কলকাতার ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-এ এক উৎসব হয়ে গেল। পেন উৎসব। পেন মানে ঝর্না কলম। যে কলম আজ আর নেই। চিঠির মতো যা হারিয়ে গিয়েছে। এই উৎসবে যোগ দিয়েছে দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, ইন্দোর, জার্মানি, জাপান, চিনের বিভিন্ন সংস্থা।
এই পেন উৎসবের প্রসঙ্গে মনে পড়ল প্রেমবিহারী নারয়ণ রায়জাদা ও তাঁর ঝর্না কলমের কথা।
১৯০১ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রেমবিহারী জন্মগ্রহণ করেন দিল্লির এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছোটবেলাতেই তাঁর মা-বাবা মারা যান। দাদু রামপ্রসাদ সাক্সেনা ও কাকা চতুরবিহারী নারয়ণ সাক্সেনা মানুষ করেন তাঁকে। দিল্লির স্টেন স্টিফেন্স কলেজ থেকে স্নাতক হন প্রেমবিহারী। কিন্তু তাঁর মন ঝুঁকেছিল ক্যালিগ্রাফির দিকে। ক্যালিগ্রাফি বা হস্তলিখন শিল্প ভারতে প্রাচীনকাল থেকে সমাদৃত হয়ে আসছে। দাদু রামপ্রসাদও ক্যালিগ্রাফি চর্চা করতেন। তিনিই প্রথমত প্রেমবিহারীর অনুপ্রেরণা। প্রেমবিহারীর পরে এদেশে ক্যালিগ্রাফার হিসেবে যাঁরা নাম করেছেন তাঁরা হলেন দেবনাগরীতে আচার্য শ্রীকৃষ্ণ শর্মা (১৯২৪-২০০২), মারাঠিতে অচ্যুৎ পল্লব (১৯৩১-২০১৮), দেবনাগরীতে এ.ভি.ভাটকর (১৯২০-২০০৮), ওড়িয়াতে গোপাল সাহু (১৯৩৩-২০২১)।
স্বাধীনতা লাভের পরে আম্বেদকরের নেতৃত্বে প্রস্তুত হয় ভারতের সংবিধানের খসড়া। সেই খসড়া সুন্দর করে হাতে লেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ডেকে পাঠান প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদাকে। তখন ক্যালিগ্রাফার হিসেবে তাঁর নামডাক হয়েছে। সংবিধান হাতে লিখে দিতে রাজি হন প্রেমনারায়ণ। তখন পারিশ্রমিকের কথা ওঠে। উত্তরে প্রেমনারায়ণ বলেন, ‘এক পয়সাও না। ঈশ্বরের কৃপায় আমার সবকিছু আছে এবং আমি আমার জীবন নিয়ে খুশি।’
তবে একটা শর্ত আছে।
কি শর্ত ?
শর্ত হল প্রতি পাতায় থাকবে তাঁর নাম, আর শেষ পাতায় থাকবে তাঁর দাদুর নাম।
শর্ত মেনে নিলেন স্বাধীন ভারতের নেতারা।
সংসদ ভবনের একটি কক্ষে (আজ যা ‘সংবিধান ক্লাব’ নামে পরিচিত) বসে কাজ শুরু করে দিলেন প্রেমনারায়ণ। ইংল্যাণ্ড আর চেকোশ্লোভাকিয়া থেকে এল ৩০৩ নম্বর নিব। মোট ৪৩২টি নিব লেগেছিল। লেখার জন্য পুনের ‘হ্যাণ্ডমেড পেপার ইন্সটিটিউট’ থেকে এল পার্চমেন্ট কাগজ। কিন্তু কোন ঝর্না কলমে লিখেছিলেন তিনি? সেটা কি উইলসন ভ্যাকুমেটিক, বিখ্যাত পার্কার ভ্যাকুমেটিকের নকল? টানা ৬ মাস ধরে ২৫১ পার্চমেন্ট কাগজে প্রেমনারায়ণ লিখলেন ৩৯৫ ধারা, ৮ তফশিল ও প্রস্তাবনা।। পাণ্ডুলিপির ওজন হল ৩.৭৫ কেজি। হাতে লেখা সেই সংবিধান অলঙ্কৃত করার জন্য এগিয়ে এলেন শিল্পী নন্দলাল বসু ও অন্যান্য শিল্পীরা।
প্রেমনারায়ণের হাতে লেখা সেই সংবিধানের আয়ু হাজার বৎসর। সেটি আছে সংসদ ভবনের গ্রন্থাগারে। কিন্তু যে ঝর্না কলমে তিনি লিখেছিলেন, সেটি কোথায় আছে? কেমন আছে?
ভালো লাগল
ভালো লাগল। পেনটির হদিস পেলে দারুণ হবে।