অসাধারণ আবৃত্তি করেন বুবুন মুখার্জি। তার উপস্থাপনা এককথায় অনবদ্য। দীর্ঘ কবিতাগুলিতে কণ্ঠস্বরের modulation কান পেতে শোনার মতই। তাঁর স্মরণশক্তিও বিস্ময়কর। তিনি কবি সুবোধ সরকারের কবিতা, অনুপম সৌরিশ সরকারের দীর্ঘ কবিতা শুনিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছেন।
বাচিকশিল্পী বুবুন মুখার্জি।
এরপর আসি শিখা চ্যাটার্জির কথায়। রবীন্দ্রনাথের গানে গানে তিনি যাত্রাপথে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছেন।
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শিখা চ্যাটার্জি।
গাইছিলেন আত্মনিবেদনমূলক খুব প্রিয় গান — “চিরসখা হে ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না….” অজস্র গানে গানে তিনি সমগ্র যাত্রাপথে কখনো উজ্জীবিত কখনো শ্রান্ত ক্লান্ত পথিকদের অবগাহন করিয়েছেন।
নানা ধরনের চুটকি গল্পও আমাদের আনন্দ দিয়েছে। বা ছোট্ট একটি কবিতাও আমাদের দারুণ আনন্দ দিয়েছে।
দুর্দান্ত সব চুটকি গল্প বা একটুখানি হাসো সুলভ গল্প বলে বলে যাত্রাপথকে আনন্দঘন করে তুলেছেন আমাদের দাদা মাণিক দাস এবং আশীস সাহা।
সস্ত্রীক দাদা মাণিক দাস। ইনি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েও আনন্দ দিয়েছেন।
আশীস সাহা শুধু চুটকি গল্প বলে আনন্দ দেননি, ইনি হোটেলের লাউঞ্জে রাখা পিয়ানোতে রবীন্দ্র গানের সুর তুলেছেন দক্ষ হাতে।
পিয়ানোতে সুরতরঙ্গ তুলছেন আশীস সাহা।
এখন আসি আমাদের দিদির কথায়। দিদি, সুচেতা ব্যানার্জি। দিদিই প্রকৃতপক্ষে আমাদের উজ্জীবিত করেছেন প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে পড়ার জন্যে। আর বারবার করে বলছিলেন-এই ভ্রমণপথ নিয়ে লেখার কথা কি ভাবছ?
তখন ভাবছিলাম কখনও তো তেমন করে ভ্রমণকাহিনি লিখিনি, এবার লিখব। পরবর্তীতে মাননীয় সম্পাদক মহাশয়ের অনুমোদনও পেয়ে গেলাম। দিদি আমাকে প্রাণিত করেছেন নানাভাবে।
দিদি সুচেতা ব্যানার্জির সাথে।
ভ্রমণরত অবস্থায় কবিতা লিখে ফেললেন ড. পরিতোষ বিশ্বাস। আর আমাদের প্রভূত আনন্দ দিলেন।
ড.পরিতোষ বিশ্বাস। ইনি বোটানিক্যাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। গাছপালায় খুব আগ্রহী। এখানে সহযাত্রীদের সাথে।
মনোরঞ্জন রায় আমাদের হিন্দি গান শুনিয়ে আনন্দ দিয়েছেন। তাছাড়া ছবি তুলেছেন প্রচুর। এতে আমাদের সাহায্য হয়েছে অনেক।
মনোরঞ্জন রায়। গান গেয়ে প্রচুর আনন্দ দিয়েছেন।
ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। ভিয়েতনামের বাস গাড়ি সবগুলোর স্টিয়ারিং হুইল থাকে বাঁদিকে। আর গাড়ি চলে রাস্তার ডানপাশে। সব বাসই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং আরামপ্রদ। রাস্তায় হর্ণের আওয়াজ পাইনি।
ডে নাং সিটির বাসের সামনে সমীর দেব।
সুতরাং পুরো ভ্রমণটাই আরামপ্রদ হয়েছে। সেজন্যে অবশ্যই সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে আমাদের ট্যুর অপারেটর সুভাষ কুন্ডু মহাশয়ের।
ট্যুর অপারেটর সুভাষ কুন্ডু মহাশয়।
অতঃপর রাতে ডিনার সেরে রওনা হলাম বেশ ক’জন মিলে সমুদ্রতটের দিকে। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশ এসে মিশেছে চিন সাগরের সাথে। সারাদিন বা না হিলে কেটে গেল কিন্তু ভেতরে কিংবদন্তি গায়ক ভূপেন হাজারিকা গুনগুন করছিলেন।
“সাগর সঙ্গমে সাঁতার কেটেছি কত কখনো তো হই নাই ক্লান্ত / তথাপি মনের মোর প্রশান্ত সাগরে উর্মিমালা অশান্ত… ”
কখন যাবো সমুদ্রের কাছে?
এইনার চলেছি সমুদ্রতটে, বেশ রাত। এখানে রাত দশটার কাঁটা পেরিয়ে গেছে।
(ক্রমশ)