শনিবার | ১লা জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৫৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
ধ্যানে বসেও নরেন্দ্র মোদি দেখতে পাচ্ছেন ধ্রুব রাঠিকে : দিলীপ মজুমদার মহাযোগী বালানন্দ ব্রহ্মচারী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ইতিহাস ও সৌন্দর্যের খোঁজে গন্তব্য মান্ডু সঙ্গে বর্ষাকালীন দুর্গবিলাস (১ম পর্ব): জমিল সৈয়দ শেয়ার বাজারে ধস, মোদী মিত্র লগ্নীকারিরাও খুঁজছে বিকল্প : তপন মল্লিক চৌধুরী মহাযোগী বালানন্দ ব্রহ্মচারী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত আমার বন্ধু নজরুল ও তাঁর গান (শেষ কিস্তি) : কাজী মোতাহার হোসেন অনুবাদ শাহাবুদ্দিন আহমদ কাজী মোতাহার হোসেন — বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক শিক্ষাবিদ : ইশতিয়াক মাহমুদ প্রথম পাঠ, দেবাশিস শেঠ-এর লেখা রেনেসাঁস ও রামমোহন ফ্লোরেন্স থেকে রাধানগর : সুকোমল দাশ আমার বন্ধু নজরুল ও তাঁর গান (৬ নং কিস্তি) : কাজী মোতাহার হোসেন অনুবাদ শাহাবুদ্দিন আহমদ দ্য লেডি অফ দ্য লোটাস, রূপমতি, মাণ্ডুর রানি, বিশ্বস্ততার একটি অদ্ভুত গল্প : জমিল সৈয়দ ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কালো চালের ভাত খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় আমার বন্ধু নজরুল ও তাঁর গান (৫ নং কিস্তি) : কাজী মোতাহার হোসেন অনুবাদ শাহাবুদ্দিন আহমদ কাজী নজরুল ইসলাম: একশো পঁচিশে : দীপাঞ্জন দে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘যমজ কাহিনি’ দুরূহ কাজ, তবু মহতী উদ্যোগ : হাসান আজিজুল হক বাজবাহাদুর-রূপমতি — এক রাজকীয় প্রেম কাহিনী : জমিল সৈয়দ আমার বন্ধু নজরুল ও তাঁর গান (৪ নং কিস্তি) : কাজী মোতাহার হোসেন অনুবাদ শাহাবুদ্দিন আহমদ বাবরের সমাধি ও সম্রাট নেবুচাঁদ নেজারের ঝুলন্ত বাগান : সাইফুর রহমান রেমালের দাপটে হুগলিতে অসংখ্য মাটির বাড়ি পড়েছে, বিভিন্ন চাষের ক্ষতির আশঙ্কা, চিন্তায় চাষিরা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় রাখাইনে বাস্তুচ্যুতদের জন্য মানবিক করিডোর স্থাপন করা দরকার : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন আমার বন্ধু নজরুল ও তাঁর গান (৩ নং কিস্তি) : কাজী মোতাহার হোসেন অনুবাদ শাহাবুদ্দিন আহমদ ষষ্ঠ দফাতেও কী মোদীর আসন হারানোর শঙ্কা রয়ে গেল : তপন মল্লিক চৌধুরী অল্পে বাজিমাৎ আখরোটে : রিঙ্কি সামন্ত নজরুল ইসলামের ভক্তি সংগীত চিরন্তন ভক্তি রসে জারিত : মনোজিৎ কুমার দাস আমার বন্ধু নজরুল ও তাঁর গান (২ নং কিস্তি) : কাজী মোতাহার হোসেন অনুবাদ শাহাবুদ্দিন আহমদ আরামবাগে মহিলা ভোটেই বাজিমাত করবে মিতালী বাগ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিশ্বকাপ না খেলেও ব্যলন ডি অর জেতা একজন উদাসীন তারকার নাম বেস্ট : যীশু নন্দী আমার বন্ধু নজরুল ও তাঁর গান (১ নং কিস্তি) : কাজী মোতাহার হোসেন অনুবাদ শাহাবুদ্দিন আহমদ নার্গিস ও মোতিহারকে লেখা কাজী নজরুলের সেই চিঠি : নজরুল ইসলাম নজরুলের পত্রাবলি : হৃদ্য ও অন্তঃপাতী মনের দীর্ঘশ্বাস : মিল্টন বিশ্বাস
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বুদ্ধপূর্ণিমা-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ধুলোপড়া ময়দানের কোণায় কোণায় এখনো ঘোরাফেরা করে বাম বরাবর শিল্প পাখি বিদেশ বসু : যীশু নন্দী

যীশু নন্দী / ৩১৪ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গ্রামের এক বন্ধুর বাবা ছিল সুপুরি বিক্রেতা। সেই বন্ধু সুপুরি চুরি করে বিক্রি করে যে পয়সা পেয়েছিল,সেটা দিয়েই তার বন্ধু তার জন্য এনে দিয়েছিল জীবনের প্রথম ফুটবলটা। সেই বন্ধুর নাম আজও আমার কাছে অজানা। ইন্টারভিউয়ের সূত্রে জানতে পেরেছিলাম, সেই বন্ধু মারা গেছেন। কিন্তু আজীবন বন্ধুত্বের যে নিদর্শন সে রেখে গিয়েছিল, বোধহয় তার জন্যেই ভারতবর্ষ পেয়েছিল অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেফট আউটকে।

তার আরেকজন দাদা ছিল। নিজের নয়, নেহাতই গ্রামের এক দাদা। সেও এক অসাধারণ ফুটবলার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কলকাতা ময়দানে তার খেলা হয়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে তার দাদা কাম বন্ধুর নামটা নোট করতে ভুল করলামনা — সতীশ দেবনাথ। সতীশদা নিজে বুট কিনত, কিন্তু সেটা পড়ে খেলতনা, দিয়ে দিত বন্ধুকে, আর নিজে খেলত খালি পায়ে। এভাবেই বুট জোগাড় হতো আমাদের আজকের আলোচ্য ফুটবলারটির। হয়তো খালি পায়ে খেলার অভ্যাসের জন্যেই অনায়াসে চার পাঁচজনকে কাটাতে পারা সতীশদার আর খেলা হয়নি কলকাতা ময়দানে। কিন্তু তিনি যাঁকে নিজের বুটটি বারবার দিয়ে দিতেন, তিনি কাঁপিয়েছিলেন কলকাতা ময়দানকে, কাঁপিয়েছিলেন এফ সি আরারাতকে, কাঁপিয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলেকে। সতীশদা একবার তাকে বলেছিল — “দেখিস, তুই একদিন কোলকাতায় খেলবি”। সতীশদা আজ মৃত, কিন্তু মিথ্যে হয়নি তার কথাটা। সুভাষ ভৌমিক-উলগানাথনের ছেড়ে যাওয়া পথ ধরে জন্ম হলো এক বাঙালী তারকার — বিদেশ বোস।

কিছু বছর আগের কথা। বিদেশ বসুর কোলকাতা ময়দানে আসার গল্পটা বলি। তখন খেপ খেলার চল ছিলনা। গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়, কখনও বা এক গ্রামের সাথে অন্য গ্রামের নাইট ফুটবল হতো। একদিন হঠাৎই দাদা পবিত্র বসুর বাড়িতে সুলতানপুর গ্রামের কিছু ছেলে এসে উপস্থিত হয়। তাদের আর্জি ছিলো বিদেশ বসুকে তাদের গ্রামের হয়ে একটা নাইট ম্যাচে খেলতে যেতে হবে। প্রথমে তার বাবা-জ্যাঠামশাই কেউই রাজি ছিলনা। কিন্তু পবিত্রদা অনেক আকুতি মিনতি করে তাদের রাজি করায়। অবশেষে বিদেশ সুলতানপুর গ্রামের হয়ে খেলতে গেলো বর্ধমান জেলার ময়নাগড় মাঠে। প্রতিপক্ষ ছিল ডানলপ সাহাগঞ্জ ক্লাব। সেই ম্যাচটাই যেন ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েদিল বিদেশ বসুর।

“তুমি আমাদের ক্লাবে খেলবে, ম্যাচের আগের দিন আমাদের বাড়িতেই থাকবে, সেখানেই খাবে” — ম্যাচের পর হঠাৎই সাহাগঞ্জ ক্লাবের সেক্রেটারি পঞ্চানন সাহা কথাটি বলেন বিদেশ বোসকে। শুরু হলো সাহাগঞ্জ অধ্যায়। তখন কালীঘাট ক্লাবের অরুণ চৌধুরী অনেক বলে কয়ে সাহাগঞ্জ থেকে বিদেশকে নিয়ে গেলো কালীঘাট ক্লাবের ট্রায়ালের জন্য। কালীঘাটে তখন খেলছেন কম্পটন দত্ত। সেই ট্রায়াল ম্যাচে একারই এগারোটা গোল ছিল বিদেশের। কিন্তু সেই মরশুমে কালীঘাটের খেলা প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে যাওয়ায় বিদেশ বসুর সইপর্ব স্থগিত রাখা হলো পরের মরশুমের জন্য। কথায় বলে — টাইম এন্ড টায়েড ওয়েট ফর নান। ঠিক সেটাই হলো। ভ্রাতৃসংঘ তখন কালীঘাটের জার্সি করত। ভ্রাতৃসংঘের দুই কর্তা গগনদা আর সমরদা ওঁত পেতে বসেছিল বিদেশের জন্য। ট্রায়ালে বিদেশের এগারো গোলে তারা মুগ্ধ। তাই আর দেরী নয়, কালীঘাট ক্লাবের স্থগিত রাখা হীরেটিকে জহুরির মতো তারা হাজির করলো ভ্রাতৃসংঘে। ঠিক এভাবেই শুরু হয়েছিল কলকাতা ময়দান অধ্যায়টা। তারপর সেখান থেকে এরিয়ান। সেখানে পেয়েগেলেন মানস ভট্টাচার্য্যকে, ছিলেন অমল দত্তের হাতে পড়ে বদলে যাওয়া ভবানী রায়। মানস-বিদেশ-ভবানীর ত্রিমূর্তি ময়দান কাঁপাচ্ছে তখন।

“এ বছর আমাদের ক্লাবে এসো, পরের বছর আমরা মানসকে নেবো” — কথাটি বললেন স্বয়ং মোহনবাগান সচিব CM Roy। উত্তরে বিদেশ সম্মতি জানাননি। তিনি চেয়েছিলেন সেই বছরটা এরিয়ানে খেলে পরের বছর মোহনবাগানে ভিড়তে। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়া উলগানাথনের রিপ্লেসমেন্টে বিদেশকে পেতে নাছোড়বান্দা ছিল মোহনবাগান। অবশেষে ১৯৭৬ এ মোহনবাগানে পা রাখলেন বিদেশ বোস। শুরু হলো আরেকটা স্বর্ণযুগ। বাম দিক থেকে বিদেশের মাথাটা একটু নামিয়ে কাদামাঠের উপর দিয়ে ব্যাঘ্রদৌড়, ডানদিকটা ছিল মানসের, মাঝখানে প্রসূন, আর একটু সামনের দিকে শ্যাম, হাবিব, আকবর। টানা তিনবছর ট্রফিলেস ক্লাবে ১৯৭৭ এ ঢুকল ত্রিমুকুট।

হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছে ইডেনে। মুখোমুখি মোহনবাগান-এফ সি আরারাত। দলে নেই বিদেশ। ম্যাচের ত্রিশ মিনিটে প্রদীপদা চেঞ্জ করলো — Compton Out, Bidesh In। সাথে সাথেই রঙ বদল। সাদাকালো ম্যাচে রামধনুর ছটা। কাদামাঠে বিদেশের দৌড় আর তার সাথে ড্রিবলিং — বোধহয় বাঙালী আর দেখেনি তার পর থেকে। বিদেশের বৈদেশিক ছটায়, সেই ম্যাচের কমপ্লেক্সন বদলে গিয়েছিল। ৬০ পয়সার গ্যালারী থেকে মানস-বিদেশ জুটি দেখাটা ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল বাঙালীর। আর তার সাথে যুক্ত হয়েছিল অজয় বসুর — “ইডেন উদ্যান থেকে বলছি”, ঠিক যেন স্বর্ণযুগের আবহসঙ্গীতের মুখরাটা। তারপর সেই ৮২’-এর নেহেরুকাপের ম্যাচটা। প্রতিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া। সেই ম্যাচে লেফট আউটে বিদেশ আর রাইট ইনে মানস নাকানি চোবানি খাইয়েছিল কোরিয়াকে। সত্যি, তখন এসব দলকেও নাকানি চোবানি খাওয়াতাম।

“বিদেশদা আমার স্বপ্নের নায়ক ছিল। পেলেদের সাথে ম্যাচটায় অপেক্ষায় ছিলাম বিদেশদার গোলের জন্য, কিন্তু গোল না পেলেও সেই খেলা আজও ভুলিনি” — কিছুদিন আগেই এটার বক্তা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকবারই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে বিদেশদার নাম শোনা গেছে। ইডেনের সেই অভিশপ্ত ডার্বিতে, ইস্টবেঙ্গলের দিলীপ পালিত নির্মমভাবে পা চালিয়েছিল বিদেশের থাইয়ে। উল্টে বিদেশ পা চালালেও, তার বুটটা পালিতকে স্পর্শ অবধি করেনি। একবার বলেছিলেন — “পালিতের বুটের পাঁচটা স্পাইকের দাগ এখনও আমার থাইয়ে রয়েছে”। কাদার উপর দিয়ে চমৎকার ড্রিবল করতে পারতেন বলে শিবদাস ভাদুড়ীকে বলা হত “Mr.Slippery”, আর বিদেশ বসু ছিলেন কাদামাঠে বাংলার অন্তিম বিহঙ্গ, যার ডানাবরাবর শিল্পে পাখি হতো এক একটা ম্যাচ। ঠিক যেন উপন্যাসের “অচিন পাখি”, যেটা শেষবার উড়েছিল বিদেশের রবারের জুতোর উপর ভর করে, বাংলার শেষ উইঙ্গার।

ধুলোপড়া ময়দানের কোণায় কোণায় এভাবেই রয়ে গেছে এক একটা অধ্যায়, যেটা কেবল উল্টেই যেতে হয় উল্টেই যেতে হয়, শেষ আর হয়না। তিলোত্তমায় অনেক বিদেশী এলো, কিন্তু আরেকটা বিদেশ তৈরি হলো কই!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন