শনিবার | ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:২৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

গানের পাখি ফেরদৌসী রহমান : মনোজিৎকুমার দাস

মনোজিৎকুমার দাস / ৫৭১ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২

ফেরদৌসী রহমান বাংলাদেশের একজন সুকণ্ঠী গায়িকা। প্রায় পাঁচ দশক ধরে তার সঙ্গীত জগতে পদচারণা চলছে। বাংলা গানের প্রায় সব শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন। পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, আধুনিকসহ সব ধরনের গানই তিনি গেয়েছেন সুরেলা কণ্ঠে। বাংলা গানকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। শিল্পী পরিবারে জন্ম তার। বাবা কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আব্বাস উদ্দিন। বাবার মুখ উজ্জ্বল করে তিনি নিজেই জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। কেবল গায়িকা নন, গানের শিক্ষকও ফেরদৌসী রহমান। গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের সঙ্গে তার পথচলা। ফেরদৌসী রহমান ১৯৪১ সালের ২৮ জুন ব্রিটিশ ভারতের কোচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় গানে হাতে খড়ি হয় তার পিতার কাছে। পরবর্তীতে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান প্রমূখ সঙ্গীতজ্ঞের কাছে তালিম নেন। খুব অল্প বয়স থেকে তিনি মঞ্চে পারফরম্যান্স শুরু করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডিওতে খেলাঘর নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ নামের চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম নেপথ্য কণ্ঠদান করেন। ৬০ ও ৭০-এর দশকের বহু চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তার প্লে ব্যাক করা চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৫০-এর কাছাকাছি। ১৯৪৮ সালে তিনি প্রথম রেডিওতে গান করেন। তখন তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম বড়দের অনুষ্ঠানে গান করেন। ১৯৬৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি প্রথম গান রেকর্ড করেন এইচ এম ভি থেকে।

ফেরদৌসী রহমান ১৯৬০ সালে ফেলোশীপ পেয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে ৬ মাসের সঙ্গীতের ওপর স্টাফ নোটেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। ৩টি লং প্লে-সহ প্রায় ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড এবং দেড় ডজনের বেশি গানের ক্যাসেট বের হয়েছে তার। তার মাত্র ১টি সিডি বের হয়েছে ‘এসো আমার দরদী’। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার গানের রেকর্ড হয়েছে তার। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সংগীত পরিচালক। ১৯৬০ সালে রবীন ঘোষের সাথে ‘রাজধানীর বুকে’ নামক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে এসো গান শিখি অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন।

ফেরদৌসী রহমান নজরুল ইন্সটিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। সঙ্গীত ভুবনে অবদান রাখার জন্য তিনি জাতীয় পর্যায়ে নানাভাবে সন্মানিত হয়েছেন। তার অর্জিত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে লাহোর চলচ্চিত্র সাংবাদিক পুরস্কার (১৯৬৩), প্রেসিডেন্ট প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার (১৯৬৫), টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৫), জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (১৯৭৭), বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৭৭)। এছাড়াও তিনি নাসিরউদ্দিন গোল্ড মেডেল পুরস্কার, মাহবুবুল্লাহ গোল্ড মেডেল, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে তিনি আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ডস আয়োজন হতে পরম্পরা পরিবার পদক লাভ করেন।

প্রখ্যাত পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাসউদ্দীনের সুযোগ্য কন্যা উপমহাদেশের বরেণ্য সংগীত শিল্পী ফেরদৌসী রহমান সংগীত জগতে ছড়িয়ে আছেন নিজের আলোয়। তাকে চিরসবুজ গানের পাখিও বলা হয়ে থাকে। সত্যি তিনি গানের পাখি। জানা যায় তার জীবন ও কর্মের উপর ভিত্তি করে ‘গানের পাখি’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে।।

বাংলা-উর্দু মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের পাশাপাশি তার গাওয়া গানের সংখ্যা প্রায় ৫০০০। যার মধ্যে রয়েছে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, গজল এবং উচ্চাঙ্গ সংগীত। এ ছাড়া তিনি জার্মান, রুশ, চীন-সহ একাধিক ভাষায় গান করেছেন।

তার গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে — “যে জন প্রেমের ভাব জানে না”, “ওকি বন্ধু কাজল ভ্রমরা”, “যার ছায়া পড়েছে মনের আয়নাতে”, প্রাণ সখিরে ঐ শোন কদম্ব তলায় বংশি বাজায় কে”, “পদ্মার ঢেউ রে” ইত্যাদি। তাঁর গাওয়া “অচিন গাঁয়ের অচিন বন্ধুরে”, “অকূলে ভাসাইও নাগো মোরে”, “সোনাবন্ধুরে কোন দোষেতে যাইবা ছাড়িয়া”, “ভ্রমর কইও গিয়া”, “অইনা মাধবী বনেতে বন্ধু ছিল”, “বাবুই চ্যাঙড়ারে”, “ও মোর বানিয়া বন্ধুরে”, “ও মুই না শুনো না শুনো তোর বৈদেশিয়ার কথারে”, “ও কি গাড়িয়াল ভাই”, “সে যেন কি করলো রে আমার কি যেন কি দিয়া”, “গানগুলি মোর আহত পাখির সম”, “সে চলে গেছে বলে কি গো স্মৃতিও হায় যায় ভোলা”, “চোখ মুছিলে জল মোছে না”, “নিশি ভোর হলো জাগিয়া”, “গান হয়ে এলে মন কেন বলে”, “কথা বলো না বলো ওগো বন্ধু”, “যার ছায়া পড়েছে মনের আয়নাতে”, “আমি রূপনগরের রাজকন্যা”, “কি করে তোমাকে ভুলবো, তোমার স্মৃতি আমার জীবন”, “আমি সাগরের নীল নয়নে পরেছি”, “বলাকামন হারাতে চায়”, “লোকে বলে প্রেম আমি বলি জ্বালা” এবং এমন আরো অনেক জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের শিল্পী তিনি।

ফেরদৌসী রহমান চলচ্চিত্রে প্লে ব্যাক শিল্পী হিসাবে অসংখ গান গেয়েছেন। তার গাওয়া চলচ্চিত্রের গান দু’একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। ‘যার ছায়া পড়েছে মনের আায়নাতে’, ‘গান হয়ে এলে,’ ‘এই নীল নীল নিঃসীম’, ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি অসংখ্যক আধুনিক গান গেয়েছেন। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনিই গান করেন। ‘ওই যে আকাশ নীল হলো আজ সে শুধু তোমার প্রেম’ গানটি ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম গান।

বিটিভির জনপ্রিয় শিশুতোষ অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি’ দিয়ে সবার কাছে ‘খালামণি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন ফেরদৌসী রহমান। সেই চিরচেনা মিষ্টি হাসি! এ দেশের কয়েকটি প্রজন্মের শৈশবস্মৃতি জড়িয়ে আছে এই শিক্ষামূলক শিশুতোষ অনুষ্ঠানটির সঙ্গে। পাপেট মিঠু-মন্টি, গানের খালামণি, কত কিই না এই একটি অনুষ্ঠান থেকে পেয়েছে দর্শকরা! বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৫৫ বছর পূর্তি হয়েছে। সেই সঙ্গে জনপ্রিয় এই শিশুতোষ অনুষ্ঠানও পেরিয়েছে ৫৫ বছর। দীর্ঘ সময় ধরে পাক্ষিকভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হয়ে আসছে ‘এসো গান শিখি’। পুরনো সে চরিত্রগুলোই নতুন সময়ে নতুনভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। মাঝে কিছু সময় প্রচার বিরতিতে ছিল। ‘গানের খালামণি’ হয়ে সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানকে দেখা যায় এই অনুষ্ঠানটিতে।

আগেই বলা হয়েছে, ‘৬০ ও ৭০-এর দশকের বহু চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ৩টি লং প্লে-সহ প্রায় ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড এবং দেড় ডজনের বেশি গানের ক্যাসেট বের হয়েছে তার। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যেসব গান করেছেন তার সব আজও জনপ্রিয় হয়ে আছে। তার সময়ের গানগুলোর আবেদন কোনোদিনও ফুরিয়ে যাওয়ার না।

ফেরদৌসী রহমান যেসব গান মন টানে সেগুলো হচ্ছে— ‘যেজন প্রেমের ভাব জানে না’, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’, ‘পদ্মার ঢেউরে’, ‘মনে যে লাগে এত রঙ’, ‘নিশি জাগা চাঁদ’, ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা’, ‘ঝরা বকুলের সাথী আমি’, ‘হার কালা করলাম রে’, ‘গহিন গাঙের নাইয়া’ ও ‘আমার প্রাণের ব্যথা কে বুঝে সই’, ‘কথা বলো না বলো ওগো বন্ধু’, ‘ও কি বন্ধু কাজল ভ্রমরা’, ‘যার ছায়া পড়েছে মনেরও আয়নাতে’। এছাড়াও তার অসংখ্য রয়েছে।

পরিশেষে, গানের ঝর্ণা ও গানের পাখি ফেরদৌসী রহমানের আজ ২৮ জুন জন্মদিন। জন্মদিনে তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

মনোজিৎকুমার দাস,প্রাবন্ধিক, গল্পকার, অনুবাদক ও কবি। লাঙ্গলবাঁধ, মাগুরা, বাংলাদেশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন