবৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত আরামবাগ : দেবাশিস শেঠ আরামবাগে ভয়াবহ বন্যা, দুর্যোগের পদধ্বনি, ক্ষোভ জনমানসে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষেও আওয়াজ তুলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ কৌশিকী অমাবস্যার-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সৈয়দ মুজতবা আলি : তারাপদ রায়

তারাপদ রায় / ১৪০ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪

অনেকদিন পরে এবার একজন জ্যান্ত মানুষের কথায় আসছি, সৈয়দ মুজতবা আলি।

আমার এই অল্পবেশি চার দশকের সাহিত্যজীবনে কত উত্থানপতন দেখলাম। কত দিগ্বিজয়ী লেখককে ঘোড়া থেকে ছিটকিয়ে মুখ থুবড়িয়ে পড়তে দেখলাম। ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছিল যে লেখককে, মৃত্যুর দু’ বছর পরে তাঁর আর কোনও পাত্তা নেই। তাঁর বইয়ের বিজ্ঞাপন নেই, তাঁর রচনার আলোচনা নেই, থাকলেও দায়সারা। দোকানের শো-কেসে তাঁর বই নেই। শৌখিন পাঠিকার বালিশের নীচে কেশতেলে সিক্ত সেই পুরনো পত্রিকা আছে কিন্তু তাতে তাঁর কোনও কথা নেই।

বেশি বলে লাভ নেই। মোদ্দা ব্যাপার হল, জীবদ্দশায় অতি বিখ্যাত, অতি জনপ্রিয় অনেক লেখকই মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মরে যান। দু’-চার দিন ওই শ্রাদ্ধশান্তি, নিয়মভঙ্গ পর্যন্ত টিকে থাকেন। তারপর কানা মাছি ভোঁ-ভোঁ কিন্তু আশ্চর্য কৌশলে মুজতবা বেঁচে রয়েছেন। এখনও তাঁর বই, গ্রন্থাবলি প্রকাশক ছাপেন। লোকে কেনে লোকে পড়ে। ‘কোরক’ নামে একটি সাহিত্য-পত্রিকা এই বইমেলায় সৈয়দ মুজতবা আলির ওপরে একটি সংখ্যা বার করেছেন। প্রায় তিনশো পৃষ্ঠার রীতিমতো গ্রহণযোগ্য সংকলন।

‘শেষমেষ’ নামক এই তরল নিবন্ধমালায় পুস্তক বা পত্রিকা সমালোচনার সুযোগ নেই। আমরা সে ব্যাপারে যাচ্ছি না। সৈয়দ মুজতবা আলির অতি বিখ্যাত, অতি পরিচিত সরস কবিতা কথিকাগুলি পুনরুদ্ধার করারও কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সেই সব রসিকতার আখ্যান বাঙালি পাঠকের খুবই পরিচিত।

কোরকের এই মুজতবা সংখ্যায় আমি মুজতবা সাহেবের কয়েকটি অলিখিত রসিকতার সন্ধান পেলাম, তাঁর চিঠি বা আলাপচারিতা থেকে এইগুলি উৎকলিত। বলাবাহুল্য, মুজতবা-বাক্যের কোনও তুলনা নেই। শেষমেষের পাঠক-পাঠিকারা একবার দেখুন।

বিশিষ্ট চর্মরোগ চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞ ডা. মহম্মদ আব্দুল ওয়ালির সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল সৈয়দ মুজতবা আলির।

ডাক্তার ওয়ালি এক বৃষ্টির দিনের গল্প বলেছেন। সকালবেলা প্রতিবেশী এক বন্ধুর বাড়িতে চা-পানের আসর বসেছে। সে আসরের মধ্যমণি, বলা বাহুল্য, সৈয়দ মুজতবা আলি। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে, এমন সময় মুজতবা উঠে দাঁড়ালেন আরামকেদারা ছেড়ে একবার নিজের বাসায় যাবেন, সেখান থেকে কী একটা দরকারি বই নিয়ে আসবেন। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। সবাই হাঁ হাঁ করে উঠল। ‘যাবেন না, যাবেন না। বাইরে বেরবেন না।’

মুজতবা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন?’ সবাই বলল, ‘দেখছেন না বৃষ্টি। বৃষ্টির জলে ভিজে যাবেন যে।’ শুনে মুজতবা হেসে বললেন, ‘আমি মিছরি না চিনি? ভিজলে কি আমি গলে যাব।’

অল্পক্ষণ পরে নিজের বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় বইটি হাতে নিয়ে মুজতবা ফিরে এলেন। তারপর হাসতে হাসতে সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কী জানো যে ইহুদিরা ছাতা কেনে না।’ সবাই বলল, ‘না, এ রকম কথা তো আমরা কখনও শুনিনি।’ মুজতবা বললেন, ‘না, শুনে থাকো তাতে কিছু আসে যায় না। তবে কারণটা জানতে চাও কি ?’ সবাই জিজ্ঞাসা করল, ‘কী কারণ?’ মুজতবা বললেন, ‘ইহুদিরা এতই বুদ্ধিমান ও হিসেবি যে তারা বৃষ্টির ফাঁক দিয়ে হাঁটতে পারে, তাই বৃষ্টির মধ্যে হাঁটলেও তারা ভেজে না।’

আরেকবার প্রাণীবিজ্ঞানের এক নবীন অধ্যাপক ও গবেষককে নিয়ে ওয়ালি সাহেব মুজতবা আলির কাছে গেছেন। তাকে দেখে বক্রদৃষ্টিতে তিনি শুধালেন, ‘হঠাৎ এখানে এসে হাজির কেন?’ ওয়ালি সাহেব বললেন, ‘আপনার ভক্ত। আপনার সঙ্গে পরিচিত হবার আগ্রহে এসেছে।’ মুজতবা আলি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘না। না। না। আসল মতলবটা হল এই চ্যাংড়া অধ্যাপকের রিসার্চ সেক্টরে জন্তু-জানোয়ারের নিশ্চয় কিছু অভাব ঘটেছে। তাই আমাকে দেখতে এসেছে। পছন্দ হয় কি না।’

সৈয়দ মুজতবা আলি সম্পর্কে আর একটি মারাত্মক গল্প লিখেছেন ওয়ালিসাহেব। সৈয়দ মুজতবা আলি অতিথিবৎসল ভদ্রলোক ছিলেন। একবার সপরিবারে ওয়ালিসাহেবকে তিনি নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। খাওয়া-দাওয়ার পর রাতে মুজতবা সাহেব বেশ কিছুটা পথ অতিথিদের এগিয়ে দিয়ে এলেন। অনেকটা পথ এগিয়ে দেওয়ার পরে স্বাভাবিক সৌজন্যবশত ওয়ালিসাহেব আপত্তি জানালেন, ‘অনেকটা পথ এসে গেলেন, আপনি আর এগোবেন না।’ কিন্তু মুজতবা আলি আরও অনেকটা পথ তাঁদের এগিয়ে দিলেন। শেষপর্যন্ত ফিরে আসার সময় বললেন, ‘আমি আমার বন্ধুদের ঠিক সেই পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যাই যেখান থেকে তাদের ফিরে আসার আর কোনও সম্ভাবনা থাকে না।’

পুনশ্চ:

শেষ কাহিনীটি শ্ৰীযুক্ত রাধাপ্রসাদ গুপ্তের। এই ‘কোরক’ কাগজেই তাঁর সৈয়দ মুজতবা আলি সম্পর্কে ‘কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতি’ প্রকাশিত হয়েছে।

শ্ৰীযুক্ত গুপ্ত মুজতবার ‘দেশে বিদেশে’ বইটির একটি রিভিউ করেছিলেন। সেটি পড়ে মুজতবা রাধাপ্রসাদবাবুকে এক কপি ওই বই ‘দেশে বিদেশে’ পাঠিয়ে দেন এবং সেই সঙ্গে লেখেন, ‘শাঁটুল মামু, (রাধাপ্রসাদের ডাকনাম শাঁটুল) তুমি আমার বইয়ের যে রকম বেশরম প্রশংসা করেছ তা থেকে পরিষ্কার মালুম হচ্ছে তুমি আমার লেখাটা পড়োনি। যাতে ভাল করে পড়তে পারে সেজন্য এই বইটা দিলাম।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন