মঙ্গলবার | ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:২৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

পেলেকে দেখার জন্য নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়েছিল : মনোজিৎকুমার দাস

মনোজিৎকুমার দাস / ৪১৪ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২

পেলের মতো কিংবদন্তিদের দৈহিক মৃত্যু হয়, কিন্তু আত্মিক মৃত্যু হয় না। পেলে বেঁচে থাকবেন তাঁর ফুটবলীয় রেকর্ডে, পেলে বেঁচে থাকবেন নেইমার-ভিনিসিয়াসদের মাঝে, পেলে বেঁচে থাকবেন দর্শক-সমর্থকদের হৃদয়ে।

পেলে-পরবর্তী যুগের সেরা তারকা যারা, দিয়েগো ম্যারাডোনা, মিশেল প্লাতিনি, ইয়োহান ক্রুইফ, রোনালদো নাজারিও, রোনালদিনহো, জিনেদিন জিদান, লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তাঁর ভিত্তিটাই গড়ে দিয়েছিলেন পেলে।

এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু (ব্রাজিলীয় পর্তুগিজ: [ˈɛtsõ (w)ɐˈɾɐ̃tʃiz du nɐsiˈmẽtu]; যিনি পেলে (পর্তুগিজ উচ্চারণ: [peˈlɛ]) নামে অধিক পরিচিত, একজন ব্রাজিলীয় পেশাদার ফুটবলার ছিলেন। পেলে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন। তিনিই হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার। তাকে ফুটবলের সম্রাট বলা হয়। ব্রাজিলের হয়ে তিনি ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও তিনবার বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার।

পেলে (জন্মনাম এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু) ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাচয়, মিনাস জেরাইসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দন্দিনহো এবং মাতার নাম সেলেস্তে আরাস। তার পিতাও  ফুটবলার ছিলেন।

“একদিন আমরা নিশ্চয়ই একসাথে ফুটবল খেলবো, ঐ দূর আকাশে।”

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর, দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরে এই কথাটাই বলেছিলেন এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো পেলে। ঠিক ৭৬৪ দিন পরে তিনিও পৃথিবী ছাড়লেন। ফুটবলের সবচেয়ে বড় নক্ষত্রকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে দূর আকাশে হয়তো আজ আনন্দের বন্যা বইছে, হয়তো তাকে স্বাগত জানাতে ফুটবল হাতে মাঠে নেমে গেছেন স্বয়ং দিয়েগো ম্যারাডোনাই, কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠে, মর্ত্যের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া।

নৈপুণ্যে-অর্জনে-অবদানে-সম্মানে একজন খেলোয়াড় অনেক উঁচুতে উঠতে পারেন। মাইকেল জর্ডান আর মোহাম্মদ আলীকে তো যেমন যথাক্রমে বাস্কেটবল আর বক্সিংয়ের সর্বকালের অবিসংবাদিত সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মেনে নেওয়া হয়, কিন্তু তাঁরাও কি পেরেছিলেন অ্যাথলেট পেলেকে ছাড়িয়ে যেতে? পেলেকে কি আদৌ ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? সেই পেলেকে, কখনো কখনো যিনি ছাড়িয়ে গেছেন ফুটবল খেলাটাকেই!

তিনটা বিশ্বকাপ জয়, ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ ৭৭টা গোল, পুরো ক্যারিয়ারে ৯২টা হ্যাটট্রিক, সাত শতাধিক স্বীকৃত গোল, আরও খুঁটিনাটি অজস্র ফুটবলীয় রেকর্ডের কথা বাদ রাখলাম, ফুটবল খেলাটাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে যে অবদান, তাতে তাঁর সমকক্ষ কে আছেন? বিভিন্ন সময়ে অনেক খেলোয়াড়ই পৃথিবীতে আসেন, যারা পুরো একটা প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখিয়ে ফুটবলের নেশায় বুঁদ করে রাখার সুযোগ কয়জনের কাছে আসে, আর কয়জনই বা সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেন! পেলে তো সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন এখানেই। শুধু নিজের উত্তরসূরীদের না, পেলে বিশ্বাসটা ছড়িয়ে দিয়েছেন পূর্বসূরীদের মাঝেও। ‘মারাকানাজো’র পর ক্রন্দনরত বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে দশ বছরের পেলে বলেছিলেন, “কেঁদো না বাবা, দেখো একদিন ওই বিশ্বকাপটা ঠিকই এনে দেব আমি”।

কথা রেখেছিলেন পেলে। আট বছর পর পেলের হাত ধরেই প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ পেয়েছিল ব্রাজিল।

ওই এক অর্জনেই থামলেন না পেলে। ’৬২ এর বিশ্বকাপের পুরো সময়ে মাঠে থাকতে পারেননি চোটের কারণে, তবুও ব্রাজিলের ঐ বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর নামের পাশে বিশ্বজয়ের মেডেল যুক্ত হয়েছে আরেকটি। ’৬৬-তে পারেননি বিশ্বকাপ জেতাতে, পেরেছেন ’৭০-এ। স্বীকৃত পর্যায়ে চর্মগোলককে পায়ে ছুঁয়েছেন, এমন মানুষদের মধ্যে একমাত্র পেলেই খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন তিনটা বিশ্বকাপ। ফেরেঙ্ক পুসকাস হয়তো তাই বলেছিলেন, — “সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হচ্ছেন আলফ্রেডো ডি স্টেফেনো। আমি পেলেকে এই তালিকার বাইরে রাখছি। কারণ তিনি এসবের উর্ধ্বে।”

— ফেরেঙ্ক পুসকাস, সাবেক খেলোয়াড়, হাঙ্গেরি ফুটবল দল — আগেই বলেছি, এই গোল, হ্যাটট্রিক, বিশ্বকাপ, পরিসংখ্যান, এই শব্দগুলোর সামর্থ্য নেই পেলের মহত্বকে ব্যাখ্যা করার। অন্য কোনো ফুটবলারের সাথে পেলের পরিসংখ্যানের তুলনা করে হয়তো খুব সহজেই ‘সর্বকালের সেরা’র বিতর্কের সমাপ্তি টানা যায়, কিন্তু এই যে পেলেকে দেখার জন্য নাইজেরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধ ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়েছিল, এইটা অন্য কোনো ফুটবলারের সাথে ঘটেছে? ফুটবলার পেলে তো ছাপিয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলকেই, বিশ্ব দরবারে ফুটবলকে তুলে ধরেছেন ভালোবাসা আর শান্তি ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে।

মাত্র ষোল বছর বয়সে সান্তোসের মূল দলে যোগদানের পরে ব্রাজিলের পেশাদার লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন পেলে। আর এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর ব্রাজিল সরকার তাঁকে ঘোষণা করে ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ইউরোপীয় দলগুলো পেলেকে দলে ভেড়াতে চাইলেও সরকারের অনুরোধে তাঁর আর যাওয়া হয়নি। ফুটবলের বাইরে পেলের চরিত্রের মানবিক দিকটা ছিল অত্যন্ত প্রখর। ব্রাজিলের দরিদ্র শিশুদের সাহায্যার্থে খেলোয়াড়ি জীবনেই ফাউন্ডেশন করেছিলেন তিনি, খেলা ছাড়ার পরে কখনো হয়েছেন ইউনিসেফের বিশেষ দূত, কখনো জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত। ১৯৯৫ থেকে ’৯৮ এর মধ্যে ছিলেন ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রীও। এই পেলের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০০১ সালে ব্রাজিলে কার্যকর করা হয়েছে ‘পেলে ল’ নামক একটি আইন, ব্রাজিল ফুটবলে দুর্নীতির বিচারের জন্য। ১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বিংশ শতাব্দীর ১০০ জন মানুষের তালিকায়ও স্থান পান পেলে।

পেলে বেঁচে থাকবেন ফুটবল পায়ে দৌড়ানো ব্রাজিলের ছোট্ট শিশুটার স্বপ্নে, পেলে বেঁচে থাকবেন সদ্য গোঁফ গজানো কিশোরের বিশ্বাসে, পেলে বেঁচে থাকবেন প্রবীণের ভরসায়। পেলে বেঁচে থাকবেন ফুটবলপ্রেমীদের ভালোবাসায়।

২৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে পেলের দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও তার আত্মিক মৃত্যু নেই। তিনি ফুটবলের  অবিসংবাদিত সম্রাট হিসাবে যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকবেন।

মনোজিৎকুমার দাস, কথাসাহিত্যিক, লাঙ্গলবাঁধ, মাগুরা, বাংলাদেশ। 


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন