শুক্রবার | ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে অমৃতের সন্ধানে মাঘী পূর্ণিমায় শাহীস্নান : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নবেন্দু ঘোষ-এর ছোটগল্প ‘ত্রাণ-কর্ত্তা’

নবেন্দু ঘোষ / ১৪১ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

দুঃসংবাদটা এ পাড়াতেও পৌঁছেচে। দাঙ্গার দুঃসংবাদ।

থম্ থম্ করছে রাস্তাঘাট। লোকজনের চলাচল নেই, নেড়ী কুকুরগুলো পর্য্যন্ত আজ অদৃশ্য। কেবল গলির মুখে মুখে দুঃসাহসী ছেলে ছোকরারা সিগারেট টানতে টানতে জটলা পাকাচ্ছে।

ও পাড়ায় আগুন জ্বলছে, রক্তের ধারাতে কাটা মাথাগুলো ছিটকে পড়েছে, ষোড়শী কুমারীদের স্তন কর্তিত হচ্ছে, সুকুমার শিশুরা সিমেন্টের মেঝেতে আছড়ে পড়ছে, নরকের ঘোর কালো অন্ধকারে আজ ও পাড়ায় শয়তানের অভিষেক হচ্ছে। সে সংবাদ ভেসে এসেছে এ পাড়ায়, মৃদু বাতাসের ধমনী বেয়ে সেই সব ভয়াবহ ঘটনাবলী এখন পল্লবিত হয়ে এ পাড়ায় এসে থেমেছে।

সবাই চোখে অন্ধকার দেখছে।

কোথা থেকে যেন দুরস্ত ভয়ের ব্যা এসে তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ভয়, অব্যক্ত ভয়। ভয়ে বুকের মাঝে দুর দুর করে উঠছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, চোখের জ্যোতি স্তিমিত হয়ে আসছে। ভয়, নিদারুণ ভয়। ভয়ে বুদ্ধি গুলিয়ে যাচ্ছে, হাত পা অসাড় হয়ে পড়ছে, ভীড় করে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। ভয়, কুৎসিত ভয়। ভয়ে সংসার বিস্বাদ মনে হচ্ছে, পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে, হার্ট ফেল করে মরে যাবার সাধ হচ্ছে।

মেয়েরা সব চুপ, চাপ, কাজ করে যাচ্ছে। আজ আর বেশী পদ নয়, শুধু ভাতে ভাত, ব্যস্। কেবল ছেলেমেয়েগুলো বোঝে না বেশী কিছু। মাঝে মাঝে খিল খিল করে হেসে ওঠে, দুরদার করে সশে সিঁড়ি দিয়ে চলাফেরা করে, নিজেদের মধ্যে চেঁচামেচি করে। কিন্তু সহসা প্রহরীর মত বয়স্কেরা গর্জে ওঠে, বলে, “চুপ-চেঁচাবি তো থাপ্পড় মেরে মাথা উড়িয়ে দেব—”

অথচ নিজেদের মাথা বাঁচাবার মত কোনো আশাই খুঁজে পাচ্ছে না তারা।

দরজা বন্ধ করে যেখানে সেখানে পরামর্শ চলছে। কি করা যায়, কি করা যায়? শুধু দুঃসংবাদ নয়, দারুণ দুঃসংবাদ এসেছে যে আঙ্গ রাতেই নাকি ও পাড়ার ওরা এসে এ পাড়া আক্রমণ করবে। মেরুদণ্ড বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমেছে সে খবর পেয়ে। কি করা যায়, কি করে বাঁচা যায়?

এপাড়ার নেতৃস্থানীয় ব্যারিষ্টার মিঃ বোসের বাড়ী তখন আলোড়িত৷

ছেলে অরুণ চুপি চুপি বেরিয়ে যাবার ফিকিরে ছিল। ঘরের মধ্যে বসে থাকা কি পোষায় বেশীক্ষণ?

কিন্তু মিঃ বোস আজ চারদিকে নজর রেখেছেন, কার সাধ্য যে তাঁর লঙ্কাপুরীতে কেউ প্রবেশ করবে বা সেখান থেকে নিষ্ক্রান্ত হবে।

“কোথায় যাচ্ছ তুমি?” তিনি গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন।

“এমনি— একটু দেখতে।”

“এমনি! কোনো দরকার নেই। তোমার কি জানা নেই যে কি হচ্ছে এই সহরের বুকে ! যাও, ঘরে গিয়ে বোস।”

অরুণ ফিরে গেল ঘরে।

কিন্তু মেয়েরা বিপদে ফেলল মিঃ বোসকে।

মেয়ে রুবী এসে সামনে দাঁড়াল। দুশ্চিন্তায় তার ডাগর ডাগর চোখের নীচে কালো ছায়া পড়েছে, কোঁকড়ানো চুলের অরণ্যে নেমেছে বিশৃঙ্খলা, দুধে-আলতার দেহবর্ণে দেখা যাচ্ছে একটা পাণ্ডুর প্রলেপ। তার মনটা খারাপ হয়ে গেছে, ভয় এসে বাসা বেঁধেছে তার মনে। সিনেমা, পার্টি আর পিকনিকে যাওয়া হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে, পুষ্প থেকে পুষ্পান্তরে গিয়ে মধুপানের ভ্রমরীবৃত্তি আজ হঠাৎ যেন কর্পূরের মত উড়ে গিয়েছে রুবীর মন থেকে।

“বাবা— “কি বলছ?”

“মেশোমশাইয়ের বাড়ীতে আমাদের পৌঁছে দাও।—

মানে ভবানীপুর। যেখানে হিন্দুরা আছে সংখ্যায় অগণন, যেখানে এখনো হয়ত ক্রেপ, সিল্কের সাড়ীটা পরে, বেণী দুলিয়ে ঘুরে বেড়ান যায় ।

মিঃ বোস মাথা নাড়লেন অসহায়ভাবে, মেশোমশায়ের বাড়ী! এখন—! অসম্ভব। রাস্তা দিয়ে না যাচ্ছে একটা লোক, না চলছে একটা গাড়ী। ঘন ঘন এলাকা পার হতে হবে, মড়া আর রক্তের মাঝখান দিয়ে গাড়ী চালাতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা অতর্কিত আক্রমণ যা বাচাবার জন্য তোমরা ভবানীপুর যেতে চাইচ সেই প্রাণই যাবে মাঝ পথে। অসম্ভব— বাজে কথা না বলে ঘরে গিয়ে বসে থাকোগে রুবী– কিন্তু কি করে বসে থাকে রুবী? ওর ভয় করছে। মাঝেমাঝে কোলাহল ভেসে আসছে দূর থেকে। বিশ্রী কোলাহল। কাল রাতে পুবদিকের আকাশে রক্তবর্ণ আলোক-সমারোহ এসেছে নানা পাশবিকতার বীভৎস কাহিনী। রেখে গেছে মস্তিষ্কের কোটরে— দপ দপ করে উঠছে সেই সব নানা কথার বোঝা। তার দুধে-আলতার দেহবর্ণের নীচে যে পালা পাতলা নীলচে শিরাগুলি লাফাচ্ছে তাদের দেখলেই তার বিক্ষুব্ধ, ভয়ার্ত মনের সন্ধান পাওয়া যাবে।

দেখেছে সে। কানে আর সব কিছু ছাপ।

অরুণ আর রুবীকে ধমক দিলে চলবে। কিন্তু মিসেস বোস? দেহভারে আনত বিপজ্জনক দেহটাকে নিয়ে যাঁর মনটা সারাক্ষণ তিক্ত হয়ে আছে তাঁর মনে এই দাঙ্গার দুঃসংবাদ যে আরো ভয়ঙ্কর বিস্ফোরকের সৃষ্টি করেছে সে বিষয়ে আর কারো সন্দেহ থাকলেও মিঃ বোসের নেই।

তাই মিসেস বোস এসে যখন সামনে দাঁড়ালেন তখন মিঃ বোস সঙ্কুচিত হয়ে পড়লেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে মিসেসকে ধমক দিতে গেলে উল্‌টো ধমকই খেতে হবে তাঁকে।

“শুনছ— আমি আর পারছি না— এই suspense— এই danger—”

“কিন্তু কি করি— Tell me, what am I to do dear!” মিঃ বোস ক্ষীণকণ্ঠে আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন৷

“কিছু একটা কর— for Heaven’s sake, চুপ করে বসে থেকো না—”

“চুপ করে আমি বসে নেই। আমি ভাবছি। তাছাড়া দুটে। রাইফেল আছে, পাঁচশ কার্তুজ আছে, দারোয়ান বেয়াড়া, চাকর আর ড্রাইভার আছে— তোমার অত ভয় পাবার কি আছে?”

মিসেস বোস সোফার উপর কাং হরে পড়লেন, তাঁর দুটো চোখের নীলাভ তারায় একটু স্ফুলিঙ্গ-দীপ্তি হঠাৎ ঝিকমিক করে উঠল, তীক্ষ্ণকণ্ঠে তিনি বললেন, “তোমার ও ফিরিস্তি থামাও, please— হাজার হাজার লোকের সামনে কাগজের মত উড়ে যাবে তোমার সমস্ত জারিজুরি— পাঁচশ কার্তুজ দিয়ে কি তুমি সবাইকেই রুখতে পারবে? তুমি কি অক্ষয় তুণের অধিকারী? না না বাপু, আমার সাহসে কুলোচ্ছে না— যে কোনো মুহূর্তে আমি হয়ত faint করতে পারি—”

ঠক্‌ ঠক্ ঠক্। দরজায় কারা যেন করাঘাত করছে।

“হজৌর”— দারোয়ানের হাঁক শোন৷ গেল।

“কৌন হ্যায় তেওয়ারী?”

“মহল্লাকা বাবুলোগ— ভেটূ মাংতা হ্যায়।”

“বৈঠাও। শোনো, তোমরা উত্তেজিত হয়ো না।”

কি হয় । বাড়ীতে এখন ডিফেন্স কমিটির মিটিং বসবে।

দেখা যাক না এত বড় পাড়া,

কত লোক আছে এখানে আর তারা প্রত্যেকেই লড়াই করবে। তবে? Don’t get nervous my dear. যদি সেরকম মুহূর্ত আসে তবে তো risk নেই— গাড়ী তো সব সময়েই তৈরী থাকবে—

অভিজাত ও ভদ্রপাড়ার শেষে ও ওপাড়া আর এপাড়ার মাঝখানে একদল লোক থাকে যারা এপাড়ার সঙ্গেই নিজেদের যুক্ত মনে করে। তারা জাতে ডোম। ছোট ছোট পায়রার খুপরীর মত তাদের বস্তীর ঘরগুলো, কোনো মতে মাথা গুঁজে জীবনের বোঝাটাকে বয়ে বেড়ায় তারা। রাস্তায় ঝাড়ু দেয়, জল ঢালে, নালি, নর্দমা আর পায়খানা পরিষ্কার করে, ম্যানহোলে নেমে ময়লা তোলে, করপোরেশনের গাড়ীতে চড়ে আবর্জনা সংগ্রহ করে আনে।

মাটার বাসা আর কলাই করা থালায় তারা কাঁকর-মেশানো ময়লা চালের ভাত খায়, লাল কেরোসিনের টিটিমে আলোতে বসে রাতের বেলায় মত্ত কোলাহল করে। এপাড়ার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত মনে করলেও ভদ্র ও অভিজাতদের কাছে কিন্তু ওরা এপাড়ার লজ্জা।

ওপাড়ার সামনে এপাড়ার সীমাস্ত রচনা করে যারা আছে তারা সংখ্যায় শ’দুই হবে। আর এই শ’দুই লোক উঠতে বসতে যার কথা শোনে সেই সৰ্ব্বশক্তিমানের নাম ঝগরু। সে যদি তার লোকদের দিনকে রাত বলতে বলে তা হলেও তারা অম্লান বদনে তাই বলবে— এমনি প্রভাব ঝগরুর। ঝগরু তাদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও একছত্র নেতা, সৰ্দ্দার৷

ঝগরুর অনুচরেরা এসে বসে ছিল তার কাছে। ওপাড়ায় কাল রাত যা ঘটেছে তার ছিটেফোঁটা তারা দেখতে পেয়েছিল, শুনছে সব কিছুই, দু-একজন যারা ভয়ার্ত খরগোশের মত কোনো মতে ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল ওপাড়ার ব্যূহ থেকে তাদের তারা নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিতেও সহায়তা করেছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে— আজ কি হবে? আজ বাতাসে যে গুজব ভাসছে তা যদি সত্য হয়ে দাঁড়ায় তবে তারা কি করবে?

পেঁয়াজী আর তাড়ির ভাঁড় নিয়ে বেশ জমিয়ে তুলেছিল ঝগরু। তার আসবারুণ চোখের অতি সূক্ষ্ম শিরাগুলো তখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ঝিরঝিরে মৃদু বাতাসে দেহটা যেন ফাঁপা বেলুনের মত উড়ে যেতে চাইছে; বৌ সুরতিয়ার গুরু নিতম্বের দিকে তাকিয়ে উগ্র ধরণের একটা রসিকতার জন্য মনটা প্রলুব্ধ হয়ে উঠেছে। এমনি সময় ও অবস্থায় ওরা এসে ভীড় করে এই বাজে খবরটা দেওয়ায় ঝগড়ুর মেজাজ ভারী চটে উঠল।

বিরক্তির সুরে সে বলল, “আরে যা যা— ভাগ,

যো হোনেক হোগা উলোগ হামলা করেগা তো ক্যা হায়?”

রংলাল বলল, “লেকিন কুছ তো করনা ভোগা—”

ঝগরু ধমক দিল, একটা হাত নেড়ে বলল, “নশাকে। খারাপ কর দিয়া তেলোগ। আবে, ইসমে শোচনে কা কোন্‌সা বাত হ্যায়? আয়গা তো লড়াই করোগে। অওর ক্যা? আলি বাত শুনো— সবকোই তৈয়ার রহো হাতিয়ার লেকে— যব ডঙ্কা বজেগা তব কুদ পরোগে— ব্যস্।” লেকিন্ সর্দ্দার—

“ভাগ, শালেসব— লবনি লেকে বৈঠা হ্যায়— থোরা মজা চিখে দে— যা অব্ তোহনি সব ঘরে যা—”

সবাই চলে গেল।

পেঁয়াজী চিবোতে চিবোতে ভাঁড়ে চুমুক দিতে লাগল ঝগরু। ধীরে ধীরে উগ্র একটা অনুভূতি ঝি ঝি পোকার মত ডাক ছাড়তে লাগল তার কানের মধ্যে, নিঃশ্বাসটা ঘন হয়ে উঠল, চোখের পাতা দুটো ভারী নেশার হয়ে উঠল আর দৃষ্টিটা হয়ে এল ঝাপসা। নেশা হলো ঝগরুর ঘোরে সুরতিয়াকে দেখে অবাক হয়ে যায় সে। সুরতিয়া হঠাৎ যেন ভয়ঙ্কর রূপসী হয়ে উঠেছে, দুল ভা রাজকন্যার মত অপরূপ মনে হচ্ছে তাকে।

“সুরতিয়া— এগে—”

“কি হো?”

“ইধার আ-আনা—”

“থোরা তাড়ি পিব?”

“না—ন” পিবুয়া হাম্।

নেশার ঘোরে হঠাৎ রাগ হল ঝগরুর, একরোখা হয়ে উঠল সে সুরতিয়ার কথা শুনে।

“আইব কি না— বোল হারামজাদী—”

“না— হাম ন” আইবুয়া— হামার কাম ছে”

“তব মজা দেখ লে—”

উঠল ঝগরু। শিশুর মত অসমান পদক্ষেপে সে সুরতিয়ার কাছে- গিয়ে তাকে জাপটে ধরল, দু’হাতে তাকে পাজাকোলা করে তুলে নিল।

চীৎকার করে উঠল মুরতিয়া— “মর্ যাম্— সব হাড্ডি টুটু যাই হামার—”

বৌকে বুকে টেনে নিয়ে হা হা করে হেসে উঠল ঝগরু, “ডর হোতা হ্যায়— ডরো মতি রে ছৌড়ি— লে, গোদিমে বৈঠ—”

কিন্তু নেশা জমেছে ঝগরুর— সে পারবে কেন সুরতিয়ার মত সবলা নারীকে আটকে রাখতে? হাসতে হাসতে পালিয়ে গেল সুরতিয়া।

বেলা দশটা এগারটা— অন্য দিনের মত স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে আজ হয়ত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত ঝগরু। কিন্তু আজ যখন দাঙ্গার অজুহাতে কাজ নেই তখন একটু ফুর্ত্তি না করে পারে না সে৷

নিজের মনে হাসে ঝগরু— “ভাগ গৈল্‌— ছোঁড়ী ভাগ গৈ—”

সে ভাবে। একটা কিছু করতে হবে। তাড়ি শেষ হয়েছে, নেশা জমেছে, সুরতিয়াও পালাল। কিন্তু একটা কিছু করতে হবে তো? কি করা যায়, কি?

হঠাৎ এককোন থেকে পুরানো ঢোলটা টেনে নিয়ে প্রাণপণে বাজাতে লাগল ঝগরু৷ সে গান গাইবে৷ সে, গান শুনে যেই ঘাবড়াক, ঝগরু দমবে না। তার গানের সখ চেপেছে সুতরাং সে গাইবেই।

দমাদম্ ঢোলে ঘা দিয়ে দিয়ে গাইতে সুরু করল ঝগরু। দুর্বোধ্য গানের কথার মধ্যে মাত্র একটি লাইনকেই বুঝতে পারল শ্রোতারা। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঐ একটা লাইনই সে বারংবার গাইতে লাগল৷

“ছাপ্পর পর্ কৌয়া নাচে বগ, বগুলা, হাঁ হাঁ, বগ, বগুলা”

সে কি সুর! সে কি তান ও বিস্তার! সে কি অপূর্ব্ব দরদী কণ্ঠস্বর! সমস্ত ডোমপাড়া সচেতন হয়ে উঠল যে ঝগরু গাইছে। ঝগরুর নেশা হয়েছে।

সশ্রদ্ধ সুরে তারা বলাবলি করতে লাগল, “সর্দার গাওত হ্যায়জী গাওত হ্যায়।”

ডিফেন্স কমিটির মিটিং বসেছে মিঃ বোসের বাড়ীতে। সভাপতি হয়েছেন তিনিই।

পাড়ার প্রায় বড় মাথারাই এসে জড় হয়েছেন। প্রবীন অধ্যাপক নিবারণ মুখুজ্জে, উকীল হরদাস মিত্র, ডাক্তার সন্তোষ দত্ত(এম, বি, এফ, আর সি, এস) এবং লৌহ ব্যবসায়ী সুকুমার রায়। আর এসেছে সরস্বতী অর্কেষ্ট্রা পার্টি, তরুণ ব্যায়াম সমিতি ও এভারগ্রীণ ড্রামাটিক ক্লাবের ছোকরা সভ্যেরা। মিঃ বোসের ভেতরের বারান্দায় বড় সতরঞ্চি পাতা হয়েছে। তারি ওপরে সবাই ঘন হয়ে বসে একাগ্রমনে আলোচনা করছে। কোণের ঘরটার পরদা সরিয়ে রুবী দেখছে সবাইকে চেয়ারে বসে বসে। নেহাৎ কৌতুহল। রুবী বাড়ী থেকে বেরুতে পারছে না, পার্টি, সিনেমা আর পিনিকের অভাবটা বড় দুঃসহ হয়ে উঠেছিল। এমনি সময়ে এই মিটিং। আর কিছু না হোক্, বহুরকমের মানুষকে তো দেখা যাবে। আর রুবী শুধু দেখেই না — দেখে বিচারও করে, বিচার করে আনন্দ পায়।

মিঃ বোস কথা বললেন, সভাপতি-সুলভ গাম্ভীর্য্যের সঙ্গে ও ভারি গলাতে বললেন, “কাল থেকে সহরের বুকে যা আরম্ভ হয়েছে তা আপনারা সবাই জানেন ও দেখেছেন। বেশী কিছু বলা বা বক্তৃতা দেওয়ার সময় এটা নয়, আমার সে যোগ্যতাও নেই। আমি শুধু আপনাদের এইটুকুই বলতে চাই যে আমাদের, বিশেষতঃ বাঙালীদের জীবনে একটা দুর্দ্দিনের সুরু হয়েছে। আজ আমাদের এই মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে দল বেঁধে দাঁড়াতে হবে, we have to fight it and stop it — মানে, এই বিকারকে থামাতেই হবে। সুতরাং আজ আমরা আজ বর্ণ ও জাতির সমস্ত দলাদলি ভুলে গিয়ে এক হয়ে দাঁড়াব।”

ভেদাভেদ, উচ্চ ও নীচের পার্থক্য, স্পৃশ্য ও অস্পৃশ্নের প্রভেদ সব ভুলে যেতে হবে — শুধু একটি মাত্র কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা হিন্দু-আর কিছু নয়।”

মিঃ বোস থামলেন, রুমাল বের করে উত্তেজনা-প্রস্থত ঘামকে মুছলেন, সিগারেট-কেস থেকে একটা “ব্ল্যাক এ্যাণ্ড, হোয়াইট, সিগারেট” বের করে উপস্থিত প্রবীণদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিজেও একটি ধরালেন। ইতিমধ্যে তাঁর সারগর্ভ কথা গুলোর প্রশংসা উপস্থিত সভার মধ্যে গুঞ্জরিত হয়ে উঠেছে আর রুবীর চোখের তারাতে দেখা দিয়েছে জ্বলজ্বলে নক্ষত্র-দীপ্তি।

লৌহব্যবসায়ী বললেন, “যথার্থ— আপনার কথা অত্যন্ত মুল্যবান। জাতি, বর্ণ, শ্রেণী নিয়ে মাথা ঘামাবার দিন এখন গেছে — এখন থেকে আমরা সবাই সমান, সবাই হিন্দু।”

মিঃ বোস বললেন, “এবার তবে কার্যপদ্ধতি স্থির করা হোক্ —” “ঠিক— ঠিক।” সবাই সমস্বরে সায় দিল ও ঝুঁকে পড়ল৷

প্রবীন অধ্যাপক বললেন, “পাড়াকে চারটি দলে ভাগ করা হোক, এক এক দল এক এক দিকে দৃষ্টি রাখবে।”

উকীল বললেন, “সিগনালিং ও বিপদ-সূচক সংবাদ জ্ঞাপনের জন্য সাইরেণ বা শঙ্খের ব্যবস্থা করা হোক।”

ডাক্তার বললেন, “একদল যুবকেরা পালা করে রাত জাগবে ও পাহারা দেবে, কোনো বিপদের সূচনা দেখলেই তিনবার শঙ্খধ্বনি করবে ও সঙ্গে সঙ্গে সাইরেন বেজে উঠবে। পাড়ার চারদিকে, চারটে প্রান্তর্দেশের বাড়ীগুলোতে লাল বাতি জ্বলবে, যেদিক থেকে বিপদ আসবে সেদিকের বাতিটাই জ্বলে উঠবে।”

ব্যবসায়ী বললেন, “আর উপরতলায় বা ছাদে মেয়েরা, শিশুরা ও বৃদ্ধেরা ইটপাটকেল নিয়ে থাকবে। নীচের তলায় থাকবে অন্যান্য পুরুষেরা লাঠি সোঁটা নিয়ে।”

প্রত্যেকের প্রস্তাবই গৃহীত হল। ডিফেন্স কমিটির মিটিং বেশ এগোচ্ছে।

কিন্তু হঠাৎ যতীন বলে একটি ছোকরা বিপদ বাধাল। ছেলেটা খদ্দর টদ্দর পরে, রুক্ষ রুক্ষ কথা বলে, মাথার চুল ছোট করে ছাঁটে।

সে বলল, “সবই তো করলেন কিন্তু যদি ওরা এসে আক্রমণ করে বসে তখন তাদের সামনাসামনি কে লড়বেন?”

যেন বোমা ফাটল৷ ধোঁয়ায় যেন সব দিক আচ্ছন্ন হয়ে গেল। ঠিকই তো, একথা তো ক্ষণ-তড়িতের মতও মনে উদিত হয়নি। সত্যি, এ ভাববার কথা।

ব্যবসায়ী বললেন, “কেন সবাই লড়ব, সবাই নেমে পড়ব।”

প্রবীণ অধ্যাপক মাথা নাড়লেন, “কথাটা সন্তোষজনক মনে হচ্ছে না। একদল লোককে সর্ব্বদা নীচে রাস্তায় থাকতে হবে, শত্রুর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই লড়বার জন্যে। অর্থাৎ প্রাণ দেবার জন্যে তাদের সর্বক্ষণই তৈরী থাকতে হবে। সব সক্ষম লোকেরা কি তা থকবে বা থাকতে পারবে?”

আবার বিস্ফোরণের মত ধোঁয়া। কারা করবে ? যদি ভয় সত্যি হয়, সত্যি, আসল সংগ্রামটা কারা হাজার হাজার মানুষ যদি এসে আচমকা আক্রমণ করে বসে তখন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত এক একটা বাড়ীতে বসে ইটপাটকেল আর লাঠি ঘুরিয়ে কি পাড়া বাঁচবে?

যতীন বলল, “এমন নিখুঁত একটা মিটিং করে ও ব্যবস্থা করেও আমরা বাঁচতে পারবো না। সুতরাং কি করবেন ভাবুন—”

মিঃ বোস বুদ্ধিমান লোক, লবণ-সমুদ্রের পরপার থেকে ব্যারিষ্টারী পাশ করে আসার পর থেকে তার সেই বুদ্ধি আরো ক্ষুরধার হয়ে উঠেছে। তিনি দেখলেন যে যতীন যখন খটকাটা বাঁধিয়েছে তখন নিশ্চয়ই সে সমাধানের পথটাও জানে। আর সত্যি, অত্যন্ত গুরুতরই বটে কথাটা।

মিঃ বোস বললেন, “যতীনের কথার যুক্তিকে আমি খণ্ডন করার মত কিছু পাচ্ছিনা অতএব আমার অনুরোধ যে যতীনই এ বিষয়ে আমাদের পথ দেখাক্—”

যতীন মুচকী হেসে মাথা নাড়ল, “বেশ, সে সমস্যার সমাধান আমি করছি। ও পাড়া আর এ পাড়ার মাঝে যে সব গরীব লোকগুলো রয়েছে তাদের খবর কি আপনারা জানেন?”

“ডোমেরা।”

“হ্যা। ওরা ও পাড়ার নয়, নিজেদের তারা এ পাড়ার হিন্দুদের দলেই মনে করে, এ পাড়ার মুখে যে শিব মন্দিরটি রয়েছে তাতে তাদের প্রবেশাধিকার না থাকলেও সেই মন্দিরের বিগ্রহকেই পূজা করে। অর্থাৎ তারা হিন্দু।”

মিঃ বোস সপ্রশংস দৃষ্টি মেলে হাসলেন, “দি আইডিয়া।”

স্বতীন বলে চলল, “ওরা অল্প থায়, অল্প পরে, তবু ওরা শক্তিমান।”

“আমরা যে বৃত্তিটা হারিয়ে ফেলে আজ এত লোক হয়েও অসহায় বোধ করছি ওদের সেই বৃত্তিটা সম্পূর্ণ সজাগ আছে। সুতরাং যদি সত্যিকার ডিফেন্স কমিটি কর্ডে চান বা বাঁচতে চান তবে ওদের ডেকে পাঠান । আর— আর ফাণ্ড, তুলুন— এখুনি।”

ব্যবসায়ীর হিসাবী মন নাড়া খেল, “ফাণ্ড, কেন হে?”

“যে গরু দুধ দেয় তার চাঁট খাওয়া ভাল।” যতীন হাসল।

“মানে? খুলে বল বাপু”— ব্যবসায়ী বিরক্ত হলেন।

“মানে তো খুব সহজ। ওদের অস্ত্রশস্ত্র দিতে হবে, ভাল খাবার দিতে হবে, মদ খাওয়াতে হবে।”

মিঃ বোস সমর্থন করে বললেন, “কথাটি ঠিক। যারা প্রাণ দেয় তাদের ও দাবী মানতেই হয়।”

যতীন জোর দিয়ে বলল, “আর বেশী ভেবে সময় নষ্ট করবেন না। অত্যাচারকে শক্তির দ্বারাই দমন করতে হয়। সুতরাং আমাদের তৈরী থাকতেই হবে। আর আজকে যে ওরা আক্রমণ করবেই এবিষয়ে যেন আপনাদের কোনো সন্দেহ না থাকে।”

নোট আর মুদ্রার শব্দ শোনা গেল। সঙ্গে সঙ্গেই পঞ্চাশ টাকা উঠল। আরো টাকা পরে পাওয়া যাবে। কিছু টাকা খাটিয়েই যদি নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়া যায় তবে কে আপত্তি করবে? প্রাণের চেয়ে দামী আর কি আছে? তাই ভালো— থাক ওরা। ভালো খাবার আর খেনো মদ৷ এমন বেশী কিছু নয়। হয়ত আজ রাতেই আক্রমণ করবে। রাতের অন্ধকারে যেন নরক থেকে উঠে আসবে হিংসায় অন্ধ পশুর দল—

তখন— তখন যারা এই অতিদামী প্রাণ দিয়ে আর রক্ত ঢেলে তাদের বাঁচাবে তাদের কি এতটুকু সেবা তারা করবে না! নিশ্চরই করবে। এ একটা মহৎ কাজ। শুধুই বাঁচার আনন্দ নয়, মহৎ কাজের মহৎ আনন্দটাও লাভ হবে এই টাকা ঢেলে। সুতরাং ওরা থাক, মাতাল হোক।

ঝগরুর হঠাৎ ক্লান্তি এলো। ঢোলটাকে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে সে বলল, “হুমার নশা বিগড় গেল—”

কাজ নেই আজ। বাড়ীতে বসে বসে আর কতক্ষণ ভালো লাগে? ভালো লাগে তাড়ি থাকলে। তা ফুরিয়েছে। সুরতিয়া একটু রঙ্গরস করলে মন্দ হোত না। কিন্তু ছোঁড়া পালিয়ে গেল, বোধ হয় তার কাজ আছে। আর ওসব রঙ্গরসও আজকাল যখন তখন বেশী ভালো লাগে না। সব সময়ে যা ভাল লাগে তা মদ ৷ এই নেশা কেটে যাওয়া, সমস্ত দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়ে আসা, স্তিমিত চেতনায় বাস্তবের স্পর্শ লাগা মোটেই ভালে৷ লাগেনা ঝগরুর! জীবন বলতে যা বোঝায় সেইটাই তার কাছে অস্বাভাবিক— তার কাছে স্বাভাবিক হচ্ছে মদ খেয়ে নেশা করা, মাতাল হয়ে মারামারি করা, উলঙ্গ হয়ে অশ্লীল গান আর নৃত্য করা, বমি করা বা আর ঝিম্ মেরে পড়ে থাকা৷

বিশ্রী লাগছে। আবার ভাড়ি খেতে হবে। ফিকে হয়ে আসা নেশাকে আবার গাঢ় করে নিতে হবে।

“সুরতিয়া — আগে সুরতিয়া —

“কী কহইছ জী?”

“দো আনা পয়সা দে ভাই।”

“না হ্যায়।”

ঝগরু লাফিয়ে উঠল, গৰ্জ্জন করে বলল, “চুপচাপ দেয়া কি নেহি বোল্, জ্যাদ৷ টায়টোয় মৎ কর সুরতিয়া—”

স্থরতিয়াও সমানে ঝঙ্কার দিয়ে বলল, “টায়ভি না করৈছি, টোয় ভি না করেছি— বাত পাক্কা বোলইছি কি পয়সা না হ্যায়!”

“হারামজাদী কাহাকা” — হঠাৎ ঝগরু সুরতিয়ার ছোট বেণিটা ধরে টান দিল, তার পিঠে জোর করে বসাল কয়েক ঘা।

“আইগে মাইয়া গে — মার ডালা রে —” সুরতিয়া চীৎকার করে কেঁদে উঠল। তার অত জোরে চেঁচানোটা উচিত হয়নি, কিন্তু সুরতিয়ার ধরণই আলাদা-তিলকে তাল করাই তার বহু পুরাতন রীতি।

“বোল্ পয়সা দেয়া কি নেহি? বোল চুড়ৈল কাহাকা — ”

ডোম পাড়া আবার সচেতন হয়ে উঠল, সশ্রদ্ধ সুরে আবার তারা বলাবলি করতে লাগল, “সার অরুকো পিটত হায় জী, পিটভ হ্যায়”—

ঠিক সেই সময় দু’তিনজনের ডাক শোনা গেল, “ঝগরু আছে — ঝগরু?”

সুরতিয়ার চীৎকারের চোটে সে ডাক শোনা যায় না।

আবার শোনা গেল সেই ডাক, এবার আহ্বানকারীদের কণ্ঠস্বর উঁচু পর্দায় চড়েছে — “ঋগরু সর্দ্দার আছো — ঝগরু?”

সুরতিয়া কান্না থামাল, বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল, “কৌন্ সব তুমকো বোলাও‍ হ্যায় জী —”

“হাম্‌কো?”

“হা। ভাদর আদমী—”

“ভাদর আমি! হাঁ?”

সে হঠাৎ সংযত হবার চেষ্টা করতে লাগল, বাইরে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালে। তিনজন অপরিচিতের সামনে। তাদের মধ্যে যতীনও ছিল। “তুমিই ঝগরু?”

“হা হামিই সেই।”

“তোমাকে ডাকছে।”

“কোন ডাকছে?” কিছু বুঝতে পারলনা ঝগৰু৷

“বোস সাহেব, ব্যারিষ্টার, চেন না তাঁকে”

ঝগরুর চোখে সম্ভ্রম ফুটে উঠল, মাথা দুলিয়ে সে বলল, “আয়রে বাপ, কেনো চিনব না তাকে? চিন্‌ছি হামি —”

“তিনি ডাকছেন তোমায় এখুনি।”

“হামাকে? আয়রে বাপ, হামি তো ঝগরু ডোম আছি, হামাকে কনো?”

“দরকার আছে, যাবে না?”

“হাঁ হাঁ, যাবে বৈকি, জরুর যাবে। বালিষ্টার সাহেব বুলিয়েছে — আয়রে বাপ”

“সেলাম হুজুর; সেলাম বাবুলোক —

ঝগরু এসে দাঁড়াল পাড়ার ডিফেন্স কমিটির সামনে। তখনো তার বেশ নেশা রয়েছে, সোজা হয়ে দাড়াতে গিয়ে টলতে লাগল সে, সবাই তাকাল তার দিকে। কেশবিরল মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম চকচক করছে তার, ছোট ছোট চোখের তারা দুটো এদিক ওদিক ঘুরছে কৌতূহলে। ছেঁড়া ময়লা কাপড় পরণে, গায়ে একটা মোটা কাপড়ের ফতুয়া, বাঁ গালে একটা ফোড়ার চিহ্ন। এই ঝগরুর চেহারা।

রুবী এসে আবার পরদার পাশে দাঁড়িয়েছে। নাকটা কুঁচকে সে বিড় বিড় করে বলল, “হাউ আগলি এ্যাণ্ড ডার্টি —”

সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এসে ছুঁচের মত বিঁধছে ঝগরুর গায়ে।

সে হেসে বলল, “হুজুর মাফ করবেন, হামি একটু তালের রস খেয়ে মাতোয়াল হয়েছে —”

মিঃ বোস সামনের দিকে ঝুঁকে বললেন, “তুমিই ঝগরু?”

“জী হাঁ–ঋগরু ডোম।”

“তুমি মাতাল হয়েছ?” “আগিয়া হাঁ”

“তুমি মদ খেতে ভালবাস?”

মাথা নিচু করে হেসে বলল ঝগরু “আগিয়া হাঁ হুজুর।”

কণ্ঠে জোর দিয়ে বললেন মিঃ বোস, “তুমি ডোমদের সর্দ্দার?”

“জী”

“তবে শোন ঝগরু, তোমাকে এবং তোমার লোকদের আমরা মদ খেতে দেব — যত চাও। শুধু মদের জন্যই নয়, খাবার জন্যও টাকা দেব তোমাদের।”

ঝগরু কি স্বপ্ন দেখছে? সে থতমত খেয়ে গেল, তাকাল চারদিকে। — না, সব সত্যি মনে হচ্ছে। সে কি বেশী নেশা করেছে? দূর, এক লব্ নি তাড়িতে তার গলাও ভেজে না। মিথ্যে নয়, সবই সত্যি, বাস্তব।

“হুজুর বড় মেহেরবান, লেকেন —”

মিঃ বোস বাধা দিয়ে মাথা নাড়লেন, “বলছি।

তো ঝগৰু?মাথা নাড়ল।”

দাঙ্গা হচ্ছে জানো

“আজ রাতে হয়ত ওরা আসবে।”

“আমরা হিন্দু তোমরাও হিন্দু।”

“আগিয়া—”

“হিন্দুকে হিন্দু না বাঁচালে কে বাঁচাবে বল?”

“জরুর, জরুর হুজুর”

“যদি ওরা আসে তবে তোমরা লড়বে তো? আমরা — আমরাও অবক্ষ যোগ দেব, সবাই একসঙ্গে লড়ব।”

হঠাৎ মিঃ বোস দেখলেন যে উপবিষ্ট সবার মাঝে ঝগরুই শুধু দাঁড়িয়ে আছে, তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, “কিন্তু ওকি! তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন ঝগরু? বোস, বোস —”

আশ্চর্য হয়ে গেল ঝগরু, আকস্মিক এই অভ্যর্থনায় হকচকিয়েও গেল, সে আমতা আমতা করে বলল, “লেকেন —”

“কিছু না, কিছু না, লজ্জা করো না, বোস”

“হামি ডোম আছি হুজুর” —

“ডোম!” মিঃ বোস চোখ কপালে তুললেন, তাঁর কণ্ঠস্বর আবেগে থরথর করে কাপতে লাগল, “ডোম তাতে কি? তুমিও আমাদের মত মানুষ, আমাদেরি মত হিন্দু— বোস, বোস ভাই”— হঠাৎ আবেগের আতিশয্যে তিনি উঠে এগিয়ে এলেন, বিস্মিত ঝগরুর হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন।

ঝগরু কথা বলতে গেল, কিন্তু কথা কড়া নেশা করেও যে অনর্গল কথা বলে যায়, বেরোল না তার গলা দিয়ে আজ সেই ঝগক বিস্ময়ে, কৃতজ্ঞতায়, অনাস্বাদিত এক আনন্দে কথা হারিয়ে ফেলল।

নোটের খস্‌খস্ শব্দ শোনা গেল৷

একটু বাদেই সেখান থেকে বেরোল ঝগরু।

বাড়ী ফিরবার সময়ে বন্তীর নিকটবর্ত্তী শিব মন্দিরের সামনে দিয়ে চলতে চলতে সে হঠাৎ থমকে দাড়াল, এগিয়ে গেল মন্দিরের কাছে। মন্দিরের নোনাধরা দেয়ালের ওপর হাত বুলিয়ে বুলিয়ে একবার হাসলো।

বিড়বিড় করে তারপরে সে বলল, “শিউজী — তু বড়া ভালা আছে, বড়া ভালা —”

ৰস্তীর সবাই হঠাৎ উৎসবে মেতে উঠল। রামপ্রসাদ সিংয়ের ভাটিখানা একঘণ্টায় উজার হয়ে গেল। নিঃশেষ হয়ে গেল বনোয়ারী হালুয়াই আর তেওয়ারীর দোকানের খাবার।

ঘরে ঘরে মত্তকণ্ঠের কোলাহল ধ্বনিত হল।

টিমটিমে লাল কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে সবাই ঘরের মধ্যে বসল ভাঁড় আর খুড়ি নিয়ে।

ফুৰ্ত্তি, আনন্দ৷

কোলাহল৷ আনন্দের অশ্লীল ও আদিম প্রকাশ।

মেয়েরাও বাদ গেল না। নেশায় বেসামাল হওয়ায় দুএকজনের কাপড় আলগা হয়ে যায়।

মাঝে মাঝে নারীকণ্ঠের কান্না শোনা যায়। নেশার ঘোরে কোনো পুরুষ তার বৌকে মারছে।

পুরুষের আর্তনাদও শোনা যায়। সবলা স্ত্রীর হাতে কোনো দুর্ব্বল ডোম মার খাচ্ছে।

কোলাহল, গান, চীৎকার।

আর ওদিকে ডোম সর্দ্দার ঝগরু ঢোল বাজিয়ে গান গাইছে। কোমরে হাত দিয়ে নাচবার চেষ্টা করে গানের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সুরতিয়া।

ঝগরু গাইছে — “হামার বাত শুনো সঁইয়া এ পিয়ারী সজনৈয়া —”

নেশায় আরক্ত ও আচ্ছন্ন চক্ষু মেলে, হাসতে হাসতে বস্তীর লোকেরা বলাবলি করে; “হামানিকে সর্দ্দার গাওত, হ্যায় জী— গাওত, হায়।”

ওদিকে রাতের আকাশ থমথম করছিল একটা অজ্ঞাত আতঙ্কে। নক্ষত্রগুলো পাণ্ডুর মুখে তাকিয়ে ছিল নীচের দিকে। নির্জন পরিত্যক্ত রাস্তাঘাটে ঘনীভূত হচ্ছিল একটা ভৌতিক পরিবেশ।

এক সময়ে ডোমপাড়ার কোলাহল থেমে গেল।

রাত গভীর হল।

দূরে কোথায় যেন আগুন লেগেছে। কালো আকাশের কোলে যেন রক্তের ছোপ লেগেছে।

মাঝে মাঝে কোলাহল ভেসে আসে। উন্মত্ত তাণ্ডবের ধ্বনি। ‘আল্লাহো আকবর’ —। দূরাগত সমুদ্র-গর্জনের মত সে ধ্বনি মাধার ওপর দিয়ে তরঙ্গের মত গড়িয়ে যায়৷

মাঝে মাঝে ছ’একটা কুকুরের ডাক শোনা যায়।

আর গভীর রাত্রির এই নিঃশব্দ ও অন্ধকার মুহুর্তে ডোমপাড়ার সর্দ্দার জেগে বসে থাকে। তার দু’চোখ সামনের দিকে প্রসারিত, কান রয়েছে সমস্ত রকমের শব্দ ও প্রতিশব্দের দিকে।

রাত একটা নাগাদ যুদ্ধ ঘোষণা করল ওরা। “আল্লাহো আকবর”

“পাকিস্তন জিন্দাবাদ—”

ঢোলকে ঘা দিল ঝগরু। ডুম্ ডুম-ডুম্-ডুম্‌।

সমস্ত ডোমপাড়া জেগে উঠল। নিঃশব্দে ছুটে বেরোল, স্বাই একত্রিত হল।

ওরা বাণ্ডি, বাজিয়ে এলো, এলো মশাল জ্বালিয়ে। নরকের একটা বিভীষিকাময় অংশও নেমে এল তাদের সঙ্গে। আদিম অরণ্যের যত রক্ত-তৃষাতুর অশরিরী — সবাই যেন আজ ওদের মস্তিষ্কের অন্ধকারে আশ্রয় নিয়েছে।

শিব-মন্দিরটাকে লক্ষ্য করেই ওরা প্রথমে এগিয়ে এল। উদ্দেশ্য মন্দির ধ্বংস করার পরে পাড়াকে ধ্বংস করবে।

সমস্ত পাড়া সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল। সাইরেণ বাজতে লাগল, অট্টালিকা- শীর্ষের লাল বাতিগুলো থেকে আতঙ্কের রক্ত- দ্যুতি বিচ্ছুরিত হতে লাগল, ছেলে মেয়েদের কান্না শোনা গেল, দুডুম দাড়াম করে দরজা জানালা বন্ধ হতে লাগল, ধাবমান পদশব্দ ধ্বনিত হল আর ধ্বনিত হল শব্দ।

সমস্ত পাড়া ভয়ার্ত্ত হুঙ্কার ছাড়ল, “বন্দে মাতরম্—”

যে মন্ত্র উচ্চারণ করে দেশকে মুক্ত করতে চায় ওরা, আজ সেই মন্ত্র উচ্চারণ করে ওরা দেশের লোককেই মারতে চাইল।

ঝগরুর ঢোলক তখন থেমেছে। নিঃশব্দে প্রতীক্ষা করছে ওরা।

“সোরগোল মাত কর ভাই — নজদিক আনে দে —” ঝগরুর নির্দ্দেশ ধ্বনিত হল।

“আল্লাহো আকবর”

হঠাৎ বন্যার স্রোতের মত ওরা সবাই ধেয়ে এলো। মশালের আলোতে মধ্যাহ্নের সূর্যালোকের মত ওদের ঝকঝকে ছোরা আর তলোয়ারগুলো ঝলসে উঠল।

ঝগরু দুলছিল ওদের ব্যাণ্ডের তালে তালে, এবার বলল, “অব লগ, যা ভাই — জঞ্জাল সাফ কর্ —

ধ্বনি উঠল ঝগরুর দলের।

যে শিব-মন্দিরের ভেতরে কোনোদিন ঢুকতে পায়নি তারা, যে শিব-ঠাকুরের মন্দিরের নোনাধরা দেওয়ালের ওপর হাত বুলিয়ে আর মাথা ঠুকেই আশীর্ব্বাদ প্রার্থনা করেছে ওরা, যে নির্ব্বাক প্রস্তর-দেবতা তাদের এই বঞ্চিত দুর্ভাগ্যের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদই জানায়নি আজ ঝগরু সেই দেবতারই জয়ধ্বনি করে উঠল।

“হর হর মহাদেও-জয়, শিউজীকা জয় —”

তারপরে যেন দুটো পাহাড়ে সংঘর্ষ ঘটল। মাটির পাহাড় নয়, আদিম পৃথিবীর লৌহকঠিন পাথরের পাহাড়।

রক্তের ঢল নামল! হাত, পা, মাথা ছিটকে ছিটকে পড়ল। চূর্ণীকৃত মাথা থেকে ঘিয়ের মত ঘিলু গড়াল, বুকের ভেতরকার রক্ত মাংসকে চুম্বন করে ধারালো ছোরা বিজয়ী হয়ে বেরিয়ে এল।

মাথার ওপরকার অনস্ত নীলাকাশে অনেকগুলো নক্ষত্র তখন কাঁপছে। নিঃশব্দে লঘু মেঘের টুকরোগুলো ভেসে যাচ্ছে। কোথাও নিশ্চয়ই এই রাতের অন্ধকারে ফুল ফুটছে, কোনো শিশু ঘুমোচ্ছে, কোনো প্রেমিক তার প্রেয়সীকে বুকে টেনে নিয়ে নিথর হয়ে পড়ে আছে। নিশ্চয়ই মানুষেরা কোথাও এখন স্বপ্ন দেখছে, গান গাইছে, পরস্পরকে ভালবাসছে।

অথচ — দাঙ্গা থেমেছে। ওরা হার মেনে পিছু হটে গেছে। ঝগরুর দল ওদের আস্ফালনকে ঠাণ্ডা করে দিয়েছে। শিব-মন্দির অক্ষত রয়েছে।

কিন্তু মরেছে অনেকে। ওরাও মরেছে, এরাও মরেছে। এরা মানে ডোমেরা। ভদ্র বাবুরা পেছনের ঘাটি আগলে ছিল, বিপদ ততদূর এগোয়নি। এগোলে ওরা নাকি নিশ্চয়ই যুদ্ধ করত, প্রাণ দিত৷

পরিত্যক্ত রণক্ষেত্রে পড়ে আছে শবদেহ। বাতাসে চাপ চাপ রক্তের তাজা গন্ধটা বেশ ভাল করেই পাওয়া যাচ্ছে।

মিঃ বোসের বাড়ীতে গেলে দেখা যাবে যে বাইরে তাঁর মোটরটা এসে দাঁড়িয়েছে আসন্ন প্রভাতের অস্পষ্ট আলো-আঁধারে। আর তারি পাশে আছে একটা মিলিটারী ট্রাক — তাতে চারজন সৈনিক।

মিঃ বোস দ্রুতকণ্ঠে বললেন, “কৈ তোমরা কি তৈরী রুবী? শিগগীর এসো — মিলিটারী escort আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করবে না”—

রুবী মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ we are ready, চলো মা। জানো বাবা, মা terrible shock পেয়েছেন”—

সবাই বেরোল৷

মিঃ বোস বললেন, “স্বাভাষিক— quite natural.”

আছি ভাবছ? ভগবান বাঁচিয়েছেন বলেই রক্ষা

hurry up—”

গাড়ীতে চড়লেন মিঃ বোস।

গাড়ী ছুটল। ওঁরা ভবানীপুর যাবেন।

আমিও কি সুস্থ—

পেলাম। চলো,

অরুণ বলল, “ঝগরুই বাচালো বাবা— উঃ, লোকটা সাংঘাতিক fight দিয়েছে—”

মিঃ বোস সিগারেট ধরালেন, এতক্ষণ সে রকম মানসিক অবকাশ তাঁর ছিল না। ধোঁয়া ছেড়ে তিনি বললেন, “হ”–এ ওদেরি কাজ, একি তোমরা পারতে কখনো? Certainly not— থাক্ the man has been well-paid—”

রুবী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বাঁচা গেল।

পিকনিক পার্টি আর সিনেমা তা হলে জীবন থেকে মুছে যাবে না।

প্রজাপতির আয়ু তৰে শেষ হয় নি।

ওঁদের গাড়ী দূরে মিলিয়ে গেল।

তখন ডোমপাড়ায় মহাভারতের নারীপর্ব্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহু, বহু নারী হারিয়েছে তাদের বাপ, ভাই, স্বামী ও পুত্রদের। আগুনের শিখার মত কাঁপতে কাঁপতে একট। বিলাপের ধ্বনি আকাশের দিকে উঠছে।

সুরতিয়াও কাঁদছে। ঝগরু মারা গেছে।

হ্যাঁ, ঝগরু মারা গেছে। কারণ মিঃ বোসদের বাঁচাবার জন্যই তো ঝগরুর মতো মানুষেরা চিরকাল জন্মায় আর মরে। পঞ্চ নিয়াদ প্রাণ না দিলে তো রাজপুত্র পাণ্ডবেরা বাঁচতে পারত না৷


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন