বৃহস্পতিবার | ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৩২
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কালো গোঁসাইয়ের চিঠি — চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন : মোঃ তুষার উদ্দিন নব নব রূপে : নন্দিনী অধিকারী সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

“রসগোল্লার কলম্বাস, বাগ বাজারের নবীন দাস”

পেজ ফোর, নিউজ ডেস্ক / ৫৭১ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

সেটা ১৯৭১ সাল। বোম্বেতে কিংবদন্তি শিল্পী শচীন দেব বর্মন এর বাড়ীতে একটা হিন্দী সিনেমার গানের রেকর্ডিং এর আগে রিহার্সাল চলছে। শচীন কর্তার সামনে বসে আছেন সব নক্ষত্ররা, লতাজী, আশাজী, হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া (বাঁশি) এবং আরো অনেকে। রিহার্সাল এর মাঝখানে, শচীন কর্তা উঠে ভেতরের ঘরে গিয়ে একটা কৌটো এনে সবার মাঝে রাখলেন, বিখ্যাত কে,সি,দাস এর দোকানে রসগোল্লা, কলকাতা থেকে নিয়ে গেছেন। সবাইকে খেতে বললেন। কেউ কেউ খেলেন, আর কিছু লোকে খেলেন না। কৌটোতে অনেকগুলি রসগোল্লা থেকে গেলো। এরই মাঝে শচীনকর্তা আবার কোনো কাজে, ভেতরের ঘরে গেছেন, আসতে দেরী হচ্ছে , হরিজী (হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া) তখন সবগুলি রসগোল্লা খেয়ে ফেলেন। শচীনকর্তা ফিরে এসে যখন দেখেন কৌটো পুরো খালি, ভীষণ রেগে যান, বলতে থাকেন, ”কেডা খাইলো, কেডা খাইলো ? কোন চুরা এতডি রসগোল্লা খাইছে ? আমার লিগ্যা একটাও রাখলো না। দেখছো নি চুরার কান্ডটা ”। সামনে যারা ছিলেন, তাঁরা চুপ। রিহার্সাল শেষ হলো, সবাই চলে গেলেন। পরদিন আবার যথারীতি কর্তার বাড়ীতেই রিহার্সাল চলছে। লতাজী গানের মুখড়াটা গেয়ে ছেড়েছেন, হরিজী ইন্টারল্যুডে বাঁশিতে বাজা’চ্ছেন, শচীনকর্তা দুহাত তুলে সবাইকে থামালেন। সবাই তটস্থ, কোথায় কি ভুল হলো ? কর্তা বললেন, “অখন বুজজি, কোন চুরা কাইল আমার সব রসগোল্লা চুরি করছে ? তোমরা বুঝতা না, আমি বুজজি। হরিজী কে দেখিয়ে বললেন, “এই হইরাই কামডা করছে , কাইল আমরার কইল’কাতার অতডি মিষ্ঠি রসগোল্যা তার পেটে ঢুকছে নি, হের লাইগ্যাই আইজ তার বাঁশির আওয়াজ ও কাইলের থিক্যা বেশী মিডা লাগতাছে”। আবার তিনি ইশারা করতেই, শুরু হলো রিহার্সাল।

গবেষকদের মত অনুযায়ী ১৮৬৮ সালে কলকাতায় বাগবাজারের নবীনচন্দ্র দাসের হাতে সৃষ্টি হয় এই রসগোল্লা। যতটুকু জানা যায়, একটি ছোট্ট মেয়ে নবীন দাসের কাছে বায়না ধরে,—

চটচটে নয়, শুকনো হতে মানা,/ দেখতে হবে ধবধবে চাঁদপানা, /এমন মিষ্টি ভূ-ভারতে নাই, /নবীন ময়রা, এমন মিষ্টি চাই।

অক্ষরে অক্ষরে নবীন দাস কথা রাখেন মেয়েটির, ছানা আর গরম চিনির রস মিলিয়ে ঠিক যেন চাঁদপানার মতোই তৈরী করলেন রসগোল্লা। এই “রসগোল্লা”ই মিলিয়ে দিলো নবীন দাস আর সেই মেয়েটিকে, নাম যাঁর “ক্ষীরোদমনি”, বাগবাজারের তত্কালীন বিখ্যাত কবিয়াল “ভোলা ময়রা” মেয়ে। নবীন দাসের ঘরণী হয়ে আসেন এই ক্ষীরোদমনি।

দেশে, বিদেশে এই রাসগোল্লার কদর হয়।

ছোটবেলা যখন পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে স্কুল থেকে বাড়ী ফিরতাম, ভালো রেজাল্ট হলে চোখের সামনে থালায় রসগোল্লা নিয়ে এসে মুখে পুরে দেয়া হতো, আবার ফেল করে আসলেও হাত ঘুরিয়ে যে ইশারা করা হতো, সেটাও রসেরগোল্লার মতোই গোল। বাড়ীতে নতুন কোনো শিশুর জন্ম হলে,সবাইকে সুসংবাদ দিতে চাই রসগোল্লা, চাকরি পেলেও চাই রসগোল্লা, বিয়ে ঠিক হলেও চাই রসগোল্লা, আবার শ্রাদ্ধ বাড়ীতে খেতে বসলেও একদম শেষে পাতে “দই” এর সাথে একটা “রসগোল্লা”।

রসগোল্লার সৃষ্টি নিয়ে পশ্চিম’বঙ্গ আর ওড়িষ্যা, দুই রাজ্যের মধ্যে একটা মিষ্টি লড়াই শুরু হয়, শেষ হয় সরকারী স্বীকৃতির মাধ্যমে। পেটেন্ট নির্ধারণকারী সংস্থা জিআই জানিয়ে দিলো মিষ্টি-কুলশ্রেষ্ঠ রসগোল্লার জন্ম হয়েছিল বাংলার নবীন চন্দ্র দাসের হাতেই। রসগোল্লা নিয়ে বিজয় উত্সব, গান, সিনেমা, বিদ্বজনদের বক্তব্য এসব অনেক কিছুই হয়েছে। তবে যদিও রসগোল্লা বহুযুগ আগে থেকেই বাঙালীর রসনা তৃপ্ত করে আসছে, হঠাৎ করে রসগোল্লার জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক তৈরী হওয়াতেই যেন রসগোল্লাকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করা হলো। অনেকে আবার “রসগোল্লা দিবস” উদযাপনের ভাবনায় ব্রতী হয়ে উঠলেন। রসগোল্লা নিয়ে সিনেমা হয়ে গেলো, রিভিউ বেরিয়ে গেলো। রসগোল্লা উত্সবে বসেই টপ করে মুখে রসগোল্লা পুরে, বাংলা টেলি-সিরিয়ালের এক অভিনেত্রী আক্ষেপ করে বলে উঠেন “ ইসসসস, এই রসগোল্লার মতোই যদি বছরে আমার এক দুটো সিরিয়াল হিট হয়ে যেতো”।

নবীন দাসের এই অসামান্য সৃষ্টি, অনেকটা অমরকথা সাহিত্যের সৃষ্টির মতোই। ঠিক যেমন দাদু থেকে বাবার মুখে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর “পথের দাবী”-র গল্প শুনতে শুনতে বড়ো হয়ে ওঠার মতোই।

এই রসগোল্লা খাওযার ধরণটা ও নানারকম। কেউ চামচ দিয়ে কেটে খান, কেউ কাটা চামচ দিয়ে উঠিয়ে আলগোছে মুখে ফেলে দেন, কেউ আবার হাতে ধরে রসটা নিংড়ে নিয়ে রসগোল্লা মুখে দেন, আবার কেউ আলতো করে দু আঙুলে খুব যত্ন করে ধরে মুখে ফেলে দেন। তবে যে যেভাবেই খান না কেন, মুখে পুরলেই একটা উচ্ছ্বাস তৈরী হয়, অস্ফুটে বেরিয়ে আসে শব্দটি “আ:”।

রসগোল্লার জন্মস্থান, সৃষ্টি কর্তা, এসব নিয়ে লড়াই, বিজয় উত্সব, সিনেমা, গান, গুণীজনদের বক্তৃতা, প্রশংসা, কবিতা এসব হলে বা না হলেও রসগোল্লার কিছু যায় আসেনা। কারণ, নবীন দাসের হাতেই তো জন্ম এই রসেরগোল্লার, আর হয়তো বা তিনি জানতেন যে তাঁর এই সৃষ্টিকে কোনোদিন আত্মপরিচয়, জন্মস্থান এসব নিয়ে বিতর্কের সামনে দাঁড়াতে হতে পারে। সেজন্য, শিশুকে যেমন মা বাবা নিজের পরিচয়টা শিখিয়ে দেন, তেমন ভাবেই হয়তো নবীন দাস, তাঁর ও স্ত্রী ক্ষীরোদমনির কথা মনে রেখেই, রসগোল্লার কানে কানে আত্মপরিচয়টা শিখিয়ে দিয়েছিলেন “ রসগোল্লা তুমি কার? যে আমার প্রেমে মজে, আমি তার”।

তথ্য সুত্রঃ কোরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন