সোমবার | ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:৩৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

গড়বাটি রাজরাজেশ্বরী মায়ের পুজো : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৬০০ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

পুরানে কথিত আছে, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জলমগ্ন থাকায় প্রাণ সৃষ্টি করা নিয়ে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর ইন্দ্র পঞ্চানন মিলে সমুদ্র গর্ভের রত্ন সিংহাসন থেকে মা’কে কাঁধে তুলে নিয়ে জলের উপর রাখলেন এবং মহাসমারোহে তাঁর আরাধনা করলেন। মায়ের কৃপায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ব্যাপী জীবজগৎ প্রাণ লাভ করেলো। পিতামহ ব্রহ্মার প্রাণ সৃষ্টিতে ইচ্ছা সার্থক হল। দেবী মহেশ্বরের নাভি থেকে প্রস্ফুটিত পদ্মের ওপর উপবিষ্ট হলেন। এটি হল বুড়ো শিবতলার গড়বাটি রাজরাজেশ্বরী মাতার মূর্তির রহস্য।

দেবী দশমহাবিদ্যা, ষোড়শীমূর্তি, ত্রিপুরা সুন্দরী। প্রায় শতাধিক বছর আগে গড়বাটি বাজারে শুরু করা হয়েছিল ঘট পূজা। বিশ্বযুদ্ধের কারণে বেশ কিছু বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে থেকে এ পুজা শুরু হয়েছে। বাজারের সকল মানুষের প্রচেষ্টায় নবমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রসঙ্গত গড়বাটি এলাকা আগে ফরাসীদের হাতে ছিল। ইংরেজরা চুঁচুড়া দখল করায় এটি হুগলী-চুঁচুড়া পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৪১-৪২ খ্রিস্টাব্দে চুঁচুড়ায় বর্গী আক্রমণের কারণে ভাচরা গড় বা পরিখা কাটা হয়। এই গড়ের ধারে বাটিস্থ পাড়াকে গড়বাটি বলা হতো।

গড়বাটি বাজারের মধ্যে একটি টোল ছিল। আশেপাশের পাড়া থেকে শিশুরা সংস্কৃত, জ্যোতিষ শাস্ত্র, ন্যায়শাস্ত্র ,ব্যাকরন ইত্যাদি পড়তে এবং শিখতে আসতো। রোজ দেবীকে প্রণাম করে শুরু হতো শাস্ত্রপাঠ।তখন গাছের তলায় দেবী সাধারণ ঘটে পূজিতা হতেন। তালডাঙ্গার হাট থেকেও ব্যাপারীরা আসতেন। দিনে জমজমাট হলেও সন্ধ্যার পর ফাঁকাই থাকতো বাজার। গত শতকের পঞ্চাশের দশকের পর ধীরে ধীরে বসতি বাড়তে থাকে। তখনই ঘট থেকে দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তিতে পূজার প্রবর্তন হয়।

১৯৪৮ সালের সার্বজনীনভাবে শ্রী শ্রী রাজেশ্বরী মায়ের নতুন করে পুজো শুরু হলে বিপত্তি দেখা দেয় পুঁথি না থাকায় মন্ত্র নিয়ে। দেবী মন্ত্রের পুঁথি আনা হয় কাশি থেকে। আগে যারা ঘটে পুজো করতেন তাদের পুজো পদ্ধতি জানা ছিল না। এ পুজোর উদ্ভব সম্পর্কে নানা প্রচলিত জনশ্রুতি আছে।

একটি জনশ্রুতি বলে, এখানে ফরাসি ও ইংরেজদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া চলতো গরবাটি বাজারে দ্রব্য কেনা নিয়ে। এতে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যাপারীরা সমস্যায় পড়তো নিত্য ঝগড়া অশান্তি এরাবার জন্য গাছ তলায় থান তৈরি করে তাতে ঘট স্থাপন করে নিত্য পুজো শুরু করে দেয়। জেলে, বাগদীরা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে বাড়ি ফেরার সময় সামান্য কিছু ফুল, বেলপাতা, বাতাসা দিয়ে পুজোর ব্যবস্থা করত। বাজারে দেবীর সামনে কেউ অশান্তি করতে চাইতো না।

আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, স্থানীয় এক বাউড়ি পরিবার জীবিকার সন্ধানে এখানে বসবাস করতেন। নিঃসন্তান দম্পতি বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে তাদের বাড়ির শিলাখণ্ডটি গাছ তলায় রেখে অন্যত্র চলে যান। অন্য জাতির গৃহদেবতাকে গাছ তলায় পড়ে থাকতে দেখে বাজারের বিক্রেতারাই পুজো করতে শুরু করেন। যদিও এ সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

দক্ষিণমুখী পাকা দালান রীতিতে তৈরি শ্রী শ্রী রাজেশ্বরী মায়ের মন্দির। সামনে বড় অশ্বত্থ গাছ। দেবী নিত্য পূজিতা হন। বাৎসরিক পুজো ফাল্গুন মাসের সপ্তমী তিথিতে। এ বছর (২০২৩) ২৫শে ফেব্রুয়ারি থেকে ষষ্ঠী শুরু হয়েছে। চার দিনের পুজো। আজ নবমী। প্রথম দিন ঘট স্নান করিয়ে মায়ের পুজো শুরু হয়। পুষ্পাঞ্জলি এবং দুপুরের মধ্যাহ্নভোগ, রাত্রে আরতি ভোগ নিবেদন। সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে পূজা হয়। বলিদান নেই। অষ্টমীর দিন কুমারী পূজা এবং পরে ধুনা পোড়ানো হয়। নবমীর দিন সপ্তসতী যজ্ঞ এবং অন্নকূট মহোৎসব। রাতে আরতীয ও ভোগ নিবেদন দশমীর দিন সকালে দশমী পূজো ও ঘট নিরঞ্জন করে গঙ্গা পূজা হয়। সকল মায়ের ভক্তরা যাতে নির্বিঘ্নে পুষ্পাঞ্জলী দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয় সুচারুরূপে। ষষ্ঠীর দিন থেকে শুরু করে দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত প্রত্যেকটা আচার বিধি নিষ্ঠার সহিত পালন করা হয়।

দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি অতীব সুন্দর। শায়িত মহাদেবের নাভি থেকে পদ্মফুল বৃন্ত সমেত বেরিয়েছে। তাতে চতুর্ভূজা রাজরাজেশ্বরী লাল বেনারসি পড়ে বাঁ পায়ের উপর ডান পা রেখে বসে আছেন। তাঁর চার হাতেই অস্ত্র। দুহাতে তীর অন্য হাতে অঙ্কুশ এবং বজ্র। বাহন নেই। সামনের মহেশ্বর ব্রহ্মা-বিষ্ণু পঞ্চানন্দের মৃন্ময়ী মূর্তি। দেবীর পাশে জয়া-বিজয়াও আছেন। নৈবেদ্যের সিদ্ধচাল, মাসকলাই, হলুদ, দই, ফলমূল, চিড়ে, মুড়কি বাতাসা ইত্যাদি।

অতীতে মেলা হত কিনা জানা নেই তবে পঞ্চাশের দশকে তিন দিন যাত্রাপালা হত। কলকাতার নামিদামি দল ও যাত্রা করে গেছে ওই সময়। এখন এখানে বিশাল করে মেলা বসে। নানা ধরনের আলোকে সুসজ্জিত মেলায় মনোহারি দ্রব্য তেলেভাজা, বাদাম, জিলাপি, আধুনিক ফাস্টফুড, খেলনা বাটিতে ভরে ওঠে প্রাঙ্গণ। গড়বাটি উৎসব উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন আসেন কুটুমবাড়িতে। মেয়েরাও আসেন বাপের বাড়িতে, এত সুন্দর প্রাণবন্ত মেলা খুব কমই দেখা যায়। রাজরাজেশ্বরীর মন্দিরের কাছেই মেলার মধ্যেই মঞ্চ করে চলে নানান সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুজোকে কেন্দ্র করে এমন সুন্দর মিলন উৎসব অনুষ্ঠিত হোক যুগ যুগ ধরে।

প্রনামমন্ত্র —সর্বমঙ্গল্যে মঙ্গল্যে শিব চরণেন গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে।

তথ্যসূত্র : হুগলি চুঁচুড়ার ইতিহাস ও অন্যান্য।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “গড়বাটি রাজরাজেশ্বরী মায়ের পুজো : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Pallab dey says:

    সত্যিই অনবদ্য লেখনী 👏👏👏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন