বৃহস্পতিবার | ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:০১
Logo
এই মুহূর্তে ::
কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘শুভ লাভ’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্কের শেকড় অনুবাদ ফাতিন ইশরাক

ফাতিন ইশরাক / ২৩৭ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

আজকের দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েল পরস্পরের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। এই বন্ধুত্বের শেকড় রয়েছে তাদের পারস্পরিক মূল্যবোধে।

ছয় দশকেরও অধিক সময় ধরে ধীরে ধীরে যে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তার পুরোটা সময় জুড়ে ইসরায়েলিরা আমেরিকা থেকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা পেয়ে আসছে। এর বিনিময়ে, আমেরিকার চোখে ইসরায়েল একটা পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রপন্থী, অর্থনৈতিক উন্নয়নকামী দেশ এবং ইসরায়েল ও আমেরিকার শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইরত যোদ্ধা।

সোভিয়েত প্রিমিয়ার আলেক্সি কসিগিন একবার ৩৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ৮০ মিলিয়ন আরব এবং মাত্র ৩ মিলিয়ন ইসরায়েলি থাকার পরেও কেন আমেরিকা ইসরায়েলকে সমর্থন করে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর দিয়েছিল — “কারণ এটাই ঠিক।”

প্রাচীন আমেরিকায় ইহুদী জাতীয়তাবাদের প্রভাব

ইসরায়েল আর আমেরিকা মধ্যকার সম্পর্ক দুই একদিনের না।

খোদ আমেরিকার সংবিধানেও ইহুদী জাতীয়তাবাদের প্রভাব আছে। ২য় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এডামস একবার ৩য় মার্কিন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনকে চিঠিতে জানিয়েছিলেন —

“মানুষকে সভ্য করার পিছে হিব্রুদের যা অবদান, এর ধারে কাছে অন্য কোন জাতির অবদান নাই।”

২৮ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের মতে, আদিম ইহুদী জাতি মার্কিন উপনিবেশিকদের জন্য একটা মডেল হিসেবে কাজ করেছে —

“অতীতে উপনিবেশিকরা যেভাবে মুসায়ী আইন দিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ন্ত্রণ করেছে, সেটা মনে করলে আমরা দেখতে পাবো যে বাইবেলের অনেক আয়াত রাজতন্ত্রকে নাকচ করে, স্বর্গের সাথে রাজমুকুটের সম্পর্ক অস্বীকার করে এবং আমেরিকার পিতাদের সামনে হিব্রু কমনওয়েলথকে একটা আদর্শ সরকারব্যবস্থা হিসেবে হাজির করে। আমাদের সংবিধানের চরিত্র এবং মর্মকথায় হিব্রু কমনওয়েলথ যে কেবল নীতির সর্বোচ্চ মানদণ্ড (অত্যাচারীর প্রতিবাদ করার অর্থ হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ) হিসেবে অধিষ্ঠিত, তা না। বরং, হিব্রু কমনওয়েলথকে রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র বা অন্য কোন সরকারব্যবস্থা থেকে আলাদা একটা গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।“

মার্কিন বিপ্লবেও ইহুদীদের সরাসরি অবদান ছিল। মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধে ইহুদীদের অবদানের সম্মানে ৩০ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেল্ভিন কুলিজ বলেছেন —

“বিভিন্ন কলোনির অধীনে ছড়ায়ে ছিটায়ে থাকা ইহুদীরা তাদের নবীদের শিক্ষার প্রতি সৎ ছিল। ইহুদীবাদের বিশ্বাস হচ্ছে মুক্তির বিশ্বাস।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিশিয়াল সিলের যেই ডিজাইন ৩য় মার্কিন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন, বেঞ্জামিন ফ্রাংক্লিন (আমেরিকা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন) এবং ২য় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এডামস অনুমোদন করেছিলেন, সেই ডিজাইনে ফিরাউনের সাথে ইসরায়েলিদের লোহিত সাগর পার হওয়া এবং ওপর প্রান্তে মুসার দাঁড়ায় থাকা দেখানো হয়। সংবিধানের মটো হওয়ার কথা ছিলঃ “অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য করা।” যদিও পরবর্তীতে আরেকটা সিল নির্বাচন করা হয়েছিল।

লিবার্টি বেলে ওল্ড টেস্টামেন্টের একটা আয়াত আছে —

“সমগ্র অধিবাসীদের ভূমির স্বাধীনতা ঘোষণা করো” (Leviticus 25:10).

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ফিলিস্তিনে হিব্রু ভাষা পুনরুদ্ধার করতে যদিও প্রায় ২০০০ বছর লেগেছিল, আমেরিকায় বুদ্ধিজীবী হওয়ার একটা পূর্ব শর্ত ছিল হিব্রু ভাষা জানা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে হিব্রু ভাষা ছিল। ১৭৮৭ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ডে হিব্রু ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক ছিল এবং আজকের দিন পর্যন্ত ইয়েল (Yale) এর ব্যাজ এ হিব্রু প্রবাদ “Urim V’Thummim” (দৈববাণী শিক্ষা) আছে।

ইহুদী জাতীয়তাবাদের পক্ষে আমেরিকার সমর্থন

প্রথম থেকেই ইহুদীদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার পক্ষে মার্কিনীদের প্রবল সমর্থন ছিল। ২য় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এডামস লিখেছিলেনঃ “আমি মনে প্রাণে চাই জুদাহ রাজ্যে ইহুদীদের স্বাধীন রাষ্ট্র আবারো প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি বিশ্বাস করি, দর্শনশাস্ত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে তাদের হাত ধরে।” জন এডামস একবার মেজর ম্যানুয়েল নোয়াহ এর কাছে লিখেছিলেন যে তিনি জুদাহকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান।

মার্কিনীদের স্বাধীনতা অর্জনের পরে আব্রাহাম লিংকন কানাডিয়ান খ্রিষ্টান জায়নবাদী হেনরি ওয়েন্টওরথ মংক এর সাথে দেখা করেন, যিনি রাশিয়া এবং তুরস্কে শোষিত ইহুদীদেরকে ফিলিস্তিনে স্বাধীন বাসভূমি দেয়ার মধ্য দিয়ে স্বাধীন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। লিংকন বলেছিলেন এটা একটা মহৎ স্বপ্ন এবং বহু মার্কিনীর স্বপ্ন এটা। লিংকন বলেন, তার চিকিৎসক ছিলেন একজন ইহুদী, যিনি এতবার তাকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিলেন যে, চিকিৎসকের স্বজাতিকে নিজ পায়ে দাঁড়া করায় দিতে লিংকনের কোন সমস্যা নাই।

স্ট্যাচু অফ লিবার্টির ওপরে যেই কবির কথা খোদাই করা আছে, তার নাম এমা ল্যাজারাস। তিনি ১৮৮৩ সালে লিখেছিলেন যে, ফিলিস্তিন হওয়া উচিত উদ্বাস্তুর ঘর, পর্যটকের লক্ষ্য, বিতাড়িত জাতিগোষ্ঠীর রাষ্ট্র।

১৮৯১ সালে তৃতীয় জার আলেক্সান্ডার কর্তৃক ইহুদী হত্যাকাণ্ডের পরে প্রভাবশালী মার্কিনীরা প্রতিবাদ শুরু করে, যাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস ও হাউজ স্পিকার উল্লেখযোগ্য। উইলিয়াম ব্ল্যাকস্টোন এবং কার্ডিনাল গিবন্স একটা পেটিশনে স্বাক্ষর করে। তারাই সর্বপ্রথম একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকে, যেখানে ফিলিস্তিনকে ইসরায়েলিদের আদি বাসভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলা হয়।

“কেন ইহুদীদের কাছে ফিলিস্তিনকে ফেরত দেয়া হবে না? ঈশ্বরের জমির বণ্টন অনুযায়ী, ফিলিস্তিন ইহুদীদের জমি। সেখান থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না, তবুও তাদেরকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়েছে। ইহুদীদের অধীনে সেই জমি প্রাচুর্যপূর্ণ ছিল, যারা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছিল। তারা সভ্যতা ও ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

আমরা বিশ্বাস করি, এখনই পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র, বিশেষভাবে ইউরোপের খ্রিষ্টান রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে ইসরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা এবং রোমানরা যাদেরকে এখান থেকে উৎখাত করেছে, তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।”

এরপরে ৬ বছরের মাথায় প্রথম আন্তর্জাতিক জায়নবাদী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যারা ফিলিস্তিনে একটা ইহুদী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা প্রকল্প হাতে নেয়।

বেলফোর ঘোষণা

১৯১৭ সালে লর্ড বেলফোর ব্রিটিশ জায়নবাদী ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট লর্ড রথসচাইল্ডের কাছে চিঠি দিয়ে জানান যে, ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। প্রেসিডেন্ট উইলসন ১৯১৯ সালের ৩ মার্চে বেলফোর ঘোষণার পক্ষে সমর্থন জানায় —

“আমাদের মিত্র রাষ্ট্ররা আমাদের সাথে একমত যে, ফিলিস্তিনে একটা ইহুদী কমনওয়েলথের খুঁটি স্থাপন করা উচিত।”

উইলসনের পরের প্রেসিডেন্টরাও এই জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে। প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন হারডিং বলেছিলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে হিব্রু জনগণের অবদান নিয়ে যারা পড়াশুনা করেছে, তাদের পক্ষে এই বিশ্বাস এড়ানো সম্ভব না যে একদিন তারা তাদের ঐতিহাসিক জন্মভূমিতে ফেরত যাবে এবং মানব কল্যাণের এক নতুন যুগের সূচনা করবে।”

৩০ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেল্ভিন কুলিজ ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র নির্মাণের পক্ষে গভীর ও প্রবল আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন।

৩১ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হারবারট হুভার বলেছিলেন, “যেই ফিলিস্তিন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জনশূন্য ছিল, তা এখন তার ইহুদী প্রতিষ্ঠাতাদের উদ্যম, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে যৌবন এবং মর্যাদা ফিরে পাচ্ছে। এই ইহুদী প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে শান্তি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের সত্ত্বা রয়েছে।”

মার্কিন কংগ্রেস ও এই জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। ১৯২২ এবং ১৯৪৪ সালের যৌথ কংগ্রেশনাল রেজ্যলুশান দেখলে দেখা যায় বেলফোর ঘোষণার পক্ষে তারা অবস্থান নিয়েছিল। ১৯২২ সালে হাউজ ফরেইন এফেয়ারস কমিটি ঘোষণা করেছিলঃ —

“মার্কিন ইহুদীরা তাদের নিজ জাতির জন্য একটা রাষ্ট্র বিনির্মাণে আগ্রহী। ইহুদীরা রোমানদের সময়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও ফিলিস্তিনই তাদের উপাসনাস্থল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা জায়ন এর ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করেছে। বিগত শতাব্দীতে তাদের এই প্রার্থনা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।”

৩৩টা রাজ্যের আইনসভায় প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের জনসমর্থন নিয়ে ফিলিস্তিনে একটা ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ৩৭টা রাজ্যের গভর্নর, ৫৪ জন মার্কিন সিনেটর এবং কংগ্রেসের ২৫০ জন সদস্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বরাবর লেখা একটা পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে।

পার্টিশনের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনের জন্য লীগ অফ নেশন্সে একটা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। তারা তখন জাতিসংঘে আরব আর ইহুদীদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সমাধানের পক্ষে প্রস্তাব তুলে।

জাতিসংঘের জেনারেল এসেম্বলি ফিলিস্তিনে সংঘাত বুঝতে এবং সমাধানের রাস্তা বের করতে জাতিসংঘের বিশেষ কমিটি গঠন করে (UNSCOP)।

UNSCOP এ ১১ টা দেশের প্রতিনিধি ফিলিস্তিনে যায় এবং তাদের অনুসন্ধানে তারা একটা প্রতিক্রিয়াশীল ইহুদী কমিউনিটিকে খুঁজে পায়। ফিলিস্তিনের আরবরা UNSCOP কে কোন প্রকার সাহায্য তো করেই না, উল্টা নানা রকম প্রতিকূলতায় ফেলে। আরবদের উচ্চতর কমিটি UNSCOP কে বয়কট করে এবং জাতিসংঘের কাছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবি জানায়।

একজন লেখকের ভাষ্যমতে, “UNSCOP এর প্রতি ইহুদী আর আরবদের আচরণগত তফাৎ দেখেই বুঝা যায় যে ইহুদীদের মধ্যে ন্যায্যতার চেতনা আছে এবং তারা নিরপেক্ষভাবে তাদের ঘটনার বিচার দাবি করতে পারে, যেখানে আরবরা ইহুদীদের প্রতি হওয়া অপরাধ নিয়ে হয় সন্দিহান, না হয় বিচারের কাঠগোঁড়ায় দাঁড়াতে ভয় পায়।”

রালফ বাঞ্চ নামের একজন বেশ প্রভাবশালী মার্কিন নাগরিক UNSCOP এর প্রতিনিধি ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তীতে ইসরায়েল এবং তার প্রতিবেশী দেশসমূহের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি তৈরিতে বাঞ্চের অবদান রয়েছে। ১৯৪৭ সালে বাঞ্চে UNSCOP এবং Menachem এর দুইজন সদস্যের মধ্যে একটা বৈঠক শুরু হয়। Menachem ছিল Irgun Jewish Underground (ইহুদীদের আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন) এর একজন নেতা। বিগিন এর গোপনস্থান ছেড়ে যাওয়ার সময় বাঞ্চে ভবিষ্যৎ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে জানায় যে, “আমি তোমাকে বুঝি। আমিও শোষিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য।“ ব্রিটেনের রিচারড ক্রসম্যান বাঞ্চে কে জিজ্ঞেস করে ইহুদীদের সাথে মেলামেশার ফলে সে ইহুদী বিদ্বেষী হয়ে গেছে কিনা। বাঞ্চে উত্তর দেয়, “এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার। বর্ণবিদ্বেষ এবং বর্ণবাদী আচরণ সম্পর্কে আমি ভালো মতই জানি। একজন সচেতন নিগ্রোর পক্ষে কখনোই ইহুদী বিদ্বেষী হওয়া সম্ভব না।”

UNSCOP এর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা এই সিদ্ধান্তে আসে যে ফিলিস্তিনে ভূমি মালিকানা বা অধিকার প্রশ্নের কোন মীমাংসা সম্ভব না। সমাধানের চেয়ে তারা পার্টিশনের কথা চিন্তা করে, যেখানে ইহুদী আর আরবদের আলাদা আলাদা রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব দেয়া হবে।

জাতিসংঘ এই রিপোর্টের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে পার্টিশনের জন্য জেনারেল এসেম্বলির ডাক দিয়েছিল। এখনো কিছু বিতর্ক আছে যে ট্রুম্যান প্রশাসন এই সমাধানের জন্য লবি করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে আসলেই পার্টিশনের পিছে ভূমিকা রেখেছিল, তার স্পষ্ট প্রমাণ আছে।

ছয় মাসের মধ্যে ইসরায়েল নিজের স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ, যারা এই ইহুদী রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছিল- স্বাধীনতা ঘোষণার ১১ মিনিটের মাথায়।

১৯৫২ সালের ২৬ মে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান বলেছিলেন, “ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগেও ইসরায়েলের উপর আমার বিশ্বাস ছিল, এখনো আছে।“ “আমি বিশ্বাস করি ইসরায়েলের সামনে একটি গৌরবময় ভবিষ্যৎ আছে। এটা কেবল একটা নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র না, বরং আমাদের সভ্যতার মহান আদর্শসমূহের একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।”

ইসরায়েলের প্রতি একটি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা

৩৩ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের সময় থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক একই রকম ঘনিষ্ঠ ছিল।

৩৫ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ঘোষণা করেছিলেন —

“প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন (২৮ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট) এর সময় থেকেই আমাদের রাষ্ট্রের সাথে ইসরায়েলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কেননা, যেসকল স্বাধীন সমাজ শান্তি চায় এবং ব্যক্তি অধিকারকে সম্মান করে, আমরা তাদের প্রতি দায়বদ্ধ। জায়নবাদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, আজকে সকল স্বাধীন মানুষ সম্মিলিতভাবে একটা উন্নত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে এবং জায়নবাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আমরা জানি যে, উন্নত পৃথিবী তৈরি করতে প্রচুর সাহস এবং ধৈর্যের দরকার।”

৩৬ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন বলেছিলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের অনেক সাধারণ লক্ষ্য আছে। এগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, এমন একটা উন্নত পৃথিবী তৈরি করা, যেখানে প্রত্যেকটা রাষ্ট্র নিজের সম্পদের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটাতে পারে এবং স্বাধীনতা ও শান্তির পথে অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।”

অনেক মার্কিন জনগণের মত জনসনের এই অনুভূতির উৎস হচ্ছে বাইবেল।

B’nai B’rith সংগঠনের একটা বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন — “আমার মত আপনাদের বেশিরভাগ মানুষেরই ইসরায়েলের মানুষ এবং ভূমির সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কেননা, আমার খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস আপনাদের থেকেই আসছে।” প্রেসিডেন্ট আরও বলেছিলেন, “বাইবেলের গল্পগুলো আমার শৈশবের স্মৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। আধুনিক ইহুদীরা যে হাজারো বছরের সংগ্রাম শেষে শোষণ থেকে মুক্তি পাবে, সেই গল্পের বীজ আমার হৃদয়ে রোপণ করা আছে।”

৩৭ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচারড নিক্সন বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধুদের পাশে সবসময় দাঁড়ায় এবং ইসরায়েল তার একজন বন্ধু। জেরাল্ড ফর্ড বলেছিলেন, “ইসরায়েলের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আমাদের নৈতিকতা ও আলোকিত ব্যক্তিবর্গের স্বার্থের ওপর দাঁড়ায় আছে। ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে আমরা বারবার প্রমাণ করি আমরা কতটা ঐশ্বর্যপূর্ণ।”

৩৯ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বলেছিলেন, “ইসরায়েলের সাথে আমেরিকার একটা উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যা নৈতিকভাবে সঠিক। এই সম্পর্ক আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আমেরিকার নিজস্ব কূটনৈতিক স্বার্থের সাথে জড়িত। ইসরায়েলের নিরাপত্তা, উন্নতি এবং ভবিষ্যতের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ কেননা এই ভূমির পৃথিবীকে অনেক কিছু দেয়ার আছে।”

রোনাল্ড রেগানই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি সরাসরি বলেছিলেন যে ইসরায়েল কূটনৈতিক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচিত হওয়ার আগেই তিনি এ কথা বলেছিলেনঃ “ইসরায়েলের ভূমিকার ফলে (মধ্যপ্রাচ্যে) মস্কোর প্রভাব বেষ্টিত অঞ্চল এবং সম্পদ, যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিজনক, এর বিরুদ্ধে প্রভাবশালী একটা বেষ্টনী আমরা নির্মাণ করতে পারি।” কিন্তু এই পারস্পরিক স্বার্থ থেকে তৈরি হওয়া বন্ধুত্বও রেগান বুঝতে পেরেছিলেনঃ “ইসরায়েলের নতুন জন্মের পর থেকেই আমাদের গণতন্ত্র এবং ইসরায়েলের গণতন্ত্রের মাঝে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন রয়েছে।”

ক্ষমতা নেয়ার পর ৪১ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছিলেনঃ “আমেরিকা এবং ইসরায়েলের মধ্যকার বন্ধুত্ব, সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। এর ভিত্তি হচ্ছে আমাদের পারস্পরিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, যা এই দুই দেশের যাবতীয় প্রাণকে ধারণ করে। আমাদের জনগণের মধ্যকার আবেগ-অনুভূতি রাজনীতির ঊর্ধ্বে। আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং সাধারণ লক্ষ্য হচ্ছে পারস্পরিক নিরাপত্তার একটা উৎস। ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা অবিনশ্বর। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিভেদ থাকতে পারে কিন্তু নীতির প্রশ্নে কখনো বিভেদ থাকবে না।”

৪২ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন এই সম্পর্ককে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায়। “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের পারস্পরিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক নীতির ফলেই এই দুই দেশের সম্পর্ক একটা বিশেষ সম্পর্কে রূপ নিয়েছে।”

৪৩ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে বলেছিলেন, “আমরা আমাদের নীতির কথা বলবো এবং পৃথিবীতে আমাদের বন্ধুদের পাশে আমরা দাড়াবো। আমাদের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বন্ধুদের মধ্যে একজন হচ্ছে ইসরায়েল রাষ্ট্র।”

৪৪ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, “আমরা (মার্কিনীরা) ইহুদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন করি কেননা আমরা জানি মার্কিন জনগণের যে মূল্যবোধ, সেই মূল্যবোধ থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম। এই মূল্যবোধ হচ্ছে, ন্যায্যতার প্রতি দায়বদ্ধতা। ইসরায়েলের ভূমি সেই সকল দুর্বলকে আমন্ত্রণ জানায়, যারা পাপ থেকে ফিরে এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সবসময় আমাদের ইসরায়েলি বন্ধুদের পাশে থাকবো।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ মিলিয়নের চেয়েও কম। এজন্য, যেসব ইহুদীরা রাজনৈতিকভাবে আমেরিকা- ইসরায়েলের সম্পর্ক শক্তিশালী করতে কাজ করছে, কেবল তাদেরকে দিয়ে আমেরিকা-ইসরায়েল বন্ধুত্ব বোঝা সম্ভব নয়। মার্কিন বিদেশ নীতিতে জনসংখ্যার শতকরা ২ ভাগেরও কম যেই জনগোষ্ঠী, তাদের এত প্রভাব থাকা সম্ভব নয়। আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্কের শেকড় পারস্পরিক মূল্যবোধ।

ফাতিন ইশরাক, শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্রঃ https://www.jewishvirtuallibrary.org/roots-of-the-u-s-israel-relationship


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন