“নিজেকে এমন করিয়া সম্পূর্ণ নিবেদন করিয়া দিবার শক্তি আর কোন মানুষের প্রত্যক্ষ করি নাই।” নিবেদিতা সম্পর্কে একথা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দুজনের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও একথা লিখতে তাঁর কোন অসুবিধা হয়নি। নিবেদিতার কর্মযজ্ঞের নানা দিক এখনও অনেকটাই অনালোকিত থেকে গেছে। এদেশে তাঁর সমাজসেবী পরিচয়টি অনেক বেশি সামনে এসেছে। অথচ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তাঁর। ১৯০২-১৯১১ এই কালপর্বে উত্তর কলকাতার বাগবাজারের ১৭ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়িটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। নরমপন্থী, চরমপন্থী, মডারেট, বিপ্লবী সবাই এ বাড়িতে আসতেন। এই বাড়ি ছিল বিপ্লবীদের গোপন বৈঠকের জায়গা। গোখলে থেকে অরবিন্দ এ বাড়িতে আসেননি কে!
ইতিহাস বলছে, বিবেকানন্দ সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এ দেশ থেকে ব্রিটিশদের তাড়ানোর প্রচেষ্টাকে নৈতিকভাবে সমর্থন করতেন। তবে নিবেদিতার প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কার্যকলাপে তাঁর আপত্তি ছিল। বিবেকানন্দ তাঁকে এর থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন। প্রশ্ন আসতে পারে কেন? কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের পরিস্থিতি বিপ্লব প্রচেষ্টার অনুকূল নয়। প্রস্তুত নয় দেশের মানুষ। তাই একাজ এখনই শুরু করলে বাংলায় বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কাজ পিছিয়ে যাবে। বোঝাই যাচ্ছে আদর্শগত নয়, এই আপত্তি ছিল কৌশলগত।
নিবেদিতার ‘কালী দ্য মাদার’ বইটা পড়ে অরবিন্দ বলেছিলেন, ‘বইটা মোটেই অহিংস নয়, এটা বিপ্লবের অনুপ্রেরণা দেবে।’ একই কথা বলেছিলেন, অরবিন্দের ভাই আরেক বিপ্লবী বারীন্দ্র কুমার ঘোষ। রণরঙ্গিণী কালীর মধ্যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের এক রূপকে দেখতে চেয়েছিলেন ভারতপ্রেমী এই মহীয়সী নারী। মনে রাখতে হবে বাংলার বিপ্লববাদীদের অনেকেই ছিলেন শক্তি সাধনায় বিশ্বাসী। কালীকে পুজো করতেন তারা।
তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল পরিস্কার। স্বামীজির সঙ্গে তাঁর শেষ সাক্ষাৎকারের দিন তিনি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, আপাতত অন্যান্য কাজের থেকে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকেই বেশি গুরুত্ব দেবেন। এটাও খুব লক্ষ্যণীয় যে মতপার্থক্য থাকলেও বিবেকানন্দ তাঁর ওপর কখনোই নিজের মতকে চাপিয়ে দেননি। অথচ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটা সাধারণ নিয়ম হল, এর সঙ্গে যুক্ত কেউ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতে পারবেন না। কিন্তু বিবেকানন্দ কখনোই নিবেদিতাকে মিশনের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে বলেননি। নিবেদিতাও নিজের পরিচয় দিতেন ‘নিবেদিতা অফ রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ’। এভাবে দুজনেই তৈরি করেছিলেন পরমত সহিষ্ণুতার এক দৃষ্টান্ত।
শুধু কথা নয়, নিবেদিতা বিপ্লবী রাজনীতি করেছেন নিজের ভিতর থেকে উঠে আসা এক বিশ্বাস থেকে। অরবিন্দ লিখছেন, ‘তিনি যখন বিপ্লব সম্পর্কে কথা বলতেন তখন তাঁর খাঁটি স্বরূপ বেরিয়ে আসতো। তাঁর পুরো মন ও প্রাণের কথা ভাষায় ব্যক্ত করতেন তিনি।’ এই নিবেদিতাকে এখনও আমরা খুব একটা চিনিনা। তাঁর সমাজসেবী পরিচয়টাই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এই জন্মদিন থেকেই তাঁকে নতুনভাবে চেনার সেই প্রচেষ্টাটুকু শুরু হোক।
বিপ্লবের বাইরে , বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান
আছে। দীনেশ চন্দ্র সেন এর লেখা ইং রেজি তে
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস এর বইটিতে বহু
যোগ-বিয়োগ করে সঠিক ইংরেজি লেখায়
সাহায্য করেছিলেন। সেটা উহ্য থেকে যায়।
এটা জানতাম না।পরে এ বিষয়টা তোমার কাছ থেকে জেনে নেব।এমন পাঠকের মনযোগ পাওয়াও তো কম নয় ।