বৃহস্পতিবার | ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৩৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে অমৃতের সন্ধানে মাঘী পূর্ণিমায় শাহীস্নান : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৭২ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকের অন্তর্গত ছোট্ট গ্রাম রায়পুরের বুড়োনাথ শিব।

মানুষের কর্ম কেমন হওয়া উচিত বিশেষ করে সাধকদের, এই নিয়ে একদিন আলোচনা করবার সময় হরি এবং হর দুই জগৎপালক লক্ষ্য করলেন দেবদারুবনের ঋষিরা তপস্যা করছেন বটে কিন্তু সেই চূড়ান্ত আদর্শের লক্ষ্যকে উপলব্ধি করার জন্য অর্থাৎ ব্রহ্মের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য সেই ভক্তি শ্রদ্ধা বা নিষ্ঠা তাঁদের মধ্যে নেই। তাঁরা সেই বনে স্ত্রী পুত্রদের নিয়ে আশ্রম গড়ে তুলেছেন।

সংসারের প্রতি তাদের এতটাই আসক্তি যে যজ্ঞও করছেন সংসারের মঙ্গল কামনায়। ঋষিদের এহেন ব্যবহার দেখে বেশ ব্যথিত হলেন শিব, কারন তিনিই দেবদারু বনের ঋষিদের বলেছিলেন, ‘এই রমনীয় তীর্থে সর্বদা তোমরা আমার ধ্যানে মগ্ন হয়ে থাকবে। এই তীর্থে বসেই আমার আরাধনা করলে তোমরা সিদ্ধি লাভ করবে এবং পুনর্জন্ম হবে না। ঋষিগণ তোমরা মনে রেখো, এই তীর্থে শুধু আমি নই আমার সঙ্গে স্বয়ং নারায়ণও এখানে বসবাস করবেন।’

শিবের মুখেই বাণী শুনে মুনিরা লোভাতুর হয়ে উঠলেন এবং তারা সকলে উপস্থিত হলেন দেবদারু তীর্থে। কিন্তু তাদের অদ্ভুত তপস্যা পদ্ধতিতে শিবা নারায়ন ঠিক করলেন মুনিদের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

মহাদেব তখন এক উনিশ বছরের বালকের বেশ ধরলেন। গতি লীলায় অলস বাহু দুটি তার জানু স্পর্শ করল। স্থূল দেহ, চোখ দুটি সুন্দর, মুখে মৃদু হাসি, গায়ের বর্ণ সোনার মতো। মহাদেব এভাবে পুরুষরূপ ধরলেন আর নারায়ণ ধরলেন মোহময়ী এক স্ত্রীর রূপ। সে মূর্তির লীলা চঞ্চল, ভঙ্গিমা রাজহংসের মত। নুপুরের ঝংকার তুলে দুজনেই প্রবেশ করলেন দেবদারু বনে। হর হলেন মনোহর পুরুষ, হরি হয়েছেন মনোহরণী নারী। তাদের দেখে দেবদারুবনের ঋষিরা নারীরূপী হরির প্রতি আকৃষ্ট হলেন এবং হরের প্রতি আকৃষ্ট হলেন ঋষি পত্নীরা।

এই নারীরা নিজের পতি পুত্রকন্যা ভুলে অচেনা পুরুষের দিকে এতটাই আকৃষ্ট হলেন, যে ঋষিপত্নিরা পতিব্রতা রুপে খ্যাত ছিলেন তারা হরকে দেখে কামপরায়ন হলেন। এদিকে জিতেন্দ্র ঋষিদেরও মোহিত করলেন হরি। মায়া মোহিত হয়ে তারা নানা প্রকার উপভোগের বিষয়কে যেন অনুভব করতে লাগলেন।

তবে এই পরিস্থিতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ঋষিরা তপস্বী ছিলেন। দেবদারুবনের ঋষিদের সন্দেহ হল নিশ্চয়ই এই নারী ও পুরুষ পরস্পর স্বামী ও স্ত্রী সম্বন্ধে আবদ্ধ। তারা সচেতন হয়ে উঠলেন এবং পুরুষরূপী হরের দিকে তাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। তারা দেখলেন তাদের স্ত্রীরা সেই পুরুষ নিয়ে মত্ত। তারা ভাবলেন আমাদের পতিব্রতা স্ত্রীদের আকর্ষণ করছে এই পুরুষ।

তারা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন এবং হরকে কটুবাক্য বলে অপমান করলেন। কিন্তু এতে কোন বিকার হলনা। তখন তারা শিব কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যুবক তোমার পরিচয় কি?’

শিব উত্তর দিলেন, ‘হে ঋষিগণ আমি তপস্বী, তপস্যার জন্য উপস্থিত হয়েছি এই বনে। সঙ্গে যাকে দেখছেন তিনি আমার স্ত্রী।’

ঋষিরা শুনে বললেন, ‘তপস্যার জন্য দিগম্বর হতে হবে কেন? আর স্ত্রীকে নিয়ে তপস্যা করা যায় না!’

শিব বলেন, ‘কেন? আপনারা তো নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্য সর্বদাই ব্যস্ত। তাহলে অন্যকে স্ত্রী ত্যাগের কথা বলছেন কি করে?’

তপস্বী মুনিরা থমকে গেলেন, ভাবলেন তাইতো আমরা এটা কি করছি! তবুও তারা বললেন, ‘আমাদের স্ত্রীরা ব্যভিচারী নয়। তাই আমরা তাদের ত্যাগ করতে অক্ষম।’

শিব বললেন, আমার স্ত্রীও পতিব্রতা। আমি তাকে ত্যাগ করতে অক্ষম।’

মুনিরা সব বুঝেও শিবকে অভিশাপ দিলেন, ‘তোমার লিঙ্গ এখনই স্খলিত হবে।’

শিবকে অভিশপ্ত হতে দেখে ব্রহ্মা আর্বিভূত হয়ে ঋষিদের হর ও হরির উপস্থিতির সম্বন্ধে জানিয়ে সকাম তপস্যা ত্যাগের উপদেশ দিলেন। সেই থেকেই জগতে লিঙ্গ পূজা চালু হল। ভারতবর্ষ জুড়ে শিবলিঙ্গ রূপে এবং মুর্তিরূপে বিরাজমান এবং পুজিত।

রাত পোহালেই শিবরাত্রি। মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি পালন করা হয়। এই দিনটিকে ভগবান শিব এবং দেবী পার্বতীর বিবাহের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এবার মহাশিবরাত্রিতে একটি বিশেষ যোগ তৈরি হচ্ছে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি শুরু। পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে তিথি শেষ। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে, বুধবার সকাল ৯টা ৪১ মিনিট ৮ সেকেন্ড থেকে শুরু তিথি। পরদিন সকাল ৮টা ২৯ মিনিট ৩১ সেকেন্ড তিথি শেষ। সুফল পেতে চাইলে এই সময়ের মধ্যে শিবের মাথায় জল ঢালতে হবে পুণ্যার্থীকে।

কথায় বলে যত্র জীব তত্র শিব। তিনি অভয়শীল, সর্বদা কৃপাশালী এবং সদারক্ষাকারী। ভক্তদের বড়ই আপন দেবাদিদেব মহাদেব। ব্রহ্মা-বিষ্ণু প্রভৃতি দেবতাদের উপাস্য হয়েও কোথাও যেন তিনি আমাদের কাছে খুব সাধাসিধে, ছাপোষা, ঘরের জামাইটি হয়ে আছেন। জামাই হয়ে পুজো পাওয়া দেখা যায় বীরভূমে।

শাল বনের গাড় সবুজ, রাঙ্গাশিমূল লাল পলাশের মাঝে মহাশিবরাত্রিতে বীরভূমের ইটাগড়িয়ার পাটুয়ারা কৃষকরুপে শিবকে কল্পনা করে কৃষি কন্যা দুর্গার সঙ্গে বিয়ে দেন। সে এক আজব বিয়ের কাহিনী।

বীরভূম জেলার মহাম্মদ বাজার ব্লকের অন্তর্গত খুব ছোট গ্রাম রায়পুর। এখানে শিবরাত্রি উপলক্ষে চতুর্দশী অতিক্রান্ত হলে অমাবস্যা লগ্নে শিব পার্বতীর বিয়ে হয় পুরাতন শিব মন্দিরে। শিবের নাম বাবা বুড়োনাথ।

কথিত আছে, শতাধিক বছর আগে বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা শৈবসাধক শংকর গোস্বামী রায়পুর সংলগ্ন তাজপুরে এসে বসতি স্থাপন করেন। তিনি শিবের ভক্ত হওয়ায় এখানে প্রতিষ্ঠা করেন বাবা বুড়োনাথ শিবলিঙ্গকে। তখন থেকেই শুরু হয়েছে এই বিয়ের উৎসব।

শিবের বিয়ে উপলক্ষে শিব এবং পার্বতীর মাটির মূর্তি বা পটে আঁকা হয়। অমাবস্যা পড়লে ভক্তদের মাথায় চেপে বৃষবাহন শিবপার্বতীর প্রাচীন বিগ্রহটি স্থাপন করা হয় মন্দির সংলগ্ন ছাদনাতলায়। তেল সিঁদুরে সেজে ওঠেন দেবী গ্রামের মেয়ে হয়ে। শিবের গলায় থাকে বর মাল্য মাথায় থাকে বিয়ের টোপর। মালাবদল, শুভ দৃষ্টি, লজ্জা বস্ত্র, সিঁদুর দান …সমস্ত লোকাচার নিয়মনিষ্ঠা সহকারে পালিত হয়। বিয়েতে দান সামগ্রীও দেওয়া হয়। সাতদিন ধরে শিব পার্বতীকে নিয়ে থাকে ছাদনাতলায়। অষ্টমঙ্গলায় ভক্তদের কাঁধে চড়ে বউ নিয়ে আবার মন্দিরে ফেরেন। সেই দিন এলাকার লোকজন পাত পেড়ে খিচুড়ি তরকারি টক খাওয়ার ভোজের আয়োজন করেন। সাত দিন ধরে মেলা বসে এখানে এই মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল মাটির বাসন, বিশেষ করে হাঁড়ি আর খাজা। প্রায় ২০০ গাড়ি বাসন আনলেও মেলায় সব বিক্রি হয়ে যায়।

গ্রামের গোস্বামী বাড়ি বাবা বুড়োনাথের সেবাইত হলেও, উৎসবে যোগ দিতে আসেন শুধু রায়পুর নয় আশেপাশে গ্রামগুলি যেমন ডেউচা, ডানকোণা, বাগলপুর, নবগ্রাম, ভাগলপুর, গামিরা প্রভৃতি পঞ্চাশ গ্রামের লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে বুড়োনাথের বিয়েতে।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন