আইনকানুন, সংবিধান সবকিছুর উদ্দেশ্যই হল মানুষকে ভালোভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দেওয়া। কিন্তু তা করতে গিয়ে সরকার বাহাদুর এমন সব কান্ড ঘটিয়ে বসেন তাতে ঠিক উল্টোটাই হয়। সংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প চালু হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। এটা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিশু বিকাশ কর্মসূচি। এতে স্থানীয় অঙ্গনওয়ারি থেকে রান্না করা খাবার পাওয়া যেত। ২০২১ কেন্দ্রীয় সরকার চালু করলেন ‘পোষণ ট্র্যাকার’, যার কাজ হল সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প বা আই সি ডি এস এর সব সরকারি পুষ্টিদান প্রকল্পগুলির নজরদারি করা। কার্ডধারীদের আধার কার্ড আপডেট করা এর একটা অপরিহার্য অঙ্গ। এদিকে ০-৫ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় তিন চতুর্থাংশের আধার কার্ড নেই। সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে আধার কার্ড নেই বলে কারও খাদ্য বন্ধ করা যাবেনা। অন্যদিকে সরকার বলছে অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রে মায়েদের আধার কার্ড যাচাই করতেই হবে। সরকারের মতে, অনেকে ভুয়ো কার্ড করে এই প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছে।
বায়োমেট্রিক কার্ড (Biometric ID Card) যাচাই করাও এক সমস্যার ব্যাপার। কমন সার্ভিস সেন্টারের মতে প্রায় ৪২ শতাংশ কার্ড ব্যবহারকারীর বায়োমেট্রিক প্রথমবার মেলে না। আধার কার্ড যাচাই করা (Authentication) ব্যর্থ হওয়ায় সমস্যায় পড়ে যাচ্ছেন বহু ব্যবহারকারী। শিশুর খাবার আনতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন মায়েরা। গোল বাঁধছে বৃদ্ধদের পেনশন আনার সময়। সংবাদপত্রে দেখলাম, পেনশন আনতে গিয়ে বায়োমেট্রিক বিভ্রাটে বিপর্যস্ত এক বৃদ্ধ আক্ষেপ করছেন — ‘আমার শরীরই আমার পরিচয় অস্বীকার করেছে। রেশন থেকে পেনশন এই বায়োমেট্রিক বিভ্রাটে মানুষের নাকাল হওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বহু মানুষ আছেন যাদের ঠিক সময়ে পেনশন না পেলে ভালোভাবে বাঁচা কঠিন।
কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের নজরদারি করার জন্য মোবাইল মনিটারিং সিস্টেম চালু করেছেন। খুব ভালো ব্যাপার। এই কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা কাজ করে চলে যান। বাড়ি গিয়ে তারা বাড়ির কাজ করেন কিংবা সেই সময় তারা বাড়তি রোজগারের জন্য অন্যত্র কাজও করতে পারেন। কিন্তু এই অ্যাপ অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাদের জীবন। কারণ কাজ শেষ হওয়ার পর ছবি তোলা এবং জিও-ট্যাগড হওয়ার জন্য তাদের কাজের জায়গায় বসে থাকতে হচ্ছে। ফলে তাদের কাজের সময় নষ্ট হচ্ছে। কর্মক্ষমতার এ এক বিরাট অপচয়। মজুরিও কম পাচ্ছেন তারা। দেশের লোকের কাজকর্ম ও প্রকল্পের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সরকার প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিচ্ছেন এটা খুবই ভালো ব্যাপার। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে যান্ত্রিক বিভ্রাটে মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। তাতে প্রযুক্তির ওপর তাদের আস্থা কমছে। সরকার দেশের লোককে নজরে রাখছেন দেশের ‘মঙ্গল’ এর জন্যই। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে এতে মানুষের সমস্যাও বাড়ছে।