শুক্রবার | ২রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:১৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে সিংহবাহিনী মন্দির, নবগ্রাম (ঘাটাল) : কমল ব্যানার্জী পরিবেশ মেলা ২০২৫ : ড. দীপাঞ্জন দে মন্দির-রাজনীতি মন্দির-অর্থনীতি : দিলীপ মজুমদার স্বাধীনতা-সংগ্রামী মোহনকালী বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে অক্ষয়তৃতীয়া, নাকি দিদিতৃতীয়া : অসিত দাস আরএসএস-বিজেপি, ধর্মের তাস ও মমতার তৃণমূল : দিলীপ মজুমদার সাবিত্রি রায় — ভুলে যাওয়া তারার খোঁজে… : স্বর্ণাভা কাঁড়ার ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী বিস্মৃতপ্রায় বঙ্গের এক গণিতবিদ : রিঙ্কি সামন্ত অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

উজ্জ্বলা চানাচুর খেলে ঢেঁকুর ওঠেনা, এককথায় মুচমুচে গরম চানাচুরের বুটিক : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৬৫৪ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৪

আপনি যদি বাঙালির ধৈর্য প্রদর্শন দেখতে চান তবে আপনাকে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ফুটবল টিকিটের লাইনে, উজ্জ্বলা চানাচুরের দোকানের সামনে আর কলকাতা বুকফেয়ারের সময় সরকারি মাছভাজার দোকানের লাইনে দাঁড়ালে দেখতে পারবেন। শুধু ধৈর্য্য নয়, উজ্জ্বলা চানাচুরের লাইনে দাঁড়ালে আপনি জানতে পারবেন মুদ্রাস্ফীতি কি হারে বাড়ছে এই শহরে… আজ্ঞে ঠিকই বুঝেছেন — দোকানের কাউন্টারে টাঙিয়ে রাখা মূল্য তালিকা নমুনার কথা বলতে চাইছি।

উজ্জ্বলা চানাচুরের আশে পাশে অসংখ্য সস্তাদরের চানাচুর কেন্দ্র আছে, তবু ট্যাঁকের তোয়াক্কা না করে ২৫ গ্রাম থেকে হাজার গ্রামের দামের ঘোষণা শুনে, নামকরা ডাক্তারের জাঁদরেল প্রেসক্রিপশন পকেটে করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন অসংখ্য চানাচুর প্রেমী।

কারন, পিতৃদত্ত হজমশক্তির উপর ভরসা করে অবুঝের মতো ভাজাভুজি খেয়ে, ঝালের প্রকোপে হাঁসফাঁস করতে অনেকেই চান না। তাই তাঁরা আসেন — খেলে ঢেঁকুর ওঠেনা, অতি সহজেই হজম হয়ে যায় এমন গরম চানাচুর খেতে। এমনকি “মুচমুচে গরম চানাচুর চিবোবার সময় শুধু জিভ নয়, সমস্ত শরীরের ইন্দ্রিয়গুলি মহানন্দে এক অব্যক্ত সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা শুরু করে দেয়। ‘জগতের আনন্দ যজ্ঞে আপনাকে সসম্মানে সামনের সিটে বসিয়ে দেবার জন্য যেন উজ্জ্বলা চানাচুরের টিকিট আপনাকে দেওয়া হয়েছে।’

হাজরা থেকে রাসবিহারী মোড়ের দিকে এগিয়ে গেলে, ডান ফুটপাথে উজ্জ্বলা সিনেমা। এখনো টিমটিম করে জ্বলছে। কালীঘাট মন্দিরের রাস্তায় ঠোকার ঠিক আগে গুরুপদ হালদার সরণি ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের মুখেই উজ্জ্বলা সিনেমাহল যেখানে এক বছরেরও বেশি চলেছিল উত্তমকুমারের ‘অমানুষ’। তবে আজও রমরমিয়ে বিক্রি হয়ে চলেছে উজ্জ্বলার চানাচুর। বিখ্যাত এই দোকানের চাকচিক্য সেরকম কিছু নেই, নেই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গ্ল্যামার… রয়েছে কাঁচের আলমারির ভিতর দাম আটকানো চানাচুর, বাইরে কোম্পানির একটি বড় সাইনবোর্ড আর বিকেল হতেই অসংখ্য মানুষের ভিড়।

কালীঘাটে বহু বহিরাগত দূর দূরান্ত থেকে ট্রাম, বাস, ট্যাক্সি, রিকশো এবং হাওয়া গাড়ি চড়ে এখানে এসে প্রতিদিন এই দোকানে আক্রমণ করেন। ভুলেও ভাববেননা তীর্থযাত্রীদের একমাত্র লক্ষ্য কালীঘাট কালী মন্দির। মাকালী কোনদিন চানাচুর খেতে নিষেধ করেননি। উজ্জ্বলা চানাচুরের প্যাকেট ব্যাগে পুরে কত অনাবাসী ভারতীয় যে ইউরোপ আমেরিকা, কানাডায় নিয়ে যান তাই নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো, কারণ ঐসব দেশের এয়ারপোর্ট বেরসিক কাস্টমস অফিসারের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। তাঁদের ধারণা আছে ইন্ডিয়ার যে কোনও খাবার নিজের দেশে ঢুকলে জনস্বাস্থ্যের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

সে যাই হোক, জেনে নিই বিখ্যাত এই চানাচুরের জন্মকথা। পিছিয়ে যাই ১৯২৮ সালের কিছু আগে। উজ্জ্বলা হলের উল্টোদিকে এক নিমগাছের তলায় হিম্মতভাই প্যাটেল নামে এক ব্যক্তি রোজ মাটির উনুন, কড়াই, হাতা, খুন্তি নিয়ে হাতে গরম চানাচুর তৈরি করেই বিক্রি করতেন। গুজরাট থেকে আসা হিম্মতভাই প্রথমে হাতেঠেলা গাড়ি নিয়ে এই দোকান খোলেন। সেই আমলে বিক্রেতার সংখ্যাও ছিলো বেশ কম। উজ্জ্বলা হলে সিনেমা দেখতে আসা মানুষজনই আসতো এই দোকানে।

সিনেমার মাঝখানে ‘বিরাম’ কালে চা, চপ, কাটলেট ছাড়াও লোকে কিনত অল্প পয়সার চিনেবাদাম ও পাপড়ি মেশানো একটু মোটা গোছের কুড়মুড়ে গরম ডালমুট। সঙ্গে লঙ্কা অথবা আমের থেঁতো করা বিটনুন মাখানো চাটনি। শুধু তাই নয়, এহেন স্বাদু চানাচুরের মোহজালে আবদ্ধ হয়ে চানাচুর নিজেরাও খেতেন এবং  বাড়িতেও নিয়ে যেতেন।

সেই আমলে দোকানের নাম কিছু ছিলো না, হয়তো উজ্জ্বলা সিনেমা হলে আসা লোকজনই এই চানাচুরের নাম দেন উজ্জ্বলা চানাচুর। ক্রমশঃ পপুলার হতে থাকে এখানকার চানাচুর/পাপড়ি/ডালভাজা। ষাটের দশকের শেষের দিকে ‘উজ্জ্বলা চানাচুর’ নিমগাছের তলা থেকে উল্টোদিকের গুরুপদ হালদার সরণি ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের মোড়ের মুখেই একফালি পাকা দোকানে স্থানান্তরিত হয়। দোকানের পিছনে একটি ছোট্ট জায়গায় ময়দা, বেসন, আটা, বাদাম, কর্নফ্লেক্স, ছোলা পাপড়ি মিশিয়ে তৈরি হয় চানাচুর। স্বাদ বাড়ানোর জন্য মশলানুন ছাড়া আর সেরকম কিছু মেশানো হয় না। খরিদ্দাররা বলে থাকেন মিক্সিংয়ের কায়দাতেই লুকিয়ে আছে এখানকার চানাচুরের প্রাণভ্রমরা।

“উজ্জ্বলা চানাচুরের কর্ণধাররা সেলস কাউন্টারে কেন হাঁড়িমুখ করে বসে থাকেন তা এক দুর্জ্ঞেয় রহস্য। এমন সাফল্যের পরেও কোথায় দুঃখ লুকিয়ে আছে কে জানে। কাউন্টারে তাদের একটিই কাজ, চানাচুর ওজন করা, মশলা মেশানো এবং দাম গুনে নেওয়া। মুখে একটিও রা নেই। পৃথিবীর সেরা জিনিস এভাবেই বোধ হয় বিক্রি হয়। ফেরিওয়ালার মতন হড়বড় করে আত্মপ্রশংসায় খরিদ্দারকে হাজার কথা বলতে নেই। আসলে উজ্জ্বলা চানাচুরের দোকান নয়, চানাচুরের বুটিক। দূর থেকে প্রতিটি খরিদ্দারের মুখের দিকে তাকিয়েই মালিক অদৃশ্য শক্তিবলে বুঝতে পারেন কোন মশলা কোন ঠোঙ্গায় কতটা দিতে হবে।”

চানাচুর হচ্ছে চর্ব। নিজের আকর্ষণ বা নামডাক/ টানাটানি কেবলই মসলার জন্য যার মধ্যে রয়েছে বিটনুন — প্রাচীন ভারতে যাকে বলতো কুরুবিন্দ বা কালানুন। আর আছে সন্ধৈব লবণ যা অস্থিমজ্জা দৃঢ় করে, খেলে গলাক্ষত রোগের আশঙ্কা থাকে না।

বৈদিক যুগ থেকেই ঋষি মুনিদের দানাশস্যের উপর ঝোঁক ছিল। বিভিন্ন উৎসবে অষ্ট দেবতাকে খুশি করার জন্য তারা অষ্টকলাই বা আট রকমের দানাশস্য উৎসর্গ করতেন। সেই থেকেই বাংলায় চানাচুরের উদ্ভাবন। এই চানাচুরই যুগে যুগে নতুন রূপ ও কলেবর ধারন করে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে ধনী গরিবের অবসরের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, কালীঘাটে তীর্থ করতে বা প্রয়োজনে গেলে অতি অবশ্যই রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্বাদ নিতে ভুলবেন না উজ্জ্বলা চানাচুরের।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : বঙ্গীয় রসনার রসলো কাহিনী শঙ্করের ‘রসবতী’ এবং অন্যান্য।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “উজ্জ্বলা চানাচুর খেলে ঢেঁকুর ওঠেনা, এককথায় মুচমুচে গরম চানাচুরের বুটিক : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. আশিস কুমার ব্যানার্জী says:

    দু:খের কথা চানাচুরের এমন উজ্জ্বল প্রশংসা ও বিষয় ওদের নজরেও আসবেই না, তাতে আসে যায়, উপভোক্তাদের জিভে জল এসে যায়, দুর্দান্ত রচনা।

  2. Snigdha Chakraborty says:

    ভীষণ ভালো লাগলো অনেক কিছু জানতে পেরে। এমন আরও কিছু জানবার অপেক্ষায় রইলাম।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন