শুক্রবার | ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:১৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (নবম পর্ব) : আবদুশ শাকুর সপ্তাহে একদিন উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো : অনুপম পাল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র ভাষা : ড. হান্স্ হার্ডার সবগুলো গল্পেই বিজয়ার নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলের ছাপ রয়েছে : ড. শ্যামলী কর ভাওয়াল কচুর কচকচানি : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (অষ্টম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুরের উইল ও দ্বারকানাথের ধনপ্রাপ্তি : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (সপ্তম পর্ব) : আবদুশ শাকুর যে শিক্ষকের অভাবে ‘বিবেক’ জাগ্রত হয় না : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ২৩ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

মাঘমাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিকে বলা হয় ষটতিলা একাদশী তিথি। পবিত্র এই তিথিতে ব্রতের সময় তিলের বহুবিধ ব্যবহার হয় বলে এই ব্রতের নাম ষটতিলা বা ষষ্ঠীলা একাদশী। এই একাদশীর মাহাত্ম্য ভবিষ্যপুরানে বর্ণিত আছে। এই ব্রতের দিনে ছয়টি ক্ষেত্রে তিলের ব্যবহার বিধেয় — তিল দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়া হয়, তিল দিয়ে যজ্ঞ করা হয়, তিল দিয়ে দান করা হয়, তিল দিয়ে স্নান করা হয় এবং তিল দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র ভক্ষণ করা হয়। প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে, ষটতিলা একাদশীতে এই ভাবে তিল সেবন ভক্তকে মোক্ষলাভ করতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি এই দিনে তিল দান করলে ভক্তের দারিদ্র্য দূর হয় এবং তিনি ধনী হয়ে ওঠেন।।

যে একাদশী দেবী তার একনিষ্ঠ ভক্ত বা সাধকের অন্তরে কামাদি ষটগুণকে ক্ষণে ক্ষণে (তিলে তিলে) সস্নেহে সত্বগুণে পরিণত করেন এবং যিনি চতুবর্গ লাভে সহায়ক হন, তিনি শ্রীশ্রীষটতিলা একাদশী দেবী নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।

পুরাণে বর্ণিত আছে, একবার ষটতিলা একাদশী ব্রতের কথা আলোচনা হচ্ছিলো পুলস্ত্যমুনির সঙ্গে দালভ্যঋষির। দালভ্যঋষির জিজ্ঞাসা ছিল, ‘মর্ত্যলোকের মানুষেরা ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, অন্যের সম্পদ হরণ ইত্যাদি আদি পাপ কর্ম দ্বারা নরকে গমন করে। এই নরগতি থেকে রক্ষা পেতে কি করা উচিত, বা এই পাপ থেকে উদ্ধারের কোন যদি উপায় থাকে তবে তা বলুন।’

এই প্রশ্নের উত্তরে পুলস্ত মুনি বলেছিলেন যে, এই পুণ্যদিনে শুচি, জিতেন্দ্রিয়, কাম, ক্রোধ আদি শূন্য হয়ে স্নানের পর ভগবান বিষ্ণুর পূজা পূজার্চনা করতে হবে দিনে আর হোম যজ্ঞ সমাপন করতে হবে রাত জেগে।

ষটতিলা একাদশীর দিন ব্রহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান ইত্যাদির মতো দৈনন্দিন কাজ শেষ করুন। এর পরে, বাড়ির পুজোস্থলে গঙ্গাজল ছিটিয়ে একটি কাঠের চৌকিতে একটি হলুদ কাপড় বিছিয়ে তার উপর ভগবান বিষ্ণু এবং শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি স্থাপন করুন। তারপর পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করে, নিয়ম মেনে ভগবান বিষ্ণুর পুজো করুন। বিষ্ণুকে চন্দন, অগুরু, কর্পূর, ফুল, তুলসী, দুধ, প্রদীপ, জল, ফল নৈবেদ্য তৈরি করে ভগবানকে নিবেদন করতে হবে। নারকেল অথবা একশত গুবাক (সুপারি) দিয়ে নৈবেদ্য তৈরি করে ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃপালুস্তমগতিনাং গতির্ভব’ ইত্যাদি মন্ত্রের সাহায্যে অর্ঘ্য প্রদান করতে হবে। ষটতিলা একাদশীর দিনে তিল সম্পর্কিত অনেক ব্যবস্থা আগেই বলা হয়েছে। এই দিনে পুজোর পর তিল দিয়ে যজ্ঞ করুন।

দ্বাদশীর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিত্য কর্ম স্নান ইত্যাদি করুন এবং সূর্যদেবকে জল অর্পণ করুন। ভগবান বিষ্ণুকে নৈবেদ্য নিবেদন করুন। এছাড়াও, ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা করার সময়, ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমঃ মন্ত্রটি জপ করুন।এরপর ব্রাহ্মণদের খাবার খাওয়ান অথবা সাধ্যমত অভাবীদের দান করে উপবাস ভঙ্গ করুন।

মুনিবর আরো বলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একজন শরণাগত ভক্তের পরীক্ষা নিতে গিয়ে কপিল নামক এক ব্রাহ্মণের রূপ ধরে এক ভক্তকে উপদেশ দিয়েছিলেন ষটতিলা একাদশী ব্রতের। কাহিনীটি হলো —

পুরাকালে মর্ত্যলোকে ধর্মপ্রাণা এক ব্রাহ্মণী বাস করতেন। পূজা অর্চনা ব্রত আচরণের জন্য ধীরে ধীরে তার শরীর অত্যন্ত ক্ষীন হয়ে আসছিল। এই ধার্মিক ব্রাহ্মণী অন্যের কাছ থেকে দ্রব্যদি গ্রহণ করে দেবতা ব্রাহ্মণ এবং কুমারীদের ভক্তি ভরে দান করত কিন্তু কখনো ভিক্ষুককে ভিক্ষাদান ও ব্রাহ্মণকে অন্নদান করেননি। এমনকি যথাযথভাবে বৈষ্ণবদের অর্চনা করলেও, তিনি তাদের পরিতৃপ্তির জন্য অন্নদান করেননি। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একদিন তাঁকে প্রকৃত শিক্ষাদানের জন্য ভিক্ষুক ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করে তামার পাত্র নিয়ে তার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করলেন।

ব্রাহ্মণী ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে অন্ন দান করলেন না তার পরিবর্তে বাটিতে একটি মাটির ঢেলা দিলেন। ভগবান তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তার বাড়ির সমস্ত খাবার মাটিতে পরিণত করেন। ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। ব্রাহ্মণী কেঁদে প্রার্থনা করলেন, ‘হে জনার্দন! আমি ব্রত, কৃচ্ছ্রসাধন, উপবাসের মাধ্যমে তোমার আরাধনা করেছি। অথচ এখন আমার গৃহে কিছুই দেখছি না কেন?’

ভগবান কৃষ্ণ তার স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে, তাকে তার ভুলের কথা মনে করিয়ে দিলেন এবং তাকে ষট্টিলা একাদশীতে অভাবীদের খাদ্যদান করার পরামর্শ দিলেন। তিনি তাকে ভক্তি সহকারে এই দিনে কঠোর উপবাস পালনের নির্দেশনাও দিয়েছিলেন।

ভগবান কৃষ্ণের পরামর্শ অনুসরণ করে, ভদ্রমহিলা উদারভাবে দান করেছিলেন এবং ষট্টিলা একাদশীর উপবাস করেছিলেন। ফলস্বরূপ, তিনি তার সম্পদ, স্বাস্থ্য এবং সুখ ফিরে পেয়েছিলেন। এই কিংবদন্তি অভাবীদের খাদ্য দান করার তাৎপর্য এবং ভক্তি সহকারে ষষ্ঠীলা একাদশী পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, মাঘ কৃষ্ণ একাদশী তিথিতে ষটতিলা একাদশীর উপবাস পালন করা হয়। একাদশী তিথি শুরু হবে ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টা ২৫ মিনিটে। অন্যদিকে, একাদশী তিথি ২৫ জানুয়ারি রাত ৮ টা ৩১ মিনিটে শেষ হবে। এমন পরিস্থিতিতে, উদয় তিথির বিশ্বাস অনুসারে, ২৫ জানুয়ারি ষটতিলা একাদশীর উপবাস পালন করা হবে। একই সঙ্গে, এই একাদশীর উপবাস ২৬ জানুয়ারি সকাল ৭টা ১৩ মিনিট থেকে ৯ টা ২১ মিনিটের মধ্যে ভাঙা যেতে পারে।

এই ব্রতের মুখ্য বিষয় হলো ত্যাগ ও সংযম। নিষ্ঠা ও একাগ্রচিত্তে ষটতিলা একাদশী ব্রত পালন করেন তাদের সাংসারিক ও পরলৌকিক জীবনে দুঃখ-কষ্ট দুর্ভোগের অধীন হতে হয় না। তারা চতুবর্গ ফললাভ করেন অন্তিমে।

ষটতিলা একাদশীর দিন তিল দিয়ে তর্পণ করারও বিধান রয়েছে। এই দিনে, পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তিল উৎসর্গ করলে, তাদের বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করা হয়। এছাড়াও, পূর্বপুরুষরা খুশি হন এবং পরিবারকে সম্পদ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ করেন।

প্রকৃতপক্ষে অতিরিক্ত বিষয়বাসনা করা উচিত নয়। বিত্তশাঠ্যও অকার্তব্য। নিজে সাধ্যমত তিল, বস্ত্র অন্নদান করবে। ষষ্ঠীলা ব্রতের প্রভাবে দারিদ্রতা, শারীরিক কষ্ট দুর্ভাগ্য প্রকৃতি বিনষ্ট হয় তিল দান করলে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়। এ সকল কথার উল্লেখ আছে ভবিষ্য পুরানে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন