রবিবার | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৩০
Logo
এই মুহূর্তে ::
অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সৈয়দ মুজতবা আলী : সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম / ২৮২ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩

ছেলেবেলায় চেয়েছিলেন আতাউল্লাহ ভাই হতে। দোকানদার। মনিহারি পসরা সাজিয়ে। একসময় ভাবতেন ফুটবলার হবেন। জেট প্লেন চালানোর স্বপ্নভূত ভর করেছিল। এয়ারফোর্সে পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। কিন্তু বিধি তাঁকে ঠেলে পাঠায় ইংরেজি পড়তে। দেশ পেয়ে যায় একজন বহুমাত্রিক প্রজ্ঞাঋদ্ধকে।

সিলেট শহরে অনেকটা জায়গাজুড়ে বাড়িটিতে ছিল ফল আর ফুল গাছে ঘেরা ছায়াময় মায়াবী নিসর্গ। বাড়ির দরজা খুললেই মণিপুরী রাজবাড়ি। মণিপুরীদের বর্ণাঢ্য সব উৎসব— দোল পূর্ণিমা, রাস পূর্ণিমা, অর্চনা; আর সেসব উৎসবে নাচগান সব বাড়িতে বসেই দেখা যেতো। এ ছাড়া পাড়ায় ছিল হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়। সাম্প্রদায়িক সখ্য ও সম্প্রীতির সেই পরিবেশে বেড়ে ওঠা তাঁর। মা ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। মায়ের বই পড়ার নেশাটা ছিল রীতিমতো সংক্রামক! মায়ের বড় মামা সৈয়দ মুজতবা আলী। বাংলা কথাসাহিত্যের কালজয়ী স্রষ্টা। কোলকাতা থেকে মায়ের জন্য তিনি পাঠাতেন উল্টোরথ, দেশ, আশাপূর্ণা দেবীর লেখা বিভিন্ন বই আর সাময়িকপত্র। তাই বাড়িতে বই পড়ার অভ্যেসটা ছিল একটা বাড়াবাড়ি রকমের আনন্দের। ছোটবেলা থেকেই সৈয়দ মুজতবা আলীকে দেখেছেন; দেখেছেন মহীরুহসম এই লেখকের সূক্ষ্ম রসবোধ। বাবার বদলির সূত্রে ছয় বছর বয়সেই যেতে হয়েছিল কুমিল্লায়। ভিক্টোরিয়া কলেজের উত্তরে ছিল রানী দিঘীর পাড়। আর ছিল কে কুমার স্টুডিও। কুমারদা ব্যানার আঁকতেন। পেইন্টিংও করতেন। নিসর্গ। এঁকে যেতেন নিবিষ্টে। বলতে গেলে শিল্প—সমালোচনার সূচনা সেখান থেকেই। নিমগ্ন হয়ে কুমারদার কাজ দেখাটা অভ্যেসে পরিণত হয়। মাঝে মাঝে বলতেন, দ্যাখ তো কেমন হলো ছবিটা! মতামত দিতেও হতো।

নিজেও আঁকতেন ছবি। চারকোল দিয়ে। পরে বিভিন্ন দালানের স্কেচ করেছিলেন। ছাত্র ছিলেন ইংরেজির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে আড্ডা জমতো চারুকলায়, বন্ধু মারুফ আহমেদের সঙ্গে। শিল্পী শাহতাব ভাই, সফিউদ্দিন আহমেদ স্যার বিশেষ স্নেহ করতেন। ছবির প্রতি অদম্য আগ্রহ থেকে চারুকলায় জয়নুল আবেদিনের অনুমতি নিয়ে ক্লাসে বসে কাজ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উৎসাহ দিয়েছিলেন তাঁকে। ফলে টেক্সচার, আলোছায়া, স্কেচ, লিথোগ্রাফি, প্রিন্ট, জলরঙ, ফর্ম…শিল্পকলার করণকৌশল খুব ভালোভাবেই তাঁর রপ্ত হয়ে যায়।

ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এস এম আলী ছিলেন তাঁর মামা। শিল্পকলার ইতিহাস বিষয়ে অনেক বইয়ের সন্ধান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে লিখতেও উৎসাহিত করেছেন। একটু অন্যভাবে বললে, আশকারা দিয়েছেন। তখনকার জনপ্রিয় দৈনিক সংবাদে প্রথম লেখা শিল্পী পাবলো পিকাসোকে নিয়ে। সন্তোষ গুপ্ত ও আবুল হাসনাত বিশেষ উৎসাহ দেন। পিঠ চাপড়ে প্রশংসা করেছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান। উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, যে—কোনো পেইন্টিং তুলে নিয়ে যাও… কিন্তু সেটা কোনো দিনই হয়নি। ১২ বছর একনাগাড়ে সংবাদে লিখেছেন। জনপ্রিয় এই কলাম: ‘অলস দিনের হাওয়া’। এতক্ষণ নাম না বললেও অনেকেই আন্দাজ করে নিয়েছেন। আর যারা পারেননি তারাও এখন বিলক্ষণ বোঝেন, তিনি আর কেউ নন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ছাত্রদের প্রিয় এসএমআই। বন্ধুদেরও।

যা হোক, ১৯৭৩ সালে তিনি লেখেন প্রথম উপন্যাস। ‘বিশাল মৃত্যু’। একাধারে শিক্ষক, লেখক, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক, কলামিস্ট, শিল্প—সমালোচক। মুকুটে অনেক পালক। সব কটিই প্রোজ্জ্বল।

ঢাকা ও কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রবন্ধ, গল্পসংকলন, উপন্যাস। সুরজিৎ ঘোষের উদ্যোগে কোলকাতার প্রমা থেকে বেরোয় ‘থাকা না থাকার গল্প’। মহাশ্বেতা দেবী, আবুল বাশার ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের যৌথ সংকলন। বিচিন্তা পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রিকায় তাঁর গল্প, উপন্যাস বেরিয়েছে।

গল্পের প্রতি তাঁর আকর্ষণ অনির্বচনীয়। জীবননিষ্ঠ। ছোটবেলায় বাসায় দেখাশোনা করতেন হাবীব ভাই। তিনি চমৎকার গল্প বলতেন। পাড়ায় ছিল বিধবা দিদিমা। তিনিও অসাধারণ গল্প বলতেন জাঁতি দিয়ে সুপারি কাটতে কাটতে। বন্ধুরা মিলে গোল হয়ে বসে দিদিমার গল্প শুনতেন। তাঁর লেখায় এসব নীরব অনুঘটক, অনুপ্রেরণা। প্রথমা থেকে প্রকাশিত ‘প্রেম ও প্রার্থনা’র প্রচ্ছদ ছিল শিল্পী মনিরুল ইসলামের পেইন্টিং ‘এপ্রিল ইন দ্য বিচ’। শ্রেষ্ঠ গল্পের বইয়ের পুরস্কার পায় বইটি। এ ছাড়া ‘সুখ—দুঃখের গল্প’, ‘বেলা অবেলার গল্প’, ‘কাচ ভাঙা রাতের গল্প’, এমন বেশ কিছু গল্পসংকলন।

শিল্পী কিবরিয়ার ওপর বেরিয়েছে তাঁর ইংরেজিতে লেখা বই। ১৯৯৬ সালে পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ২০০৫—এ প্রথম আলো সেরা বই পুরস্কার আর ২০০৬—এ কাগজ সাহিত্য পুরস্কার। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লেখনীতে ঋদ্ধ হয়েছে শিল্প—সমালোচনা, উপন্যাস, গল্প, অনুবাদ, রম্য মায় চিত্রনাট্য। কবিতা তিনি খুব ভালোবাসেন। অনুবাদও করে থাকেন। নিজের কবিতার তীব্র সমালোচকও তিনি। বললেন, ‘আমি মাঝে মাঝে কবিতা লিখি, ছাপাও হয়েছে কিছু দৈনিকে। কিন্তু আমার কাছে ভালো লাগেনি, তাই খুব উৎসাহ পাই না।’ নাটক লিখেছেন। ‘ভুবনের ঘাটে’। এটি বহুল প্রশংসিত প্রযোজনাও। রম্যরচনার উৎসাহ পেয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলীর কাছ থেকে। সদালাপী, বিমলানন্দে পূর্ণ, দক্ষ ভাষাবিদ। আর রসবোধ তো বলার অপেক্ষা রাখে না। হাস্যরসে পরিপূর্ণ একজন লেখক হিসেবে নানা মাত্রায় তাঁকে দেখা, কাছে পাওয়ার সুযোগ তাঁর হয়েছে। সৈয়দ মুজতবা আলী খুব মজলিসি মানুষ ছিলেন। তাঁদের বাড়িতে আসতেন সুতি কাবাব, নানখাতাই, বাখরখানি নিয়ে। উপদেশ দিতেন, ‘শোন, কাঁদাবি হাসাতে হাসাতে!’

ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল দোকানদার হবার। বাড়ির পাশেই মনিহারি পসরায় দোকান সাজিয়ে বসতেন আতাউল্লাহ ভাই। চেয়েছিলেন তাঁর মতো হতে। সম্ভবত চকলেটের কৌটোগুলো দখলে নেওয়ার জন্য। এরপর ফুটবলার, তারপর সত্যি সত্যি জেট—পাইলট হবার সাধ। এয়ারফোর্সে নির্বাচনী পরীক্ষাও দিয়ে বসেছিলেন। পরে মত বদলে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে।

ছোটবেলায় বাড়িতে ছিল এক সাংস্কৃতিক পরিবেশ। সবাই বই পড়তেন। বাড়িতে বই, জন্মদিনে বই। বই যেন মহার্ঘ্য। সে সময় সিলেটে নিউজ কর্নার নামে একটি বইয়ের দোকান ছিল। বৃত্তির টাকা দিয়ে বই কিনতেন। কিন্তু লাইব্রেরিসুদ্ধ বই তো আর কেনা সম্ভব ছিল না। তখন ওই লাইব্রেরির মেঝেতে বসেই পড়ে ফেলতেন নতুন আসা বই। লাইব্রেরির মালিকও দারুণ এক মানুষ। নিজের ব্যবসার চিন্তা না করে, অকাতরে তিনিও পড়তে দিতেন। এসব আর এখন ভাবাই যায় না। জন্মদিন এলে, নতুন বই উপহার পাওয়া যেতো রঙিন র‌্যাপিং পেপারে মুড়ে। আজও তাই উপহার হিসেবে বই পেলেই সবচেয়ে বেশি খুশি হন। সমান তৃপ্তি পান বই দিতেও।

নিউমার্কেট থেকে অনেক বই কিনতেন অবিশ্বাস্য দামে; সেটাও টাকা বাঁচিয়ে, আজকাল যা অসম্ভব। জীবনের একটা সারল্য ছিল সেই সময়ে।

বইয়ের মতো শিল্পকলা তাঁর আরেক অচ্ছেদ্য নেশা। লিখেছেন এ নিয়ে প্রচুর। শিল্প—সমালোচনা করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। সবচেয়ে আনন্দ পান শিল্পী মনিরুল ইসলামের সৃষ্টি নিয়ে লিখতে। কারণ তিনি যখন কাজ দেখান, প্রথমেই বলেন, ‘মনজুর ভাই, আপনি বলেন, সমালোচনার কী দেখলেন, প্রশংসা পরে শুনবো।’ একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী, অথচ কী সাংঘাতিক বিনয়ী তিনি।

অনেক শিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন। প্রীতি উপহার হিসেবে অনেকের সৃজনই রয়েছে তাঁর কাছে। তবে নিজের সংগ্রহের জন্য কিনেছেন ভাস্কর রাশা ও শিল্পী শাহতাবের কাজ।

একলা চলার দিন শেষ করেন ২০ জুন, ১৯৭৬ সালে। স্ত্রী সানজিদা ইসলাম। তাঁর বিষয়ও ইংরেজি সাহিত্য। কর্মক্ষেত্রে তিনিও একজন সফল মানুষ। আর সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জীবনপাতায় সানজিদা ইসলাম প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। একমাত্র ছেলে শাফাক ইসলাম। আমেরিকায় আছেন, আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য। জীবনে ছেলে শাফাক তাঁর রোল মডেল। সত্য বাণী, সত্য অনুভব ও সত্যের প্রয়োগে শাফাকের ব্যক্তিত্ব দীপ্যমান আর তাতে মুগ্ধ বাবা। ছেলে ভালো ছবি তোলেন, তবলা ও পিয়ানো বাজান, ডাকটিকিট সংগ্রহ করেন।

স্টাইল নিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের নিজস্ব ভাবনা আছে। তাঁর মতে, এই স্টেটমেন্টকে ব্যক্তিত্বের আলোয় আলোকিত হতে হবে। জন লেননের ভক্ত সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পুরান ঢাকা থেকে রাউন্ড ফ্রেমের পুরনো ফ্রেম কিনলেন ৩০ টাকায়। ঘষে—মেজে পরলেন চশমাটি। বেশ মানিয়েও গেল লেনন স্টাইলটি। আজ পর্যন্ত এটাই তাঁর সবচেয়ে পছন্দের স্টাইল। একটু গাঢ় রঙে ঝোঁক আছে। সবুজ, মেরুন, নীল। আটপৌরে থাকতেই ভালোবাসেন তিনি। পিএইচডির সমাবর্তনে কোট—টাই পরে রীতিমতো হাঁসফাঁস করেছেন। শার্ট—প্যান্ট, পাঞ্জাবি পছন্দ। ভালো লাগে ফ্যাব—ইন্ডিয়ার পাঞ্জাবি। এর কাটিং অসাধারণ। প্রবর্তনার পাঞ্জাবি পরেছেন। বানিয়েও পরেছেন, তবে ভালো কাট না হলে তাঁর মন ওঠে না। ভালোবাসেন বৃষ্টি আর গান। লালন, হাসন রাজা, নজরুল, হারানো দিনের গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত। প্রিয় খিচুড়ি—ইলিশ, সবজি। আর স্বপ্ন দেখেন একটু অলস প্রহরের। বলা যেতে পারে আলস্যবিলাস! কিন্তু সেটি আকাশ—কুসুম ভাবনা হয়েই থেকে গেছে। কাজের পর কাজ, প্রহর আর ফুরোয় না।

ফ্যাশন স্টেটমেন্টে কোনো বাহুল্য নেই। হাতের ঘড়িটির ব্র্যান্ড টাইমেক্স। ছেলের দেয়া। ভালোবাসেন পারফিউমও। যদিও সেভাবে পরখ করে দেখেন না কোনো ব্র্যান্ড।

জীবনের গল্প শুনতে ও লিখতে ভালোবাসেন। মাঝে মাঝে জীবনও গল্পের মতো হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই মায়ের মুখে শুনতেন— ‘তোর জন্যই জীবন আমার।’ জন্মেছিলেন ১৮ জানুয়ারি, ১৯৫১। জন্মের পর অনেকক্ষণ মা ছিলেন অচেতন। অনেক পরে জ্ঞান ফেরে। সবাই বলতেন, শিশুটির জন্য সৃষ্টিকর্তা মাকে বাঁচিয়ে দিলেন। কাকতালীয় ২০০৪ সাল। ১৮ জানুয়ারি। সেই সকাল। সেই জন্মক্ষণেই মা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের। জীবনের এ বেদনার্ত অংশ নিয়ে গল্প লেখার সাহস হয়ে ওঠেনি। জন্মদিন উদযাপন করা হয় না সেই থেকে। রবীন্দ্রনাথের বাণী হৃদয়ে নিয়ে এগিয়ে চলে তাঁর জীবন: ‘সত্য যে কঠিন, তবু / কঠিনেরে ভালোবাসিলাম!’


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন