ডে নাঙ সিটি, বা না হিলস
ভীষণ ঠান্ডা ভেতর থেকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। তেমন ভারি শীতবস্ত্র নেওয়া হয়নি। গোল্ডেন ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। হাঁটলে ঠান্ডা কম লাগবে। সুতরাং চরৈবেতি। কিমের সেই “চলো চলো তাড়িতাড়া চলো” সুতরাং চরৈবেতি। হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম বরবধূ ছবি তোলার জন্যে গোল্ডের ব্রিজে এসে উপস্থিত।
ছবি আর ছবি। পরীর কাছে, হনুমানের কাছে ফুলের কাছে, চার্চের কাছে, প্যাগোডার কাছে….। আরও কত কী ছিলো উপভোগ করার জন্যে, হায়, বৃষ্টি কুয়াশায় সেভাবে দেখা হলো না।
তখনও বৃষ্টি আসেনি। ঢালু হয়ে রাস্তা নেমে গেছে প্যাগোডার দিকে। মেঘ সারাদেহে চরছে ‘গাভীর মতো’.. মনে মনে শক্তি চট্টোপাধ্যায় আওড়াচ্ছি, “এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে”। শক্তি চট্টোপাধ্যায় এখানে এসেছিলেন বুঝি এমনই মেঘ বৃষ্টি কুয়াশার দিনে! নাহ নাহ এখানে কোথায় অবনীর বাড়ি?
নেমে গেলাম প্যাগোডার দিকে। একেবারে জায়গাটা মেঘ কুয়াশায় আবৃত হয়ে আছে। প্রথমে চোখে পড়েনি, হঠাৎ চোখ পড়ল প্যাগোডার ওপরে বিশালাকার বুদ্ধমূর্তি।
একেবারে মেঘের আড়ালে, অস্পষ্ট, ধোঁয়াশাময়। ছবি তোলার চেষ্টা তো হলো, কিন্তু আবছা এক অবয়ব ছাড়া কিছুই এলো না।
ডে নাং সিটির লেডি বুদ্ধের কথা বলি। আরাধ্যকে আরাধ্যা রূপে প্রার্থনা করে প্রতিটি জাতিই বুঝি শান্তি পায়। বা না প্যাগোডায় তিনি রয়েছেন। তিনি ক্ষমা, শান্তি, রক্ষাকারীর প্রতীক। সামুদ্রিক ঝড় ঝঞ্ঝা বিপদ থেকে তিনি রক্ষা করেন, বিশেষ করে জেলেরা যখন দূর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় তখন লেডি বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করে যেন মাছ ধরে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসতে পারে। দেবীর ডান হাতে পাত্র থেকে ঝরে পড়ছে ফুলের মধু, বাঁহাতে উইলো গাছের শাখা যা দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রকৃতির মধুময় নির্যাস।
এরপরই নামল বৃষ্টি। এখান থেকে ফিরে যাওয়ারও উপায় নেই, কারণ লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানেই। আর একটি বিশেষত্ব বা না হিলসের যত ট্যুরিস্ট নাকি লাঞ্চ সারবেন ওখানেই। এখন এত মেঘ বৃষ্টি ভেদ করে না তো কিছু দেখা যাচ্ছে, না তো কোথাও যাওয়া যাচ্ছে। তার ওপর হাতে ছাতা। জড়োসড়ো হয়ে একটা কোণে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ উল্টোদিক থাকে ডাক শুনে দেখলাম একটা দোকানের বারান্দায় আমাদের সফরসাথী ক’জন বসে আছেন। আরও দুটো চেয়ার খালি আছে। সুতরাং ওখানেই বসে রইলাম। বৃষ্টির জোর কমছে, আবার বাড়ছে।
অত:পর লাঞ্চের সময় এলো। প্রবেশ করলাম এক বিশাল হলঘরে। চারপাশে খাবার, পানীয়ের সম্ভার। কত দেশের লোক জড়ো হয়েছে এখানে, যার যা পছন্দ তাই খাবে।
সারাদিন কাটিয়ে আমরা অতঃপর নেমে এলাম ধাপে ধাপে কেবল কারে।
সারাদিন কেটে গেল বা না হিলস এ। তবে বিরূপ প্রকৃতি তেমন বিশেষ কিছুই দেখতে দিল না।
হো ফি ভু-কে জিজ্ঞেস করলাম — বা না হিলস নামের মানে কি? মানে বা না বলতে কি বোঝায়? বলল — বা না না। বা না না মানে কি কলা? মানে কি ওখানটায় কলাবাগান ছিল? কিন্তু দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করার আর সাহস হলো না। কী বলিতে কী বুঝিব হায়! আজ আর কোনও কিছু দেখার নেই। এত ক্লান্ত হওয়া সত্ত্বেও আমি শুধু শহরটাকে দেখতে বেরিয়ে পড়তে চাই। চারদিকে সমুদ্রে ঘেরা ভারি সুন্দর এ শহর। থেকে থেকে নীলাভ ঢেউ তটভূমিতে আছড়ে পড়ছে। জানালা দিয়ে দেখলাম এক পশ্চিমী তরুণ হাফপ্যান্ট টি শার্ট পরে কাঁধে ছোট্ট ব্যাকপ্যাক নিয়ে একা একা হেঁটে চলেছে। দেখে অনিবার্যভাবে দারুণ ঈর্ষা এলো।
যাকগে, এখন ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি।
আজ আর ভিউ পয়েন্ট নেই। এখন নিজেদের কথা বলি। বাসে আমরা দারুণ আনন্দ করেছি। আমাদের টিমে দস্তুর মত শিল্পী ছিলেন বেশ কয়েকজন। তার মধ্যে গান গেয়ে আনন্দ দিয়েছেন অচিন্ত্য বিশ্বাস, তিনি গান গেয়ে আমাদের ভরিয়ে দিয়েছেন।
বাকি সকলের পরিচয় ধীরে ধীরে দিচ্ছি।
(ক্রমশ)