বৃহস্পতিবার | ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:২৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষের ছোটোদের লেখা কবিতা — শব্দে-বর্ণে নির্মিত শৈশবের চালচিত্র : অমৃতাভ দে ভিয়েতনামের গল্প (প্রথম পর্ব) : বিজয়া দেব লেখা যেন কোনভাবেই মহত্ না হয়ে যায় : অমর মিত্র আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন চাল চকচকে করতে বিষ, সবজিতেও বিষাক্ত হরমোন প্রয়োগ, চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্মিতা পাতিল — অকালে ঝরে পড়া এক উজ্জ্বল নক্ষত্র : রিঙ্কি সামন্ত কীভাবে রবীন্দ্রনাথ ‘ঠাকুর’ হলেন : অসিত দাস সর্ব ধর্ম সমন্বয় — ক্ষীর ভবানী ও শঙ্করাচার্যের মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার হরিপদ দত্ত-র ছোটগল্প ‘আত্মজা ও পিতা’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : আবদুল মান্নান সৈয়দ নবেন্দু ঘোষ-এর ছোটগল্প ‘ত্রাণ-কর্ত্তা’ অরণি বসু সরণিতে কিছুক্ষণ : ড. পুরুষোত্তম সিংহ অন্য এক ইলিয়াস : আহমাদ মোস্তফা কামাল খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে, গাছিরা চিন্তায়, আসল সুস্বাদু খেজুরগুড় ও রস বাজারে কমছে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কেকা অধিকারী-র ছোটগল্প ‘গাছমানুষ’ মনোজিৎকুমার দাস-এর ছোটগল্প ‘বিকেলে ভোরের ফুল’ মিয়ানমারে চীনের ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল ও রাখাইনে শান্তির উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন সংসদের শীত অধিবেশনেই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ বিল পাশ হবে কি : তপন মল্লিক চৌধুরী কুরুক্ষেত্রের কথা : রিঙ্কি সামন্ত কনক ঠাকুরের ছোটোদের কবিতার আকাশ, জলরঙে আঁকা রূপকথা : অমৃতাভ দে শীতের মরসুমে বাজারে সবজি আমদানি হলেও দামের ঝাঁজে গৃহস্থের চোখে জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হাইনরিখ হাইনে : শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত ‘হীরক রাজার দেশে’র একটি স্মরণীয় আউটডোর : রবি ঘোষ বাবরি মসজিদ ভাঙার ‘ঐতিহাসিক যুক্তি’ : ইরফান হাবিব হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গান্ধীমূর্তি : সুবিমল মিশ্র সর্বনামই যেখানে নাম হয়ে উঠতে পারে : ড. পুরুষোত্তম সিংহ অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (শেষ পর্ব) : রহমান হাবিব নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘পূর্ণিমা রাত ও পাটকিলে কুকুর’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

স্মিতা পাতিল — অকালে ঝরে পড়া এক উজ্জ্বল নক্ষত্র : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ১০৫ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘ক্রাউড ফান্ডিং এর কথা আমরা এখন প্রায় সময় শুনতে পাই। কথাটির অর্থ হলো কোন একটি স্টার্ট-আপে বিনিয়োগের জন্যে যখন একসাথে সদিচ্ছায় অনেক লোকের কাছ থেকে অল্প অল্প করে টাকা সংগ্রহ করা হয়। এই ক্রাউড ফান্ডিং নিয়ে একটি ছবিও তৈরি হয়েছিল বলিউডে ১৯৭৭ সালে যেখানে লক্ষ লক্ষ কৃষক এই প্রজেক্ট-এর সঙ্গে জড়িত ছিল। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবির নাম ‘মন্থন’।

গুজরাটের পশুপালকদের নিয়ে একটা বিরাট কাজের সূচনা করেছিলেন মিল্ক ম্যান অফ ইন্ডিয়া ভার্গিস কুরিয়েন। উদ্যোগের নাম আমূল। আমুলের একদম শুরুর দিকের ঘটনা নিয়ে এই ছবি করেছিলেন শ্যাম বেনেগাল। কো-অপারেটিভ তৈরির মাধ্যমে কৃষকদের স্বনির্ভর করে তোলার গল্প। প্রায় ৫ লক্ষ চাষি প্রত্যেকে ২ টাকা করে দিয়েছিলেন পরিচালককে। শুধুমাত্র বলিউডেরই নয় গোটা পৃথিবীর সিনেমার ইতিহাসে সেটি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা।

ছবির শুটিং হয়েছিল রাজকোট শহর ছেড়ে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে সাঙ্গানভা গ্রামে। রাস্তার দু’ধারে বাবলা ও ফনিমনসার ঝোপ, বৃষ্টির আশায় অপেক্ষা করে থাকা শুকনো মাঠ, বেশ কয়েক কিলোমিটার অন্তর ছোট জনবসতি আর রাস্তার পাশে সরকারের দেওয়া একটা চৌবাচ্চা। ৫ কিলোমিটার দূরে একটি ড্যাম থেকে পাম্প করে জল আসে গ্রামের লোকের ব্যবহার আর চাষের জন্য। আর কিছুটা দূরে একটু বাঁশের মাথায় একটা পতাকা উড়ছে সেটা ছিল একটা হাই স্কুল। এমনই একটা জায়গা শুটিংয়ের জন্য পছন্দ করেছিলে নির্দেশক শ্যাম বেনেগাল। শুধু তাই নয়, যে সময় ছবিটির শুটিং হয়েছিল এই গ্রামেই পুরো ইউনিটটি ৪৫ দিন ধরে একটি পরিবারের মতো বাস করেছিল।

ছবির চিত্রগ্রাহক ছিলেন গোবিন্দ নিহালানি। একদিন তিনি একটি শর্ট নেবেন সূর্যাস্তের সময়। শুটিং হচ্ছে যেনে গ্রামের লোকেরাও প্রায় দিন এসে ভিড় করতো স্পটে। পাঁচটা বেজে গেছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্যটা ঝুঁকে পড়বে আর তখনই নেওয়া হবে শর্ট। এদিকে সেই সময় স্কুলেরও ছুটি হয়েছে। একটু সময় যেতে না যেতেই, একদল স্কুলের ছেলে মেয়ে এসে ভিড় করতে লাগলো।

একজন চিৎকার করে বলল, ‘কই, অমিতাভ বচ্চন কই?’

বাকিদের মধ্যে একটু গুঞ্জন শোনা গেল। কিছুটা দূরেই বসেছিলেন ছবির নায়ক গিরিশ কার্নাড। মনে হচ্ছিল তাকে কেউ চেনে না। তার মধ্যে একজন আবার বলে উঠল, ‘মনে হচ্ছে এই ছবিতে কোন হিরো নেই’। আর একজন বলল, ‘হিরো না থাকুক, হিরোইন তো আছে। নইলে কি আর ভুতের ছবি হচ্ছে?’

একজন স্কুলের ছেলে আঙুল দেখিয়ে বলল (স্মিতা পাতিলের দিকে), ‘ওই তো হিরোইন ছাতার তলায় বসে আছে, তোরা দেখতে পাচ্ছিস না?’

কয়েকজন ছেলেটার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ধুস্ ওই মেয়েটা; ওকে তো আমাদের গ্রামের মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে। ওই মেয়ে কোনদিন বোম্বাইয়ে হিরোইন হতেই পারে না।’

কথাটা শুনে মুচকি হেসেছিলেন শ্যাম বেনেগাল। মনে মনে বলেছিলেন, ‘ওরে মূর্খ এই মেয়েটাকে তোরা কি চিনবি?’ তবে ছেলেগুলির কথা শুনে শ্যামের মনে একটু আনন্দই হয়েছিলো, সিগারেট ধরিয়ে মনে মনে বলেছিলেন, ‘বোম্বাইয়ের হিরোইন হিসেবে চিনে ফেললেই বরং ভয় হতো।’

তারপর স্মিতা পাতিলের দিকে তাকিয়ে শ্যাম বলেছিলেন, ‘ওরা তোমাকে কমপ্লিমেন্ট দিয়ে কি বলল শুনলে?’

স্মিতা হাসলেন, …. এটুকু গুজরাতি ভাষা বোঝার ক্ষমতা তারও আছে।

নায়িকা হতে হলেই গায়ের রং হবে ফর্সা এমন ধারণাকে ভেঙে দিয়েছিলেন স্মিতা। শ্যাম বেনেগাল বলতেন, তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক এক নারী, অভিনয় করতেন খুব সাবলীলভাবে। খুব সহজেই যে কোন চরিত্রের অংশ হয়ে যেতে পারতেন। যেমন ‘মন্থন’ এ কত সহজে বিন্দুর চরিত্রে নিজেকে বসিয়ে দিয়েছিলেন। মন্থনের শুটিংয়ের সময় কুঁড়েঘরে থেকে ঘুঁটে দেওয়া, গরুর দুধ দোয়া, বালতিতে জল তোলা… সব কিছুই শিখেছিলেন। ক্যামেরার সঙ্গে স্মিতার রসায়ন ছিলো অনবদ্য। ক্যামেরা যেন সকলের মাঝখানে তাকে খুঁজে নিতে পারত। এটাই ছিল স্মিতার প্লাস পয়েন্ট।

স্মিতা পাতিলের জন্ম পুনেতে। কাহ্নবি মারাঠা পরিবারে মহারাষ্ট্রীয় রাজনীতিবিদ শিবাজীরাও গিরিধর পাতিল ও খান্দেশ প্রদেশের শিরপুর শহরের সমাজকর্মী বিদ্যাতাই পাতিল দম্পতির সন্তান তিনি। ১৯৭০-এর দশকে ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত দূরদর্শনে সংবাদ পাঠক হিসেবে প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় হাজির হন। পুনেতে অবস্থিত ভারতের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পরবর্তীতে টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপনার পাশাপাশি আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার সময় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল তাকে পর্দার অন্তরাল থেকে টেনে নিয়ে আসেন।

১৯৭৫ সালে শ্যাম বেনেগালের ‘চরণদাস চোর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার অভিষেক ঘটে। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে — মন্থন, ভূমিকা, আক্রোশ, চক্র, চিদাম্বরম ও মির্চ মশলা। গোবিন্দ নিহালানি, সত্যজিৎ রায়, জি অরবিন্দম এবং মৃণাল সেনের মতো প্রখ্যাত পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন। হিন্দি ও মারাঠি ভাষায় ৮০-র বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

শ্যামবর্ণা এই নায়িকার চোখের জাদু বহু পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তুলেছিল। বাদ জাননি সেখান থেকে রাজ বব্বরও। সিনেমায় অভিনয় করবার সময় রাজ বব্বরের প্রেমে পড়েন স্মিতা। রাজ বব্বর তখন বিবাহিত। তবুও উদ্দাম প্রেম কোন বাধাই মানেনি। স্ত্রী নাদিরাকে ডিভোর্স না দিয়েই নতুন সংসার পাতেন স্মিতা রাজ। স্মিতার কোথাও যেন একটা অপরাধবোধ, কষ্ট লুকিয়ে থাকত রাজ-নাদিরার সংসার ভাঙার জন্য। প্রকৃতপক্ষে নিজের পরিসরে স্মিতা ছিলেন বড়ই নিঃসঙ্গ।

রাজ-স্মিতার একমাত্র সন্তান প্রতীকের জন্ম হয় ১৯৮৬ সালের ২৮ নভেম্বর। এরপর থেকে ক্রমশ খারাপ হতে থাকে স্মিতার শারীরিক অবস্থা।

১৩ই ডিসেম্বর জ্বর আসে এতটাই, বাচ্চাকে কোলে নেয়ার ক্ষমতা তার মধ্যে থেকে চলে যায়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য শরীরের চারপাশে একটা ভেজা কাপড় লাগিয়ে বুকের দুধ খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ডাক্তার নিয়মিত চেকআপের জন্য এসে তাকে স্যালাইন দেন।

বিকেল তিনটের সময় পুনম ধিলোন তাকে ফোন করেন গল্প করার জন্য। স্মিতা জানায় তিনি খুব একাকীত্বে ভুগছেন, গল্প করার জন্য তাকে বাড়িতেও ডাকে। ‘প্রেগন্যান্সির পর সব মহিলাই এরকম অনুভব করেন,’ রসিকতা করে বলেন পুনম।

সন্ধ্যায় স্মিতার স্বামী রাজ বব্বর বাড়িতে ফিরলে একটা অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্মিতা তাকে অনুরোধ করে। কিন্তু অসুস্থ থাকায় রাজ তাঁকে অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে চাননি বরং বিশ্রাম নিতে বলেন। তাকে বিছানায় শুয়ে কম্বল চাপা দিয়ে দেন।

১০ মিনিট পর রাজ বব্বর রুমে ফিরে এসে দেখেন স্মিতা ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে এবং খিঁচুনি ক্রমশ বাড়ছে, ব্যথায় কাঁপছে গোটা শরীর এবং রক্তবমি করছে। ডাক্তারের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা হয়।

হাসপাতালে ভর্তি করলে তিনি কোমায় চলে যান। সেখান থেকে তাঁকে আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। দু-সপ্তাহের সদ্যোজাত পুত্রকে রেখে ১৯৮৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর মাত্র ৩১ বছর বয়সে চলে যান স্মিতা। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগত তাঁর অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারায়।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “স্মিতা পাতিল — অকালে ঝরে পড়া এক উজ্জ্বল নক্ষত্র : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. তপন says:

    লেখাটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন