রবিবার | ২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৩৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নাশকতার কাঁটা মাড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে : ড. মিল্টন বিশ্বাস

ড. মিল্টন বিশ্বাস / ২০৩ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

২৪ জুলাই ২০২৪ ফেসবুক সক্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুষ্কৃতিকারীদের সমর্থক গোষ্ঠী লিখতে শুরু করেছে, ‘‘জুলাই-এর পর কিন্তু ১৫ আগস্ট।’’ অর্থাৎ তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯৭৫ সালের ঘটনা স্মরণ করিয়ে হুমকি দেওয়া শুরু করেছে। এতোদিন কষ্ট করে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন করলেন, মানুষের ভোট ও ভাতের দাবি নিয়ে লড়াই করলেন জননেত্রী — মুহূর্তে ভুলে গিয়ে স্পর্ধা দেখানো আরম্ভ করেছে বিপথগামী তরুণসমাজ। আসলে বেঈমান ও নিমকহারাম জাতির সন্তান এরা। সামষ্টিক মঙ্গল চিন্তায় যেখানে শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন সেখানে মীমাংসিত এবং তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেওয়া কতটা অপরাধ এটাও কি তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে? এদের মগজ ধোলায় করেছে কারা? নিশ্চয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দোসররা। নিশ্চয় জামায়াত-বিএনপি দলের নেতা-কর্মীরা। এজন্য নাশকতার কাঁটা মাড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে উন্নয়নের উচ্চ শিখরে।

১৭ জুলাই (২০২৪) আশুরার ছুটি ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হলে সেখানে বিকেল ৩টায় হাজির হলাম। জগন্নাথের গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখলাম কয়েকশত তরুণ-তরুণী লাঠি হাতে এদিক-সেদিক টহল দিচ্ছে। মনে হলো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের খুঁজছে। আমাকে কেউ চিনতে পারল না। ভাবলাম প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর যারা তৎপরতায় জড়িত তাদের কেউ-ই কি আমাকে চেনে না? এটা ভালই। ঘণ্টাখানেক ক্যাম্পাসে থাকলাম। দেখলাম মারমুখি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে দাবি জানাচ্ছে- ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করা থেকে শুরু করে ছাত্রীরা হল ত্যাগ করবে না-ইত্যাদি। সকালে সিন্ডিকেট সভা পরিচালনা করে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। কিন্তু বিকেল ৩টায় জানলাম একমাত্র ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করে প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের জিম্মি করে রেখেছিল। শেষাবধি তাদের দাবি মেনে নিয়ে মুক্তি পেয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপকরা। প্রকৃতপক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যতটা শিক্ষার্থী বান্ধব এবং সমস্যা ও সংকট নিয়ে আন্তরিক ততটা ছাত্রদের তরফ থেকে সৌজন্য রক্ষার মানসিকতা প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর হলো না। তাছাড়া আগের দু’দিনে অধ্যাপকদের গায়ে হাত উঠিয়েছে বলে শিক্ষকরাও আতঙ্কে শিক্ষার্থীদের এড়িয়ে চলছে। সকলেই একমত যে শিক্ষার্থীরা তাদের সীমা লঙ্ঘন করা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে আমি দৈনিক পত্রিকায় কোটা দাবি নিয়ে কলাম লিখেছি। এবং বলেছি যে, আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত ইন্ধন দিচ্ছে। উপরন্তু ‘‘যে কারণে কোটা থাকা দরকার’’ শিরোনামেও অন্য একটি মিডিয়াতে কলাম লিখেছি। টকশোতে কথা বলেছি সরকারের নীতির পক্ষে। অথচ বিস্ময়কর হচ্ছে দাবিতে সক্রিয় কেউ আমার লেখা দেখিনি বা পড়েনি। এজন্য একই গেট দিয়ে যখন ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে এলাম তখনও লক্ষ করলাম কেউ আমাকে চেনে না। বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো আমার বিভাগের একজনও শিক্ষার্থী নেই এই দাবিতে? তাহলে কি বহিরাগতরা এই মারমুখি কোটা দাবিতে সরব। হামলার জন্য প্রস্তুতি যারা নিয়েছে তারা কি তবে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বাইরের কেউ? এসব ভাবতে ভাবতে আতঙ্ক ও দুঃশ্চিন্তায় রাত অতিবাহিত হলে ১৮ জুলাই দেখা গেল দাবি আদায়ের লড়াইয়ের প্রকৃত চিত্র। ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। নৈরাজ্যবাদীরা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য দেশে ও বিদেশে অব্যাহতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কোটা সংস্কারের নামে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে বলে রাজনীতিবিদদের যে ধারণা ছিল তা সত্যে পরিণত হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াত কলকাঠি নাড়িয়েছে। চলমান আন্দোলনে তারা সমর্থন দেওয়ায় সেই ধারণা প্রবল হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। আন্দোলনের নামে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে। সরকার উৎখাতের  ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সফল হয়নি যদিও কিন্তু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রভূত।

২১ জুলাই রায় ঘোষিত হলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ। নারী কোটা না থাকায় প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল চাকরিতে নারীদের জন্য কোটা না থাকলে বৈষম্য আরও বাড়বে। সবই হলো কেবল থামল না সহিংসতা। ২৩ জুলাই পত্রিকায় দেখলাম ততদিনে শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে। দেশে কারফিউ জারি হয়েছে। তবে ওইদিন সংঘাত-সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। ১৮ থেকে ২২ জুলাই ঢাকায়ে রেলের ক্ষতি হয়েছে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা, চট্টগ্রামে ১০ লাখ। মেট্রোরেল যে ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে তা মেরামত করতে সময় লাগবে প্রায় ১ বছর। একশতের বেশি যাত্রীবাহী বাস পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে টোল প্লাজাসহ অনেক সরকারি অবকাঠোমো। শাটডাউন আর কারফিউ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ধারণের ন্যূনতম অধিকার হরণ করে নিয়েছে। কেবল কোটা দাবি’র যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণে দেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এমনকি উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও বিদেশে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরতে আগ্রহ হারাবে স্বাভাবিকভাবে। ইতোমধ্যে তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা শুরু করেছে। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা কারো কাম্য নয়।

প্রগতিশীল সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সহিংসতার পূর্বাপর ঘটনা উল্লেখ করেছে। একটি অংশ যেমন-‘‘সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলা আন্দোলনের মধ্যে একদল দুষ্কৃতকারী সরকারি স্থাপনায় নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হওয়া এ তাণ্ডবে একে একে পুড়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, মেট্রোরেলের স্টেশন। রক্ষা পায়নি ফায়ার সার্ভিসও। মিরপুর-১০-এর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলা চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। দুষ্কৃতকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন ফায়ার ফাইটাররাও। দুষ্কৃতকারীদের হাতে তাণ্ডবের শিকার হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম। বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো সরকারি স্থাপনায়ও তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক বক্স। হামলা চালানো হয়েছে অনেকগুলো থানায়। স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে কখনো সরকারি স্থাপনায় এভাবে তাণ্ডব চালানো হয়নি।

শুধু রাজধানীতে নয়, দুষ্কৃতকারীরা তাণ্ডব চালিয়েছে ঢাকার বাইরেও। নরসিংদীতে জেলা কারাগার এবং পৌরসভা ও ইউনিয়ন কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। নরসিংদীতে কারাগার ভেঙে ৯ জন জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে চালানো হয়েছে তাণ্ডব। দুষ্কৃতকারীদের তাণ্ডবে রাজধানীসহ সারাদেশে জনমনে সৃষ্টি হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সঙ্গে নামানো হয় সেনাবাহিনী। এতে অনেকটাই ঘরবন্দি হয়ে পড়েন মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে খুব একটা বের হননি। তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার পর অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শিথিল করা হয় কারফিউ।

২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। সীমিত পরিসরে চলছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। ব্যাংক খোলায় শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু করা হয়েছে। রাস্তায় চলাচল করছে গণপরিবহন। ফলে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। তবে দুষ্কৃতকারীরা যে তাণ্ডব চালিয়েছে তার ক্ষত কতদিন বহন করতে হবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

কোটাবিরোধী আন্দোলন চলার মধ্যে ১৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের রাস্তা অবরোধ করে একদল দুষ্কৃতকারী। একপর্যায়ে যাত্রাবাড়ী অঞ্চলে শুরু হয় সংঘর্ষ। রাতে হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় দেওয়া হয় আগুন। রাতভর দুষ্কৃতকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী এলাকায় তাণ্ডব চালায়। পরদিন বৃহস্পতিবারও এ এলাকা ছিল আন্দোলকারীদের দখলে। সেসঙ্গে দ্বিতীয় দফায় হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয়। হামলাকারীরা রড-লাঠি নিয়ে দল বেঁধে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। সেই সঙ্গে তাণ্ডব চালানো হয় একের পর এক সরকারি স্থাপনায়। আগুন দেওয়া হয় বিআরটিএর ডেটা সেন্টারে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সেবা। এতে গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর বাসিন্দারা। নানা শঙ্কা দানা বাঁধে জনমনে। ছয়দিন বন্ধ থাকার পর ২৩ জুলাই রাতে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড সেবা চালু করা সম্ভব হয়েছে।

এর আগে ২২ জুলাই নিজ কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিটিভি ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে, সেতু ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে, মহাখালী ডেটাবেজ স্টোরেজে হামলা-আগুন, মেট্রোরেলের স্টেশনে হামলা, শনির আখড়ায় হানিফ ফ্লাইওভারের টোল বক্সে হামলা, পিবিআই অফিসে আগুন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে আগুন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আগুন। নরসিংদীতে কারাগারে হামলা করে কয়েদিদের বের করে নিয়ে যাওয়া, কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেন। সেসঙ্গে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করা দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।’’

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত একইভাবে উপরের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘‘আক্রমণগুলো পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। জঙ্গিরা যেভাবে আক্রমণ করে সেভাবে। তিনি বলেন, ডেটা সেন্টার জালিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন ইন্টারনেট বন্ধ থাকে, দেশ অচল হয়ে যায়। কেপিআই ভবনে কারা আক্রমণ করে? ডেটা সেন্টার পুড়িয়ে দিয়েছে, বিটিভি জ্বালায়ে দিয়েছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিটিসিএল ল্যান্ডলাইন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জ্বালিয়ে দিয়েছে। উন্নয়ন যেখানে হয়েছে সেখানেই হামলা হয়েছে। হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়ার পর ১৮ জুলাই বিআরটিএর প্রধান কার্যালয় হামলা চালানো হয়। এরপর শুক্রবার আবার বিআরটিএ’-র প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। হামলা চলানো হয় বিআরটিএ’-র মিরপুর কার্যালয়ে। বিআরটিএ ভবনের বিভিন্ন তলায় ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। লুট করা হয় মূল্যবান জিনিসপত্র। সন্ত্রাসীরা মহাখালীতে সেতু ভবনের সামনে থাকা যানবাহনে আগুন দেয়। সেসঙ্গে আগুন দেওয়া হয় ভবনের নিচতলায়। তাদের দেওয়া আগুনে সেতু বিভাগের ৫৫টি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। সেতু ভবনের নিচতলায় থাকা বঙ্গবন্ধু কর্নার, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, মিলনায়তন, ডে-কেয়ার সেন্টারও পুড়েছে। আগুনে পুড়েছে সেতু ভবনের উপরের ফ্লোরও। লুট করা হয়েছে ভবনের মূল্যবান জিনিসপত্র। দুষ্কৃতকারীদের হামলার শিকার হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালীর টোলপ্লাজা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ৩০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে ১৭টি গাড়ি। মশার ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন, মশার ওষুধ নষ্ট করা হয়েছে, তুলে নেওয়া হয়েছে সড়কবাতি। হামলাকারীরা মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সামনে এবং বেইজমেন্টে থাকা যানবাহনে আগুন দেয়। আগুন দেয়া হয় ভবনেও। এ হামলায় ৫৩টি গাড়ি ও ১৬টি মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ভবনের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, সার্ভার, ইমার্জেন্সি রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার, অফিসের যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়েছে। মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়েছে হামলাকারীরা। টিকিট বিক্রির মেশিন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, সময়সূচির মনিটর, ভেঙে ফেলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যাকসেস কন্ট্রোল গেট।’’

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, ‘‘গত কয়েকদিনের সহিংসতায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিয়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুলশানে ট্রাফিক উপ-কমিশনারের অফিস। এসি রমনা, রামপুরা, মহাখালী ও উত্তরা অফিস পুড়িয়ে হয়েছে। পুরো ঢাকা শহরে মোট ৫৪টি ট্রাফিক পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআরে হামলা করে দুষ্কৃতকারীরা আটটি গাড়ি ভাঙচুর করে। আগুন দেওয়া হয় নরসিংদী জেলা কারাগারে। কারাগার ভেঙে ৯ জঙ্গিসহ মোট ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যায়। এ সময় কারাগার থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও আট হাজারের বেশি গুলি ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। দুষ্কৃতকারীরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস আগুন দেয়। এতে চারতলা ভবনটি একেবারে পুড়ে যায়। গ্রাহকদের দেওয়ার জন্য তৈরি করা আট হাজার পাসপোর্ট পুড়ে গেছে।

পিবিআইয়ের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়, শহরের দুই নম্বর রেলগেট পুলিশ বক্স, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ভবনের ফ্রন্টডেস্ক, ভবনের সামনে রাখা কয়েকটি গাড়ি পুড়ে যায়। আলী আহমদ চুনকানগর পাঠাগার ভাঙচুর করা হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে শিমরাইল এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের একটি কার্যালয়ে। আলী আহমদ চুনকানগর পাঠাগার ভাঙচুর করা হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে শিমরাইল এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের একটি কার্যালয়ে।’’

উপরে বর্ণিত সহিংসতা, নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ দেশ-বিদেশে প্রচার করার সময় এসেছে। কারণ বিদেশে সরকার বিরোধীরা ধ্বংসযজ্ঞ আমলে না নিয়ে একতরফা শেখ হাসিনা বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছে। তাদের জানতে হবে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে টানা পাঁচদিন দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। অবশেষে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে। তবে সেটাও ঢালাওভাবে নয়। ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়িতে এখনো ইন্টারনেট সেবা চালু হয়নি। বুধবার (২৪ জুলাই) রাতের মধ্যেই বাসা-বাড়িসহ সব জায়গায় ওয়াইফাই ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদাতা সংগঠনের নেতারা।

বিদেশের মাটিতে সক্রিয় জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীকে বলা দরকার এসব কথা। যেমন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সমস্ত বাংলাদেশ থেকে শিবির-জামায়াত এরা কিন্তু এসেছে। একইসঙ্গে কিন্তু ছাত্রদলের ক্যাডাররাও সক্রিয় ছিল। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে এরাও (বিএনপি) কিন্তু সক্রিয় ছিল।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) এভাবে কেন সুযোগটা সৃষ্টি করে দিলো সেই জবাবটাও জাতির কাছে তাদের দিতে হবে। আমরা তো বার বার তাদের সঙ্গে বসলাম। প্রজ্ঞাপন, সেটাও করা হলো। তাদের কোনো দাবিতো পূরণ করা ছাড়া (বাদ) রাখিনি।’ আন্দোলনকারীদের একদিন জাতির কাছে জবাব দিতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যে দাবি তারা করেছিল কোটা সংস্কারে, যতটুকু চেয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছি। যখন তাদের দাবি মেনে নেওয়া হলো, তারপরেও তারা এই জঙ্গিদের সুযোগ করে দিলো কেন? কোটা আন্দোলনকারীদের কিন্তু জাতির কাছে একদিন এই জবাব দিতে হবে। কেন মানুষের এত বড় সর্বনাশ করার সুযোগ করে দিলো?’ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে সরকারের সহানুভূতিশীল মনোভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় তাদের সঙ্গে সহানুভূতি দেখিয়েছি। তাদেরকে সব সময় নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেসব ঘটনা ঘটেছে এটা কখনো ক্ষমা করা যায় না।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে যারা কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা কেউই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বা প্রিলিমিনারিতেও যোগ দেয় নি। মনে রাখা দরকার, ২০১৩ ও ২০০৮ সালে একই ইস্যুতে আন্দোলন করা হলেও সরকারের কোটা নীতিতে পরিবর্তন আসেনি। সেসময় ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ বিক্ষোভ ও পাল্টা সহিংসতায় ব্যাপকতা পায়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ‘নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মতো ২০২৪ সালে এসে তাদের এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। এ দেশে যে কোন চাকরি সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সন্তান-সন্ততি নাতি-নাতনীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে-এটাই ছিল শেখ হাসিনা সরকারের নীতি। তিনি জানিয়েছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবার মেধাবী না, মেধাবী হল রাজাকারের নাতি পুতিরা? আন্দোলনকারী কেন পিএসসি-এর পরীক্ষা দিল না, অংশগ্রহণ করলো না? জবাব তাদের দিতে হবে। কোটা অবশ্যই থাকতে হবে। অগ্রাধিকার পাবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, তারা চাকরি পাবে আগে। যোগ্য কাউকে না পাওয়া গেলে কিংবা যদি না থাকে কেউ তাহলে বাকি যা থাকবে অন্যরা পাবে।’ এভাবেই কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত থাকবে বলে ২৩ জুলাই (২০২৪) যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে তাতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।

মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনা সরকারই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করেছিল। ফলে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত বাতিল হয় সব ধরনের কোটা। কিন্তু কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ২০২১ সালে আদালতে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ফলে ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের উপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাদেশ দেয় আপিল বিভাগ। স্থগিত হয় কোটা পুনর্বহালের রায়। অর্থাৎ কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসা কোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করছিল। সরকারের দায় ছিল না। বরং আন্দোলনকারীদের মনে রাখা দরকার শেখ হাসিনা সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ভুল করেছিল। কারণ কোটা ব্যবস্থা পৃথিবীর নানা দেশে প্রচলিত আছে। আর জনগোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক নানা স্তরের জন্য কোটা ব্যবস্থা সংরক্ষণ আবশ্যক। এমনকি বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত থাকার সময় বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের রিপোর্ট ২০২০ অনুসারে বিগত ৩৫ থেকে ৩৯তম বিসিএস-এর ৫টি নিয়োগ পরীক্ষার পরিসংখ্যান দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে, কোটায় চাকরি পাওয়ার সংখ্যা নগণ্য। ওই সময়ে মোট নিয়োগ পেয়েছে- ১৪,৮১৩ জন। তার মধ্যে মোট কোটা ৯,৮১৮ জন (৬৬.২%)। এর মধ্যে জেলা কোটা ২১২৪ জন, নারী কোটা ১৪২৬ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ১২৯৮ জন (৮.৭%), ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ১৩১ জন এবং প্রতিবন্ধী কোটায় ১৬ জন নিয়োগ পেয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, পিএসসি’র বিদ্যমান পদ্ধতিতে মেধায় নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল ৪৪% কিন্তু কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় নিয়োগ হয়েছে ৬৬.২%। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% কিন্তু কোটার জন্য বিবেচিত হয়েছে মাত্র ৮.৭%। উপযুক্ত প্রার্থী যারা সকলেই নিঃসন্দেহে মেধাবী। প্রশ্ন এসেছে, কোটা বাতিলের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করতে কিংবা গভীরতা বুঝতে পরিনি কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা কেন শিক্ষার্থীদের কাতারে দাঁড়ায় নি? আসলে আমরা মনে করি, কোটা সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা জরুরি। শেখ হাসিনা সরকার ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ভুল করেছিল। কারণ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার কথা থেকেই আমরা জানতে পেরেছি, কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার ফলে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কমে গেছে। কোনো কোনো সুবিধাবঞ্চিত জেলার কেউ-ই চাকরি পায়নি। পত্রিকায় প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান চিত্র এরকম-কোটা ব্যবস্থা রদের পর পর বিসিএস(পুলিশ)-এ  নারী কর্মকর্তা ও জেলাভিত্তিক কোটার বর্তমান অবস্থা হলো- কোটাভিত্তিক নিয়োগ ৩৮ ব্যাচ পর্যন্ত বহাল ছিলো। কিন্তু ৪০ ও ৪১ ব্যাচ নিয়োগে কোনো কোটা ছিলো না।  কোটা বাতিলের পর বিসিএস পুলিশে নারীদের নিয়োগের সংখ্যা কমে আসতে শুরু করে। তাছাড়া ৪০ ব্যাচে ২৪টি জেলা ও ৪১ ব্যাচে ১৮টি জেলা থেকে কোন কর্মকর্তা নিয়োগ লাভ করে নি। নারী কোটা সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক তথ্যাদি হচ্ছে-৪০ ব্যাচের সুপারিশকৃত মোট সংখ্যা ৫৭৪ জনের মধ্যে নারী সুপারিশকৃত ১২১ জন। যা মোট সুপারিশকৃত সংখ্যার ২১.০৮%। ৪১ ব্যাচে সুপারিশকৃত মোট সংখ্যা ৮১৬ জনের মধ্যে নারী সুপারিশকৃত ১৭৩ জন। যা মোট সুপারিশকৃত সংখ্যার ২১.২০%। ৪৩ ব্যাচের সুপারিশকৃত মোট সংখ্যা ৬৪৫ জনের মধ্যে নারী সুপারিশকৃত ১১০ জন। যা মোট সুপারিশকৃত সংখ্যার ১৭.০৫%। এ তথ্য সাধারণ ক্যাডার সংক্রান্ত, যা কোটার প্রভাব বা অভিঘাত সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেয়। অথচ ৩৮ ব্যাচের সকল ক্যাডারের সুপারিশকৃত কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ২২০৪, নারী সুপারিশকৃত ৫৭৮, যা মোট সুপারিশকৃতের ২৬.৮৭%। ৩৭ ব্যাচের সকল ক্যাডারের সুপারিশকৃত কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ১৩১৩, নারী সুপারিশকৃত ৩০৯ জন। যা মোট সুপারিশকৃতের ২৪.৭৩%। ৩৬ ব্যাচের সকল ক্যাডারের সুপারিশকৃত কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ২৩২৩, নারী সুপারিশকৃত ৫৮৪ জন। যা মোট সুপারিশকৃতের ২৫.৮৯%। উল্লেখ্য, কোটা পদ্ধতি বাতিল হয় ৪০ বিসিএস থেকে। কোটাযুক্ত সর্বশেষ ব্যাচ ছিল বিসিএস ৩৮ ব্যাচ। ২০২০ সালের পর পুলিশের চাকরিতে কোটা  না থাকায় মাত্র চার জন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছে, আর ফরেন সার্ভিসে মাত্র দু’জন নারী প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছে। ২৩টি জেলায় একজনও পুলিশের চাকরি পায় নি। অন্যদিকে ৫০ টি জেলায় নারীরা চাকরির ক্ষেত্রে কোন সুযোগ পায়নি। যখন কোটা পদ্ধতি ছিল নারীদের চাকরিপ্রার্থী কম/বেশি ২৬ পার্সেন্ট এর উপরে চাকরি পেয়েছিল। কোটা তুলে দেওয়ার ফলে এই চাকরি প্রাপ্তি কোনো কোনো বছর ১৯ পার্সেন্টে নেমে এসেছে। একমাত্র মেডিকেলে ডাক্তারদের চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েরা কিছুটা অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে।

উপরের পর্যালোচনা ও পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে আমরা মনে করি বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে বেশি পরিমাণে কোটা ব্যবস্থা অবশ্যই প্রচলিত থাকতে হবে। উপরন্তু নারীসমাজের জন্য স্বতন্ত্র কোটার প্রচলন পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

কিন্তু ১৮ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে আন্দোলনের নামে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে তার দায়ভার কার? ২৩ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে কোটা দাবি’র নেতৃবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ‘পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন ধরনের নাশকতা করে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে।’ — একথা যদি সত্য হয় তাহলে সরকারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কোনো হেতু নেই। বরং সরকার ২০১৮ সাল থেকে যে ব্যবস্থার প্রচলন করেছিল তা ২০২৪ সালে এসে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের মাধ্যমে পুনরায় সুরাহা হয়েছে। আধুনিক যুবসমাজ বর্তমান সরকারের সম্পদ। এজন্য তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের লেখাপড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৩) বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এবং বিশ্বে এ দেশটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। একারণে তরুণ সমাজের সক্রিয় ভূমিকা ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশ’’ গড়ার জন্য খুবই জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তবুদ্ধির নিশানায় ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে এদেশের অগ্রসরতাকে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে কোটা দাবিতে যারা সহিংসতা ও নাশকতা করেছে অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলে শান্তি ও সম্প্রীতি এবং সমৃদ্ধির উন্নত দেশ গড়ে উঠবে।

লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস,  বঙ্গবন্ধু গবেষক, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-writermiltonbiswas@gmail.com


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন