পূর্ব এশিয়ায় আদি নিবাস। আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে কদর। গৃহস্থের রান্নাঘরে প্রোটিন হিসেবে অন্যতম ব্যঞ্জন। এখন একে ‘গোল্ডেন বিন’ বলা হচ্ছে। চলতি কথায় সহজ করে যাকে বলা হচ্ছে সয়াবিন (Soybean)। সয়াবিন চাষকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা ভারতবর্ষে চাষিদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই চাষিদের উৎসাহ দান ও আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। এই সয়াবিনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে ছোট-বড় শিল্প। একদিকে কর্মসংস্থান, অপরদিকে চাষিদের আর্থিক মেরুদণ্ড শক্তপোক্ত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সয়াবিন থেকে তেল, বড়ি, দুধ ও অন্যান্য প্যাকেটজাত খাবারও তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন। ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ৪৪৬ ক্যালোরি, শর্করা ৩০ গ্রাম আছে। যা শরীরের পক্ষে যথেষ্ট উপকারী। ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, শর্করা, প্রোটিন, আয়রন, সোডিয়াম ইত্যাদি সবধরনের গুণমান উপস্থিত। অন্যান্য সবজি কিংবা ডালশস্য অথবা বিন জাতীয় শস্যের তুলনায় একমাত্র সয়াবিন মানব শরীরের প্রায় সবকটি চাহিদা পূরণ করে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুঁটি জাতীয় এই উদ্ভিদ বছরে অন্তত দু’বার চাষ করা যেতে পারে। যেখান থেকে চাষিরা আর্থিক লাভবান হতে পারেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড় ইত্যাদি রাজ্যে সয়াবিন চাষ হয়। এছাড়া অন্যান্য রাজ্যে কম হলেও চাষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের চাষিদের মধ্যেও বেশ কিছু জেলায় সয়াবিন চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শিল্প। খরিফ মরসুমে অর্থাৎ জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উপযুক্ত এই চাষ। তাছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সয়াবিন চাষ করা যেতে পারে। ৬০-৬৫ সেমি বৃষ্টি, উর্বর বেলেমাটি কিংবা পলিমাটিতে সয়াবিন ভাল হয়। মনিত্তা, এমএসিএস-১৩, এমএসিএস-৫৭, এমএসিএস-৫৮, পিকে- ৪৭২, জেএস-৪০-২১, জেএস-৩৩৫ ইত্যাদি জাতের চাষ করে বেশি ফলন পাওয়া যায়। প্রতি হেক্টরে ২০-৩০ কেজি বীজ, কিন্তু ফডার ক্রপ হিসেবে বুনলে ৭০-৭৫ কেজি (খরিফ মরসুমে) ও ফেব্রুয়ারি-মার্চে বুনলে ১০০-১২০ কেজি বীজ বুনতে হবে। বীজ শোধন অবশ্য জরুরি। মাটি পরীক্ষা করে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
বিজ্ঞানসম্মত নাম গ্লাইসিন ম্যাক্স (glycine max)। শুঁটি জাতীয় এই উদ্ভিদ চাষ বাড়াতে চাষিদের ঋণ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কেবল তাই নয়, সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং এমনকী আর্থিক সহায়তাদানে এগিয়ে এসেছে। গত কয়েক বছরে এর চাষ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রোটিনযুক্ত ও সুস্বাদু এই গোল্ডেন বিনের চাহিদা বাড়ছে। প্যাকেটজাত হয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন থেকে তেল, দুধ, বড়ি উৎপাদন হচ্ছে। গড়ে উঠেছে অসংখ্যা ছোট বড় কারখানা। ফলে চাহিদা বাড়ায় চাষিদের মধ্যেও উৎসাহ দেখা দিচ্ছে। অতিরিক্ত ফ্যাটবিহীন সয়াবিন। তাছাড়া প্রাণীদেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎস হল সয়াবিন। গৃহস্থের রান্নাঘর থেকে রেস্তোরাঁ, ছোট-বড় হোটেল, হাট-বাজার-দোকানে সয়াবিনের আলাদা গুরুত্ব। চাহিদা বাড়ছে, সেইসঙ্গে বাড়ছে চাষ। বাড়ছে চাষিদের উৎসাহ। সর্বোপরি তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান, শিল্প আর চাষিদের শক্তপোক্ত আর্থিক পরিকাঠামো যা দেশের উন্নয়নে ‘গোল্ডেন বিন’-এর অনস্বীকার্য ভূমিকা।