চৈত্র মাসের পয়লা। জমজমাট শৈবতীর্থ তারকেশ্বর। আরও জমজমাট লক্ষ্য করা গেল গত সোমবার। এ রাজ্য ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংসারের মায়া ত্যাগ করে হাজার হাজার ভক্ত একটু পুণ্যের আশায় বাবার ধামে উপস্থিত হয়েছেন। তারকবাবার দুধপুকুরে স্নান করে সন্ন্যাস ব্রত নিয়ে শিবকে খুশি করতে মন্দির প্রাঙ্গণে হত্যে দিচ্ছেন। এ চিত্র এখন শৈবতীর্থ তারকেশ্বরে এলেই চোখে পড়বে।
প্রসঙ্গত, বিগত বছরের তুলনায় এবার চৈত্রের প্রথম সোমবারেই হাজার হাজার সন্ন্যাস ব্রত নেওয়ার চিত্র ধরা পড়ল। শুরু হয়ে গেল এক মাসব্যাপী সন্ন্যাসমেলা বা বাঙালির গাজন মেলা। ভক্তদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল শিবকে তুষ্ট করে পুণ্য সঞ্চয়। যা নজর কেড়েছে স্থানীয় প্রশাসনের।
উল্লেখ্য, শ্রাবণী মেলা শেষ হবার পরই এবার গাজন উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ল। চৈত্রের প্রথম সোমবারেই লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম তারকেশ্বরে। গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে শৈবতীর্থ তারকেশ্বরে সন্ন্যাসী মেলা বা গাজন মেলা। দেবাদিদেব মহাদেবের পুজোকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক বছরই লক্ষ লক্ষ ভক্তদের সমাগম ঘটে তারকেশ্বরে। একমাস ব্যাপী চলে এই মেলা। পুরাণ মতে দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের পরে নারায়ণের চক্রে একান্ন খন্ডে খন্ডিত হয়েছিল তাঁর দেহ। সতীকে হারিয়ে কঠিন তপস্যায় মগ্ন হয়েছিলেন ভোলা মহেশ্বর। সেই সময় তারকাসুরের তান্ডবে ব্রহ্মান্ড বিচলিত হয়ে পড়েছিল। ব্রহ্মা এই সমস্যার সমাধানে বলেছিলেন, তারকাসুরকে হত্যা করতে পারবেন একমাত্র শিবের পুত্র। এদিকে সতী ছাড়া শিবপুত্র কীভাবে আসবে! শিবের না আবার বিয়ে হলে পুত্র জন্মাবে না, আর তারকাসুরকে হত্যাও করা যাবে না। যদিও শিবকে বিবাহ করার জন্য তপস্যায় মগ্ন ছিলেন পার্বতী, কিন্তু শিব তো নিজেই তপস্যারত। এই অবস্থায় ব্রহ্মান্ডকে রক্ষা করতে ভক্তরাও সন্ন্যাস নেওয়ায় তপস্যা ভঙ্গ হয় ভোলা মহেশ্বরের।
চৈত্রের শেষে শিব-পার্বতীর বিবাহ হয়। এখান থেকেই সন্ন্যাস নেওয়ার প্রচলন শুরু। এ বিষয়ে তারকেশ্বর মন্দির পরিচালিত পুরোহিত মন্ডলীর সদস্য পীযূষ মুখোপাধ্যায় বলেন, প্রতিবছর ১ চৈত্র থেকে সংক্রান্তি পর্যন্ত প্রায় এক মাস চলে এই সন্ন্যাসী মেলা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার ভক্তরা এসে উপস্থিত হয় বাবার মন্দিরে। কেউ আসেন নিজেদের মনোস্কামনা পূরণের আশায়, অনেকে আসেন মানত শোধ করতে। তারকেশ্বরের দুধপুকুরে স্নান করে উত্তরীয় নিয়ে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে ভক্তরা ‘সন্ন্যাস’ গ্রহণ করেন। এই এক মাস তাঁরা নিজ গোত্র ত্যাগ করে শিবের গোত্র নেন। ভক্তরা প্রতিদিন সকালে মন্দিরে শিবের ভোগের পর ফল এবং রাতে হব্যিষি খেয়ে সন্ন্যাস ব্রত পালনের মধ্য দিয়ে কৃচ্ছ সাধনের জীবন-যাপন করেন।
বৈশাখের প্রথম দিনে তাঁরা আবার ফিরে যান নিজ গোত্রে বা গার্হস্থ্য জীবনে। এটাই ছিল গাজনের প্রথম সোমবার। আর এই সোমবারে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটল শৈবতীর্থ তারকেশ্বরে।এদিন ট্রেনে, বাসে, প্রাইভেট গাড়িতে করে ভক্তরা তারকেশ্বর মন্দিরে এসে পৌঁছান। মেলাকে ঘিরে প্রশাসনের নজর রয়েছে সজাগ। মন্দির এলাকা সহ তারকেশ্বর শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে ভক্তের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। পৌরসভার পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। পৌরসভার কর্মীরা এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে তৎপর হয়েছে। আবারও তারকেশ্বর সেই চেনা ছন্দে ফিরে আসছে।