শনিবার | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৫১
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

গাজীপুরে স্বামীজি ও পাওহারী বাবার সাক্ষাৎকার : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৬৪৮ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩

১৮৯০-এর জানুয়ারিতে স্বামী বিবেকানন্দ গাজীপুর এলেন ধর্মের আকর্ষণে–পাওহারী বাবার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশে। শ্রীরামকৃষ্ণের তিরোভাবের পর স্বামী বিবেকানন্দ যেন বেশ কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। অন্তরে অনুভব করেন এক অতৃপ্তি জনিত অস্থিরতা। কোথায় গেলে, কার কাছে গেলে এই অস্থিরতার উপশম পাবেন সেই আশায় তিনি নানা তীর্থস্থান ভ্রমন করতে লাগলেন। অবশেষে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের শীতকালে তিনি গাজীপুরে পাওহারী বাবার আশ্রমে এলেন এবং এখানে এসে এই মহাত্মার প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হলেন। ‘পওয়ারী’ কথার অর্থ বায়ু সেবনকারী। অর্থ পবন-আহারি, অর্থাৎ যিনি পবন বা বাতাস খেয়েই বেঁচে থাকেন। বারাণসী জেলার গুজী নামক স্থানের নিকটবর্তী এক গ্রামে ব্রাহ্মণবংশে জন্মগ্রহণ করেন এই মহাত্মা।

পাওহারী বাবার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, পরম বৈষ্ণবোচিত আচরণ, অনাবিল চরিত্র মাধুর্য, সাধন শক্তি ও মধুর কণ্ঠস্বরে স্বামী বিবেকানন্দ আপ্লুত হয়ে পরলেন। তাঁর মনে উদয় হলো নতুন আশার আলো।

স্বামীজি নিজের ভাষায় তার অভিজ্ঞতার কথা শোনা যাক —’ইনি অতি মহাপুরুষ— বিচিত্র ব্যাপার এবং এই নাস্তিকতার দিনে ভক্তি ও যোগের অত্যাশ্চর্য অদ্ভুত নিদর্শন। আমি ইহার শরণাগত হইয়াছি। আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। যা সকলের ভাগ্যে ঘটে না।’ (বিবেক সমগ্র প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ২২৪, রিফ্লেক্ট)

গাজীপুরে এসে প্রথমেই স্বামী বিবেকানন্দ উঠেছিলেন তার বাল্যবন্ধু ডন সোসাইটি খ্যাত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বাড়িতে। কিছুদিন পরে তিনি আশ্রয় নেন গগনচন্দ্র রায়ের গৃহে। গগন বাবুর বাড়িতে প্রতি রবিবার বসতো ধর্মসভা। সেখানে রাধাকৃষ্ণ লীলা বিষয়ক সংগীতেরও আয়োজন করা হতো। গগন বাবুই স্বামীজির সঙ্গে পাওহারী বাবার সাক্ষাৎকার করিয়ে দেন। প্রায় তিন মাসকাল গাজীপুরে ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এই পর্বে তার লেখা ২২টি চিঠি সংকলিত হয়েছে ‘স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা’র ষষ্ঠ খন্ডে। এখানেই রয়েছে গগনচন্দ্রের প্রসঙ্গ।

শ্রীরামকৃষ্ণের গৃহীভক্ত বলরাম বসুকে ৩০ জানুয়ারির এক পত্রে বিবেকানন্দ লিখলেন, — ‘… গগনচন্দ্র রায় নামক একটি বাবু আফিম বিভাগের Head (বড়বাবু) তিনি যৎপরোনাস্তি ভদ্র পরোপকারী ও Social (মিশুক)।’ ….’তুমি যদি গাজীপুর আইস, গোরাবাজারের সতীশবাবু অথবা গগনবাবুর নিকট আসিলেই আমার সন্ধান পাইবে।’

পাওহারী বাবা রামকৃষ্ণদেব কে জানতেন। তিনি তার যোগ্য শিষ্য বিবেকানন্দকে কাছে পেয়ে স্বভাবতই আনন্দিত হয়ে ওঠেন। উভয়ের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্কের স্থাপনা হল। স্বামীজি পাওহারী বাবার বাণীতে এমনই গুণমুগ্ধ হয়ে উঠলেন যে, তার চরণোশ্রিত হয়ে যোগ সাধনায় দীক্ষা নিতে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। পাওহারী বাবাও স্বামীজির প্রার্থনা শুনে যোগ দীক্ষা দিতে রাজি হলেন।

কথিত আছে, দীক্ষাদানের আগের দিন রাতে ঘটে গেল এক অদ্ভুত ঘটনা। গুরু শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের কথা মনে হতেই স্বামীজি মাটিতে উঠে বসলেন। হঠাৎ অন্ধকার ঘর এক দিব্য আলোয় ঝলমলিয়ে উঠলো। দেবমানব রামকৃষ্ণ যেন করুণ দৃষ্টিতে তাঁকে ভর্ৎসনা জানাচ্ছেন। স্বামীজী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন। পরের দিন আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। তিনি অনুভব করলেন করুণাময় গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ অসীম কৃপা গভীর ভালোবাসা তাকে বিপথগামী হতে বাধা দিচ্ছে। তিনি কৃতকর্মের জন্য তীব্র অন্তর্দাহ অনুভব করলেন। গুরুচরনে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। শেষপর্যন্ত পাওহারি বাবার কাছে স্বামীজিরার যোগ দীক্ষা হয়নি। তিনি গাজীপুর ত্যাগ করেন।

ভগিনী নিবেদিতা বলেছেন যে স্বামীজি গুরু হিসাবে পাওহারী বাবাকে শ্রীরামকৃষ্ণের পরেই স্থান দিতেন। বিবেকানন্দ একবার বাবাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘বাবাজি! আপনি অসাধারণ যোগবলের অধিকারী। তবে কেন আপনি লোকালয়ে অবতীর্ণ হয়ে মানব কল্যাণে নিযুক্ত হননা?’ পাওহারী বাবা তাঁর স্বাভাবিক বিনয় ও রসিকতার সহিত স্বামীজীকে এক হাসির গল্প বললেন —

একবার এই দুষ্ট লোক একটি অপরাধমূলক কাজ করে ধরা পড়ে গেলে সকলে মিলে তাকে জোর করে তার নাক কেটে দেয়। লোকটা লজ্জায় লোকালয় ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। বনে একটা বাঘের চামড়া আসনে বসে চোখ বুজে সাধুর মতো ধ্যান করে। আস্তে আস্তে লোকেরা এই অদ্ভুত দর্শন সাধুকে দেখতে ভিড় জমায়। দর্শন করতে এসে তারা তাকে প্রণামী দিত। অরণ্যবাসে এত সহজে জীবিকানির্বাহের উপায় পেয়ে মৌনীবাবা খুব খুশিতে দিন যাপন করতে শুরু করেন।

একবার এক যুবক তার বিশেষ ভক্ত হয়ে উঠল সেই সাধুর কাছে দীক্ষা নিতে চাইলে কিছুতেই সাধু তাকে নিরাশ করতে পারলেন না। শেষে বলল কাল সকালে তোমাকে দীক্ষা দেবো। সঙ্গে একটা ধারালো ক্ষুর নিয়ে আসবে।

পরের দিন সকালে যুবক স্নান সেরে ক্ষুর নিয়ে সাধুর কাছে এলো, সাধু তাকে গভীর জঙ্গলে গিয়ে একঘায়ে তার নাক কেটে ফেলে দিল। তারপর যুবকটাকে বলল, শোনো একদিন আমিও এইভাবে দীক্ষা নিয়েছিলাম তুমি এইভাবে অন্যদের দীক্ষা দিও। কিছুদিন চুপ থেকে নাক কাটা তরুনও অন্যদের নাক কেটে দীক্ষা দিতে থাকে এইভাবে নাক কাটা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়। গোটা দুনিয়ায় সেই নাককাটা সম্প্রদায় ছড়িয়ে পরে।

গল্প শেষ করে পাওহারি বাবা স্বামীজিকে বলেন, ‘তুমি কি এই দাস কে এমন এক সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করতে বলছো? তুমি কি মনে কর স্থূল দেহ দ্বারাই কেবল অপরের উপকার করা সম্ভব! শরীর নিরপেক্ষ একটি মন তার চারিদিকের অসংখ্য মানব মনকে প্রভাবিত করতে পারে। মহাত্মা পাওহারী বাবার মহানুভবতার পরিচয় পেয়ে স্বামীজি আর কথা বাড়ালেন না।

পাওহারি বাবা সাক্ষাৎভাবে উপদেশ দিতে পারতেন না; কারণ তাহলে তাকে আচার্যের পদ গ্রহণ করতে হতো এবং অপরের অপেক্ষা আচার্যকে উচ্চতর আসনে বসতে হতো, যেটিতে তিনি মোটেও রাজি হতেন না।

কিন্তু একবার তাঁর হৃদয়-প্রস্রবণ খুলে গেলে তা হতে অনন্ত জ্ঞানবারি উৎসারিত হতো, তবুও তাঁর উত্তরগুলি সর্বদা সাক্ষাৎভাবে না হয়ে পরোক্ষভাবে হতো।

পাওহারী বাবার কাছে যে প্রত্যাশা নিয়ে বিবেকানন্দ গাজীপুর এসেছিলেন, সে বিষয়ে ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে তাঁকে ফিরতে হয়েছিল বটে কিন্তু দুজন মহান মানুষের গাজীপুরে সাক্ষাৎকার বাঙালির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “গাজীপুরে স্বামীজি ও পাওহারী বাবার সাক্ষাৎকার : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. তপন says:

    একেবারেই অজানা তথ্য জানা গেলো। ধন্যবাদ।

  2. আশিস কুমার ব্যানার্জী says:

    তোমার পরিশ্রমের ফল সব পাঠককে ঋদ্ধ করে, এ পরমপ্রাপ্তি, ধন্য হোলাম।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন