শুক্রবার | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৫৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (দ্বিতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ হুমায়ুন-এক স্মৃতি-এক আলাপ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

‘যমুনা’-র সেকাল একাল : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী

মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী / ৪৯১ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

পুজো শুরু হয়, পুজো শেষ হয়। পুজোর একমাস আগে শুরু হত বাবার হাত ধরে টানাটানি, পুজোর বাজার করতে হবে না? এ দোকান সে দোকান ঘুরে মনের মত জামা কাপড় কারোর হত, কারোর বা একটাও হত না। আজও কারোর পোশাকের পাহাড় জমে, কারোর একটাও হল না। আসলে জানেন, এই পুজো একই সঙ্গে যেমন আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে, তেমনই অনেকখানি বিষাদের কৌটোও ভরে নিয়ে আসে। পুজো হয়ে যাবার পর যখন মায়ের বিসর্জন হয়ে যায়, তখন ফাঁকা প্যান্ডেলটার দিকে তাকালে এই বিষাদ টের পাওয়া যায়। আর পুজো মানে সাধারণত অক্টোবর। পুজো শেষ মানে বাতাসে জলের রিক্ততা। শিরশিরে হিম। যদিও এখন মাঝে মাঝে সাইক্লোন এসে চোখ রাঙিয়ে যায় এই পুজোর শেষ আর দীপাবলির মাঝটুকুতে। তবু সেই ঝড়ের মাঝেও থাকে বিষাদ। আসলে শীত আসা মানে রঙ আর বিষাদের মাখামাখি। কারণ কার্তিক মাসে যমের দ্বার নাকি খোলা। আর সেই দ্বারে কাঁটা ফেলে ভাইকে যমের মুখ থেকে আগলে রাখার কাজ একমাত্র বোনেরই।

মা দুর্গা শ্বশুরবাড়ি গেলেন তো আর এক মা হৈ হৈ করে এসে পড়লেন। ইনি অবশ্য আমাদের ঘরের মা। মা কালী। হাতে খাঁড়া, নৃমুন্ড থাকলে হবে কি, আমাদের রামপ্রসাদ, বামাক্ষ্যাপা আর রামকৃষ্ণ এই ভয়াল দেবীকে আদর দিয়ে একেবারে ঘরের মেয়ে করে দিয়েছেন। তাই মায়ের চারপাশে রক্ত দেখেও মাকে ভয় করে না। বরং মা কালী আমাদের মৃত্যুভয় কাটাতে আসেন আলোর বন্যা নিয়ে। আর তার সঙ্গেই আসে দীপাবলি আর ভাইফোঁটা। সেখানেও সেই মৃত্যুর সঙ্গে রেষারেষি করে ভাইকে আগলে রাখার ব্রত বোনদের। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে হয় এই ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসব। এটি একেবারে বাঙালির উৎসব। পশ্চিম ভারতে এটি ভাইদুজ নামে পরিচিত। মহারাষ্ট্রে ভাইবিজ, আবার নেপালে ভাইটিকা। আবার অনেক জায়গায় যমদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত।

ভাইদুজ : উত্তরভারতে দেওয়ালির পর পালিত হয়।

ভাইটিকা : নেপালে দশেরার পরে এটাই সবথেকে বড় উৎসব। এটি মৈথিলীরা পালন করে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও এটি পালন করে থাকে। বোনেরা তাদের ভাইয়ের কপালে সাতরঙের টিকা পরিয়ে দেয়।

ভাইজিন্তিয়া : ওড়িশার পশ্চিম অঞ্চলে পালিত হয়।

ভাইবিজ : গুজরাত, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গোয়ায় পালিত হয় ভাউ বিজ বা ভাইবিজ।

ভগিনীহস্ত ভোজনামু : অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় পালিত হয়।

কথিত আছে যে মৃত্যুর দেবতা যম কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বোন যমুনার বাড়িতে যান ও তাঁর হস্তে রান্না গ্রহণ করেন। যমুনা এই তিথিকে অমর করে রাখার জন্য যমের কাছে এই বর প্রার্থনা করেন যে, এই তিথিতে যে ভাই বোনের বাড়ি গিয়ে তাঁর পুজো স্বীকার করবে এবং তাঁর রান্না গ্রহণ করবে, সেই ভাইয়ের অকালমৃত্যু হবে না। তাই এই তিথির অপর নাম যমদ্বিতীয়া।

এছাড়াও অনেকে বলেন নরকাসুর বধ করে কৃষ্ণ স্বয়ং তাঁর বোন সুভদ্রার সঙ্গে দেখা করেছিলেন এই তিথিতে। সুভদ্রা তখন তাঁকে জয়টিকা বা মঙ্গল তিলক কপালে লাগিয়েছিলেন।

বাঙালির ঘরে বোন চন্দন ঘষে সেই টিকা ভাইয়ের কপালে দেয়। কেউ কেউ তার সাথে দইয়ের ফোঁটাও দেয়। মুখে বলে, —

“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,

যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,

আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।

ভাই যেন হয় লোহার ভাঁটা।”

ছড়াটি জায়গা ভেদে পাল্টে পাল্টে যায়। ফোঁটার পরে থাকে দুর্বা ও ধান দিয়ে আশীর্বাদ। আর থাকে মিষ্টি ও উপহার। ঘরে ঘরে শঙ্খ ও উলুধ্বনি বেজে ওঠে।

এক প্রজন্ম পিছনে গেলেই দেখি একটি বিশাল বাড়িতে অসংখ্য ছেলেমেয়েদের কলতান। হয়ত পরপর পাঁচটি মেয়ের বা সাত সাতটি মেয়ের জন্মের পর একটি পুত্রের জন্ম হল। ব্যস, সেই সবেধন নীলমণি ভাই হয়ে উঠল সাত পারুল বোনের এক চম্পা। ‘সাতভাই চম্পা’ গানটির উল্টোটিই তখন বেশি ঘটত কিনা। সুতরাং পুজোর সময় নতুন কিছু হোক বা না হোক, ভাইফোঁটা হত আসর জমিয়ে। আবার খুড়তুতো জেঠতুতো বোন বা দিদিরও অভাব ছিল না। সুতরাং একটা বড় হলঘরে সার দিয়ে খুড়তুতো জেঠতুতো দাদা, ভাই পর পর আসনে, আর সামনে মিষ্টি আর ধান দুর্বা শাঁখ নিয়ে বোনের সারি। এই ছিল আগেকার দিনের ভাইফোঁটার ছবি। সেই প্রজন্ম যখন বয়েস বাড়ল, নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ল, তবু ভাইফোঁটার দিনে সবাই এক হওয়ার একটা লড়াই চালিয়ে যেত। এই দিনটি যেন কোনভাবেই হাতের আঙুল গলে ফসকে না যেতে পারে। কারণ ভাইয়ের মঙ্গল কামনার সঙ্গে সকলকে একসাথে পাবার আনন্দটুকু তারা কেউ ছাড়তে রাজি ছিল না।

এবার পিছন থেকে একটু সামনে এলে দেখা যায়, বিশাল বাড়ি আয়তনে কমেনি। কমেছে লোকসংখ্যা। আগের প্রজন্মের অনেকেই কার্তিক মাসের ‘আকাশ প্রদীপ’ আকাশ থেকে দেখেন আর আশীর্বাদ ছুঁড়ে পাঠান হয়ত। কিন্তু একটি দুটি ভাইবোন এখন এত দূরে দূরে থাকে যে ভাইফোঁটার সময় আর এক হওয়ার উপায় নেই। অনলাইনে হয়ত ফোঁটা দেওয়া নেওয়া হয়, কিন্তু সেই আনন্দ কমে এসেছে। আর দূরে থাকতে থাকতে অনেক সময় মনের দূরত্বও বেড়ে যায়। তবু বোন বা দিদি এই একটি দিনে যমের দুয়ারে কাঁটা দিয়ে ভাইকে রক্ষা করার চেষ্টা আজও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখনও কোনও কোনও বাড়িতে সকলকে নিয়ে ভাইফোঁটার সময় উৎসব হয়। তবে সেটা খুবই কম।

আর এর পরের প্রজন্মের তো প্রত্যেকে এক সন্তান। তাদের ভাইফোঁটার আগ্রহও কিছুমাত্র পরিলক্ষিত হয় না। বয়স কম থাকলে যেটাকে উৎসব বলে মনে হয়, বয়স বাড়লে সেটাকেই অনেকসময় বাহুল্য বোধ হয়। এমনটি নয় যে আগেও সব ভাল ছিল। সেখানেও দুই দুই ছিল না একথা একেবারেই ঠিক নয়। পাঁচ বোনের কেউ ধনী তো কেউ মাঝারি, আবার কেউ বা বেশ টানাটানির মধ্যে রয়েছেন। সুতরাং উপহার, মিষ্টিতে ফারাক থাকবেই একটু হলেও। তবু অনেক বিভেদের মাঝেও একসাথে থাকার, বেঁধে বেঁধে থাকার একটা ভাবনার রেশ থাকত। যে রেশ আমাদের প্রজন্মে এসে ছিঁড়েছে। আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তো ‘বেঁধে বেঁধে থাকা’-র অর্থই বোঝে না। বা বোঝে, কিন্তু তাদের কাছে সেটা বন্ধন স্বরূপ। তাই তারা ফোঁটা না পেলেও বা ফোঁটা দেবার কেউ না থাকলেও দুঃখ পায় না। যে দুঃখটা এখনও আমাদের প্রজন্ম পায়। কিন্তু সে দুঃখের শিকড়ও খুব গভীর নয়।

প্রথমেই বলেছি না, পুজো যেমন আনন্দ নিয়ে আসে, তেমনি বয়ে নিয়ে আসে বিষাদের কৌটো। এখন অনেক ভাই ঘরের খাবার পছন্দ করে না। অনেক বোন রান্নার ঝামেলা এড়াতে হোটেলের খাবারে মনোযোগী। তাই আনন্দ কিনতে হয়। হয় অনলাইনে নয় অফলাইনে। তবু আনন্দ অধরা থেকে যায়। বিষাদ খুব গভীরে তিরতির করে বয়ে চলে আর বলে,

” যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা

আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।

ভাই যেন হয় লোহার ভাঁটা।”

এই বলাতে কোন ফাঁকি নেই। আজও।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “‘যমুনা’-র সেকাল একাল : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী”

  1. Debapriyo Pramanik says:

    সুন্দর এবং তথ্যবহুল

  2. সময়ের সাথে সবই পাল্টে যায়। বেশ সুন্দর করে জানিয়ে দিলেন পুরোনো দিনের কথা । ধন্যবাদ আপনাকে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন