মনে আছে, কার্টুন চরিত্র পপাই দ্য সেলার ম্যানের (Popeye the Sailor Man) কথা, যে অতিমানবীয় শক্তির অধিকারী হতো পালং শাক খেয়ে। ঘরেতে মায়েরা বাচ্চাগুলোকে পালং শাক খাওয়ায় ‘পপাই’কে দেখিয়ে। এটা ঠিক যে, পালং শাক একটি সুপারফুড। শীতের বাজারে গেলেই চোখে পড়ে টাটকা দেশি পালংশাক। শীতে দেশী পালং শাক কড়াইশুঁটি, বেগুন, শিম, মূলো, আলু দিয়ে, সঙ্গে কয়েকটা বড়ি ভাজা দিয়ে ঘণ্ট খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি স্বাস্থ্যকর। পালং শাকের বর্ণনার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে চীনে। সেখানে বলা হয়েছে, এই শাক নেপাল থেকে চীনে এসেছে সম্ভবত ৬৪৭ খৃষ্টাব্দে। তথ্য বলে, এর আদিবাস মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া।
প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিনের পরিমাণ ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস ২০.৩ মি. গ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.৫ মি. গ্রাম, অক্সালিক এসিড ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা। এতে আঁশের পরিমাণ ০.৭ গ্রাম। এতে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে, ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আইইউ, রিবোফ্লোবিন ০.০৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, ও থায়ামিন ০.০৩ মি. গ্রাম।
# পালং শাকে রয়েছে যৌবন ধরে রাখার ন্যাচারাল ট্রিটমেন্ট।
# পালং শাকে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
# এতে উপস্থিত দশটিরও বেশি ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
# এতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে, ফলিক এসিড হৃদ যন্ত্রের সুরক্ষায়, রক্তে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
# কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত খান পালং শাক।
# পালং শাকের বীজ কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায় ও এর কচি পাতা ফুসফুস, কণ্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই শাক বিশেষ উপকারী। পোড়া ঘায়ে, ক্ষত স্থানে, ব্রণে বা কোথাও ব্যথায় কালচে হয়ে গেলে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে উপকার পাওয়া যায়। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
পালং শাক খেতে কমবেশি সকলেরই ভালো লাগে। শুধু ভাতের শুরুতে পাতে নয়, আজ বরং বলি স্পিনাচ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন কেতাবি রেসিপি।
স্পিনাচ স্মুদি (spinach smoothie) : একটি মিক্সারে পালং শাক, কলা, গ্রিক ইওগার্ট, কয়েকটি কাঠবাদাম অথবা পিনাট বাটার, কলা আর পালং শাক একসঙ্গে মিক্স করে স্মুদি বানিয়ে নিতে পারেন। সঙ্গে সামান্য মধু বা সামান্য নুন যোগ করতে পারেন। অত্যন্ত পুষ্টিকর এই স্মুদি। ইচ্ছা করলে এর সঙ্গে আপনি এভোকাডোও যোগ করে নিতে পারেন। প্রাতরাশে এক গ্লাস স্মুদি খেলে পেট দীর্ঘক্ষন ভরা থাকবে।
স্পিনাচ অমলেট (Spinach Omelet) : অমলেট যেভাবে বানান সেভাবেই বানাতে হবে, সঙ্গে শুধু যোগ করতে হবে সেদ্ধ পালং শাক। শাকের গন্ধ দূর করতে সামান্য রসুন দিতে পারেন, তার সঙ্গে দিন এক চিমটে বেকিং পাউডার। এই ওমলেট এতটাই ভারি যে ডিনার অথবা লাঞ্চে ব্রাউন ব্রেডের সঙ্গে এটি খেতে পারেন।
স্পিনাচ স্যালাড (Spinach salad) : হালকা লাঞ্চ খেতে হলে স্পিনাচ স্যালাডের মতো ভালো অপশন খুব কমই আছে। পালং শাক ধুয়ে তাতে যোগ করুন হালকা ভাজা বেকন, গ্রেট করা অ্যাভোকাডো এবং পেঁয়াজ এরপর অলিভ অয়েলের সবকটি একসঙ্গে টস করে নিন। ইচ্ছা হলে উপরে ছড়াতে পারেন টমেটো, ডিম, চীজ, টুকরো আলমন্ড, ওয়ালনাট, তাজা কিংবা শুকনো বেরি যেমন ক্রেনবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। উপরে ছড়িয়ে দিন ব্ল্যাক সল্ট আর অরিগ্যানো। এই স্যালাড স্বাস্থ্যকর এবং তৈরী করতেও বেশি সময় লাগে না।
স্পিনাচ স্যুপ (Spinach soup) : পালং শাক ভালো করে সিদ্ধ করে তাতে নুন গোলমরিচ দিয়ে চটকে নিন।এবার একটি পাত্রে মাখন দিয়ে রসুন, কুচানো পেঁয়াজ ভেজে তাতে চটকানো পালং শাক দিয়ে দিন। রসুন শাকের গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। ভালো করে রান্না হয়ে গেলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। আবার একটি পাত্রে ৮ মিনিট মাঝারি আঁচে ফুটিয়ে নিন এই স্যুপ, সঙ্গে যোগ করুন রোজমেরি অথবা ক্রিম।
স্পিনাচ স্টাফড্ চিকেন ব্রেস্ট (Spinach Stuffed Chicken Breast) : ফ্রিজে পড়ে শাখা পালং শাক দিয়ে খুব সহজেই কম সময়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন এই পদ অনায়াসে। ছোটরাও খেতে খুব মজা পাবে। চিকেন ব্রেস্ট ভালো করে ধুয়ে একটি ধারালো ছুরি দিয়ে মধ্যেখানটা কেটে নিয়ে তাতে ফেটা চিজ বা মোজারেলা চিজ দিয়ে পালং শাকের স্টাফিং দিন। চিজ দিলে স্টাফিংটি বেশ নরম হয়। ছোটদের খেতেও খুব সুবিধা হবে।
পালং শাক স্টাফ করার আগে ব্যালসেমিক ভিনিগার, অলিভ অয়েল, নুন গোলমরিচ, রসুন কুচি দিয়ে টস করে নিন। এবার স্টাফ চিকেন ৪২৫ ডিগ্রি ফা ১০-১৫ মিনিট বেক করে নিন। শীতে ডিনারে এই পদের জুড়ি মেলা ভার।
পালং শাকের পরোটা (Spinach paratha) : অনেক সময় ঘরে পালং শাকের তরকারি বেশি হয়ে যায়। ফেলে না দিয়ে, সেই বেঁচে যাওয়া তরকারির সংগে আটা, ঘি/সাদা তেল, ধনে পাতা কুচি, রসুন কুচি, লঙ্কা, নুন মিশিয়ে অথবা পালং শাক ভালো করে ভাপিয়ে নিয়ে তাতে নুন গোলমরিচ কসুরি মেথি, জোয়ান ভালো করে আটার সঙ্গে মিশিয়ে মেখে নিন। সাদা তেলে ভেজে দই বা পুদিনা পাতার চাটনির সঙ্গে গরম গরম সকালের জলখাবারে দারুন লাগে।
পালং শাক উপকারী কিন্তু মনে রাখবেন যে কোন জিনিসই বেশি খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই যাদের বিভিন্ন রকমের
শারীরিক সমস্যা আছে তারা অতি অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। সামনেই সরস্বতী পুজো আর সরস্বতী পূজার পরের দিন গোটা সেদ্ধ খাওয়ার নিয়ম অনেক ঘরেতেই থাকে। শীতের শেষে রোগ থেকে রক্ষা পেতে আলু, রাঙা আলু, শিষ পালং শাক, বেগুন, শিম, কড়াইশুটি, সবুজ মুগ কড়াই, সরষের তেল, নুন, লঙ্কা, মশলা দিয়ে তৈরি করা হয় গোটা সেদ্ধ। শীতের শেষে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সপ্তাহে দুইচার দিন খান পালং শাক।