সোমবার | ২রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৫৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সন্‌জীদা খাতুন — আমার শিক্ষক : ড. মিল্টন বিশ্বাস

ড. মিল্টন বিশ্বাস / ৩৮৩ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

সন্‌জীদা খাতুন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বিশেষ দিনে ২৫ মার্চ (২০২৫) মহাপ্রয়াণ লাভ করলেন। তাঁর পুরো জীবনটাই এদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি নিউইর্য়ক রাজ্যের ‘সিনেট’ বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য ১৪ এপ্রিলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেশের মানুষকেও উদ্বেলিত করেছে। বিষয়টি নিয়ে সন্‌জীদা খাতুনের একটি বক্তব্য ধারণের চেষ্টা করেছিলাম। ফেব্রুয়ারি মাসে আপার ছেলে পার্থ তানভীর নভেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিলেন- ‘এখন শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। আপনার কথা বলেছি, চিনতে পেরেছেন’। পুনরায় তাকে বার্তা দিচ্ছিলাম। তিনি জানালেন-‘স্বাভাবিক হলে জিজ্ঞেস করব। রাজি হলে ফোনে কথা বলা যাবে।’ ১৪ মার্চ তিনি লিখলেন-‘সুপ্রভাত। আপনাকে বোঝাতে পারিনি, পরিষ্কার করে লিখছি : দীর্ঘদিন হলো আপা কথা বলবার মতো শক্তি সঞ্চয় করে উঠতে পারেন না। আপনাকে চিনতে পেরেও কথা বলতে রাজি হননি। এখন হসপিটালাইজড। শরীরে সেরে উঠছেন কিন্তু একাধারে গুছিয়ে কথা বলার শক্তি ফিরতে দেরি হবে। আপনার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবার কোনোই সম্ভাবনা নেই। ভালো থাকবেন।’ এই বার্তা পাবার পর মন খুব খারাপ হয়ে যায়। আমার টেবিলে থাকা আপার বইগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। সেগুলোর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে সুস্থতা প্রার্থনা করি। মনে পড়ে যায় বাংলা বিভাগ থেকে অবসরে যাবার পরে টিএসসি’র মিলনায়তনে আপার বিদায় অনুষ্ঠানের কথা। বাংলা বিভাগ থেকে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে সন্‌জীদা খাতুন আপার অনন্য বক্তব্য শুনেছিলাম। তিনি অবসর জীবন নিয়ে বলেছিলেন- ‘জীবনের এই পর্যায়ে এসে কোনো অপূর্ণতা অনুভব করছি না।’ সবদিক থেকেই তিনি কাজের মধ্যে ডুবে মানুষের মঙ্গলবারতা বিশ্বের দিকে দিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য শেষ হয় নিজের কণ্ঠে একটি রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে- ‘পথের শেষ কোথায়, শেষ কোথায়, কী আছে শেষে!/ এত কামনা, এত সাধনা কোথায় মেশে।/ ঢেউ ওঠে পড়ে কাঁদার, সম্মুখে ঘন আঁধার,/পার আছে গো পার আছে- পার আছে কোন্ দেশে।/ আজ ভাবি মনে মনে মরীচিকা-অন্বেষণে হায়/বুঝি তৃষ্ণার শেষ নেই। মনে ভয় লাগে সেই- হাল-ভাঙা পাল-ছেঁড়া ব্যথা চলেছে নিরুদ্দেশে।’ অসাধারণ পেলবতায় মথিত এই গানটি এখনো আমার কানে বাজে। সেই থেকে গানটি আমার প্রিয় হয়ে ওঠে। তারপরেও তাঁকে দেখেছি আশিতম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের উৎসবে। সেখানে তিনি দৃঢ়চেতা, আত্মবিশ্বাসী, সকল অমঙ্গলের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ। ২০০১ সালে বটমূলের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পরে আমরা ভেবেছিলাম প্রভাতআলোর বৈশাখ বন্দনা বুঝি আর হবে না। কিন্তু ঠিকই তিনি ‘ছায়ানট’কে নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সন্‌জীদা খাতুন মৃত্যুকে অতিক্রম করেছেন নিশ্চিতভাবে।

দুই.

সন্‌জীদা খাতুন আমাদের শিক্ষক ছিলেন। আমি তাঁর সেগুনবাগিচার বাসায় গিয়েছি। যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে তখনও একাডেমিক কাজে সাক্ষাতের জন্য উপস্থিত হয়েছি একাধিকবার। নব্বই দশকে (১৯৮৯-১৯৯৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। এমএ ক্লাসে রবীন্দ্র-কাব্য পড়াতেন। পড়ানোর ভঙ্গি ছিল শিক্ষার্থীদের চামচ দিয়ে খাবার মুখে তুলে দেওয়ার মতো। পাঠ্যসূচির অন্তর্গত উল্লেখযোগ্য কবিতা তিনি লাইনের পর লাইন ব্যাখ্যা করে বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করতেন। এমএ ক্লাসে দেড়’শ জনের বেশি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সহকারে তাঁর কথা শুনতে হতো। কাউকে অমনোযোগী দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে সতর্ক করে দিতেন। আমাকে একবার সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘মিল্টন আমার কথা শুনছে না বোধ হয়।’আমি সঙ্গে সঙ্গে অধিকতর মনোযোগী হতে চেষ্টা করেছিলাম। আমরা কেউ-ই তাঁর মুখের উপর কথা বলতে, তাঁকে অসম্মান করতে সাহস পেতাম না। তাঁকে ‘আপা’ বলে ডাকতে হতো। ম্যাডাম বলা নিষিদ্ধ ছিল। ব্যক্তিত্ব ছিল অন্যরকমের। তখন গ্রুপ করা হতো টিউটোরিয়াল ক্লাসের জন্য। তাঁর বিভাগীয় কক্ষে আমরা প্রায় দশজন হাজির হতাম। তিনি লিখে দেখানোর যে কাজ দিতেন তা নির্দিষ্ট সময়ে জমা দিতে হতো এবং ফেরত দেওয়ার সময় দেখতাম প্রতিটি পৃষ্ঠায় পর্যবেক্ষণের ছোঁয়া। আমি এই নিষ্ঠাবান, একরোখা, মেজাজী (ছাত্রদের ঠাট্টা-তামাসা পছন্দ করতেন না), জেদী (নির্বিচারে সব কিছু মেনে নিতেন না) শিক্ষককে খুশি করার জন্য তাঁর লেকচার অনুসরণ করতে চাইতাম, তাঁর কবিতা ব্যাখ্যা হুবহু প্রশ্নের উত্তরে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করতাম। একবার একটি প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে তাঁকে দেখানোর জন্য উপস্থিত হলাম। তিনি কয়েক পৃষ্টার উত্তরটি দেখে লিখে দিলেন — ‘কবিতা বুঝতে পেরেছ দেখে খুশি হলাম’। আসলে তখন যা কিছু লিখেছিলাম সবই ছিল আপার ক্লাস লেকচারের নির্যাস। তিনি বিশ্বভারতী থেকে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জীবন ও কবিতা নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। সেটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা অন্য একটি কোর্সের সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সেটি ব্যবহার করতাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিজীবনে অধ্যাপক ড. সন্‌জীদা খাতুন আপার কিছু কষ্টের জায়গা ছিল। তিনি হঠাৎ টুকরো টুকরো কথায় তা প্রকাশ করেছিলেন বলে আমার মনে হয়েছে। তিনি সরকারি কলেজে চাকরি করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনায় নিয়োজিত হন। তাঁর পিতা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামধন্য অধ্যাপক। কিন্তু আপাকে বাংলা বিভাগে চাকরি পেতে কিছু বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে কলিগরা কলিগদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করে। সেরকম কিছু একটা ছিল বলে আমার মনে হয়েছিল।(দ্রষ্টব্য : ‘সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে’ গ্রন্থ)

ক্যাম্পাসে ক্লাসের বাইরে তিনি আমাদের শুনিয়েছিলেন পাকিস্তান আমলে সরকারি চাকরি করার সময় তাঁর ভোগান্তির কথা। শান্তিনিকেতন ফেরত, রবীন্দ্র সাহিত্য-সংগীতের অন্যতম সমঝদার আপা সে আমলে কপালে বড় টিপ পড়তেন। শেষ জীবন পর্যন্ত যা তিনি বজায় রেখেছিলেন। সেই বড় টিপ নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা তাঁকে হিন্দু গণ্য করে হয়রানি করে স্বাভাবিক চলা ফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। এমনকি সেগুনবাগিচায় তাঁর যে পৈতৃক বাড়ি ছিল তার সামনের উঠোনে ছিল অনেকগুলো ভাস্কর্য। সেগুলো নিয়েও পাকিস্তানি শাসক প্রচার করেছিল আপার পরিবার মূর্তি পূজক। এসব বৈরি পরিবেশ অতিক্রম করে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি সাংস্কৃতিক জগতে সরব ছিলেন।

তিন.

‘সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে’(২০১৩) গ্রন্থে সন্‌জীদা খাতুনের মুক্তিযুদ্ধসহ ব্যক্তিজীবনের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে।  তাঁর পারিবারিক জীবনের কথা আছে-‘অতীত দিনের স্মৃতি’ ও ‘প্রভাতবেলার মেঘ ও রৌদ্র’ গ্রন্থে। পিতা কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ আছে ‘স্মৃতিপটে গুণীজন’ গ্রন্থে। ‘রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থে আছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও অন্যান্য লেখকদের নিয়ে বিশ্লেষণী প্রবন্ধ। ‘রবীন্দ্র বিশ্বাসে মানব-অভ্যুদয়’ রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা সমৃদ্ধ গ্রন্থ। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে নিজের মতামত সম্বলিত বই ‘সংস্কৃতির বৃক্ষছায়ায়’। সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী হিসেবে অদ্যাবধি জনপ্রিয়। তবে রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে তাঁর রচিত ‘রবীন্দ্র সংগীত’, ‘রবীন্দ্র-সংগীতের ভাবসম্পদ’, ‘ধ্বনি থেকে কবিতা’ প্রভৃতি গ্রন্থ বাংলা গবেষণা ও প্রবন্ধ সাহিত্যকে উচ্চ স্থানে নিয়েছে। তাঁর ‘স্বদেশ সমাজ সংস্কৃতি’ গ্রন্থের প্রবন্ধগুলোও বহুমাত্রিক চিন্তার ফসল।

‘ভাষা-আন্দোলন, নববর্ষ, ছায়ানট এবং মুক্তিযুদ্ধ’ নিয়ে সন্‌জীদা খাতুনের অন্যতম গ্রন্থ ‘স্বাধীনতার অভিযাত্রা’ (২০০৪)। এই গ্রন্থে তিনি নববর্ষকে বলেছেন-‘বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক উৎসব’; ‘পয়লা বৈশাখ ছিল আমাদের বাঙালিত্বের শপথ নেবার দিন’। এখনো সেই ধারা বহমান। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশের স্বকীয় সার্বজনীন উৎসবের প্রাণবন্যা’ হলো নববর্ষ। ছায়ানটের ইতিহাস ও নববর্ষ উদযাপনের পারম্পর্য বর্ণনা করে লিখেছেন-‘সব মিলিয়ে ১৯৬৭ সাল অর্থাৎ ১৩৭৪ সাল থেকে পহেলা বৈশাখের উৎসব আনন্দোচ্ছল হয়ে উঠেছিল বোঝা যায়। সেই থেকে পল্লিজীবনের মত নাগরিক জীবনও দিনে দিনে নববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় আনন্দমেলার সৌন্দর্যে বিকশিত হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে জাতীয় দুর্যোগ এসে বাধা তৈরি করলেও এই জোয়ারকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি কোনও কিছু।’(বাঙালির অন্তরের নববর্ষ) বাঙালির প্রাণের উৎসব ‘নববর্ষ’ যতদিন উদযাপিত হবে ততদিন তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, তাঁর নিজ হাতে গড়া ‘ছায়ানট’ ও ‘নালন্দা’ টিকে থাকবে মানুষের ভালোবাসায়। মহাকাল সাংস্কৃতিক জগতের এই নীরব সাধককে ভুলতে দেবে না কখনো।

চার.

সন্‌জীদা খাতুনের প্রাথমিক জীবন গড়ে উঠেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা পিতা কাজী মোতাহার হোসেনের সান্নিধ্যে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর চিন্তার জগত তৈরি করেছিল। এরপর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং সাংস্কৃতিক জগতে পদচারণায় ‘বিপুল কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন’ তাঁকে মহাকালের কাছে সমর্পণ করেছে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) এবং পদ্মশ্রী (ভারত) পুরস্কার। তিনি ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও বিচিত্র মানুষের বিরোধী-মিলনের দীর্ঘ সময়কে ধ্যানী সাধকের মতো প্রজ্ঞা দৃষ্টিতে দেখে গেছেন। তাঁর জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে মহামিলনের তীর্থক্ষেত্র তৈরি হয়েছে ‘ছায়ানটে’র পতাকাতলে, নালন্দার আঙিনায়। মঙ্গলময় ভুবন সৃজনে, ভবিষ্যতের বাঙালি জাতির অগ্রগমনে তিনি চিরঞ্জীব, মৃত্যুঞ্জয়ী। তিনি যেন এখনো গেয়ে চলেছেন- ‘পথের শেষ কোথায়…’

লেখক, মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেক্রেটারি, ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিষ্টান ট্রাস্ট, কবি, কলামিস্ট ও সাহিত্য সমালোচক


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “সন্‌জীদা খাতুন — আমার শিক্ষক : ড. মিল্টন বিশ্বাস”

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন


StatCounter - Free Web Tracker and Counter StatCounter - Free Web Tracker and Counter