ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সুখবর। বাজারে আসতে চলেছে সুগার-ফ্রি আলু। এই আলু খেতে পারবেন ডায়াবেটিক রোগীরা। এ জন্য উন্নতমানের কৃষি বীজ তৈরি করে চাষের পদক্ষেপ নিয়েছে কৃষি দফতর। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ বঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় এই ধরনের আলুর চাষ হয়েছে। যদিও অনান্য জাতের আলুর চেয়ে ফলন অনেকটাই কম। চাষিরা জানাচ্ছেন, ফলন কম হলেও বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। ফলে অন্য জাতের আলুর চেয়ে দামও বেশি পাওয়া যাবে।তাই সরকারও উদ্যোগী হয়েছে এই চাষে। তবে ভূটানে এই আলুর চাষ বহুদিন আগেই শুরু হয়েছে। সেই আলুর রং বেশ লাল। অনেকটা রাঙাআলুর মতো দেখতে।
প্রসঙ্গত, কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, এবার থেকে রাজ্যে পোকা কম ধরে এমন ভাইরাস মুক্ত আলু চাষ হচ্ছে। সেইসঙ্গে উন্নতমানের বীজও তৈরি করা হয়েছে, যাতে থাকছে সুগার ফ্রি। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, উন্নতমানের আরও কৃষি বীজ তৈরির লক্ষ্যে সিমলায় কেন্দ্রীয় আলু গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে ২০১৭ সালে রাজ্য কৃষি দফতরের এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী ‘টিস্যু কালচার ও অ্যারোপনিক্স’ পদ্ধতির মাধ্যমে ভাইরাস মুক্ত আলু বীজ তৈরি হচ্ছে। যে বীজ থেকে ভাল জাতের আলু উৎপন্ন করতে পারবেন চাষিরা। যা পচন ও নষ্টও কম হবে। এবং ভাইরাসের আক্রমণ থেকেও রক্ষা পাবে আলু। সেইসঙ্গে ডায়াবেটিক আলুও তৈরি করছে কৃষি দফতর। এই আলু খেলে সুগার হবে না। তবে হুগলির বেশ কিছু জায়গায় বিশেষ করে তারকেশ্বরে বেশ কিছু আলু চাষি এই আলুর চাষ শুরু করে দিয়েছে।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক চিরন্তন চট্টোপাধ্যায়-এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গবেষকরা দীর্ঘ দিন ধরে পরীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, এই জলপাই আলু ডায়েবিটিসে আক্রান্তরাও খেতে পারবেন। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আশ্বাসে ভর করেই দক্ষিণবঙ্গ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বড় পরিসরে জলপাই আলু চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি দপ্তর। এই আলু যাঁরা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত, তাঁরাও খেতে পারেন। এটা জানার পরেই বড় পরিসরে এই আলুর উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছেন কৃষিদফতর।
তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগ যাঁদের আছে, তাঁরা সাধারণত আলু এড়িয়ে চলেন। এবার থেকে ডায়াবেটিক আলু বাজারে কিনতে পারবেন এই সমস্ত মানুষ। উল্লেখ্য, এই আলুর নাম দেওয়া হয়েছে জলপাই। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে এর চাষও হচ্ছে। তাছাড়া দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলাতেও স্বল্প পরিমাণে চাষ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে রাজ্য সরকারের ১৯১টি কৃষি খামারে এই ধরনের আলুর চাষ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। এই আলু আকারে বেশ ছোট এবং উৎপাদনের পরিমাণও কম। এরপর রাজ্যের সমস্ত ব্লকের কৃষি খামারগুলিতেও এই ধরনের আলুর চাষ হবে।
প্রসঙ্গত, সুস্বাদু, সুষম ও পুষ্টিগুণ থাকলেও আলুতে শর্করার পরিমাণ সাধারণত বেশি থাকে। ফলে সুগার রোগীরা খেতে পারেন না। কিন্তু জলপাই আলু সুগার রোগীরা খেতে পারেন। সুগার রোগী ও স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবার বিশেষ প্রজাতির জলপাই আলু চাষের উপর জোর দিচ্ছে সরকার।