দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় থেকে সাবধান! ছেলেবেলা থেকেই যত্ন নিন। সেইসঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ। তা নাহলে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগও হতে পারে। সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে প্রেগন্যান্সি ও সুগার রোগীদেরও। কারণ এদের অনেক সময় মাড়িফোলা ও দাঁতের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে হবে। নাহলে বৃদ্ধ বয়সের আগেই ফোকলা দাঁতের ক্ষয় নিয়ে ভুগতে হবে। বিষয় হল — দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় রোগ।
দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় রোগের লক্ষণ কী ?
দাঁত হলুদ হয়ে যায়। দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে। মুখে দুর্গন্ধ বের হয় ও অপ্রীতিকর স্বাদ খাবারে থাকে। মাড়ি ক্ষয়ের লক্ষণগুলো হল — মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যায়। এমনকি মাড়িতে ফোড়া হয়। দাঁতের গোড়া আলগা হয়ে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ না নিলে বিপদ হতে পারে। বিশেষ করে তামাক সেবন কারী, ধূমপায়ী,পানাসক্ত, ডায়াবেটিস ও প্রেগন্যান্সি রোগীরা ।
দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় হয় কেন?
দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। আসলে দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কারের জন্য অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব। এখনো গ্ৰামেগঞ্জে লক্ষ্য করা যায় নিম ও করমচার কাঠি কিম্বা ছাই ও নুন-তেল দিয়ে বহু লোককে সকাল হলেই দাঁত মাজা। সেই সঙ্গে সংবেদনশীল মাড়ির উপর চাপ দেওয়া। এছাড়াও যেটা লক্ষনীয় হল আমরা অধিকাংশ মানুষ সঠিক নিয়মে দাঁত মাজি না এবং মাড়িকে রক্ষা করার জন্য সামান্যতম চিন্তা করি না।ফলে দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় ও প্রদাহ শুরু হতে থাকে। এছাড়াও দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে।তখন দাঁতে ক্যাভেটি, মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁত শিরশির ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। আমরা এবিষয়ে অবহেলা করি। ফলে দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় শুরু হয়।
উল্লেখ করতেই হয় বাচ্ছাদের কথা। সমস্ত বাচ্ছাদের দাঁত বেরনোর আগে থেকেই যত্ন নিতে হবে। ছ-মাস ছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আরও বেশকিছু কারণ হল ঠাণ্ডা পানীয়, তামাকজাত দ্রব্যের সেবন, সুপারি সহ বিভিন্ন শক্ত জিনিস দাঁতে চাপ দেওয়া, এমনকি দাঁত দিয়ে নখ কাটা চলবে না। এ থেকে দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় হয়। সেইসঙ্গে মিষ্টি জাতীয় বা আঠালো জাতীয় খাবার দাঁতে ক্যাভেটি হতে সহায়তা করে। হু-র মতে প্রতিদিনের ক্যালোরির ১০ শতাংশের নিচে চিনি গ্ৰহণ সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে ক্যালোরির ৫ শতাংশ চিনি নামিয়ে আনলে ক্যাভিটি ও দাঁতের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি আরও কমে যায়। প্রসঙ্গত, অনেক সময় অ্যাসিডিটি থেকে দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় শুরু হয়।এটা মনে রাখতে হবে।
বোঝা যাবে কী করে দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় শুরু হয়েছে?
যখন দেখা যাবে দাঁতে খাবার আটকে যাচ্ছে, কালো ও হলুদ ছাপ দাঁতে পড়ছে এবং দাঁতের গর্ত এনামেল ও ডেনটিন ভেদ করে মজ্জায় পৌঁছে প্রদাহ ও ব্যথা শুরু হয়। বুঝতে হবে দাঁতের ক্ষয় শুরু হয়েছে।
দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় রোধে কী করণীয়?
প্রথম থেকেই সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। নরম ট্রুথ ব্রাশ নিয়ে গুণগতমানের পেস্ট দিয়ে খাওয়ার পর দিনে ও রাতে দু’বার ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশের সময় ১/২ মিনিট। দ্বিতীয়ত দাঁতের ফাঁকের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। নাইলন নামে একটি সুতো আছে যেটি ডেন্টাল ফ্লস নামে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরিচিত। এটা দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। সেইসঙ্গে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া দাঁত দিয়ে সুপারি বা সুতো কাটার অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। বছরে অন্তত একবার সাধারণ স্কেলিং করিয়ে নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ ১০/২০ বছরের পর একবার স্কেলিং করাতে আসছেন। তখন দেখা গেছে দাঁতে পাথর ভর্তি হয়ে গেছে। দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে পাথর জমাট বেঁধে থাকে। যখন মাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় তখন দাঁত থেকে মাড়িটা আলাদা হয়ে যায়।আসলে ১৫ বছর বয়সের পরই চেকআপে আসা উচিত।
মাড়ির ক্ষয় মানেই দাঁতের সমস্যা দেখা দেবে। মাড়ি ফুলে যাওয়া, কালশিটে ও সংক্রামিত হয়। অনেক সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। এই প্রাথমিক পর্যায়টি জিঞ্জিভাইটিস নামে পরিচিত। মাড়ির ক্ষয় ও প্রদাহের চিকিৎসা না করালে পিরিওডোনটাইটিস (Periodontitis) নামক অসুখ হতে পারে। যারা তামাকজাত দ্রব্য খৈনি, সিগারেট, পানপরাগ ইত্যাদি সেবন করেন তাঁরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়াও দাঁতের টিসু্ ও চোয়ালের হাড় ক্ষতিগ্ৰস্ত হবে। ফলে মাড়ি ও দাঁতের মধ্যে ছোট ছোট জায়গা খুলে যেতে পারে। দাঁত তখন সহজেই আলগা হয়ে যেতে পারে। শেষপর্যন্ত দাঁত পড়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, মিষ্টিজাতীয় খাবারে সর্তক থাকতে হবে। মিষ্টি বা আঠালো জাতীয় খাবার দাঁতে ক্যাভেটি হতে সহায়তা করে। হু-র মতে প্রতিদিনের ক্যালোরির ১০ শতাংশের নিচে চিনি গ্ৰহণ সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে ৫ শতাংশে চিনি নামিয়ে আনলে ক্যাভিটি এবং দাঁতের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি আরও কমে যায়। তাছাড়া দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় থেকে বাঁচতে হলে তামাকজাত দ্রব্যের সেবন বন্ধ করতেই হবে। এছাড়াও দাঁত দিয়ে নখ, সুপারি কিংবা কোনও শক্ত জিনিস চাপ দিয়ে কাটা চলবে না।
উল্লেখ্য, মাউথওয়াশ ব্যবহার জরুরী। দিনে কয়েকবার মুখধোওয়া ও কুলি করা মুখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ক্লোরহেক্সিডিন (Chlorhexidine) যুক্ত মাউথওয়াশ মুখগহ্বরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস করে দাঁত ও মাড়িকে সুস্থ রাখে।
পরিশেষে বলতে হয় দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় রোধে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। আমাদের দেশে সাধারণত দাঁত ও মাড়ির সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে কেউ আসে না। সম্ভব হলে বছরে অন্তত একবার দন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
ডা. পিয়ালী চট্টোপাধ্যায়, দন্ত বিশেষজ্ঞ, ডানলপ অ্যাপলো ক্লিনিক, মোবাইল-৯৬৫৪৯৮৫০৭৫
সাক্ষাৎকার: মোহন গঙ্গোপাধ্যায়