সোমবার | ৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৪২
Logo
এই মুহূর্তে ::
মহারাষ্ট্রে নববর্ষের সূচনা ‘গুড়ি পড়বা’ : রিঙ্কি সামন্ত আরামবাগে ঘরের মেয়ে দুর্গাকে আরাধনার মধ্য দিয়ে দিঘীর মেলায় সম্প্রীতির মেলবন্ধন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকার ২২তম বর্ষ উদযাপন : ড. দীপাঞ্জন দে হিন্দিতে টালা মানে ‘অর্ধেক’, কলকাতার টালা ছিল আধাশহর : অসিত দাস আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ দিন চৈত্র অমাবস্যা : রিঙ্কি সামন্ত চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয় : ড. দীপাঞ্জন দে রায়গঞ্জে অনুষ্ঠিত হল জৈব কৃষি বিপণন হাট অশোকবৃক্ষ, কালিদাসের কুমারসম্ভব থেকে অমর মিত্রর ধ্রুবপুত্র : অসিত দাস কৌতুকে হাসতে না পারলে কামড় তো লাগবেই : তপন মল্লিক চৌধুরী জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ও রোহিঙ্গা সংকটে অগ্রগতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন এথেন্সের অ্যাগনোডাইস — ইতিহাসের প্রথম মহিলা চিকিৎসক : রিঙ্কি সামন্ত সন্‌জীদা খাতুন — আমার শিক্ষক : ড. মিল্টন বিশ্বাস হিমঘরগুলিতে রেকর্ড পরিমাণ আলু মজুত, সস্তা হতে পারে বাজার দর : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শিশুশিক্ষা : তারাপদ রায় জঙ্গলমহল জৈন ধর্মের এক লুপ্তভুমি : সসীমকুমার বাড়ৈ ওড়িশা-আসাম-ত্রিপুরার অশোকাষ্টমীর সঙ্গে দোলের সম্পর্ক : অসিত দাস পাপমোচনী একাদশী ব্রতমাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত ভগত সিংহের জেল নোটবুকের গল্প : কল্পনা পান্ডে নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘অমৃতসরী জায়কা’ মহিলা সংশোধনাগারগুলিতে অন্তঃসত্ত্বা একের পর এক কয়েদি, এক বছরে ১৯৬ শিশুর জন্ম : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘শোলে’র পঞ্চাশ বছর : সন্দীপন বিশ্বাস বিভাজনের রাজনীতি চালিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা ইতিহাস পালটাতে চায় : তপন মল্লিক চৌধুরী অশোক সম্পর্কে দু-চারটে কথা যা আমি জানি : অসিত দাস চৈত্রের শুরুতেই শৈবতীর্থ তারকেশ্বরে শুরু হলো সন্ন্যাস মেলা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম বাঙালি পরিচালকের প্রথম নির্বাক লাভ স্টোরি : রিঙ্কি সামন্ত গোপিনী সমভিব্যাহারে রাধাকৃষ্ণের হোলি ও ধ্যানী অশোকবৃক্ষ : অসিত দাস শেখাওয়াটির হোলী-হাভেলী : নন্দিনী অধিকারী সংস্কৃত সাহিত্যে অশোকবৃক্ষ যখন দোহলী : অসিত দাস প্রাণগৌরাঙ্গের প্রিয় পঞ্চব্যঞ্জন : রিঙ্কি সামন্ত ‘দ্য স্টোরিটেলার’ — শিল্প এবং বাজারের মধ্যে দ্বন্দ্ব : কল্পনা পান্ডে
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ দোলপূর্ণিমা ও হোলি ও বসন্ত উৎসবের  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

অশ্লীল সাহিত্য থেকে পর্ণোগ্রাফি ও নারী

পেজ ফোর, বিশেষ প্রতিনিধি / ৭৯৮ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২

অশ্লীল সাহিত্য থেকে পর্ণো ছবি তৈরি করার প্রথা বহুকাল আগে থেকেই চলে আসছে। আর এসব ছবিতে নারীকে উপস্থাপন করা হয় পণ্য হিসেবে। অনেকে এটাকে সামাজিক অবক্ষয় বলে থাকেন। আবার অনেকে এটাকে শিল্প বলে থাকেন। কেউ কেউ আবার সাহিত্যের একটি শাখা হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে থাকেন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এ নিয়ে রয়েছে বিস্তর মতবাদ। পর্নোগ্রাফিক সাহিত্য বা আলোকচিত্রের অস্তিত্ব বহুকাল ধরে দেখা গেলেও, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ১৯২০-এর দশক থেকে এর অস্তিত্ব দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রই হয়ে ওঠে পর্নোগ্রাফির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যবহৃত মাধ্যম।

পর্নোগ্রাফি বলতে অনেকে পর্নোগ্রাফিক চলচ্চিত্রই বুঝে থাকেন। তবে পশ্চিমা দেশগুলোতে ষাটের দশকের শেষ থেকে চলচ্চিত্রে সেন্সরপ্রথা ধীরে ধীরে উঠে গেলে পর্নোগ্রাফি ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করে। রেটিং-প্রথার আওতায় কেবল ‘এক্স’ রেটিং নিয়েই এ ধরনের চলচ্চিত্র অবাধে নির্মিত হতে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই পর্যায়ে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পর্নো-চলচ্চিত্র হলো বিহাইন্ড দ্যা গ্রিন ডোর (Behind the Green Door) (মিশেল ব্রাদার্স, ১৯৭১)। ১৯৭০ দশকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ফ্রান্সে পর্নোগ্রাফির ব্যাপক বিকাশ ঘটে। ফ্রান্সে এসময়ে মোট চলচ্চিত্রের প্রায় অর্ধেকই ছিল পর্নো ছবি (হেওয়ার্ড, ২০০৬ : ২৯০)। তবে এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে উচ্চহারের কর নির্ধারিত ছিল। ১৯৭০ দশকের শেষে ভিডিও প্রযুক্তি আসার ফলে করের ঝামেলাও আর থাকলো না। ভিডিও-ছবি করের আওতামুক্ত থাকে। ভিডিও-মাধ্যমে ছবি নির্মাণের ব্যয়ও অনেক কম।

১৯৮০-র দশকে ব্যাপকভাবে ভিডিওতে পর্নো-ছবি নির্মিত হতে থাকলো। হলিউড ভিডিওর একচ্ছত্র আধিপত্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে নিজস্ব পথ বের করার চেষ্টা চালিয়ে গেল পর্নো ছবি। ‘আর’ বা ‘রেস্ট্রিক্টেড’ সনদ নিয়ে পর্নোর কাছাকাছি উপাদান মিলিয়ে হলিউডে চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকলো। ফিল্ম সৃষ্টি হলো, নাম দেয়া হলো ‘ইরোটিক থ্রিলার’। অ্যাড্রিয়ান লিনের ফ্যাটাল অ্যাট্রাকশন (Fatal Attraction) (১৯৮৭) এই ধারার প্রথম বিখ্যাত ছবি। এই ধারায় পরে আনফেইথফুল-সহ (Unfaithful) (২০০২, এই ছবিরও পরিচালক অ্যাড্রিয়ান লিন (Adrianne Lynn)) আরও বহু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আনফেইথফুল অবলম্বনে বলিউডে নির্মিত হয়েছে মার্ডার (murder) (২০০৪)। এভাবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো পর্নোগ্রাফি ও ইরোটিকার মধ্যে যাওয়া-আসার ফলে বিরাট দর্শকশ্রেণীকে আকৃষ্ট করে চলেছে।

ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে হংকং বা জাপানেও পর্নোগ্রাফির বিরাট বাজার রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতেও পর্নোগ্রাফি নির্মিত হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ‘কাটপিস’ আকারে হার্ডকোর পর্নো ও মূল ছবিতে সফ্ট পর্নের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল বিগত এক দশকে। তবে ভিডিও-প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে যাবার কারণে পৃথিবীর সব দেশেই প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে পর্নোছবি নির্মিত হচ্ছে ও পরিবেশিত হচ্ছে। আর ইন্টারনেট-প্রযুক্তি পৃথিবীর প্রতিটি দেশের যে কোনো গৃহে-অফিসে পর্নোগ্রাফি দেখার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় উপমহাদেশে পর্নো চলচ্চিত্র ‘ব্লু ফিল্ম’ (blue film) নামেও পরিচিত।

পর্নোগ্রাফি নারীর ইমেজনির্মাণের ক্ষেত্রে কী কী মতাদর্শিক ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে চায়? এক্ষেত্রে ক্যাথরিন এ. ম্যাককিনন (১৯৮৭, ১৯৮৯) ও আন্দ্রিয়া দোরকিন (Andrea Durkin)-এর (১৯৮১, ১৯৯৩) মতামত ও তাত্ত্বিক অবস্থান আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

পর্নো চলচ্চিত্র কি কেবল নিরেট যৌনকর্মের প্রদর্শনী? নাকি তা কোনো না কোনো মতাদর্শ বহন করে? তাত্ত্বিকরা বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন যে, পর্নোগ্রাফি নারীকে বস্তুকরণ করে, পীড়ন করে, অপদস্থ করে। অন্যদিকে পর্নোগ্রাফি পুরুষের সহিংসতা, প্রাধান্য ও ক্ষমতার বন্দনা করে। আর নারীর একটি যৌন-কেন্দ্রিক বা যোনী-কেন্দ্রিক ইমেজ উপস্থাপন করে। সে যৌনাবেদনময়ী, সমর্পিত, অক্রিয়, অনুগত। পর্নোগ্রাফির সঙ্গে লৈঙ্গিকতার সম্পর্ককে তাই তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি তা অতি প্রয়োজনীয়ও।

ক্যাথরিন ম্যাককিনন (Catherine Mckinnon) এবং আন্দ্রিয়া দোরকিন এই দুইজন নারীবাদী তাত্ত্বিক বলতে চেয়েছেন যে, পর্নোগ্রাফি নারীর ওপরে পুরুষের লৈঙ্গিক প্রাধান্যকে প্রতিস্থাপন করে। ম্যাককিনন বলেন, পর্নোগ্রাফি লৈঙ্গিক বৈষম্যকে যৌনরূপে প্রকাশ করে, তাকে তুষ্টিদায়ক হিসেবে তুলে ধরে, এবং জেন্ডার প্রেক্ষাপটে একে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেয়। দোরকিন বলছেন যে, ‘এই পুরুষ-প্রাধান্য পর্নোগ্রাফিতে পুরুষানন্দ রূপে হাজির হয়। পুরুষ-প্রাধান্যের লৈঙ্গিক নির্মাণ, পর্নোগ্রাফিতে এসে ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখিয়ে দেয়।’ ম্যাককিননের মতে, ‘পর্নোগ্রাফির সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হচ্ছে সহিংসতাকে যৌনরূপে এখানে হাজির করা হয়, যা নারীর ওপরে পুরুষের আগ্রাসী আচরণের একধরনের স্বীকৃতি দেয়।’

পর্নোগ্রাফি নারীর অবমাননা করে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে। পর্নোগ্রাফির গ্রহীতা না হয়েও নারী লৈঙ্গিক বৈষম্যের দিক থেকে ফলভোগকারী, কারণ পর্নোগ্রাফির মাধ্যমেই ঐ বৈষম্যের পুনঃউৎপাদন হয়ে থাকে। যেসব নারী আলোকচিত্রে বা চলচ্চিত্রে ধৃত হন, তারা সরাসরি এই বৈষম্যের শিকার হন। তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন পর্নোগ্রাফিতে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে মূল্যায়িত হয়। আর যেভাবে নারীকে পর্নোগ্রাফিতে উপস্থাপন করা হয় তা হলো বৈষম্যেরই যৌনকরণ মাত্র।

পর্নোগ্রাফিতে নারী তাহলে কেমন? পুরুষ যেমন চায়, তেমন। পর্নোগ্রাফিতে এটা কিছুতেই আশা করা হয়না যে নারী ‘না’ বলবে। পুরুষ যেভাবে চাইবে, তাকে সেভাবেই আসন-গ্রহণ করতে হবে। এখানে নারীর ভূমিকা কেবলই পুরুষসঙ্গীকে তৃপ্তি প্রদান। কিন্তু বিপদের দিকটা হলো এই স্বরবিহীন, সদাপ্রস্তুত নারী কিন্তু বাস্তবে পাওয়া যাবেনা। পর্নোগ্রাফির সহজপ্রাপ্যতা ও স্বেচ্ছাচারিতা যদি পুরুষ বাস্তব সমাজে ফলাতে যায়, তখন এটা খুব স্বাভাবিক যে তাকে মাঝে মাঝে ‘না’ শুনতে হবে। আর এই ‘না’ই জন্ম দেয় ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের। অথচ পর্নোগ্রাফির অভিজ্ঞতা ধর্ষণকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রতিপন্ন করে। পর্নোগ্রাফি বাস্তবসমাজে, ধর্ষণের বৈধতাপ্রদানের পক্ষে কাজ করে।

সুতারং প্রশ্ন থেকেই যায় ‘প্রযুক্তির স্বাধীনতা’র নামে এটা কি স্বেচ্ছাচারিতা নয়?

সূত্র: ‘Pornography : The Epitome of Sexuality’,

কভারের ছবি Pretty Baby (1978)


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন