শনিবার | ২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৫৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ৪১৫ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

সূর্য ডোবার আগেই মোরাংয়ের ভেতরে কাঠকুটোর আগুনের ধিকিধিকি। আলো আঁধারিতে মোরাঙয়ের দেওয়ালে টাঙানো মরা মিথুন, শিয়াল, মহিষের মাথার খুলিতে গা ছমছম। কবে কোন নাম না জানা কোনিয়াক শিল্পীর হাতে কাঠ খোদাই করা নরনারী, বন্য জন্তুজানোয়ারের মূর্তিতে আদিম বন্যতা। কাঠ কয়লার ধোঁয়ায় সে বন্য রহস্যময়তা আরো ঘনিয়ে ওঠে।

আগুন ঘিরে বসে থাকে আফিমের নেশায় ঝিম হওয়া কিছু মানুষ। কারোর মুখে উল্কির অদ্ভুত আঁকিবুঁকি। মাথার খোহম টুপিতে সাজানো ধনেশ পাখির পালক। বুনো শুয়োরের দাঁত, পশু লোম। কানের ফুটোয় ছাগলের শিং, গলায় রঙবেরঙের পুঁতির মালা।

নেশায় বুঁদ হয়ে তারা হয়ত ভাবে তাদের অতীত গৌরবের কথা! সেই কবে কিশোর থেকে পুরুষ হবার পরীক্ষায় তাদের প্রথম নরমুন্ড শিকার করতে হয়েছিল। উপজাতি সংঘর্ষ লেগেই থাকত সেসময়। ছিল জমি দখলের লড়াই। শত্রুর মুন্ডছেদন করে বিজেতার উল্লাসে সেই কাটা মুন্ডু ট্রফির মত হাতে করে সেই কোনিয়াক বীরেরা ঘরে ফিরত।

নরমুন্ড শিকার বন্ধ হয়েছে কবেই! এখন এই লোলচর্ম বৃদ্ধ দেহটাই নরমুন্ড শিকারীদের শত্রু। একমাত্র মৃত্যুই এসে সেই শত্রুনিধন করতে পারে। তবু নব্বই ঊর্দ্ধ এই মানুষগুলোর পেটে ক্ষিদের আগুন। মোরাংয়ের পাশেই চাংসার রান্নাঘর। সেখানে যেদিন শূয়োর ঝলসানো হয়, গুটিগুটি পায়ে খেতে বসে পড়ে এই বৃদ্ধ বীরেরা।

“আজ নেই কিছু নেই রাজা ও ফকির

     একসাথে পথ চলা ক্ষিদেদের ভিড়

ওরা শুধু বেঁচে আছে বাঁচার তাগিদে

     পেট জুড়ে পড়ে আছে একরাশ ক্ষিদে”

ভারত আর মায়ানমার সীমান্তে নাগাল্যান্ডের এক অদ্ভুত গ্রাম লঙ্গোয়া। সেখানে বাস করে এই কোনিয়াক উপজাতি। দু-দেশের সীমানায় কোনো কাঁটাতারের চোখরাঙানি নেই। রাজার বাড়ি বা আঙের শোবার ঘর ভারতে আর রান্নাঘর মায়ানমারে। তাদের এই বনজগতে ওক, বাঁশ, ফার্ণ, পাইনের সবুজ ঠাস বুনট। তারই মধ্যে এক একটা লাল পাতাওলা গাছ বা ফুলের সগৌরবে উপস্থিতি। সবুজ প্রতিবেশীরা যেন সযত্নে রক্ষা করে তাদের লালমণিকে। সকাল থেকেই সেখানে ঝিঁঝিঁদের স্বাধীন সংগীত। নির্ভয় পাখিদের কলকাকলি।

এদেরই সঙ্গে ছিল আমাদের দু-দিনের শখের অরণ্যবাস। ওদের মোরাং ঠিক যেন আমাদের চন্ডীমন্ডপ। গাঁওবুড়োদের সঙ্গে গল্পগুজব হল। বারুদ তৈরির কলাকৌশল দেখলাম। গান গাওয়া, খাওয়াদাওয়া। মোরাং লাগোয়া চাংসাদের রান্নাঘরে অতি সামান্য উপকরণে চিকেনকারি রাঁধলাম। খেলাম ওদের হুম প্লেটে। সামান্য আয়োজনে সে এক অদ্ভুত ঢিমে তেতালা যাপন লঙ্গোয়া গ্রামে। এই আদিম বন্যতার টানে ছুটে এসেছে দু-একজন বিদেশী অতিথিও।

এই সময়টায় ওদেরও মনে বসন্তের দোলা।কোনিয়াকরা সেজে ওঠে তাদের নববর্ষ উৎসব আওলঙে।

 

লঙ্গোয়া গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা গিয়ে মন শহর। সরকারি আয়োজনে সেখানে এবার উৎসব পালন। পথে দেখি দলে দলে মেয়ে পুরুষ রঙিন পোশাকে, পুঁতির মালায় সেজে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলেছে। একঝাঁক কমলা সুন্দরী গানের তালে উৎসবের আঙিনায় পা মেলাল। কোনিয়াক পুরুষরা দেখাল তাদের শৌর্য বীর্যেভরা নাচ। মস্ত কাঠের গুঁড়িতে কয়েক জোড়া হাতের মোটা লাঠি দিয়ে বাজল দ্রিমি দ্রিমি তালবাদ্য। মেলার মোরাং থেকে লঙ্গরের মত বিতরিত হচ্ছিল কলাপাতায় সেদ্ধ করা ভাত আর সামান্য নুন দেওয়া শূয়োরের মাংস। বাঙালি রসনাকে তা অবশ্য বিশেষ তৃপ্ত করে না।

অন্য আরেক অতৃপ্তিও যেন মনের গভীরে কোথাও অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। পাহাড়-জঙ্গলের সরলতায় সে যেন এক জটিল ইঙ্গিত।

শিকারী, বনচারী কোনিয়াকরা এখন সভ্য হতে শিখেছে। জঙ্গলের হিংস্র জানোয়ার থেকে তারা আজ ভয়হীন। শত্রুর মুন্ডহীন শরীরের রক্তের রেশ মুছে গেছে কবেই। খ্রীষ্টান মিশনারীদের কল্যাণে শিক্ষার আলো এসেছে সমাজে। গীটার বাজিয়ে কেউ ইংরিজি গান গায়। কাজ চালানো ইংরিজি-হিন্দি বলতে পারে কোনো কোনিয়াক যুবক। হোম স্টে খুলেছে তারা। মন শহরে ব্যবসা করে হাতে দুটো পয়সা আসছে। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে পদ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী দু-একজন। কে জানে, যারা সফল হতে পারল না তাদের মনে জমে উঠছে না তো বিষের বাষ্প! ঘনিয়ে উঠছে না তো ঘন জঙ্গলের থেকেও অন্ধকার এক ঈর্ষা আর লোভের জগৎ। যা সভ্যতার অভিশাপ হয়ে অরণ্যের মত অরণ্যচারীদেরও নির্মূল করে দেবে!


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী”

  1. মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য says:

    এক পা নাগাল‍্যাণ্ডে অন‍্য পা মায়ানমারে। অদ্ভুত অনুভূতি। তোমার লেখার সাথে এক আশ্চর্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হল।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন