বুধবার | ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৩৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব

বিজয়া দেব / ৩৯ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

তরী চলমান। একটু পর পর চুনাপাথরের পাহাড়। তাদের বিভিন্ন আকৃতি। কোনটির মাথা গোল, কোনটি খাড়া হয়ে উঠে আবার নীচের দিকে নেমে গেছে। কী প্রশান্ত, কী স্থিতধী।

বিচিত্র আকৃতির চুনাপাথরের পাহাড়।

বেশ খানিকটা সময় লাগল ক্রুজের সামনে গিয়ে পৌঁছোতে।

Vardure Lotus ক্রুজ।

ক্রুজে পা দেওয়ার সাথে সাথে এগিয়ে এলো ম্যানেজার এবং কর্মীরা। একেবারে উষ্ণ অভ্যর্থনা। শৈল্পিক ক্রিয়ায় ভাঁজ করা একটি আর্দ্র তোয়ালে সব অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যে ট্রে-তে সাজিয়ে হাসিমুখে একটি কর্মী এগিয়ে এলো।

একটা দারুণ তৃপ্তি এলো ক্রুজের ঘর পেয়ে। উপসাগর একেবারে হাতের মুঠোয়, হাল্কাভাবে ভাসমান। বিছানায় শুয়ে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন আকৃতির পাহাড়গুলো ধীরে ধীরে সরে সরে যাচ্ছে। বাথরুমের শাওয়ার নেওয়ার জায়গাটি? আহা! কাঁচে ঘেরা। বাইরের প্রেক্ষিতটি হাতের মুঠোয়। নীচে স্বচ্ছ নীল জল। ব্যালকনির কাঠের দেয়ালের তেকোনায়

তেকোনা সাইজের মজবুত বেতের চেয়ার। তার চাইতেও দর্শনীয় কাঠের দরজা চৌকাঠ, ঝা চকচকে পালিশ করা অত্যন্ত মজবুত ভারী সেগুলো।

খুব ক্লান্ত ছিলাম, প্রকৃতির এই অনবদ্য রূপ সব ক্লান্তি হরণ করল। প্রতিটি কক্ষে মাইক্রোফোনের সাউন্ডসেট লাগানো। ক্রুজ থেকে ঘোষণা হচ্ছে অতিথিদের জন্যে, এখন লাঞ্চটাইম, চলে আসুন। খিদে পেয়েছে জবরদস্ত, ঘুরে ঘুরে দেখছি, খাবারের নমুলা। আমাদের টিম ম্যানেজার বার বার করে বলছিলেন একদিন ভিয়েতনামের খাদ্য খেতে হবে, এবং ওটা ক্রুজে। সেজন্যে একটু শঙ্কা তো ছিলই। মিস করছিলাম নিছকই বিভিন্ন হোটেলের সৌজন্যমূলক প্রাতরাশকে।

হোটেলের প্রাতরাশের ছবি।

তবে খাবার দেখে আশ্বস্ত হলাম। বেশিরভাগ স্টিমড ফুড।নানা ধরনের নুডলস রয়েছে, বড় বাটিতে চিকেন স্যুপ, নানা ধরনের সবজি সেদ্ধ। ভাতের স্যুপ ইত্যাদি। ভাতের নানা রেসিপি রয়েছে। মনে হলো জাপানিদের মতো এরা স্টিকি রাইস পছন্দ করে।

ক্রুজের একটি ডিশ। মনে হচ্ছে রাইস ও চিকেন।

খুব তৃপ্তি পেলাম খেয়ে। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি, কেউ খাবার নষ্ট করলে ওরা খুব ব্যথা পায়। ডেকে নিয়ে দেখাবে, দেখুন, একটু একটু করে বার বার নিয়ে খেলে ত ভালো, একসাথে না নিয়ে।

থাকার রুম নোংরা না করা এগুলো বলে বারবার করে সাবধান করে দেয়।

যখন লাঞ্চ চলছে তখন ম্যানেজার ঘোষণা করছে, আজকের প্রোগ্রাম — বিকেলে সুইমিং, সেল্ফ রোয়িং, রাতে কুকিং ক্লাশ, এরপর ডিনার, তারপর ডান্স। সেটা হবে ক্রুজের ছাদে।

ক্রুজের ডিশ। এটাতে সবজি সেদ্ধ।

সাঁতার তো জানি না। যদি জানতাম বেশ হতো। এই নীলাভ স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটার কী চমৎকার অভিজ্ঞতাই না হতো। হ্যাঁ, কতকিছুই শিখি নি। যত জানা ততই ব্যাপকতা, বিশালত্বের হাতছানি। যত কম জানা ততই শামুকের খোলের ভেতর গুটিয়ে থাকা। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এইসব ভাবছি, রুমে গমগম করে ঘোষণা হলো, চলে আসুন অতিথিবৃন্দ, আমাদের ফেরি তৈরি, এখন সাঁতারে যেতে হবে।

চললাম সাঁতার কাটতে।

ফেরি আমাদেরকে নামিয়ে দিল একটা ডকে। সেখানে কিছু চেয়ার রাখা আছে। সেল্ফ রোয়িং এর ব্যবস্থা আছে, এবং সাঁতারের জন্যে একটি ঘরে সাঁতারের পোশাক মজুত রাখা আছে। অনেকেই নেমে গেছে সেল্ফ রোয়িং এ। সমীর আমাকে অনুরোধ করছে, কিন্তু এই ঠান্ডায় আমি রোয়িং এ রাজি হলাম না। বরং বসে দৃশ্যাবলী উপভোগ করাই ভালো। সমীর আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেছে। অতঃপর নেমে গেছে রোয়িং এ।

সেল্ফ রোয়িং।

সাঁতার কাটতে কিন্তু কেউ নামছে না। সন্ধ্যা নেমে আসছে, তায় জল ভীষণ ঠান্ডা। শেষ পর্যন্ত বুবুন মুখার্জি নামল সাঁতারে। পড়ন্ত বিকেলে এই ঠান্ডা জলে সে শেষ পর্যন্ত সাঁতার কেটে উঠল।

এই সেই পড়ন্ত বিকেল। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তখন ভাবছি প্রকৃতি এতটাই সুন্দর!

আমরা হৈ হৈ করে বুবুনকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সত্যি টিমের নাম রেখেছে বুবুন মুখার্জি।

সাঁতার সেরে উঠে আসছে বুবুন মুখার্জি।

অত:পর ফেরি। অত:পর ক্রুজ। এসে ব্যালকনিতে বসলাম। অপরূপ রাত নেমেছে উপসাগরে। শুনেছি এখানে ভাসমান গ্রাম আছে, জেলেরা বাস করে। অনেকগুলো দ্বীপ আছে। এই উপসাগরের ওপরেই জেলেরা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে নাকি গ্রাম বানিয়েছে। পরিশ্রমী মানুষ কতভাবেই না জীবন যাপন করে, যা হয়তো আমাদের বৃত্তের বাইরে। জীবনকে না জেনেই আমাদের মতো পোশাকি মানুষের জীবন পোশাকি ভাবেই যাপিত হয়ে যায়।

আবার কক্ষের ভেতর গমগমে স্বরে ঘোষিত হলো — “অতিথিবৃন্দ, চলে আসুন আমাদের কুকিং ক্লাসে। যোগদান করুন।”

ছাদে হচ্ছে কুকিং ক্লাশ। তেমন কিছু নয়, ভেজ রোল তৈরি করা শেখানো হচ্ছে। ছাদে চেয়ার টেবিল সুন্দরভাবে পরিপাটি করে রাখা। এখানে জমজমাট আড্ডা কিম্বা ছোটখাটো পার্টির আয়োজনও করা যেতে পারে। আমি হাত না লাগিয়ে দেখছি। সমীর হাত লাগিয়েছে। সবাইকে আবার রোল খাওয়ানো আছে। প্রচুর দামী মদ সাজিয়ে রাখা আছে।

কুকিং ক্লাশ।

একখানা রোল খেয়ে ফিরলাম ঘরে। বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে দেখছি রাতের কালো প্রেক্ষিত ভেদ করে গোল খাড়া লম্বাটে মাথার পাহাড়গুলো সরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এসব চোখ মেলে দেখার সময় অতি অল্প।

ডিনারের ঘোষণা করা হলো।

প্রথমেই এলো বড় এক বাটিতে pampkin soup. থুড়ি এক্ষেত্রে “বাটি” শব্দটি মানানসই নয়, বলা উচিত “bowl”. One bowl of Pumpkin soup. তো কুমড়োর স্যুপ খেতে খুব ভালো লাগল। যদিও কাঁচা কুমড়োর গন্ধ খানিকটা ছিল। কিন্তু সেটা ভালোই লাগলো।

খেতে খেতেই দেখলাম অদূরে ম্যানেজার দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছে, খাওয়ার পর নাচ গান হবে ছাদে। এই আশ্চর্য প্রকৃতি ক্রুজে ভাসমান অবস্থায় উপভোগ করা হোক।

কিন্তু খাওয়ার পর নাচের প্রস্তাব কেউ নিল না। মনে তারুণ্য থাকলেও দেহ ভেতর থেকে কত কী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

তবে ছাদে উঠে পায়চারি করছি। অনবদ্য অনুভূতি হচ্ছে। এই অনুভব না নিয়ে কিছুতেই বিছানায় যাবো না। দূর থেকে নাচ গানের আওয়াজ আসছে। ক্রুজগুলোর ছাদে ছাদে জোরালো আলো জ্বলছে। নীলাভ জলস্রোত এখন কালো। পাহাড়গুলো দাঁড়িয়ে যেন সেই আদিম গুহাযুগের প্রতীক কিম্বা প্রগাঢ় শূন্যতার কিম্বা একাকিত্বের প্রতীক। “সবার মাঝে আমি ফিরি একেলা”। পাশাপাশি একের পর এক পাহাড়, কিন্তু সবাই একক। একের থেকে অপর ভিন্ন। আকাশের তারাগুলোর ঝিকিমিকি এক অচেনা রহস্যলোকের জন্ম দিয়েছে।

ক্রুজের ছাদ থেকে দেখছি দূরের ক্রুজের ছাদে আলো জ্বেলে নাচ গান চলছে।

ফিরে আসছি। এখন ঘুমোতে যাবো। দুটি ছেলে দামী মদের পশরা নিয়ে বসে। কেউ নাচল না, মদও বিক্রি হলো না। লাভ ক্ষতির হিসেব ছাড়া সত্যিই এ জীবন অচল। বাঁচতে হবে যে! যে মেয়েটি প্রফেশনাল হাসি হেসে সুবেশে মেপে মেপে কথা বলছিল, সেই মেয়েটিকে হঠাৎ দেখে ফেললাম খোলা চুলে ঘরোয়া বেশবাশে। আমি হাসলাম, সে-ও হাসল। উঁহু, এ হাসি সে হাসি নয়! এ হাসি বড় আন্তরিক। স্বগতে বললাম – খোলা চুলে এই পরিবেশে আপনি বড্ড মানানসই। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব”

  1. Sikha Chatterjee says:

    তোমার লেখা শেষ হয়েও শেষ হবে না গো।
    রবিঠাকুরের গান ” মধুর তোমার শেষ নাহি পাই
    প্রহর হলো শেষ, ভুবন জুড়ে রইলো লেগে — আনন্দ আবেশ”
    সত্যি গো আমাদের মনের মণিকোঠায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে ভিয়েতনাম ভ্রমণ, আর থাকবে তোমার অপূর্ব ভ্রমণ কাহিনী। ভুলে যাই যদি সঙ্গে সঙ্গে বিজয়া বন্ধুর লেখা , আমাদের আবার উজ্জীবিত করবে।।

  2. বিজয়া দেব। says:

    অনেক ধন্যবাদ বন্ধু। গানে গানে থেকো। সীমার মাঝে অসীম তুমি গো বন্ধু। অনেক ভালবাসা নিও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন