রবিবার | ১লা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:৩৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

‘মন করো না সুখের আশা’: রামপ্রসাদের কালী সাধনা ও একটি পীড়িত সমাজমন : প্রবীর মুখোপাধ্যায়

প্রবীর মুখোপাধ্যায় / ১৬০০ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১

কথামুখ

বাংলাদেশে শাক্ত ভাবনাকে আপামর বঙ্গবাসীর কাছে আপন করে তুলেছিলেন রামপ্রসাদ সেন (আনুঃ ১৭২০—১৭৮১)। আঠারো শতকের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাঁর কালী সাধনায় বাঙালির প্রাণের কথাটি যেন বেজেছিল। এ সময়টিকে বাংলার ইতিহাসের পাতায় একটি সন্ধিক্ষণ বলা যেতে পারে। শতকের শুরুতে শেষ ‘মহান’ মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর (১৭০৭) পর মুঘল সাম্রাজ্যের দ্রুত ভাঙনের সুযোগে হায়দ্রাবাদ, অযোধ্যা ও বাংলাদেশের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলি গড়ে উঠতে থাকে। মুর্শিদকুলি খানের নেতৃত্বে সুবা বাংলা স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করে। পরে নবাব আলিবর্দী খান ও তাঁর দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌল্লার আমলে বাড়ে বাংলার রাজনৈতিক গুরুত্ব। অন্যদিকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যিক স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে ক্রমে এ দেশের রাজনীতিতে পা রাখতে থাকে। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের মুঘল সম্রাটের দেওয়া ফরমান মোতাবেক মাত্র তিন হাজার টাকা বাৎসরিক খাজনার বিনিময়ে কোম্পানি সুবা বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। এরপর ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পলাশির যুদ্ধে সিরাজ-উদ-দৌল্লাকে পরাজিত করে মীরজাফরকে পুতুল নবাব বানিয়ে চলল অবাধ লুন্ঠন এবং ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার ‘দেওয়ানি’ লাভ করে অচিরেই কোম্পানি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘বণিকের মানদন্ড দেখা দিল পোহালে শর্বরী রাজদন্ডরূপে’। শুরু হলো দ্বৈতশাসন। দেওয়ান হিসাবে কোম্পানি সমস্ত প্রকার ভূমি রাজস্ব ও অন্যান্য কর আদায়ের অধিকারী হলো, আর রাজনৈতিক দায়িত্বটা রইল নবাবের। বাংলার অর্থনীতি অবাধ লুন্ঠনে পঙ্গু হয়ে গেল। দেদার অর্থ চলে যেতে থাকল ইংল্যান্ডে। এদিকে কোম্পানি রাজস্ব আদায়কে সুনির্দিষ্ট করতে পুরোনো জমিদারদের উপেক্ষা করে চালু করল নতুন বন্দোবস্ত। ফলে সমস্ত চাপটা গিয়ে পড়ল কৃষকদের উপর। গোটা কৃষিব্যবস্থা পড়ল প্রচন্ড সঙ্কটে। কৃষকরা মুঘল আমলে জমির উপর তাদের অর্জিত অধিকার হারাল। ইতিমধ্যে ১৭৪২— ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মারাঠা ‘বর্গী’ আক্রমণ বাংলার অর্থনীতিকে প্রবল ধাক্কা দিল। ১৭৬৮— ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের অনাবৃষ্টি-অজন্মায় রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হয়ে গেল। দেখা দিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। ১৭৬৯—১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের (১১৭৬ বঙ্গাব্দ) এই দুর্ভিক্ষকে বলা হয় ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’। বাংলার জনসংখ্যায় এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় এক কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। এরই প্রতিক্রিয়ায় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে কোম্পানির লন্ডনস্থিত কোর্ট অব ডাইরেক্টর অবস্থা সামাল দিতে গভর্নর জেনারেল করে পাঠালেন ওয়ারেন হেস্টিংসকে।

দক্ষিণাকালীর কাঠখোদাই চিত্র। সাধক রামপ্রসাদের সময়কার প্রাচীন এই চিত্রটি ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে প্রকাশিত একটি দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ থেকে গৃহীত। গ্রন্থটি হল : J. Z. Holwell লিখিত ‘Interesting Historical Evenets Relative To The provinces Of Bengal And The Empire OF Indostan’.

এমত অবস্থায় কৃষককুলের অবস্থা ছিল দিশেহারা। আর্থিক সঙ্কট থেকে বেরোনোর পথ ছিল রুদ্ধ। মহাজনী অত্যাচার, অনাবাদী জমিতে ফসল না হওয়ার হাহাকার, বাড়তি আদায়, রাজস্বের চাপ, জমিদারি শোষণ এবং সর্বোপরি দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের রক্তচক্ষু ও শমনের আশঙ্কা ছিল নিত্যসঙ্গী। হাভাতে কৃষকদের কথা নতুন ইজারাদার বা ভুঁইফোর জমিদারদের কানে পৌঁছত না, অন্যদিকে গাঁটের কড়ি খরচ করে পাল্টা আইনি লড়াই চালানোর ক্ষমতাও কৃষক-সহ সাধারণ মানুষের ছিল না। ফলত ঘরে বাইরের এই সাঁড়াশি চাপে নাভিশ্বাস অবস্থা। চাপটা গিয়ে পড়েছিল গ্রাম বাংলার অন্যান্য জীবিকার উপরেও। সমাজের অপেক্ষাকৃত উঁচুতে তখন অর্থকরী ভাষা হিসাবে ফারসি শেখার চল ছিল। প্রশাসনে এটি ছিল প্রধান ভাষা। ফারসি ও কিছুটা আরবি জানলে চাকরি একটা জুটেও যেত। স্বভাবতই তখন অনেকে কৌলিক বৃত্তি (অধ্যাপনা, আয়ুর্বেদ চর্চা প্রভৃতি) ছেড়ে এদিকে ঝুঁকেছিলেন। ইতিমধ্যে গঙ্গার পাড় বরাবর সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা গ্রাম তিনটি ঘিরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে শহর কলকাতা। সামাজিক রাজনৈতিক ডামাডোলের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই দু-পয়সা উপার্জন করে বাড়ি গাড়ি করে ফেলছেন। ফলত ভাগ্য ফেরানোর আশায় ভিটেমাটি ছেড়ে অনেকেই ভিড় জমিয়েছিল ‘আজব শহরে’। অন্যান্য অনেকের মতোই রামপ্রসাদও ফরাসি ও আরবি ভাষা রপ্ত করে কৌলিক বৃত্তি আয়ুর্বেদ চর্চা ছেড়ে সাংসারিক অর্থকষ্ট সামাল দিতে পাড়ি দিয়েছিলেন এই শহরে। উপরিউক্ত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ রামপ্রসাদের কবি-মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি বাংলার জনমানসের এই শঙ্কা ও যন্ত্রণাকে অসাধারণ কবি কল্পনায় মূর্ত করে তুললেন তাঁর শক্তিরূপী কালী সাধনায়।

রামপ্রসাদের কালীসাধনা: প্রসাদী সঙ্গীত

রামপ্রসাদের কালী সাধনার সর্বোত্তম প্রকাশ ঘটেছে তাঁর ‘পদাবলী’তে। আধুনিক পাঠক সমাজে তাঁর কাব্যকে সম্ভবত প্রথম উপস্থাপিত করেন হরিমোহন সেনগুপ্ত। ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’ পত্রিকায় ১৭৭৩ শকাব্দে (১৮৫১ খ্রি.) প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত লেখাটিতে তিনি কৃত্তিবাস, কাশীদাস, কবিকঙ্কন, মুকুন্দ চক্রবর্তী ও ভারতচন্দ্রের সঙ্গে রামপ্রসাদকে একাসনে বসিয়েছেন। সে সময়ের ‘সুশিক্ষিত ব্যক্তি’দের রামপ্রসাদের রচনার মতো ‘সৎ কাব্যের’ প্রতি ‘প্রতিশূন্যতা’র কথা হরিমোহন ভালই জানতেন। তাই রসসমৃদ্ধ এমন কাব্যের প্রতি পাঠকবর্গকে ‘রসাস্বাদনে সমর্থ’ করে তোলার অভিপ্রায়েই তিনি কলম ধরেছিলেন।১ ফরমায়েশি রচনা ‘বিদ্যাসুন্দর’ বা অসম্পূর্ণ লেখা ‘শ্রীশ্রীকালীকীর্ত্তন’-এ নয়, রামপ্রসাদী পদেই যে তাঁর মৌলিক প্রতিভার স্বাক্ষর রয়েছে সে কথা বলেছেন তাঁর জীবন কাহিনীর অন্যতম সঙ্কলক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। ১৮৫৩-১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় ধারাবাহিক আকারে প্রকাশিত জীবনকথার শুরুতেই তিনি জানিয়েছেন, ‘ইহার [পদাবলী] তুল্য বঙ্গভাষা-ভাষিত অমূল্য গীতিরত্ন এ পর্য্যন্ত কোন কবি কর্ত্তৃক প্রচারিত হয় নাই।’ উনিশ শতকের প্রথমার্ধেই প্রসাদী সঙ্গীত কিন্তু সমাজের অপেক্ষাকৃত নিচুতলার জনমনে আসনটি পাকা করে নিয়েছিল। তাই গুপ্তকবির কাছে প্রসাদী গানের মাহাত্ম্যে গানের কথাগুলিই হৃদয়বেদ্য, গায়ক বা গানের সুর সেখানে সহৃদয়ের কাছে অকিঞ্চিতমাত্র। গানটির জন্য সুকণ্ঠ বা কোনও প্রকার বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োজন নেই, ‘কাকের ন্যায় অতি নিরস কর্কস কণ্ঠ’ থেকেও এই গান নিঃসৃত হলে ভোক্তা বা শ্রোতার মনে হবে ‘কোথা হইতে অকস্মাৎ অমৃত বৃষ্টি হইতেছে।’২

শশীভূষণ দাশগুপ্ত মহাশয়ও রামপ্রসাদের কালীসাধনায় শক্তির স্বরূপ নিয়ে আলোচনায় পদাবলীগুলি নিয়েই আলোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন রামপ্রসাদের আবির্ভাবের আগে বাংলায় শক্তিসাধনার দুটি ভিন্ন রূপ প্রচলিত ছিল।৩ প্রথমটি হলো গুহ্যতান্ত্রিক সাধনা। এতে শ্মশানে শব সাধনা, ভৈরবীচক্র সাধনা ও নানারকম পশ্বাচার সাধনা অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে ছিল জাঁকজমক করে অনেক টাকাপয়সা খরচ করে ষোড়শ বা তার বেশি উপাচারে দেবী কালীর প্রতিমা মূর্তি পূজা। রামপ্রসাদ প্রথম উক্ত দুটি ধারার নির্দিষ্ট সাম্প্রদায়িক গন্ডির উপরে উঠে তাঁর পদাবলীর মধ্য দিয়ে কালীর নতুন এক রূপ নিয়ে এলেন, যা সর্বজনীন। যাগযজ্ঞ, শবসাধনা, সুরাপান, আনন্দ-হুল্লোড় নয়, দেবীর মানবী রূপটিকে রামপ্রসাদের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ আপন করে নিল। এই সাধনার সর্বজনীন লৌকিক ধারাটিই পরবর্তীকালে শ্রীরামকৃষ্ণের শক্তিসাধনার বীজ বপন করেছিল।

পারিবারিক সূত্রে এবং তন্ত্রসাধক গুরু কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের শিষ্য হিসেবে রামপ্রসাদ তন্ত্রসাধনার যে জ্ঞান পেয়েছিলেন তাতে ব্রহ্মতত্ত্ব ও কালীতত্ত্ব মিশে গেল। তন্ত্রসাধনায় দেহের মধ্যে সর্বতীর্থ দর্শন তথা ব্রহ্মময়ী শক্তির অপরূপ রূপমাধুর্যকে অনুভব করার মধ্য দিয়ে যে নব নব রসাস্বাদন তাকে রামপ্রসাদ ভক্তির জোয়ারে ভাসিয়ে দিলেন। অদ্বয়বাদী তিনি, কালীর এক রূপের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করলেন জগতের সমস্ত রূপ তথা শক্তিকে। অভেদের মধ্যে এক-ভেদ কল্পনায় ভক্তির নবঘন রসে রামপ্রসাদ তাঁর পদাবলীতে তুলে ধরলেন লৌকিক জগতকে। রক্তমাংসের জীব হিসেবে তাঁর জাগতিক দুঃখ-কষ্ট, আশা-আশাহীনতা এবং চাওয়া-পাওয়ার আর্তি তৎকালীন মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবনচারণের নানা অনুসঙ্গের রূপকল্পে ফুটে উঠল। ঐহিক আশাহীনতা সিক্ত হলো অলৌকিক রসে। চৈতনের তুরীয় স্তরে মাতৃসাধনায় সোচ্চার হয়ে রইল এক পীড়িত সমাজমন।

‘দুঃখের কথা শুন মা তারা’: অস্তিত্বের সঙ্কট

রামপ্রসাদের লেখার ছত্রে ছত্রে রয়েছে তাঁর সাংসারিক দুরবস্থার কথা। পিতার মৃত্যুর পর স্ত্রী-পুত্র-পরিজন নিয়ে সামান্য আয়ে ঘর চলে না। মাত্র ত্রিশ টাকা মাসিক বৃত্তিতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সে কথা ঈশ্বর গুপ্তও লিখেছেন, ‘পরিবার অধিক হওয়াতে ঐ স্বল্প বৃত্তি দ্বারা কোন প্রকারেই সুপ্রতুল-রূপে সংসার নির্ব্বাহ হইত না, এ কারণ স্ত্রী, পুত্র প্রভৃতি পরিজনেরা সর্ব্বদাই উপার্জ্জনের নিমিত্ত উত্তেজনা করিত।’ অর্থোপার্জনের এই যন্ত্রণা রামপ্রসাদকে তাড়া করে ফিরত। লৌকিক কষ্টটি সাধকের গানে রামপ্রসাদ শোনালেন, ‘দুঃখের কথা শুন মা তারা।/ আমার ঘর ভাল নয় পরাৎপরা।।/ যাদের নিয়ে ঘর করি মা,/তাদের এম্নি কাজের ধারা/ ওমা পাঁচের আছে পাঁচ বাসনা,/ সুখের ভাগী কে বল তারা’। সংসারে অর্থ থাকলেই থাকে সম্মান, প্রতিপত্তি। সকলেই থাকে ‘বশে’। কিন্তু উপার্জনহীন হলে কেউ পাশে তো থাকেই না বরং চলতে থাকে সামাজিক গঞ্জনা, ‘ভাই, বন্ধু, দারা, সুত নির্ধুনে বোলে সবাই রোষে।’ ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছেন সংসারে ‘কন্যা, পুত্র, স্ত্রী বা অপর কেহ বিরক্ত করিলে’ রামপ্রসাদ এমন গান ধরতেন ‘তুমি এ ভাল কোরেছ মা,/ আমারে বিষয় দিলে না।/ এমন ঐহিক সম্পদ কিছু,/ আমারে দিলে না।’

‘ঐহিক সম্পদ’ না পাওয়ার দুঃখ ছিল রামপ্রসাদের চিরসঙ্গী। সীমাহীন দুঃখের জন্য দায়ী করেছেন নিজের ভবিতব্যকে ‘আমার কপাল গো তারা।/ ভাল নয় মা, কোন কালে।/ শিশুকালে পিতা মলো,/ মা গো রাজ্য নিল পরে।’ তিনি তো জাগতিক সুখই চেয়েছিলেন, ‘গেল না গেল না, দুঃখের কপাল/… আমি মনে সদা বাঞ্ছা করি সুখ।’ সামান্য খেটে-খাওয়া মানুষের জীবনে ‘প্রভাতে অর্থচিন্তা’ আর ‘মধ্যাহ্নে জঠর চিন্তা’। মানুষ ভাবে এক, আর হয় আর এক। ‘আসিয়া ভব সংসারে, দুঃখ পেলেম যথোচিত।’ সুখের কাঙ্গাল মন তাই ভোগে না পাওয়ার যাতনায়, গ্রাস করে আশাহীনতা। রামপ্রসাদ লিখলেন, ‘মন করো না সুখের আশা।’ এতো কেবল মরীচিকার পিছনে ছুটে চলা, ‘পুরালো না মনের আশা/ আমার মনের দুঃখ রইল মনে।/ দুঃখে দুঃখে কাল কাটালেম,/ সুখের আর কিরে ভরসা।’ এমনি চূড়ান্ত আশাহীনতা মূর্ত হয়ে রইল এই কটি লাইনে ‘কেবল আশার আশা, ভবে আসা/ আশা মাত্র হলো।’

উক্ত জাগতিক নিরাশার জন্য যে আর্থ-সামাজিক কারণ দায়ী, তাকে জানা বা বোঝার মন রামপ্রসাদের মতো সে সময়ের কেজো মানুষের কাছে অধরা। শাসন ও শোষণের যৌথ জাঁতাকল থেকে মুক্তির পথটি ছিল অজানা। তাই চৈতন্যের আধ্যাত্ম অনুভবে রামপ্রসাদ শাক্ত সাধনার আবরণে খুঁজে পেয়েছেন ভব সংসারের চরম দুঃখের পরম কারণটিকে। এ আর কেউ নয়, রামপ্রসাদের ‘শ্যামা মা’। রামপ্রসাদ তো সাধারণ মানুষের মতো ঘর সংসার করেই বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ‘কেলে সর্ব্বনাশী’-ই যত নষ্টের গোড়া, ‘আমি ছিলেম গৃহবাসী, কেলে সর্ব্বনাশী,/ আমায় সন্নাসী করেছে।’ অভিযোগ চাঁচাছোলা। আদালতী অনুসঙ্গে তিনি ক্ষোভে জানালেন, ‘মা গো তারা ও শঙ্করী/ কোন অবিচারে আমার পরে,/ করলে দুঃখের ডিক্রী জারি।’ ক্ষোভ কখনও কখনও বদলে যায় মায়ের প্রতি সন্তানের অনুযোগে, ‘মা মা বলে আর ডাকব না।/… ঘরে ঘরে যাব, ভিক্ষা মেগে খাব,/ মা বলে আর কোলে যাব না।/ … মা বিদ্যমানে, এ দুঃখ সন্তানে,/… মা হয়ে হলি সন্তানের শত্রু।’ আবার কখনও ‘অর্থ বিনা ব্যর্থ’ এই সংসারের সীমাহীন হতাশা ফেটে পড়ে তীব্র হাহাকারে, ‘মা বলে ডাকিস না রে মন,/ মাকে কোথা পাবে ভাই।/ থাকলে এসে দিত দেখা,/ সব্বনাশী বেঁচে নাই।’

‘কারেও দিলে ধন জন মা’: সামাজিক অসাম্য

আঠারো শতকের ঘোর অরাজকতার সময়ে ক্লাইব, হেস্টিংস এবং তাদের সাঙ্গোপাঙ্গোরা বিপুল টাকা কার্যত লুঠ করে নিয়ে যাচ্ছে নিজের দেশে, ইংল্যান্ডে, তখন তাদের স্বার্থসিদ্ধির সহায়ক হলেন দেওয়ান, মুন্সী, মুৎসুদ্দি, তহবিলদার প্রভৃতি পদাধিকারী দেশীয় বাঙালিরা। এরা আখের গুছিয়ে হয়ে উঠলেন সমাজের কেষ্টবিষ্টু। এই সময়ের কান্তবাবু, লক্ষ্মীকান্ত বা নকুধর, নবকৃষ্ণ মুন্সী, গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের উত্তরসূরীরাই হলেন কলকাতাস্থ পোস্তার রাজা, শোভাবাজারের মহারাজা বা পাইকপাড়ার রাজারা। এদের বৈভবে সাধারণ মানুষের চোখ গেল ধাঁধিয়ে। নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের (১৮১০—১৮৮২) ‘নবরত্ন সভায়’ ঠাঁই পেয়েছিলেন রামপ্রসাদ। মহারাজার অনুরোধে তিনি লিখলেন ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য। খুশি হেয় কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে ‘কবিরঞ্জন’ উপাধি দেন, সঙ্গে দিলেন বেশ কিছু জমিজমা। এ সময়ে রানাঘাটের পালচৌধুরী বংশের পূর্বপুরুষ কৃষ্ণপান্তির নাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ পান বিক্রেতা। শোনা যায় তিনি ধান বেচে কিছু পয়সা করে ইংরাজ কোম্পানির সঙ্গে নুনের ব্যবসায় প্রচুর ধনোপার্জন করেন এবং বিরাট জমিদারী কেনেন। কৃষ্ণপান্তির মতো মানুষের এহেন উত্থানে রামপ্রসাদের মতো মানুষের ‘গুণের কদর’করার মতো কেউ থাকেন না, তৈরি হয় মানসিক নৈরাশ্যবোধ, ‘ঐ পান বেচে খায় কৃষ্ণপান্তি,/ তারে দিলে জমিদারী।’ আদালতী অনুসঙ্গে উক্ত হতাশাই জারি হয় ‘দুঃখের ডিক্রী’ হয়ে। আসামীকে ধরতে যেমন পেয়াদা ছোটে, তেমনই ছয় জন পেয়াদা পিছে লাগে রামপ্রসাদের। আর এই পেয়াদাদের রাজা হলেন স্বয়ং কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁর নামেতেই তো আদালত নিলাম জারি করেছে। বাস্তব জীবনে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ইচ্ছে করলেই হয়তো অনেক কিছুই করতে পারতেন। তাঁর অনুগ্রহ পেলে হয়তো বরাত খুলে যেত রামপ্রসাদের। কিন্তু তা তো হয়নি। তাই কৃষ্ণপান্তির সম্পদ লাভের পিছনে যে ক্রূর আর্থ-সামাজিক শঠতা ও বঞ্চনা, তাই রামপ্রসাদের কাছে দেখা দিল অন্য রূপকল্পে, রাজা-প্রজার সম্পর্কের আধারে, প্রজার কাছে রাজার মহানুভবতার অপ্রাপ্তিতে।

অন্যদিকে উক্ত সামাজিক বৈষম্যকে রামপ্রসাদ অন্য আর একটি সম্পর্কের আধারে উপস্থাপিত করলেন, মা ও সন্তানের জাগতিক সম্পর্কে। আদর্শ মায়ের কাজ হলো প্রত্যেকটি সন্তানকে সমভাবে প্রতিপালন করা, সুখে রাখা, খাওয়া-পড়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু এ সংসারে তা হচ্ছে কই? থাকবন্দী সমাজে একদল উঠে যায় ওপরতলায়, আর নীচে রয়ে যায় রামপ্রসাদের মতো সাধারণ মানুষজন। ‘দীন দয়াময়ী’-র কাছে রামপ্রসাদ তাই সামাজিক বৈষম্যকে উপস্থাপিত করেন এই ভাষায়, ‘কারেও দিলে ধন জন মা!/ হস্তী রথী জয়ী।।/ আর কারো ভাগ্যে মজুর খাটা/ শাকে অন্ন মিলে কই।/কেউ থাকে অট্টালিকায়,/ আমার ইচ্ছা তেম্নি রই।।/ ও মা তারা কি তোর বাপের ঠাকুর,/ আমি কেহ নই/ কারো অঙ্গে শাল-দোশালা ভাতে চিনি দই/ আবার কারো ভাগ্যে শাকে বালি/ ধানেভরাকই।’তীব্র কটাক্ষে তিনি বিদ্ধ করলেন ‘মা’-কে, ‘মাগো আমি কি তোর পাকা ধানে/ দিয়াছি গো মই।’ মায়ের কাছে সন্তানের আর্তি প্রকাশ পেল অন্য একটি পদে, ‘দে মা আমায় তবিলদারী,/ আমি নিমকহারাম নই শঙ্করী।/ পদ-রত্নভান্ডার, সবাই লুটে,/ ইহা আমি সইতে নারি।’

‘এবার আমি করব কৃষি’ : স্বাধীন বৃত্তি

আঠারো শতকের আর্থিক সঙ্কটে দীর্ণ গ্রাম বাংলার সঙ্গে পরিচিত উচ্চবর্ণের ভিন্ন বৃত্তিধারী মানুষের কাছে কৃষিকাজ অন্যতম স্বাধীন বৃত্তি হিসাবে দেখা দিয়েছিল। কৃষি হয়ে দাঁড়াল যেন সুখ সমৃদ্ধির প্রতীক। জমিতে নিয়ম মেনে ফসল ফলাতে পারলে, পতিত জমিকে যদি আবাদ করা যায়, সোনা ফলে। দিনের শেষে সংসার পরিজন নিয়ে সুখে জীবন কাটানো চলে। এতে কারও মুখাপেক্ষি হতে হয় না, কৃষিকর্মে মেলে জগতের সমস্ত ঐশ্বর্য। কোনকালে সংস্কৃতে লেখা ‘কৃষিপরাশর’ বইতে তো এ কথা বলা হয়েছে বেশ ফলাও করে, একয়া চ পুনঃ কৃষ্যাপ্রার্থকো নৈব জায়তে।/ কৃষ্যন্বিতো হি লোকেহস্মিন্‌ ভূয়াদেকশ্চভূপতিঃ।।’৪ সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যেও এইরকম উদাহরণ রয়েছে। ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে লেখা কবি রামেশ্বর চক্রবর্তীর ‘শিবায়ন’ কাব্যে বলা হয়েছে, ‘চাষী বিনা চাষের মহিমা কেবা জানে।/ লঙ্কার বাণিজ্য বসি বাকুড়ি [ঘর] কোণে।।/ পরিজন পোষে চাষী সুখে সাধু রাজা।/ লক্ষ্মী পোষি চাষী করে সবাকারে তাজা।।’৫ কাব্যটিতে দেখি সংসার প্রতিপালনে অক্ষম দেবাদিদেবকে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কৃষি বৃত্তি নেওয়ার জন্য পত্নী গৌরী বারংবার বলেছেন, ‘চষ ত্রিলোচন চাষ চষ ত্রিলোচন।’ অগত্যা সম্বলহীন শিব ইন্দ্রের কাছ থেকে জমির পাট্টা নিচ্ছেন, কুবেরের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন বীজধান এবং নিজের ত্রিশূল ভেঙে তৈরি করছেন লাঙ্গল, জোয়াল, কোদাল প্রভৃতি। এরপর ভীম হালুয়াকে নিয়ে শিব আরম্ভ করলেন কৃষিকাজ। কিন্তু গ্রামবাংলায় কৃষিজীবনের সঙ্গে পরিচিত সাধারণ মানুষের মতোই শিবও জানতেন এ বিদ্যেতে টনটনে জ্ঞান না থাকলে সবই মাটি। সংশয়দীর্ণ শিব বললেন, ‘ভিক্ষা দুঃখে সুখে আছি অকিঞ্চন পনে/ চাষ চষে বিস্তর উদ্বেগ পাব মনে।।/ শুনিতে সুন্দর চাষ আয়াস বিস্তর।’

এমন দোটান রামপ্রসাদের মনেও ছিল। কিন্তু এ ছাড়া বিকল্প পথই বা কোথায়? তাই তিনি লিখলেন, ‘এবার আমি করব কৃষি।’ কৃষিকাজকে সাধক রামপ্রসাদ মিলিয়ে দিলেন তন্ত্রসাধনার অনুসঙ্গে। তন্ত্রে এ দেহ সব কিছুর আধার। পতিত জমিকে আবাদ করতে হলে প্রথমে যেমন আগাছা সাফ করতে হয়, তেমনই সাধনার তাগিদে দেহজমীর জঙ্গল অর্থাৎ কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ প্রভৃতির আসক্তি সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেখানেও গ্রাস করে অসহায়তা, ‘দেহ জমীর জঙ্গল বেশী,/ সাধ্য কি মা সকল চাষি/ মাগো যৎকিঞ্চিৎ আবাদ হইলে/ আনন্দ সাগরে ভাসি।’ দেহের মাঝে পাপরূপী ‘তৃণবালি’ সরিয়ে কাম ক্রোধরূপী ছয়টি বলদকে বশে এনে নিজেকে মাতৃসাধনায় লাগাতে পারলেই কেল্লা ফতে। ‘মানবজমীন’ আবাদে উঠবে ভরে। এ সাধনায় গুরু অপরিহার্য। সেই গুরুর বীজমন্ত্রই জীবনযুদ্ধে তখন বাঁচার হাতিয়ার, ‘আমি গুরুদত্ত বীজ বুনিয়ে,/ শস্য পাব রাশি রাশি।’

মাতৃসাধনায় দেহমাঝেই মা তারা জমি। সেখানে কৃষিকাজটি করছেন স্বয়ং মহাদেব, তিনিই ‘সুকৃষাণ হয়ে মহামন্ত্রে বীজ বুনেছে।’‘ভক্তিবারি’-ই সেখানে খেতের জল, আর মা কালীর করুণাই সেখানে ফসল, অর্থাৎ সাধকের অভিষ্ট সিদ্ধিলাভ। যেমন খেতের চারপাশে বেড়া দিলে ফসল সুরক্ষিত থাকে, তেমনই তন্ত্রসাধনায় দেহের চারপাশেও মাতৃনামের খুঁটি বেড়া দিতে হয়। তবেই আদালতী শমন বা কালরূপী যম সহজে ঘেঁষতে পারে না, ‘কালী নামে দাওরে বেড়া,/… তার কাছেতে যম ঘেঁষে না।’ আর কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায় বা দাঙ্গা-হুজ্জুত বাঁধানোও আর সম্ভব নয়, কারণ সেখানে স্বয়ং ‘মহাকাল রক্ষক রয়েছে।’

কাজেই কৃষিকাজটা যে হেলাফেলার বিষয় নয় সেটা রামপ্রসাদ ঠিকঠাকই জানতেন। জমিদারী শাসনে ও শোষণে কৃষকদের শোচনীয় অবস্থাকে তিনি কাছ থেকেই দেখেছেন। ‘শুখা হাজা’ সামলে যদিও বা ফসল মেলে তাও রাজার অত্যাচারে আর বাড়তি আদায়ের জেরে বিলিয়ে যায়, ‘গরীবের ভাগ্যে যদি শষ্য হয় তাজা।/ বাব করে সকল বেচিয়া লয় রাজা।।’৬ ‘বাব’ শব্দটি আরবি, অর্থ ‘অতিরিক্ত আদায়’। হাভাতে চাষিদের কথা বলতে গিয়ে রামপ্রসাদ তাই লিখলেন, ‘চাষা লোকে কৃষি করে, পঙ্ক জলে পচে মরে।’ টনটনে কৃষিজ্ঞান জানা থাকলে তবেই সবকিছু সামাল দেওয়া যায়। ঘরে-বাইরে দু-দিকই সামলাতে হয়, তবেই ‘অঝরে কাঞ্চন ঝরে।’ কিন্তু চারপাশের এই প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে ওঠা যে অসম্ভব তা ‘শিবায়ন’-এর শিব এবং রামপ্রসাদের মতো ভিন্নবৃত্তির মানুষ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলেন। শিব তো স্বয়ং ঠেকে শিখেছিলেন। সারা বছর চাষ করে ফসল উঠল কুল্যে ‘আড়াই হালা’। ‘হালা’ শব্দটির অর্থ ‘মুষ্টিপরিমিত তৃণাদি বা আটি’। কৃষিকাজকে কাছ থেকে দেখা, আর নিজে হাতে কলমে তা করার মধ্যে ফারাক দুস্তর। তাই রামপ্রসাদের স্ব-আরোপিত কৃষকসত্তার অসহায়তাও ধরা দেয় বিখ্যাত এই পদটিতে, ‘মন রে কৃষি কাজ জান না।/ এমন মানব-জমিন রইল পতিত,/ আবাদ করলে ফলতো সোনা।’

‘এবার করব নালিশ নাথের আগে’: প্রতিবাদী মন

ঐহিক জীবনে সম্পদলাভের অধরা বাসনাকে রামপ্রসাদ ব্যক্ত করেছেন ‘মায়ের পাদপদ্ম’ প্রতীকে। সাধনায় সিদ্ধিলাভে শক্তিরূপিনী কালীর পাদপদ্মই চরম প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তিও ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। ‘যোগীশ্বর’ দেবাদিদেব মহাদেব স্বয়ং যে মা কালীর পায়ের নীচে শয্যা নিয়েছেন! খেদের সঙ্গে সাধক বলেন, ‘কি ধন দিবি আর কি তোর আছে।/ তোর যত ছিল ধন-সম্পত্তি,/ শিব আগে বুকে রেখেছে।।/ …শিব সেই ধর্মকে ব্রহ্ম জেনে,/ পদতলে পড়ে আছে।’ আর শ্যামা যদি মা হন, তবে শিব হলেন পিতা। সমাজ নিয়মানুসারে একথা সকলে জানে যে ‘বাপের ধনে বেটার স্বত্ব।’ হয়তো ‘কুপুত্রবলে’ তিনি পারিবারিক সম্পদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত। কিন্তু পিতার অবর্তমানে তো পুত্রই সম্পত্তির একমাত্র ভাগীদার, ‘পিতা মলে পুত্র পায় ধন/ সর্ব্বশাস্ত্রে এই লিখেছে।’ এখানে সে গুড়েও বালি। পুত্রের ধন সম্পদ লাভের আশা মরীচিকামাত্র, পিতা যে মৃত্যুঞ্জয়ী,‘সে নয় মরবার পিতা,/ মৃত্যুকে জয় করেছে।’

অপূর্ণ জীবনের স্বাদ, হাতের নাগালে সুখ-সম্পদ পেয়েও তা ভোগ করতে না পারার যাতনায় বিক্ষুব্ধ মন রুখে দাঁড়াতে চায়। প্রতিবাদী সত্তা প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধাচারণ করতে বাধ্য হয়। আইনি অধিকারকে পোক্ত করতে প্রয়োজনে আদালতেও তখন যেতে রাজি রামপ্রসাদ। ‘বিষয় চাইতে গেলে’ ছল করে শিব যদি বাগড়া দেন তবে তাঁকে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। আইনত প্রমাণও আছে তাঁর কাছে, স্বয়ং শিবেরই স্বাক্ষর করা রীতিমতো মোহর দেওয়া দলিল। সেই অধিকারের জোরে তিনি শিবের নামেও নালিশ ঠুকতে পিছপা হন না, ‘এবার কর্‌ব নালিশ নাথের আগে/ ডিক্রী লব এক সওয়ালে।’ আর মাকে নিজের পক্ষে এনে বেটা যদি ‘মায়ে পোয়ে মোকর্দ্দমা’ করে তবে তো শিবের পরাজয় নিশ্চিত। তখন তৃপ্ত হবে রামপ্রসাদ মন। পার্থিব সুখ আরোপিত হয় ভক্তের সাধন মার্গে, পরম ব্রহ্মের আস্বাদনে, ‘আমি ক্ষান্ত হব, যখন আমায়, শান্ত করে লবে কোলে।’

‘কালী কল্পতরু’: রাষ্ট্রকল্পনা

জাগতিক দুঃখ ও আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তির দিশাটি রামপ্রসাদ খুঁজে পেয়েছেন সাধন মার্গে। সেখানে তাঁর মনোবাসনা ব্যক্ত হয়েছে কৃষি অনুষঙ্গে। জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা, অত্যাচার-অবিচার এবং সর্বোপরি আদালতের আইনি চাপ থেকে বেরোনোর মধ্য দিয়ে একটি কাল্পনিক স্বচ্ছল কৃষিজীবী সংসারের ছবি উদ্ভাসিত। সেখানে শিব কখনও জমির রক্ষক, কখনও কর আদায়কারী, কখনও পাট্টা প্রদানকারী জমিদার আর কখনও ‘সুকৃষাণ’। আদালতী ‘শমন’ বা পরোয়ানার ভয় কৃষকদের মতোই রামপ্রসাদকে যেন তাড়িয়ে বেড়ায়। তাঁর পদাবলীতে বারবার শমন ভয়ে উৎকণ্ঠিত কৃষক মনকে প্রত্যক্ষ করি। শব্দটি এখানে দুটি অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখি, আদালতে একদিকে হাজির হবার জন্য হুকুমনামা (সমন), অন্যদিকে জীবকুলের সময়িতা বা বিনাশক অর্থে স্বয়ং যম (শমন)। শ্যামা মায়ের ‘খাসতালুক’-এ যিনি চাষাবাদ করেন তাঁর কাছে উভয়ার্থেই শমন (=সমন) ঘেঁষতে পারে না। রামপ্রসাদ বলে ওঠেন, ‘ওরে শমন কি ভয় দেখাও মিছে/ …হিসাব বাকি থাকে যদি,/ দিব না রে তোদের কাছে।’ রাজ্যটি শিবের, তিনিই পাট্টা দিয়েছেন, ‘শিব-রাজ্যে বসত করি,/ শিব আমার পাট্টা দিয়াছে।’ পাট্টা অর্থাৎ জমিদার বা রাজা দ্বারা প্রদত্ত কৃষকের জমি ভোগ করার অধিকারপত্র যার কাছে আছে সে কেন আদালতী হুকুমনামাকে ভয় করবে? আর সেই পাট্টাতে সাক্ষী আর কেউ নন, ‘ব্রহ্মময়ী স্বাক্ষী আছে।’ কোথাও দেখি রাজা হলেন ‘ক্ষেমঙ্করী’, ‘আমি ক্ষেমার খাসতালুকের প্রজা।/ ঐ যে ক্ষেমঙ্করী আমার রাজা।’অন্য একটি পদে লিখেছেন, ‘এ সংসারে ডরি কারে—/ রাজা যার মা মহেশ্বরী,/ আনন্দে আনন্দময়ীর খাস তালুকে বসত করি।’‘খাস’ তথা নিজ তালুক বাৎসরিক রাজস্ব আদায়ের হিসাব বা ‘জমাবন্দি’তে পড়ে না, ‘নাইকো জরিপ জমাবন্দি,/ তালুক হয় না লাটে বন্দি মা।’ আর সেখানে স্বয়ং ‘শিব হয়েছেন কর্ম্মচারী’। কখনও রামপ্রসাদ ‘শ্রীনাথচরণ’-এ আশ্রয় নিয়ে জাগতিক সমস্ত শঙ্কাকে তুচ্ছ করেন, ‘যা রে শমন যা রে ফিরি।/ ও তোর যমের বাপের কি ধার ধারি।/ পাপ-পুণ্যের বিচারকারী,/ তোর যম হয় কালেক্টরি।/ …শমন-দমন শ্রীনাথচরণ, সর্ব্বদাই হৃদে ধরি।/ আমার কিসের শঙ্কা, মেরে ডঙ্কা,/ চলে যাব কৈলাসপুরী।।’

‘ক্ষেমার খাস তালুক’, ‘কৈলাসপুরী’ প্রভৃতি কথায় রামপ্রসাদ তাঁর ঈপ্সিত জীবনের শঙ্কাহীন চিত্রকল্প উপস্থাপিত করেছেন। এখানে কর আদায়ের জুলুম নেই, নেই অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির ভয়, ‘ক্ষেমার খাসে আছি বসে,/ নাই মহালে শুকা হাজা।’ বালির নীচের ফল্গুধারায় প্রবহমান জলে জমি সেখানে পুষ্ট, ‘দেখ বালি চাপা সিকস্ত  নদী,/ তাতেও মহাল আছে তাজা।’ সাধক মন মায়ের আরাধনায় সেখানে নিলঃশঙ্ক, সম্পন্ন কৃষকমন স্বাদ পায় সুখী জীবনের, ‘নাইকো কিছু অন্য লেঠা’। মাথাপিছু ধার্য বাড়তি আদায়ও নেই, ‘দিতে হয় না মাথট বাটা, মা।’ নির্ধারিত বচ্ছরকার খাজনা এখানে ‘জয়দুর্গানাম’, ‘জয়দুর্গা নামে জমি আঁটা।’ খাজনা পরিশোধের তথা সংসারের ঝক্কি পোহানোর দায়ও নেই, ‘ঐটা [জয়দুর্গানাম] করি মালগুজারি।’ আরবি শব্দ ‘মালগুজার’বলতে বোঝায় ‘যিনি খাজনা প্রদান করেন’, জমির মালিক বা জমিদার আর ‘মালগুজারী’ অর্থে ‘নির্ধারিত খাজনা প্রদান’। সাধকের ইষ্টনাম এখানে সম্পন্ন কৃষকের জমির মালিক হওয়ার বাঞ্ছনা। তাই সাধনায় অভিষ্ট সিদ্ধিলাভ তখনই হবে যখন সাধক সাধনমার্গে নিজের মধ্যে পরম শক্তিকে অনুভব করবেন, ইষ্টদেবীকে আস্বাদন করবেন অভেদরূপে। ভক্তির জোরেই পূর্ণ হবে সকল সাধ। সাধনায় সিদ্ধিলাভ তথা জমিদারি লাভের অভিলষিত স্বপ্নপূরণ ঘটবে যদি ‘ব্রহ্মময়ীর জমিদারী’টাই নিজ দখলে আনা যায়,‘বলে দ্বিজ রামপ্রসাদ, আছে এ মনের সাধ, মা,/ আমি ভক্তির জোরে কিনতে পারি,/ ব্রহ্মময়ীর জমিদারী।’

এইভাবে পদাবলীর ফাঁক-ফোকরে নানা প্রকীর্ণ বাক্যে রামপ্রসাদ জাগতিক চাপ সরিয়ে বাঞ্ছিত সুখী জীবনের কথা বলেছেন। সেখানে কখনও কখনও এক কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ছবি উঁকি মারে। কাঙ্ক্ষিত আদর্শ শাসনব্যবস্থায় অত্যাচারী জমিদার, খাজনা আদায়কারী ‘কালেক্টর’ যম বা আদালতের মতো নিপীড়ন যন্ত্রের অস্তিত্ব নেই। উক্ত রাষ্ট্রীয় চাপ সরিয়ে ‘কালীনাম’-ই পাড়ানীর কড়ি। ‘কালীনাম যার হৃদে জাগে’ তার কাছে শাস্ত্রীয় তর্ক তুচ্ছ। তর্কশাস্ত্রে তথা নৈয়ায়িকদের অনুমান-প্রমাণে ধৃত ঈশ্বর রামপ্রসাদের কাছে শব্দের কূটকচালি মাত্র ‘এ কেবল বাগার্থ মাত্র, খুঁজিতেছে ঘটপট রে।’ শব্দ-শব্দার্থের ঊর্দ্ধে কালীনাম এবং এই নামই ‘কল্পতরু’।

‘কালীনাম কল্পতরু’ যদি ‘হৃদয়ে রোপন’ করা যায় তবে যাবতীয় অপ্রাপ্তির নাশ হয়। ‘কল্পতরু’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘বাঞ্ছিতবস্তুপ্রদ নন্দনস্থিত দেবতরুবিশেষ’, অন্য অর্থে ‘সর্বকামনা পূরণকারী (কল্পিত) দিব্যবৃক্ষ’ বা ‘অত্যন্ত উদার ও বদান্য ব্যক্তি।’৭ ‘কল্পতরু’ রূপকল্পটিতে রামপ্রসাদ এমন এক রাজা তথা রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থার কথা ভেবেছেন যে কল্পিত রাজ্যে ‘যাহা চাই তাহা পাই নাম কল্পতরু’র’ মতো প্রজাবৎসল, ন্যায়পরায়ণ, উদার। সেখানে ‘অর্থচিন্তা’, ‘জঠরচিন্তা’ থেকে মেলে মুক্তি, সংসারী মানুষের ঈপ্সিত পুরুষকার— ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ এই ‘চতুর্ব্বর্গ’। ‘কালী কল্পতরুবরে রে ভাই,/ (প্রসাদ বলে কালী বৃক্ষে)/ চতুর্ব্বর্গ ফল ধরেছে।’ আর একটি পদে বলেছেন, ‘আয় মন বেড়াতে যাবি।/ কালী কল্পতরুতলে গিয়া,/ চারি ফল [চতুর্বর্গ] কুড়ায়ে খাবি।।’ অন্য একটি পদে ‘কালীপদ্মপদে’ রামপ্রসাদের প্রার্থনা ‘দিস মা কালী ফলার খেতে।/ ধর্ম্ম অর্থ কাম মোক্ষ চতুর্ব্বর্গ মেলে যাতে।’ কল্পিত রাষ্ট্রে সাধারণ মানুষ যদি ‘চতুর্বর্গ’ পায়, তবে সেই শাসনব্যবস্থায় রাজা-প্রজার সম্পর্ক মধুর হতে বাধ্য। রাষ্ট্র সেখানে প্রজাকল্যাণকামী, আর প্রজারা সেখানে স্বচ্ছল, শঙ্কাহীন, সুখী।

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে রামপ্রসাদ ছিলেন তৎকালীন সমাজজীবনের প্রতিভূ। মাতৃসাধনার অনুপূঙ্খে আমরা একটি ক্লিষ্ট ও নিপীড়িত সমাজমনকে প্রত্যক্ষ করি। সমাজমনটি দুইটি কোটিতে বিভক্ত। একটি রামপ্রসাদের আরবি-ফারসি জানা অর্থকরী বিত্ত যাপনে আগ্রহী সম্পন্ন জীবনাকাঙ্ক্ষী নিম্নবিত্ত সত্তা। অন্যটি কৃষক সত্তা। বাস্তব জীবনে যে আর্থ-সামাজিক সংকট তাঁকে গভীর নৈরাশ্যগ্রস্ত করে তুলেছিল তা থেকে মুক্তির পথ তিনি খুঁজেছিলেন আরোপিত এই কৃষক সত্তায়। যদিও কার্যত দিশা মেলেনি। স্বভাবতই কল্যাণকামী এক শাসন ব্যবস্থার কাল্পনিক চিত্রটি মেলে ধরে রামপ্রসাদী মন। যেখানে মানবজীবনের সমস্ত সংকট থেকে রয়েছে মুক্তির আশ্বাস। তন্ত্রসাধনায় হোক বা তত্ত্বকথায় মানব মুক্তির ছকটি তো বিধৃত থাকে কোনও না কোনও প্রকল্পিত ঈপ্সিত সমাজজীবনের অধরা স্বপ্নে। কল্পলোকে দক্ষিণাকালীর ভক্ত সাধক রামপ্রসাদ তেমনই এক মুক্ত সমাজজীবনের ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার নিরিখে। সেজন্যই তাঁর কাব্য আজও বাংলাদেশের জনমনে সমান জনপ্রিয়।

সূত্র নির্দেশ

১. হ. মো. চ. (হরিমোহন সেনগুপ্ত), ‘কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেন’, বিবিধার্থ সঙ্গ্রহ, ১/৫, ফাল্গুন ১৭৭৩ শকাব্দা, পৃ. ৬৬-৬৯।

২. ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, ‘কবিরঞ্জন স্বর্গীয় রামপ্রসাদ সেন’, ঈশ্বর গুপ্ত রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, শান্তিকুমার দাশগুপ্ত ও হরিবন্ধু মুখটী সম্পাদিত, কলকাতা, ১৯৭৫, পৃ. ৩-৫।

৩. শশীভূষণ দাশগুপ্ত, ‘ভারতের শক্তিসাধনা ও শাক্তসাহিত্য’, কলকাতা, ১৯৩৬ ব., পৃ. ২৬২।

৪. রামেশ্বর চক্রবর্তী, ‘শিবায়ন’, রামেশ্বর রচনাবলী, পঞ্চানন চক্রবর্তী সম্পাদিত, কলকাতা, ১৪০০ ব., পৃ. ১৭৫।

৫. তদেব, পৃ. ৪৪৬।

৬. তদেব, পৃ. ১৯০।

৭. হরিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’, প্রথম খণ্ড: অ—ন, কলকাতা, ১৯৮৮, পৃ. ৫৬৭।

বর্তমান নিবন্ধে উদ্ধৃত রামপ্রসাদ সেনের পদাবলীর জন্য দ্রষ্টব্য: ক. ‘রামপ্রসাদ সেনের গ্রন্থাবলী’, বসুমতী গ্রন্থালয় সিরিজ, ষষ্ঠ সংস্করণ, কলকাতা, প্রকাশকাল অনুল্লেখিত, পৃ. ১৩— ৬৬।

খ. ‘রামপ্রসাদ— ভারতচন্দ্র রচনা সমগ্র’, রিফ্লেক্ট পাবলিকেশন, কলকাতা, ১৯৯১, পৃ. ১০৫—১৭৩।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন