বৃহস্পতিবার | ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৪৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

লিটল ম্যাগাজিনের আসরে শশাঙ্কশেখর অধিকারী : দিলীপ মজুমদার

দিলীপ মজুমদার / ১৭৪ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫

সময়টা সেই টাল-মাটাল ১৯৭২ সাল। কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে এক কলেজপড়ুয়া সাহিত্যপ্রেমিক তরুণ ফেলে দেওয়া পত্র-পত্রিকা ঘেঁটে চলেছেন। সেগুলি বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পত্রিকা। লিটল ম্যাগাজিন যাকে বলে। গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের কাছে সেগুলি জঞ্জালবিশেষ। কি হবে এসব রেখে! ছি ছি এত্তা জঞ্জাল। সাহিত্যপ্রেমিক সেই তরুণের কাছে সেসব মণি-মাণিক্য। তিনি ফেলে-দেওয়া পত্রিকা পরম যত্নে কুড়িয়ে নিলেন, নিজের টেমার লেনের বাড়িতে রাখলেন গুছিয়ে। সংগ্রহের নেশা বেড়ে গেল। ছুটতে লাগলেন জেলায় জেলায়। এইভাবে গড়ে তুললেন ‘লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র’। সেই তরুণের নাম সন্দীপ দত্ত।

এক সাক্ষাৎকারে (সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায়) তিনি মৌনী মণ্ডলকে বলেছিলেন, ‘সব লিটল ম্যাগাজিন সেই সময় আমি কিনতে পারতাম না। সেই সময়, মানে স্টুডেন্ট লাইফে, পয়সা বাঁচিয়ে যতটুকু পারতাম কিনতাম। এইভাবে কিনতে কিনতেই একটা ভালোবাসা জন্মে যায়। ন্যাশনাল লাইব্রেরির ওই ঘটনাটা আমায় আরও এগিয়ে দেয়। ভাবলাম যে ন্যাশনাল লাইব্রেরির যদি এমন অবস্থা হয়, তার একটা কাউন্টার এশটাব্লিশমেন্ট আমি ছোট করে আমার বাড়িতেই করতে পারি।’

লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব সন্দীপ দত্তই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন। আমাদের বাংলায় প্রকাশিত হয় অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিন। জাহিরুল হাসান প্রতিষ্ঠিত ‘সাহিত্যের ইয়ারবুকে’র পাতা ওল্টালেই তার একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। নিঃসংকোচে বলতে পারি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই লিটল ম্যাগাজিন। বিশেষ করে আজ যখন ঘরে-বাইরে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আক্রমণের মুখে, তখন এই লিটল ম্যাগাজিনই বাংলার ভরসা। এসব ম্যাগাজিনে শুধু তরুণ প্রতিভাই লালিত হয় না, অনুরণিত হয় এশটাব্লিশমেন্ট বিরোধিতার সুর। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কেনা-বেচার এই যুগে এখনও লিটল ম্যাগাজিনগুলি নিরপেক্ষ ও নির্ভীক ভূমিকা পালন করে চলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় লিটল ম্যাগাজিন যাঁরা প্রকাশ করেন, তাঁরা আসলে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান। কাগজ কিনতে, ছাপার খরচ জোগাতে, বাইণ্ডিংখানার খরচ মেটাতে তাঁদের জেরবার হতে হয়। বহু কাকুতি-মিনতি করে সংগ্রহ করতে হয় বিজ্ঞাপন, যার দ্বারা কিছুটা খরচ মেটানো যায়।

কিন্তু আমাদের শশাঙ্কশেখর অধিকারীর ধনুকভাঙা পণ, তিনি তাঁর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবেন না। তাহলে? তিনি কি স্পন্সর পান? না, তাও নয়। সব তাঁর নিজের পকেট থেকে যায়। একটু বেশি বেশিই যায়। কারণ, সৌখীন রুচিশীল এই মানুষটি তাঁর পত্রিকায় দেবেন ভালো কাগজ, ছাপাটাও ভালো হতে হবে। কোয়ালিটির ব্যাপারে নেই কোন আপোষ।

মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র শশাঙ্কশেখর। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ব্লকের আদুড় গ্রামে মামাবাড়িতে তাঁর জন্ম। পরমানন্দ জগন্নাথ ইন্সটিটিউশন ও হাউর গ্রামের ঘোযপুর হাইস্কুলে তাঁর পড়াশোনা। তারপর চলে এলেন কলকাতা। ভর্তি হলেন স্কটিশচার্চ কলেজে। ইতিহাসে অনার্স নিয়ে। কলেজে পড়ার সময়ে জড়িয়ে পড়েন বাম রাজনীতিতে। সেজন্য স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ ঘটেনি। ১৯৭৪ সালে তিনি ভারত সরকারের সিএজি’র অধীন ইণ্ডিয়ান অডিট অ্যাণ্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগে যোগদান করেন। চাকুরির সূত্রে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয় ভারতের নানা প্রান্তে। বিভিন্ন সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতির সঙ্গে এভাবে ঘটে পরিচয়, যা তাঁর মানসলোককে পুষ্ট করে।

কবিতায় নিবেদিতপ্রাণ হলেও শশাঙ্কশেখর গদ্য লিখেছেন প্রচুর। ‘দৈনিক বসুমতী’তে তাঁর গদ্য রচনার সূত্রপাত। তারপর ইংরেজি ও বাংলায় লিখে গেছেন প্রতিবেদন, বিচিত্র বিযয়ক নিবন্ধ। সেগুলি প্রকাশিত হয়েছে বর্তমান, আজকাল, যুগান্তর, সংবাদ প্রতিদিন, একদিন, সকালবেলা, ভোরের বার্তা, The Telegraph, The Asian age, The Statesman প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায়।

এসব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারতেন তিনি, কিন্তু পারলেন না। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর পোকাটা কামড়াতে শুরু করল তাঁকে। মেইনস্ট্রিমের পত্রিকা নয়, প্রকাশ করতে হবে নিজের পত্রিকা। ২০০২ সাল। যাত্রা শুরু হল ‘উত্তরণে’র। উত্তরপাড়া বইমেলার মঞ্চে বুদ্ধদেব গুহর হাত দিয়ে প্রকাশিত হল সেই সুদৃশ্য, সুসজ্জিত পত্রিকাটির। যার ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান। বাংলার বহু প্রবীণ ও নবীন কবির সমারোহ সেখানে। ‘উত্তরণ’ তো হল, আরও চাই। ২০১৫ সাল থেকে তিনি শুরু করলেন আর একটি চমৎকার কবিতা পত্রিকা, যার নাম ‘কবিতার ভুবন’। সেটিও চলছে, চলবে।

শশাঙ্কশেখর বরাবর ব্যতিক্রমী চিন্তার মানুষ। বাংলায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্তকে নিয়ে অনুষ্ঠান হয়, ২০০৪ সাল থেকে শশাঙ্কশেখর শুরু করলেন মধুসূদনকে নিয়ে অনুষ্ঠান। প্রতি বছর ২৫শে জানুয়ারি। সে অনুষ্ঠানে মধুসূদনকে নিয়ে আলোচনা হয়, কোন কবিকে সংবর্ধনা জানানো হয়, শেষে বসে কবিতা পাঠের আসর। সমস্ত কিছুর ব্যয়ভার বহন করেন তিনি।

কবিতা ও গদ্য তিনি প্রচুর লিখেছেন। সব রচনা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় নি। তাঁর এ তাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থগুলি : সময়ের কবিতা, নীল দিগন্তে অসীমের বাঁশি, কথায় ঝরে শ্রাবণ রাত, আমি ফিরে যেতে চাই, ছিন্ন পালক পাতায় কিছু শ্রাবণ মেঘ, কত জ্যোৎস্না হেঁটে গেছে, হে মহাজীবন, ভ্রমণকথা, শৈশবস্মৃতির ডাইরি, মুক্ত গদ্য, আত্মদর্শন, সম্পাদকীয়।

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর এক বিশাল গ্রন্থ। যার নাম ‘যেভাবে হেঁটেছি এতদিন’। এই গ্রন্থের প্রথম ভাগে আছে প্রবন্ধগুচ্ছ, বিশেষ নিবন্ধ, মুক্ত গদ্য, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণকাহিনী, ছোট গল্প, কিশোর সাহিত্য, বিবিধ রচনা, ভাষান্তরিত কবিতা, কবিতা ও ছড়া, চিঠিপত্র, ফিরে দেখা, সাহিত্য সংস্কৃতি সংবাদ, অতীতের অ্যালবাম থেকে ছবি। দ্বিতীয় ভাগে আছে তাঁর সম্পর্কে বিবিধ মানুষের লেখা—গদ্য রচনা ও কবিতা, কাব্যগ্রন্থ ও কবিতা নিয়ে আলোচনা, শুভেচ্ছাবার্তা।

সরকারি অনুদান ও বিজ্ঞাপনকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসার টানে সম্পূর্ণ নিজের ব্যয়ে নিয়মিতভাবে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করে শশাঙ্কশেখর অধিকারী যে দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন, তার কোন উত্তরসূরী আসবেন কি?


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন