শনিবার কলকাতার শিশির মঞ্চে ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের যথোচিত মর্যাদায় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হল। সভার সূচনা পর্বে দোলা সেন শিল্পীর গাওয়া ‘ জন্মিলে মরিতে হবে ‘ গানটি গেয়ে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।এরপর শিল্পীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শিল্পীর স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায় শিল্পীর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ফুল ও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, নিকট আত্মীয় স্বজন ও বিশিষ্টজনেরা।
উল্লেখ্য, এদিন প্রয়াত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিচারণ করেন জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মজুমদার, নিকট আত্মীয় গীতবাণী চট্টোপাধ্যায় ও দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্ত, সান্টু গুপ্ত, নীতিশ রায়, রুদ্র দেব মুখোপাধ্যায়, সৈকত মিত্র, কল্যাণ রুদ্র, সমীর পূততুণ্ড, পূর্ণেন্দু বসু প্রমুখ। বিশিষ্টজনেরা সকলেই প্রয়াত শিল্পীর সৃষ্টি নিয়ে রেখাপাত করেন। সংগীতের মধ্য দিয়ে শিল্পীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সৈকত মিত্র।
প্রসঙ্গত, এদিন স্মরণ সভায় বক্তাদের স্মৃতিচারণে উঠে আসে প্রতুল মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালি গায়ক, সৃজনশীল শিল্পী এবং গীতিকার। তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি ‘আমি বাংলায় গান গাই’ এবং ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’ নামের দুটি বিখ্যাত গান।
তিনি গোঁসাইবাগানের ভূত চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠ দেন। তিনি মনে করতেন, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সাথে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবলমাত্র তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
প্রতুল মুখোপাধ্যায় ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক ও মা বাণী মুখোপাধ্যায় ছিলেন গৃহিণী। দেশবিভাগের সময় তিনি পরিবারের সাথে ভারত চলে আসেন। শৈশব কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের লেখা ও সুরে গান গাইতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতায় প্রথম সুরারোপ করেন। নিজের লেখা গানের পাশাপাশি ছড়া, কবিতাতেও তিনি বিভিন্ন সময় সুরারোপ করেছেন।
দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পিজি তথা এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর মত্যু হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, ৮২ বছর বয়সে। ‘আমি বাংলায় গান গাই’ জাতীয় সঙ্গীতের মতো জনপ্রিয়। তিনি বরাবরই প্রচারবিমুখ ছিলেন। গুণী শিল্পী এবং খুবই ব্যতিক্রমী শিল্পী ছিলেন। ওঁর গান গাওয়ার ধরন অথবা গান নিয়ে ভাবনাচিন্তা আর পাঁচজনের চেয়ে ভিন্ন ছিল। ওঁকে হারানো আমাদের কাছে বড় ক্ষতি। শুধু একটি গান নয়। ওঁর বহু ভাল অ্যালবাম ছিল। তিনি যে সময়ের মানুষ বা ওঁর যা ভাবনাচিন্তা, তা বর্তমানের শিল্পীদের মধ্যে নেই। এখন হয়তো অন্য রকমের কাজ তৈরি হবে। ওঁর সময়েও কিন্তু উনি ব্যতিক্রমী ছিলেন বলে বক্তাদের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে।