হিপো তো জলহস্তী। কোকেন হিপো আবার কি? এ জলহস্তী কি মাদক সেবন করে না কি! না, তা নয়। মাদক সম্রাটের জলহস্তী বলেই এদের কোকেন হিপো বলে মানুষ। পরিহাস করে বলে বলেই মনে হয়। এখন আর মাদক সম্রাট নেই। সেই ১৯৯৩ সালে আমেরিকা আর কলম্বিয়ার যৌথ আক্রমণে স্বনামধন্য মানুষটি নিহত হয়েছেন। তিনি নেই তো কি হল, এখন সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে তাঁর হিপো বা জলহস্তীগুলি।
কোকেন সম্রাটের নাম পাবলো এস্কোবার (Pablo Escobar)। যিনি গড়ে তুলেছিলেন মেডেলিন কার্টেল (Medellín Cartel)। বিশ্বের কোকেন উৎপাদন ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করতেন যিনি। বিমান থেকে সমুদ্রে ফেলা হত কোকেন। আশপাশে থাকত স্পিডবোট। কোকেন নিয়ে ছুটত উপকূলে। আফ্রিকা হয়ে কোকেন ছড়িয়ে পড়ত এশিয়া আর ইউরোপে। প্রতিদিন সম্রাটের রোজগার ৬ কোটি ডলার। রাশি রাশি টাকা লুকিয়ে রাখতেন নানা জায়গায়। এই কোকেন ব্যবসার জন্য যা খুশি তাই করতেন। খুন, জখম তো ডালভাত। সে মহাপুরুষের বিখ্যাত উক্তি : প্লাতা ও প্লোমা; অর্থাৎ হয় ঘুষ খাও, না হয় বুলেট খাও। থাকতেন হাসিয়েন্দা নেপলস এস্টেটে (Hacienda Napoles Estate)। মহারাজার প্রাসাদ। কি ছিল না সেখানে! ছিল ফুটবলমাঠ, বুলফাইটিং এরিনা, টেনিস কোর্ট, হ্রদ, নিজস্ব বিমান আর চিড়িয়াখানা। আর এই চিড়িয়াখানার জন্য তিনি আফ্রিকা থেকে আনিয়েছিলেন দুই জোড়া জলহস্তী।
কোকেন সম্রাট এখন নেই। কিন্তু এখন সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে তাঁর সেই হিপোরা। যারা এখন সংখ্যায় ১৩০টি। আগামী কয়েক বছরে তারা সংখ্যায় ৪০০ হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
অবাধে বংশবৃদ্ধি করে চলেছে তারা। তাদের শিকার করার কোন প্রাণী নেই। হাম দো হামারা দো নীতিকে থোড়াই কেয়ার করে তারা। ম্যাগডেলান নদীর ২০০ কিলোমিটার অববাহিকা জুড়ে দাপট চালাচ্ছে জলহস্তীগুলি। এদের হামলায় আহত হচ্ছে গবাদি পশুসহ মানুষও। ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন এরা এভাবে বংশবৃদ্ধি করে গেলে বাস্তুতন্ত্র বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। খোজা করার চেষ্টা হয়েছিল। সুফল পাওয়া যায় নি তাহলে?
কলম্বিয়া সরকার কিছু কিছু অন্যদেশে পাঠাতে চায়। হাল্কা করতে চায় বোঝা। কে নেবে গো, কে নেবে গো বলে তারা আবেদন করেই চলেছিল। সাড়া দিয়েছে আমাদের ভারত। ভারত সরকার ৬০টি জলহস্তী নিতে চায় বলে জানিয়ে দিয়েছে। সে জলহস্তীগুলি থাকবে আমাদের মহান প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাটে। হয়তো বিচিত্র উপায়ে তাদের বংশবৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখবেন সরকার। হয়তো হিপোদের বংশবৃদ্ধি রুখে দেওয়ার নিদান তাঁরা পেয়ে গেছেন প্রাচীন কোন শাস্ত্র থেকে। তখন বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের নাম ছড়িয়ে পড়বে দিকে দিকে। মেরা ভারত মহান হ্যায়।