শ্যামল মিত্রকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
এখন স্মৃতির সঙ্গে বিস্মৃতিও মিশে যায়৷ তাই ঠিক মনে করতে পারছি না, ঠিক কবে, কোথায় শ্যামলবাবুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল৷ একই সময়ের শিল্পী ও প্রিয়জন ছিলেন বলেই নয়, সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত-পরিচালক শ্যামল মিত্রকে ভুলে যাওয়া কখনও সম্ভব নয়৷ সঙ্গীত-পরিচালক এবং সুরকার হিসেবে তিনি সফল তো বটেই, কিন্তু শিল্পী হিসেবে আরও অনেক বেশি সাফল্য পেয়েছেন বলে মনে করি৷ তাঁর পুরুষালি, সুরেলা ও দরদ-ভরা কণ্ঠের গান একেবারে মনের ভেতরে গিয়ে নাড়া দেয়৷
খুবই জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন৷ কিন্তু গায়ক হিসেবে পাওয়া সাফল্য তাঁকে কখনও অহঙ্কারী করেনি৷ তাঁর বিনয় ছিল একেবারে স্বভাবসুলভ৷ আরও একটা বিশেষ ও দুর্লভ গুণ ছিল, কখনও কারও সমালোচনা করতেন না৷ একই সময়ের শিল্পী হিসেবে বাংলা ছায়াছবিতে আমরা বেশ কিছু গান করেছি৷ সেই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে৷ শ্যামলবাবুর সুরে আমি ছায়াছবির গান যেমন করেছি, তেমন ওঁর সুরে বেশ কিছু বেসিক রেকর্ডও করেছি৷ নিজের গানের প্রশংসা নিজেই করা অস্বস্তির, কিন্তু এটা নির্ভেজাল সত্য যে আজও, এত বছর পরেও, সঙ্গীতানুষ্ঠানে শ্রোতাদের অনুরোধে সেই গানগুলো গাইতে হয়৷ গুণী ও যত্নশীল সুরকার ছিলেন৷ পঞ্চাশের দশকে এবং তার পরবর্তী সময়েও ওঁর সুরে অন্য শিল্পীদের গাওয়া গান আজও আমার পছন্দের তালিকায় থেকে গেছে৷ এখনও গানগুলো শুনলে ভাল লাগে৷
কয়েকটা গান তো এক্ষুনি মনে পড়ছে, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কাজল নদীর জলে’, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গাওয়া— ‘কৈ গো কৈ গো কই, আমার বকুল ফুল কই’, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া— ‘আবছা মেঘের ওড়না গায়ে ওগো চাঁদের মেয়ে’, অরুন্ধতী হোমচৌধুরি গেয়েছে— ‘আঁখিজলে তোমারই নাম লিখে চলে যাই’, গায়ত্রী বসুর কণ্ঠে ছিল ‘দূরে পাহাড় যেন কত শান্ত ছেলের মতো’, হৈমন্তী শুক্লার প্রথম ছায়াছবির গান (‘আমি, সে ও সখা’)— ‘এমন স্বপ্ন কখনও দেখিনি আগে’৷
স্মৃতির ওপরেও ধুলো জমছে৷ বাংলা ছায়াছবি ছাড়া হিন্দি ছবিতেও বেশ কিছু সার্থক সুরারোপ করেছেন শ্যামলবাবু৷ ‘অমানুষ’ ছবির (হিন্দি ও বাংলা) এবং ‘আনন্দ আশ্রম’-এ শ্যামলবাবু, কিশোরকুমার ও আশা ভোসলেকে দিয়ে যে-সব গান গাইয়েছিলেন সেগুলোও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল৷ মনে পড়ছে এক সময় আরতি মুখোপাধ্যায়কে দিয়েও উনি বাংলা ছায়াছবিতে কয়েকটা ভাল গান গাইয়েছিলেন৷
মানুষ শ্যামল মিত্র ছিলেন চমৎকার মনের অধিকারী৷ আগেই লিখেছি, কখনও ওঁর মুখে অন্যের কোনও সমালোচনা শুনিনি৷ গানের জগতে এই ধরনের সংযত মানসিকতা খুবই দুর্লভ৷ আমার স্বামী শ্যামল গুপ্তের সঙ্গেও শ্যামলবাবুর খুবই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল৷ খুবই শোভন-সুন্দর ব্যবহার ছিল৷ প্রায় নিয়ম করে আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে যেতেন উনিও৷
খুব স্বাভাবিক আচরণ ও শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন৷ কথাবার্তা বলতেন না বড় একটা৷ ওই সুরকার বা সঙ্গীত-পরিচালক হিসেবে গান শেখানোর সময়েই যা কথাবার্তা হত৷ গানের সুর বা গাওয়া নিয়ে সর্বদা সতর্ক ও সিরিয়াস মেজাজে থাকতেন৷ গানের রেকর্ডিংয়ের সময় মনপ্রাণ দিয়ে গাইবার চেষ্টা করতেন৷ বারবার শান্ত ও সংযত মেজাজের কথা লিখছি ঠিকই, কিন্তু শ্যামলবাবুকে রেগে যেতেও দেখেছি আমি৷ একবার টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে রেকর্ডিং হচ্ছে৷ শ্যামল মিত্রই ছবিটির সঙ্গীত-পরিচালক, আমি গাইব৷ কোন ছবির কী গান তা আর এক্ষুনি মনে করে লিখতে পারছি না৷ মিউজিক অ্যারেঞ্জার ছিলেন শৈলেশ রায়৷ শৈলেশবাবু সেই আমলের একজন অতি উঁচু মানের বংশীবাদক ছিলেন৷ হয়ত নোটেশনে বা মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টে কোনও ভুল হয়েছিল, এখন আর মনে নেই৷ কিন্তু শ্যামলবাবু যেভাবে শৈলেশবাবুকে তিরস্কার করেছিলেন, তাতে আমি একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম৷ ভেবেছিলাম— এই শান্ত স্বভাবের মানুষটার মধ্যে এত রাগ থাকতে পারে!
তাস খেলার প্রবল নেশা ছিল শ্যামলবাবুর৷ বাংলা গানের সেই সময়ের সব শিল্পী ও সুরকার শ্যামল মিত্রের এই নেশার খবর জানতেন৷ সন্ধের পর শ্যামল মিত্রকে পেতে হলে ‘বসুশ্রী’ সিনেমা হলে পৌঁছতে হবে৷ অনুষ্ঠান থাকলে আলাদা কথা, নইলে প্রায় প্রতিদিনই ‘বসুশ্রী’র ওপরে একটা ঘরে তাসের বৈঠকে শ্যামলবাবু থাকতেনই৷ সেই ঘরের অন্য নিয়মিত সদস্যরা ছিলেন মন্টুদা (মন্টু বসু, ‘বসুশ্রী’ সিনেমা হলের মালিক), বাংলা ছায়াছবির অবিস্মরণীয় কৌতুক অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, একই ধারার অভিনেতা রবি ঘোষ, ছবির ডিস্ট্রিবিউটর ভোলাবাবু এবং বিখ্যাত ফুটবলার আমেদ খান৷
গুণী সুরকার শ্যামল মিত্রের পরিচয় সকলেই জানেন৷ তা গুণীর কদর তো তেমন গুণীই করবেন! এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে৷ ওঁর সুরে আমি প্রথম রেকর্ড করেছিলাম বোধহয় পঞ্চাশের মাঝামাঝি সময়ে৷ সেই আমলে তো একটি রেকর্ডের দুই পিঠে দুটো গান৷ প্রথম গানটি ছিল— ‘হয়ত কিছুই নাহি পাব/তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালবেসে যাব’ আর দ্বিতীয় গানটি ছিল— ‘ও ঝরা পাতা এখনি তুমি যেও না যেও না ঝরে৷’ দুটি গানই লিখেছিলেন গৌরীবাবু (গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার)৷ এখনও অনুরোধে যে-সব গান আমাকে গাইতেই হয়, এই গান দুটো যে তার মধ্যে পড়ে সে-কথা তো আগেই লিখেছি৷ তখন বাংলা গানের পরিবেশ সহজ ছিল৷ রেকর্ডিংয়ে শ্যামলবাবুর সুরে আমি যখন ‘ও ঝরা পাতা’ গানটি গাইছিলাম, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বনামধন্য সঙ্গীত-পরিচালক অনুপম ঘটক৷ গানটা শেষ হওয়ার পর অনুপম ঘটকের মতো গুণী, অত সিনিয়র মানুষ শ্যামলবাবুর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছিলেন— ‘আমি তো ভাবতেই পারছি না শ্যামল, এই সুরটা তুই কী করে করলি!’ কথাগুলো ভুলে যাওয়ার নয় বলে এখনও মনে আছে৷
কয়েক বছর পরে আমি আবার শ্যামলবাবুর সুরে রেকর্ড করেছিলাম৷ সেই রেকর্ডটিও জনপ্রিয় হয়েছিল৷ সেই রেকর্ড প্রকাশের বছরটি এক্ষুনি মনে করে লিখতে পারছি না, তবে সেটা পঞ্চাশের শেষ অথবা ষাটের শুরুতে হবে৷ গান দুটি ভুলিনি, ভোলা সম্ভবও নয়৷ রেকর্ডটির একদিকে ছিল— ‘আমি তো তোমারই কাছে রয়েছি’ আর অন্যদিকের গানটা— ‘কতবার বলেছি আমি’৷ গানগুলো লিখেছিলেন পবিত্র মিত্র৷
ঠিক কেন জানি না, কোনও প্রিয়জন, বিশেষ করে তিনি যদি সঙ্গীতজগতেরই কোনও শিল্পী হন, তখন তাঁর স্মৃতিকথায় কোনও ধারাবাহিকতা থাকে না৷ গান, সুর ইত্যাদির মধ্যে মানুষ শ্যামল মিত্রের কথাও তাই বারবার এসে যাচ্ছে৷
স্বভাবে শান্ত হলেও শ্যামলবাবুর মধ্যে রসবোধ কারও চেয়ে কম ছিল না৷ সময় ও উপযুক্ত মুহূর্তে রসিকতাও করতেন৷ সহজ মনের মানুষ ছিলেন এবং শিল্পী-সুরকার-গীতিকারদের যথাযোগ্য সম্মানও দিতেন৷ সহজ সম্পর্কের জন্য আমিও ওঁর সঙ্গে খুনসুটি করতাম৷
একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে৷ রবিদার (সঙ্গীত-পরিচালক রবীন চট্টোপাধ্যায়) সুরারোপিত একটা ছবিতে শ্যামলবাবুর সঙ্গে একটা ডুয়েট গান হচ্ছিল৷ আমরা দুজনে রবিদার কাছে গানটা শিখছি৷ শেখাতে শেখাতে হঠাৎ রবিদা একটা মিউজিক বানালেন৷ সেটা শুনতে খুব ভাল লাগছিল৷ মিউজিক পিসটার সঙ্গে যেখানে পুরুষকণ্ঠে একটা হামিং ছিল, অর্থাৎ সেটা শ্যামলবাবুই করবেন৷ কিন্তু সেই হামিং অংশটা আমার এতই ভাল লেগেছিল যে, আমি সঙ্গে সঙ্গে সেটা গেয়ে উঠলাম৷ রবিদারও অপছন্দ হল না৷ শ্যামলবাবু তখন আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন— ‘সন্ধ্যা, এটা কী হল?’ আমি হেসে বললাম— ‘আপনিও আমার গাওয়ার অংশ থেকে অর্ধেকটা কেড়ে নিয়ে গান না!’
একবার আমরা আসামের এক প্রান্তে কোনও একটা শহরে গাইতে গেছি৷ আমরা বলতে, আমাদের সেই দলে ছিলেন শ্যামল মিত্র, নির্মলেন্দু চৌধুরি ও সবিতা চৌধুরি৷ খোলা মঞ্চের অনুষ্ঠান৷ ডিসেম্বরের শীতেও হাজার হাজার শ্রোতা এসেছেন আমাদের গান শুনতে৷ আমার তাড়াতাড়ি কলকাতায় ফেরার প্রয়োজন ছিল৷ নির্মলেন্দুবাবুর গান শেষ হলেই আমি গাইতে যাব— এমন কথা উদ্যোক্তাদের বললাম৷ কিন্তু শ্যামলবাবু মৃদু হেসে বললেন— ‘না, তোমার এখন গাওয়া চলবে না৷ তোমাকে আগে গাইতে দেব না৷’ কয়েক মুহূর্ত অবাক হয়ে থাকার পর আমি বুঝলাম, শ্যামলবাবু আমার তাড়া আছে জেনেই মজা করছিলেন৷ যাই হোক, আমিই শেষ পর্যন্ত নির্মলেন্দুবাবুর পর গাইতে বসলাম৷ আমি গেয়ে মঞ্চ থেকে ফিরে আসছি আর শ্যামলবাবু গাইতে আসছেন৷ শ্যামলবাবু হাসতে হাসতে বললেন— ‘নেহাত তোমার কাল লক্ষ্ণৌতে প্রোগ্রাম আছে বলে ছেড়ে দিলাম৷’
শ্যামল মিত্রের নিজের গাওয়া অনেক গানই আমার ভাল লাগে৷ অদ্ভুত দরদ দিয়ে গাইতেন৷ বেসিক রেকর্ডে গাওয়া তাঁর অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে ‘হংস পাখা দিয়ে নামটি তোমার লিখি’, সলিল চৌধুরির সুরে ‘যা যারে যা যা পাখি’ এবং সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুরে ‘স্মৃতি তুমি বেদনার’ তো ভুলতেই পারি না৷ যখন তখন মনে পড়ে৷ এ ছাড়া ‘দেয়া নেয়া’ ছবিতে শ্যামলবাবুর গাওয়া সব গানই আমার খুব ভাল লাগে৷
সিনেমার গান নিয়ে লিখতে গেলে অনেক কথা মনে পড়ে৷ শ্যামল মিত্রের সঙ্গীত-পরিচালনায় আমি অনেক ছবিতেই গেয়েছি৷ সেই সব ছবির নাম ও গানের তালিকা এখানে উল্লেখ করতে গেলে অনেক কাগজপত্র ঘাঁটতে হবে৷ তবে সব কথা তো কেউ ভোলে না, সে জন্য কিছু ছবির নাম মনে আছে, যেমন— ‘দেয়া নেয়া’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘কলঙ্কিনী’, ‘রাজবংশ’, ‘অজস্র ধন্যবাদ’, ‘হাসি শুধু হাসি নয়’, ‘হঠাৎ দেখা’, ‘গড় নাসিমপুর’, ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্টেন্ট’ ইত্যাদি৷ শ্যামলবাবুর সুরে ‘গড় নাসিমপুর’ ছবিতে একটা গান ছিল একটু অন্যরকম৷ নায়ক উত্তমকুমারের উর্দু সংলাপের সঙ্গে আমাকে বাংলা গজল গাইতে হয়েছিল৷ সেই গানটার কথা ছিল— ‘যে গোলাপ কাঁটার ঘায়ে কাঁদায় প্রেমিক পাপিয়ারে’৷
জীবনে যে কত ঘটনাই ঘটে! একবার শ্যামলবাবুকে প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়ে বাক্যহারা হতে দেখেছিলাম৷ কী কারণে বা কোন ছবির গানের জন্য, তা আজ আর মনে নেই, শ্যামলবাবু আমাকে একবার বম্বেতে গ্রামোফোন কোম্পানির স্টুডিওতে ডেকেছিলেন৷ স্টুডিওর সিঁড়িতে শ্যামলবাবুর সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের দেখা৷ লতাও সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন৷ লতা হঠাৎ শ্যামলবাবুকে প্রশ্ন করেছিলেন— ‘আপনি তো আপনার কোনও ছবিতে কখনও আমাকে গান গাওয়াননি!’ এমন প্রশ্নের উত্তরে কী বলা যায়, শ্যামলবাবু চুপ৷ পরে শ্যামলবাবু বলেছেন— ‘আমি তো খুবই লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম৷ এত বড় একজন শিল্পী আমাকে নিজে থেকে এমন অনুযোগ করছেন!’
শ্যামলবাবুর জন্ম পৌষসংক্রান্তির দিন৷ মনে পড়ে সেই দিনগুলোয় আমি ওঁর বাড়িতে ফুল-মিষ্টি ইত্যাদি নিয়ে যেতাম৷ ভারি চমৎকার মানুষ ছিলেন প্রতিমা বৌদিও৷ মোটর দুর্ঘটনায় সাঙ্ঘাতিক আঘাত পেয়ে যখন নার্সিংহোমে ছিলেন, তখন আমরা সকলেই খুব উদ্বেগে থাকতাম৷ সুস্থ হয়ে উঠে গেয়েছিলেন— ‘তোমাদের ভালবাসা মরণের পার হতে’৷ গানটি কখনও ভুলিনি৷
নিজের মৃত্যুর কোনও ইঙ্গিত কি কোনও জীবিত মানুষ পায়? এমন গভীর কথার উত্তর কে দেবেন! শ্যামলবাবু মারা যাওয়ার এক বছর আগে ওঁর সুরে পুজোয় চারখানা গান গেয়েছিলাম৷ তার মধ্যে একটা গানের কথা ছিল— ‘চলে গেলাম আমি চলে গেলাম/সময় হলেই যেতে যে হবেই/এখানে কারও কোনও দাবি নেই/পাছে ভুল বোঝো ভুল করে খোঁজো/দুটি হাত ধরে বলে গেলাম/আমি চলে গেলাম…৷’ আমাদের লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে এসে আমাকে গানটা শেখানোর সময় ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন৷ মৃত্যুর কোনও আভাস, না গভীর কোনও অভিমান— কী তাঁকে গানের কথার টানে কাঁদিয়েছিল, তা আজও জানি না৷
শ্যামল মিত্র যেদিন মারা গেলেন, সেদিন অনেকের মতো আমিও কান্না থামাতে পারিনি৷ জীবনের অসময়ে সুরের মানুষ চলে গেলে চোখের জল ফেলা ছাড়া আমাদের তো আর কোনও কিছু করার থাকে না!