শুক্রবার | ৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শোভারাম বসাকের শোভাবাজার : অসিত দাস

অসিত দাস / ৩৬০ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩

শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপূজার বিবরণ পড়তে পড়তে চোখ টনটন করছে। ঘোটকমুখধারী সিংহের কল্যাণে ক্লাইভক্লিষ্ট এই দুর্গাপূজার মাহাত্ম্যের কথা কে না জানে! তবে শোনা যায় শোভাবাজারের মূল রাজবাড়ি নাকি ইংরেজের কাছে উপহার পাওয়া। বাড়িটির আসল মালিক ছিলেন তৎকালীন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শোভারাম বসাক।

কে এই শোভারাম বসাক? জানতে গেলে ফ্ল্যাশব্যাকে অনেকটা পিছিয় যেতে হবে।

জোব চার্নকের ১৬৯০-এ কলকাতায় ঘাঁটি গড়ার সময় আজকের শোভাবাজার ছিল না৷ ‘শোভাবাজার’ তখন সুতানুটির অন্তর্গত পাবনার ‘বাসনা’ নামক একটি গণ্ডগ্রাম৷ হুগলির আদিসপ্তগ্রামের বসাক (বসুক) ও শেঠরা কলকাতার আদি বাসিন্দা হিসেবে ‘জঙ্গল-কাটা’ ও শহরপত্তনের কারিগর৷ সুতানুটির যে বিখ্যাত সুতার হাট তা বসাকদের হাত ধরেই পূর্ণ বিকাশ লাভ করে৷ বসাক বংশের বিখ্যাত পুরুষ শোভারাম বসাক পলাশির যুদ্ধের আগে ও পরে বেশ কয়েক দশক ধরে কলকাতার অন্যতম ধনী ও গণ্যমান্য ব্যবসায়ী হিসেবে দাপট দেখিয়েছিলেন, তাঁর সামাজিক প্রতিপত্তি ছিল অসীম৷ বস্তুত শোভাবাজার রাজবংশের আদিপুরুষ মহারাজ নবকৃষ্ণ দেব যখন মুনশি হিসেবে ইংরেজের গোলামি ও খিদমতগারি করতেই ব্যস্ত, তখন শোভারাম বসাক ও গোবিন্দরাম মিত্র পুরোনো কলকাতার বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে বাঙালি সমাজ ও খাস ইংরেজ মহলের স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন৷

পলাশির যুদ্ধের এক বছর আগে (১৭৫৬) নবাব সিরাজদৌল্লা কলকাতা আক্রমণ করেন৷ যে সমস্ত বিখ্যাত ব্যক্তি তখন কলকাতা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাননি, ইংরেজেদের বিরুদ্ধাচরণ করেননি এবং নিজেরা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন, তাদের জন্য পলাশির যুদ্ধজয়ের পর নবাব মিরজাফর ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন৷ শোভারাম বসাকের প্রতিপত্তি এতটাই ছিল যে তিনি নিজের তো বটেই, নিজের আশ্রিত ব্যক্তিদের জন্যও যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন৷ গোবিন্দরাম মিত্র ছিলেন ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে৷ শোভারাম বসাক বড়োবাজার তথা কলুটোলার বাসিন্দা হলেও সমগ্র উত্তর কলকাতা জুড়ে তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য ছড়ানো ছিল৷ তিনি একদিকে দেশীয় সমাজে আদৃত ছিলেন, অন্যদিকে ইংরেজের কাছেও তাঁর মানসম্মানের খামতি ছিল না৷

কথিত আছে , তাঁর গৃহদেবতা ‘শ্যামরায়’-এর নামানুসারে ‘শ্যামবাজার’ গঠিত হয়৷ ‘শ্যামপুকুর’ নামও এসেছে শ্যামরায় থেকে৷ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী তথা কলকাতার তৎকালীন জমিদার হলওয়েল সাহেব একবার শ্যামবাজারের নাম পালটে ‘চার্লসবাজার’ করেছিলেন৷ শোভারাম বসাক প্রচুর আইনি লড়াই করে নাম ‘শ্যামবাজার’ই বহাল রেখেছিলেন৷

শোভারাম বসাকের বিখ্যাত সুতার হাট ছিল সুতানুটিতে৷ এই সুতা-হাটাই সম্ভবত ‘শোভাবাজার’ নামে পরিচিতি লাভ করে৷ শোভারাম বসাকের নাম থেকেই যে ‘শোভাবাজার’, এ কথা কলকাতা বিষয়ক কোনো ইতিহাস গ্রন্থে লেখা নেই, প্রত্যেক বইয়েই শোভাবাজার নামের সঙ্গে রাজা নবকৃষ্ণের রেফারেন্স টেনে আনা হয়েছে৷ গবেষক সুকুমার সেন লিখছেন, ‘ঠিক বানান হইবে সভাবাজার, নবকৃষ্ণের ‘রাজসভা’ হইতেই এই নামের উৎপত্তি’৷ অথচ হরিসাধন মুখোপাধ্যয় লিখিত ‘কলিকাতা সেকালের ও একালের’ পুস্তকে এই রকম কোনো সোচ্চার ঘোষণা নেই৷ এই বইয়ে বলা হয়েছে যে ১৭৭৫-৭৬-এ মাতৃবিয়োগ ঘটলে মহারাজ নবকৃষ্ণ জাঁকজমক করে দেশের রাজা-মন্ত্রী-অমাত্য-রাজকর্মচারী ও জমিদারদের নিমন্ত্রণ করেন৷ চাঁদের হাট বসে যায়, ভোজসভার রাজসূয় যজ্ঞ সকলকে তাক লাগিয়ে দেয়৷ সেই থেকেই নাকি সুতানটির ‘পাবনা-বাসনা’ সভাবাজার নাম ধারণ করে৷ তা থেকেই শোভাবাজার৷ নবকৃষ্ণের রাজসভার নির্দিষ্ট স্থল হিসেবে কোনো দাবি করা হয়নি হরিসাধনের বইয়ে৷

যাই হোক, হরিসাধনের বই থেকে জানা যাচ্ছে, রাজা নবকৃষ্ণ ইংরেজের মুনশিগিরি ও মনসবদারি করতে গিয়েই জীবনের অর্ধেক কাটিয়ে ফেলেন৷ অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে তাঁর সামাজিক প্রতিপত্তির পেছনে সময় দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ মায়ের মৃত্যুর পর তিনি সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর দিকে নজর দেন৷ ওয়ারেন হেস্টিংস বড়োলাট হিসেবে ১৭৭২-এ কলকাতায় ফিরে এলে একদা তাঁর ফার্সি শিক্ষক ও বাল্যবন্ধু হিসেবে স্বীকৃত নবকৃষ্ণ অনেক সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেন৷ যথা — সুতানুটির তালুকদারি অর্জন, মহরাজ নন্দকুমারের হাত থেকে ‘জাতিমালা কাছারি’ ছিনিয়ে নেওয়া, নিজ সম্পদ ও অর্থ ছড়িয়ে কায়স্থসভার শিরোমণির স্বীকৃতি পাওয়া৷

আমার মনে হয়, এই পর্বেই শোভাবাজার নামটির স্রষ্টার কৃতিত্ব নেওয়ার বাসনা তাঁর মাথায় ভর করে৷ তাই মাতৃশ্রাদ্ধে বিরাট ভোজসভা ও চাঁদের হাট বসিয়ে দিয়ে তিনি দিকে দিকে ‘সভাবাজার’-এর ব্যপক প্রচার শুরু করে দেন৷ বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মতে, এইভাবে ‘সভাবাজার’ হওয়া এবং ‘সভাবাজার’ থেকে শোভাবাজর নামটি আসার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ৷ উপরন্তু শোভারাম বসাকের সামাজিক সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেক বেশি হওয়ায় ও পাশেই শ্যামবাজারের সঙ্গে শোভারামের ‘শ্যামরায়’ বিগ্রহের সাক্ষাৎ যোগ থাকায় মনে হয় শোভারামের পক্ষেই শোভাবাজারের জনক হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা৷ সম্প্রতি প্রাপ্ত একটি তথ্য জানাচ্ছে, ইংরেজরা শোভারাম বসাককে উল্লেখ করতেন (Sooberam Bysack) বলে৷ (Sooberam Bysack Ghat) পুরোনো কলকাতার অতি প্রাচীন এক ঘাট৷ সেইজন্যেই কোনো কোনো ঐতিহাসিক শোভাবাজারকে ‘সুবাবাজার’ বলেও উল্লেখ করেছেন৷ এই ‘সুবা’ যে শোভারামের ইংরেজি বানানের (Sooberam) সুবা তা কোনে ঐতিহাসিক এতাবৎ বলেননি৷ এর কারণ তাঁরা জানতেন না৷ বোঝাই যায় শোভাবাজার রাজবংশের প্রথম পুরুষ রাজা নবকৃষ্ণ শোভারাম বসাকের কৃতিত্বকে নিজের বলে জাহির করেছেন৷ তবে বেশিরভাগ ইংরেজ ইতিহাসবিদের বইয়ে নবকৃষ্ণের নাম উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি৷ শোভারাম বসাকই কিন্তু সেখানে জায়গা পেয়েছেন৷ তাই আমার মনে হচ্ছে,-শোভারাম বসাকই শোভাবাজারের স্রষ্টা।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন